ইপেপার । আজশুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চিকিৎসাধীন অবস্থায় দামুড়হুদার মোটরসাইকেল মেকানিক রুবেলের মৃত্যু

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৬:৫২:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই ২০২৩
  • / ৬৩ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদকঃ
দামুড়হুদার দশমীপাড়া এলাকার রুবেল হোসেন (৩৩) সুদ ও ঋণগ্রস্ত হয়ে মানসিক চাপে বিষপানে নিহত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। রুবেল দামুড়হুদা উপজেলার দশমীপাড়ার এলাহী বক্সর ছেলে। দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ডে রুবেল মোটরসাইকেল সার্ভিসিং সেন্টার নামে তার একটি মোটরসাইকেল গ্যারেজ আছে।

উল্লেখ্য, গত বুধবার সাড়ে তিনটার দিকে দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ড এলাকার নিজ দোকান থেকে দামুড়হুদা দশমী পাড়ার নিজ বাড়িতে যাওয়ার পথিমধ্যে আহত রুবেল বিষ পান করেছে বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে।

পরে বাড়িতে পৌঁছালে পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি জানতে পারলে তৎক্ষণাৎ পরিবারের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেয়। পরে সেখানে রুবেলের অবস্থার অবনতি হলে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল রেফার্ড করা হয়। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক হাসানুর রহমান তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের নতুন বিল্ডিং এর ৬ তলায় ভর্তি রাখেন। আজ বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পরে সুরতহাল শেষে দুপুর ৩ টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে নিহত রুবেলের লাশ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়।

এ বিষয়ে আহত রুবেলের ছোট বোন সিরিনা বলেন, আমার ভাই মন্জুর দারোগার কাছ থেকে এক লাখ টাকা নিয়েছিল। এখন সেই টাকা মনজুর দারোগা ফেরত চাচ্ছে। আমার ভাই বিদেশ যাবে বলে টাকা খরচ করে ফেলেছে। দারোগাকে দেওয়ার মতো টাকা তার কাছে আপাতত নেই। সে আমাকে দুপুরবেলা ফোন দিয়ে বলে এক লক্ষ টাকা ধার দিতে। আমি দিতে পারিনি। তারপর আমার ভাই বলল আমি বাড়িতে আসছি। দোকান থেকে ফেরার সময় পথিমধ্যে রুবেল বিষপান করেছে। আমি শুনলাম দারোগা রুবেলের দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ডে অবস্থিত মোটরসাইকেলের গ্যারেজ টাকা না দেওয়াই বন্ধ করে দিয়েছে। তাই রুবেল মানসিক চাপে বিষ খেয়েছে।
এ বিষয়ে দামুড়হুদা উপজেলার ৭নং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো.হযরত আলী বলেন, রুবেলের বিষয়ে আমি যতদূর জানি,রুবেল এমন কোনো এনজিও নেই যেখান থেকে ঋণ নেয়নি। এছাড়াও নিকট আত্মীয়সহ অনেক লোকজনের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে রুবেল টাকা ধার নিয়েছিলো। আনুমানিক প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার মতো তিনি ঋণগ্রস্ত ছিলেন।

তিনি আরও বলেন, মন্জুর দারোগা তাকে কোনো চাপ প্রয়োগ করিনি। তার কাছে শুধু পাওনা টাকা চেয়েছিলো। তার দোকান তালা মেরে দেওয়া ও চাপপ্রয়োগ করার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। এক উকিলও তারে কাছে টাকা পায়। তার চাচি সাবেরা খাতুনও তার কাছে ৩ লক্ষ টাকা পায়। এছাড়াও বিভিন্ন লোকজনকে বিভিন্নভাবে রুবেলকে টাকা ধার দিয়েছে।
এ বিষয়ে রুবেলের চাচাতো ভাই আব্দুস সালাম বলেন, দেড় মাস আগেও একবার রুবেল আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলো তখন আমার মা (রুবেলের চাচি সাবেরা খাতুন) তাকে ৩ লক্ষ টাকা ধার দিয়ে তাকে কিছুটা সহায়তা করেছিল। আমরাও ৩ লক্ষ টাকা পায়। কিন্তু আমরা কোনো প্রকার চাপপ্রয়োগ করিনি।

এ বিষয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার চারুলিয়া ক্যাম্পে কর্মরত এএসআই মনজুর রহমান বলেন, বছরখানেক আগে আমার কাছ থেকে রুবেল এক লক্ষ টাকা নেয়। গত তিন-চার মাস ধরে টাকা দেওয়ার কথা বলে আমাকে ঘুরাচ্ছে আজ (গতকাল) ৫ তারিখ টাকা দেওয়ার কথা ছিল। আমি আজ গিয়েছিলাম টাকা নিতে। আমি ওর গ্যারেজে দুপুরে যেয়ে রুবেলকে বললাম, আজকে টাকা দেওয়ার কথা ছিল টাকা ম্যানেজ হয়েছে? সে বলল আমি টাকা ম্যানেজ করতে পারিনি। আমি তাকে বললাম, আমাকে তো অনেকদিন ধরেই ঘুরাচ্ছো কবে দিবা বলো? সে বলল চলতি মাসের ১৩ তারিখে দেব।” তার সাথে আমার আর কোন কথা হয়নি আমি চলে এসেছি। আমি রুবেলকে কোন প্রকা চাপ প্রয়োগ করিনি। শুধু আমার টাকা নয় বিভিন্ন জায়গার ঋণের চাপ তার মাথার উপর আছে।

তিনি আরও বলেন, শুধু আমার কাছ থেকে না দামুড়হুদার বিভিন্ন এনজিও ও বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীর কাছ থেকে বিভিন্নভাবে টাকা নিয়েছে। রুবেলেরই খালাতো ভাই দামুড়হুদা বদনপুরের আক্তার অ্যাডভোকেট সাহেবের কাছ থেকে ভুয়া দলিল দিয়ে তিন লক্ষ টাকা নেয়। তার টাকাও পরিশোধ করতে পারছে না। এজন্য আক্তার অ্যাডভোকেট ১০-১২ দিন আগে তাকে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছে।

আবার বাড়ির পাশের এক এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে দেড় মাস আগে রুবেলের বাড়ির জমির বায়না দিয়ে ৩-৪ লক্ষ টাকা নিয়েছে, তাকে এখন জমি দিচ্ছে না। এর মাঝেই তিনি কুয়েতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সম্ভবত আগামী ১৩ তারিখে তার ফ্লাইট।

দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে গত বুধবার রাতে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমি অবগত না।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

চিকিৎসাধীন অবস্থায় দামুড়হুদার মোটরসাইকেল মেকানিক রুবেলের মৃত্যু

আপলোড টাইম : ০৬:৫২:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই ২০২৩

সমীকরণ প্রতিবেদকঃ
দামুড়হুদার দশমীপাড়া এলাকার রুবেল হোসেন (৩৩) সুদ ও ঋণগ্রস্ত হয়ে মানসিক চাপে বিষপানে নিহত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। রুবেল দামুড়হুদা উপজেলার দশমীপাড়ার এলাহী বক্সর ছেলে। দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ডে রুবেল মোটরসাইকেল সার্ভিসিং সেন্টার নামে তার একটি মোটরসাইকেল গ্যারেজ আছে।

উল্লেখ্য, গত বুধবার সাড়ে তিনটার দিকে দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ড এলাকার নিজ দোকান থেকে দামুড়হুদা দশমী পাড়ার নিজ বাড়িতে যাওয়ার পথিমধ্যে আহত রুবেল বিষ পান করেছে বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে।

পরে বাড়িতে পৌঁছালে পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি জানতে পারলে তৎক্ষণাৎ পরিবারের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেয়। পরে সেখানে রুবেলের অবস্থার অবনতি হলে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল রেফার্ড করা হয়। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক হাসানুর রহমান তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের নতুন বিল্ডিং এর ৬ তলায় ভর্তি রাখেন। আজ বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। পরে সুরতহাল শেষে দুপুর ৩ টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে নিহত রুবেলের লাশ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়।

এ বিষয়ে আহত রুবেলের ছোট বোন সিরিনা বলেন, আমার ভাই মন্জুর দারোগার কাছ থেকে এক লাখ টাকা নিয়েছিল। এখন সেই টাকা মনজুর দারোগা ফেরত চাচ্ছে। আমার ভাই বিদেশ যাবে বলে টাকা খরচ করে ফেলেছে। দারোগাকে দেওয়ার মতো টাকা তার কাছে আপাতত নেই। সে আমাকে দুপুরবেলা ফোন দিয়ে বলে এক লক্ষ টাকা ধার দিতে। আমি দিতে পারিনি। তারপর আমার ভাই বলল আমি বাড়িতে আসছি। দোকান থেকে ফেরার সময় পথিমধ্যে রুবেল বিষপান করেছে। আমি শুনলাম দারোগা রুবেলের দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ডে অবস্থিত মোটরসাইকেলের গ্যারেজ টাকা না দেওয়াই বন্ধ করে দিয়েছে। তাই রুবেল মানসিক চাপে বিষ খেয়েছে।
এ বিষয়ে দামুড়হুদা উপজেলার ৭নং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো.হযরত আলী বলেন, রুবেলের বিষয়ে আমি যতদূর জানি,রুবেল এমন কোনো এনজিও নেই যেখান থেকে ঋণ নেয়নি। এছাড়াও নিকট আত্মীয়সহ অনেক লোকজনের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে রুবেল টাকা ধার নিয়েছিলো। আনুমানিক প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার মতো তিনি ঋণগ্রস্ত ছিলেন।

তিনি আরও বলেন, মন্জুর দারোগা তাকে কোনো চাপ প্রয়োগ করিনি। তার কাছে শুধু পাওনা টাকা চেয়েছিলো। তার দোকান তালা মেরে দেওয়া ও চাপপ্রয়োগ করার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। এক উকিলও তারে কাছে টাকা পায়। তার চাচি সাবেরা খাতুনও তার কাছে ৩ লক্ষ টাকা পায়। এছাড়াও বিভিন্ন লোকজনকে বিভিন্নভাবে রুবেলকে টাকা ধার দিয়েছে।
এ বিষয়ে রুবেলের চাচাতো ভাই আব্দুস সালাম বলেন, দেড় মাস আগেও একবার রুবেল আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলো তখন আমার মা (রুবেলের চাচি সাবেরা খাতুন) তাকে ৩ লক্ষ টাকা ধার দিয়ে তাকে কিছুটা সহায়তা করেছিল। আমরাও ৩ লক্ষ টাকা পায়। কিন্তু আমরা কোনো প্রকার চাপপ্রয়োগ করিনি।

এ বিষয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার চারুলিয়া ক্যাম্পে কর্মরত এএসআই মনজুর রহমান বলেন, বছরখানেক আগে আমার কাছ থেকে রুবেল এক লক্ষ টাকা নেয়। গত তিন-চার মাস ধরে টাকা দেওয়ার কথা বলে আমাকে ঘুরাচ্ছে আজ (গতকাল) ৫ তারিখ টাকা দেওয়ার কথা ছিল। আমি আজ গিয়েছিলাম টাকা নিতে। আমি ওর গ্যারেজে দুপুরে যেয়ে রুবেলকে বললাম, আজকে টাকা দেওয়ার কথা ছিল টাকা ম্যানেজ হয়েছে? সে বলল আমি টাকা ম্যানেজ করতে পারিনি। আমি তাকে বললাম, আমাকে তো অনেকদিন ধরেই ঘুরাচ্ছো কবে দিবা বলো? সে বলল চলতি মাসের ১৩ তারিখে দেব।” তার সাথে আমার আর কোন কথা হয়নি আমি চলে এসেছি। আমি রুবেলকে কোন প্রকা চাপ প্রয়োগ করিনি। শুধু আমার টাকা নয় বিভিন্ন জায়গার ঋণের চাপ তার মাথার উপর আছে।

তিনি আরও বলেন, শুধু আমার কাছ থেকে না দামুড়হুদার বিভিন্ন এনজিও ও বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীর কাছ থেকে বিভিন্নভাবে টাকা নিয়েছে। রুবেলেরই খালাতো ভাই দামুড়হুদা বদনপুরের আক্তার অ্যাডভোকেট সাহেবের কাছ থেকে ভুয়া দলিল দিয়ে তিন লক্ষ টাকা নেয়। তার টাকাও পরিশোধ করতে পারছে না। এজন্য আক্তার অ্যাডভোকেট ১০-১২ দিন আগে তাকে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছে।

আবার বাড়ির পাশের এক এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে দেড় মাস আগে রুবেলের বাড়ির জমির বায়না দিয়ে ৩-৪ লক্ষ টাকা নিয়েছে, তাকে এখন জমি দিচ্ছে না। এর মাঝেই তিনি কুয়েতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সম্ভবত আগামী ১৩ তারিখে তার ফ্লাইট।

দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে গত বুধবার রাতে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমি অবগত না।’