‘সাংবাদিক’ ইলিয়াস হোসেনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, মিথ্যাচার ও ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদ চত্বরে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে জেলার দুটি উপজেলা, দুটি পৌরসভা এবং ২১টি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সফিকুল ইসলাম পিটু।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘চাঁদাবাজ সাংবাদিক ইলিয়াস হুসাইন পরিকল্পিতভাবে স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের এজেন্ডা বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছেন। তার সঙ্গে দলেরই এক নব উদিত মনোনয়ন প্রত্যাশী ও তার আত্মীয় জড়িয়ে পড়েছেন ষড়যন্ত্রে। এর মাধ্যমে তারা বিএনপির অভ্যন্তরে বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন নেতারা।
লিখিত বক্তব্যে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘দেশজুড়ে যেখানেই বিএনপির মাঠ ভালো, যেখানেই বিএনপির জেতার সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানেই একটি দল বিষদাগার করার চেষ্টা করছেন। মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছেন। এই চাঁদাবাজ ইলিয়াস বিএনপির সেই সব মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও অপপ্রচারে নেমেছে, যারা মাঠ পর্যায়ে জনপ্রিয়, নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাবার সম্ভাবনা ও জেতার সম্ভাবনা অধিক। ১৯৭৯, ৯১, ৯৬ এবং ২০০১ এর নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গায় বিপুল ভোটে বিএনপি জয়লাভ করে। এই অঞ্চল বিএনপির শক্ত ঘাঁটি। আমাদের নেতা মো. শরীফুজ্জামান শরীফ চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দলের কাউন্সিলরদের ভোটে তিনি নির্বাচিত। তিনি এ অঞ্চলের পা-ফাটা মানুষের কাছে রাখাল রাজা হিসেবে সমধিক পরিচিত। স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের জেল-জুলুম, অত্যাচার, মিথ্যাচার ও নির্যাতন সহ্য করেও তিনি জেলা বিএনপিকে একত্রিত করেছেন। তাঁর ত্যাগ, পরিশ্রম এবং সংগ্রামের ফলেই স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগের নিপীড়ন-নির্যাতনের মধ্যে অগোছালো জেলা বিএনপি আজ আবার শক্তিশালী হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শত বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে তিনি দেশনেতা তারেক রহমানের নির্দেশনা মেনে তৃণমূল গোছাতে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। আওয়ামী লীগের নিপীড়ন ও মিথ্যা মামলায় কারাবরণ করা সত্ত্বেও তিনি দলের প্রতিটি কর্মসূচি পালন করেছেন। জনগণের কথা শুনেছেন এবং দ্বারে দ্বারে গেছেন। দুঃসময়ে নেতা-কর্মী ও কারাবন্দী হাজার হাজার পরিবারের পাশে দাঁড়ানো এই নেতা চুয়াডাঙ্গাবাসীর জন্য তুলনাহীন। শরীফ ভাই সৎ, শিক্ষিত, মার্জিত এবং জনগণের বন্ধু। তার ভাই আলহাজ্ব সাহিদুজ্জামান টরিক চুয়াডাঙ্গার একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী ও শ্রেষ্ঠ রেমিট্যান্স যোদ্ধা। দানবীর খ্যাত এই ব্যক্তিটি চুয়াডাঙ্গা জেলার মানুষের জন্য যা করেছেন, আর কোনো ব্যবসায়ী কখনো তা করেননি। ইলিয়াস তো নিজেই বলেছে হোটেল সাহিদ প্যালেসের কথা। কিন্তু ইলিয়াস তো জানে না, যে এই সাহিদুজ্জামান টরিক তার পিতার প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসার নামে এই বহুতল হোটেলটি করেছেন। এই হোটেলের সমস্ত আয় ওই মাদ্রাসায় অধ্যায়নরত দরিদ্র, এতিম পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী তথা কুরআনের পাখিদের পড়াশোনায় ব্যয় করা হয়।’
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার কুখ্যাত রাজাকার মৃত আব্দুর রাজ্জাক ওরফে নূর হোসেনের ছেলে ইলিয়াস হোসেন। ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের সময় ইলিয়াসের বাবা ছিল জীবননগর শান্তি কমিটির সদস্য। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দালাল আইনে চুয়াডাঙ্গার ১১৬ জন রাজাকারের তালিকা করা হয়। যাদের মধ্যে নূর হোসেন একজন। একুশে টিভি অনুসন্ধানী অনুষ্ঠান একুশের চোখের মাধ্যমে ইলিয়াসের উত্থান। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুরু হয় তার ব্ল্যাকমেইল মিশন। মানুষকে জিম্মি করে টাকা আত্মসাতের প্রচুর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। একসময় ইলিয়াস হোসেন বিদেশে চলে যান। সেখান থেকে তিনি একটি ইউটিউব চ্যানেল খোলেন, এই চ্যানেলের মাধ্যমে তিনি একটি নতুন অধ্যায় শুরু করেন মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করার। ইউটিউব চ্যানেলটি তার জন্য শুধুমাত্র একটি প্ল্যাটর্ফম নয়, বরং মানুষের ওপর প্রভাব বিস্তার এবং টাকা আত্মসাতের নতুন পথ খুলে দেয়। এ ধারাবাহিকতায় চুয়াডাঙ্গার একজন মজলুম ও দুঃসময়ের নেতা জননেতা শরীফুজ্জামান শরীফ ভাইকে নিয়ে নিয়ে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।’
ইলিয়াস চাঁদাবাজি করার জন্য বক্তব্য কাট-ছাট করে মানুষকে ব্লাকমেইল করে বলে অভিযোগ তুলে বিএনপির পক্ষ থেকে লিখিতভাবে বলা হয়, ‘৩ অক্টোবর ইলিয়াস ফেসবুকে ৪৮ সেকেন্ডের একটি শর্ট ভিডিও ছাড়লেন এবং বললেন পরের দিন রাত নয়টায় বিস্তারিত প্রকাশ হবে। কিন্তু পরের দিন রাত নয়টায় আর ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়নি। পরে ৬ অক্টোবর ভিডিওটি প্রকাশ করেন। আপনাদের কাছে প্রশ্ন রেখে গেলাম, তিনি ৩ থেকে ৬ তারিখ পর্যন্ত কেন অপেক্ষ করেছিলেন? শরীফ এবং টরিক সাহেব কেউ টাকা লেনদেন করবেন কি না? যখন দেখলেন কেউ টাকা দিচ্ছে না, তখন তার পরিকল্পিতভাবে ভিডিও কাটিং, কাটছাট ও এডিটিং করে মিথ্যা রিপোর্ট তৈরি করা ভিডিওটি ৬ তারিখে প্রকাশ করেন।
এটি স্পষ্টভাবে বোঝায় যে ভিডিওটি মানুষকে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত। ইলিয়াস তো ভিডিও কাট-ছাট করে ছেড়েছে। যেটা সাংবাদিকতা নয়। এসব কাটিং করা ভিডিও’র সম্পূর্ণ অংশ আপনারা একাধিকবার দেখেছেন। আপনারা নিশ্চয় অনুধাবন করছেন, কীভাবে ইলিয়াস ভিডিও কাটিং, কাটছাট ও এডিটিং করে টাকা আত্মসাৎ করার একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছেন। পুরো ঘটনাটি কৌশলগতভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে মানুষ বিভ্রান্ত হয় এবং টাকার লেনদেন করতে প্ররোচিত হন। ইলিয়াস ভুলে গিয়েছেন, মজলুম নেতা কখনো মিথ্যা বা বানোয়াট সংবাদ দেখে ভয় পায় না। মিথ্যার কাছে কখনো শরীফুজ্জামান শরীফ মাথানত করেন না, অন্যায়ের কাছে মাথানত করেন না। পুরো ঘটনা পরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হয়েছে। শরীফুজ্জামান শরীফের ধৈর্য্য ও সাহসের কারণে মানুষ এই মিথ্যা কাটিং দেখে বিভ্রান্ত হয়নি।
বক্তারা ইলিয়াসকে স্বঘোষিত রাজাকার আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘স্বঘোষিত রাজাকার এবং স্বাধীনতা বিরোধী চাঁদাবাজ দালাল ইলিয়াস হোসেনের মিথ্যাচারের শেষ নেই। নিলর্জ্জ এই লোক এতোটা নীচে নামতে পারে, যে কারো মা-বোন তুলে গালি দিতে দ্বিধা করেন না। কথিত এক নারীর ভিডিও বক্তব্য ছেড়েছেন চাঁদাবাজ ইলিয়াস। সেই নারী যে ঘটনার কথা বলছেন, তা ১৯ অথবা ২১ সালের ঘটনা। তখন তো স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল। তখন কেন এই নারী কোনো ব্যবস্থা নিলেন না। আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, এই নারীর পরিবার চিহ্নিত মাদক ও স্বর্ণ চোরাকারবারির সাথে জড়িত। পুতুল নামের ওই নারীর ভাই মিতুল একাধিকবার মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। তার রেকর্ড পুলিশের কাছে আছে, আপনারা সাংবাদিক, চাইলেই বিষয়টি যাচাই করতে পারেন। ওই নারী যে হয়রানির অভিযোগ করছেন, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। ওই নারীর প্রতিবেশীসহ এলাকাবাসী সাক্ষী, সেখানে কেউ হামলা করেনি। এটি বানোয়াট তথ্য। বিজিবি বা পুলিশি কোনো হয়রানির ঘটনা ঘটায়নি। আইন তার নিজ গতিতেই কাজ করেছে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর পারকৃষ্ণপুর গ্রামের ওয়াসিম আলীর মেয়ে আসমা বেগম (২৮) তিনটি স্বর্ণের বারসহ বিজিবির হাতে ধরা পড়েন। পরে তাকে পুলিশে হন্তান্তর করা হয়। পরদিন (৩০ সেপ্টেম্বর) আসমা বেগমকে আদালতে প্রেরণ করা হলে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। জবানবন্দীতে আসমা দর্শনা আনোয়ারপুরের পুতুলের নাম উল্লেখ করেন, যিনি এই চোরাচালান চক্রের সঙ্গে যুক্ত বলে জানান।
সংবাদ সম্মেলনে একজন বহিষ্কৃত নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করার অভিযোগ তুলে বলা হয়, ‘আপনারা দেখেছেন একজন বহিষ্কৃত নেতা পূর্ব শত্রুতার জের ধরে মিথ্যাচার করেছেন। তার লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য বর্তমানে দলের প্রতি একনিষ্ঠ নেই। এক চাঁদাবাজ ইলিয়াস হুসাইন আবার চাঁদার মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন। তবে তিনি আমাদের নেতার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি। তার সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটিই মিথ্যাচারের। বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে যে বিষদাগার করা হয়েছে, তা শুধু ইলিয়াসের প্রোপাগান্ডা। আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ মিল্টন, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম নজু, আলমডাঙ্গা পৌর বিএনপির সভাপতি আজিজুর রহমান পিণ্টু, চুয়াডাঙ্গা পৌর বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মনি, আলমডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আখতার হোসেন জোয়ার্দার, আলমডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক রোকন, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান লিপটন, চুয়াডাঙ্গা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হক পল্টু, জেলা মহিলা দলের সভাপতি রউফ উর নাহার রিনা, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রশীদ ঝণ্টু, জেলা মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক কামরুজ্জামান বাবলু, জেলা জাসাস-এর সাধারণ সম্পাদক সেলিমুল হাবিব সেলিম, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান মোমিন, জেলা ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা আনোয়ার হোসেন, জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক জাহানারা পারভীন, সিনিয়র সহসভাপতি শেফালী বেগম, যুগ্ম সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সালমা জাহান পারুল, সাংগঠনিক সম্পাদক নাসরীন পারভীন, জেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফ হোসেন জোয়ার্দার সোনা, যুগ্ম আহ্বায়ক তরিকুল আলম জোয়ার্দার বিলু, জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক ও চিৎলা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল ছালাম বিপ্লব, আলমডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, চুয়াডাঙ্গা পৌর বিএনপির সহসভাপতি আবুল হোসেন, সদর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, চুয়াডাঙ্গা পৌর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক হাফিজুর রহমান মুক্ত, আলমডাঙ্গা পৌর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মহাবুল মাস্টার, সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার কাজী সাচ্চু, চুয়াডাঙ্গা পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সোহেল মালিক সুজন, জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক জুয়েল মাহমুদ, সদর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মহাবুল হক মহাবুবসহ চুয়াডাঙ্গা ও আলমডাঙ্গা পৌর ও উপজেলা বিএনপির সকল ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সকল ইউনিটের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
নিজস্ব প্রতিবেদক