শুক্রবার, ৭ নভেম্বর, ২০২৫
সর্বশেষ স্থানীয় সংবাদ জাতীয় রাজনীতি আর্ন্তজাতিক সারাদেশ অর্থনীতি খেলা বিনোদন ফ্যাক্টচেক আজকের পত্রিকা প্রযুক্তি চাকরি

হাজারো মানুষের ভালোবাসা আর অশ্রুভেজা শ্রদ্ধায় চিরনিদ্রায় শায়িত মির্জা শিপলু

জনসমুদ্রে শেষ জানাজা, শোকাহত সর্বস্তরের মানুষ
  • আপলোড তারিখঃ ০৭-১০-২০২৫ ইং
হাজারো মানুষের ভালোবাসা আর অশ্রুভেজা শ্রদ্ধায় চিরনিদ্রায় শায়িত মির্জা শিপলু

হাজারো মানুষের ভালোবাসা আর অশ্রুভেজা শ্রদ্ধায় চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক, একনিষ্ঠ রাজনৈতিক সংগঠক ও তৃণমূলের ‘প্রিয় মুখ’ মির্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলু। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় চুয়াডাঙ্গা টাউন ফুটবল মাঠে অনুষ্ঠিত হয় তাঁর দ্বিতীয় জানাজা। প্রিয় নেতাকে শেষবারের মতো একনজর দেখতে এবং শেষ শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে অগণিত মানুষের ঢল নামে। রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, সহপাঠী, বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীসহ সর্বস্তরের হাজার হাজার মানুষ জানাজায় অংশ নেন। টাউন ফুটবল মাঠজুড়ে নেমে আসে নিস্তব্ধতা, যেন প্রকৃতিও থমকে দাঁড়ায় শিপলুর অকাল বিদায়ের খবরে। অনেকেই চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। জানাজার পর তাকে চুয়াডাঙ্গা জান্নাতুল মাওলা কবরস্থানে দাফন করা হয়।


জানাজা ও দাফনকার্যে দলের নেতা-কর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের বিপুল অংশগ্রহণে পুরো এলাকা জনসমুদ্রে রূপ নেয়। টাউন ফুটবল মাঠ ছাড়িয়ে আশপাশের রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানুষ জানাজায় অংশ নেয়। যানজটে পড়ে শহিদ আবুল কাশেম সড়ক, কবরী রোড, কলেজ সড়কসহ আশপাশের এলাকা। যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে প্রশাসন। মির্জা শিপলুর এই অকাল মৃত্যুতে শুধু বিএনপি নয়, পুরো চুয়াডাঙ্গা জুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। রাজনীতির পাশাপাশি সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থাকায় সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। তাঁর অকাল প্রয়াণে শূন্য হয়ে গেল তৃণমূল রাজনীতির এক প্রাণপুরুষের আসন।



মির্জা শিপলুর শেষ বিদায়ে উপস্থিত থেকে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তাঁর রাজনৈতিক জীবন তুলে ধরেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-কোষাধ্যক্ষ ও চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ। এছাড়াও তাঁর জানাজা ও দাফনকার্যে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন মির্জা শিপলুর মেজো ভাই নেত্রকোনা জেলা পুলিশ সুপার মির্জা সায়েম মাহমুদ।


সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, ‘আমরা শুধু একজন নেতাকে নয়, একজন আপনজনকে হারালাম। মির্জা শিপলু ছিলেন একজন নিরহঙ্কার, সহমর্মী ও দূরদর্শী সংগঠক। দলের প্রতিটি প্রয়োজনে তিনি সামনে থেকেছেন, কোনো কিছু না চেয়ে দায়িত্ব পালন করে গেছেন নিঃশব্দে। তিনি জানতেন কীভাবে মানুষকে আপন করে নিতে হয়। এই বিশাল জানাজা প্রমাণ করে তিনি শুধু রাজনীতির মাঠেই নন, মানুষের হৃদয়েও জায়গা করে নিয়েছিলেন। আমরা তাঁকে শ্রদ্ধা জানাই, ভালোবাসা জানাই।’
কেন্দ্রীয় বিএনপির উপ-কোষাধ্যক্ষ ও চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, ‘অকৃত্রিম, সৎ এবং নিরলস পরিশ্রমী সৈনিক ছিলেন মির্জা শিপলু। তার প্রতিটি কাজ, প্রতিটি সিদ্ধান্তের পেছনে দলপ্রেম, দায়িত্ববোধ এবং মানুষের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ করেছে, নিজের স্বার্থকে প্রাধান্য দেননি কখনো। দুঃসময়েও তিনি ছিলেন দলের পাশে, নেতা-কর্মীদের পাশে। তাঁর হাসিমাখা মুখ, সবার সঙ্গে সহজ সম্পর্ক এবং জটিল পরিস্থিতিতে বিচক্ষণ ভূমিকা এখনো চোখে ভাসছে। চুয়াডাঙ্গার রাজনীতি আজ এক নির্ভরযোগ্য কাণ্ডারিকে হারালো। আমি বিশ্বাস করি, শিপলুর মতো মানুষের অভাব সহজে পূরণ হওয়ার নয়।’


বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘মির্জা শিপলু আমাদের রাজনৈতিক পরিবারের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন। শুধু একজন সংগঠকই নয়, তিনি ছিলেন একজন ভালো মানুষ, ভদ্র, বিনয়ী ও শ্রদ্ধাশীল। তরুণ বয়স থেকেই তিনি রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। কখনো নিজেকে সামনে না আনলেও দল ও নেতা-কর্মীদের জন্য তিনি নিবেদিত ছিলেন। আজকে তার জানাজায় চুয়াডাঙ্গার সাধারণ মানুষের উপস্থিতি প্রমাণ করে, তিনি কতটা জনপ্রিয় ছিলেন এবং মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন। তাঁর মতো তরুণ, আদর্শবান নেতার অকাল মৃত্যু আমাদের জন্য শুধু রাজনৈতিক ক্ষতিই নয়, মানবিক দিক থেকেও অপূরণীয় ক্ষতি। আমি তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করি, এবং তাঁর পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।’



এর আগে গত রোববার ঢাকার ধানমণ্ডিতে মেজো ভাইয়ের বাসায় স্ট্রোকে মৃত্যুবরণ করেন এই প্রতিশ্রুতিশীল রাজনীতিক মির্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলু। ওই দিন আছরের নামাজের পর ঢাকার মোহাম্মদপুরের আল মারকাজুল ইসলাম আল মাদানি মসজিদে তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে রাত দেড়টায় শেষবারের মতো ফিরে আসেন নিজের প্রাণের শহর চুয়াডাঙ্গায়। মধ্যরাতে মরদেহ কোর্টপাড়ার নিজ বাসভবনের সামনে পৌঁছালে সেখানে হৃদয়বিদারক মুহূর্তের সৃষ্টি হয়। শত শত মানুষ, নেতা-কর্মী, প্রতিবেশী, স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ভিড় করেন শোকে স্তব্ধ হয়ে। কান্নায় ভেঙে পড়ে পুরো এলাকার মানুষ, শোকের ছায়ায় আচ্ছন্ন হয় শহর। মির্জা শিপলুর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও শোক প্রকাশ করা হয় ‘প্রিয় মুখ’ মির্জা শিপলুর অকাল প্রয়াণে।
জানাজা ও দাফনকার্যে উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির অ্যাড. রুহুল আমিন, দৈনিক সময়ের সমীকরণের প্রধান সম্পাদক নাজমুল হক স্বপন, চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির অন্যতম নেতা খন্দকার আব্দুল জব্বার সোনা, সাংগঠনিক সম্পাদক সফিকুল ইসলাম পিটু, খালিদ মাহমুদ, মেহেরপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. কামরুল হাসান, চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সিনিয়র সদস্য অ্যাড. ওয়াহিদুজ্জামান বুলা, জেলা জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি অ্যাড. মাসুদ পারভেজ রাসেল, দর্শনা থানা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খাজা আবুল হাসনাত, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম নজু, চুয়াডাঙ্গা পৌর বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মনি, জীবননগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন খান খোকন, আলমডাঙ্গা পৌর বিএনপির সভাপতি আজিজুর রহমান পিণ্টু, জীবনগর পৌর বিএনপির সভাপতি শাহজাহান কবীর, দামুড়হুদা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির, আলমডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আখতার হোসেন জোয়ার্দার ও চুয়াডাঙ্গা পৌর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি রাফিতুল্লাহ মহলদার।


আরও উপস্থিত ছিলেন জীবনগর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি এম.আর মুকুল, দামুড়হুদা উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ, দর্শনা থানা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি আখতার হোসেন, জীবননগর পৌর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি তাজুল ইসলাম তাজু, আলমডাঙ্গা পৌর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি খন্দকার কাজী সাচ্চু, আলমডাঙ্গা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক রোকন, জীবনগর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলী, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান লিপটন, দামুড়হুদা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল হাসান তনু, দর্শনা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ আলী,


চুয়াডাঙ্গা পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হক পল্টু, জীবননগর পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামসুজ্জামান ডাবলু, দর্শনা পৌর বিএনপির সমন্বয়ক কমিটির নেতা হাবিবুর রহমান বুলেট, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি এম. জেনারেল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক সাবু তরফদার, জেলা যুবদলের সভাপতি শরীফুর জামান সিজার, সিনিয়র সহসভাপতি আশরাফুল হক মিল্টু, সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রশীদ ঝণ্টু, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক ও চিৎলা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল ছালাম বিপ্লব, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহেদ মোহাম্মদ রাজিব খান, জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক মোকাররম হোসেন, সদস্যসচিব ও বাড়াদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোবারক হোসেন।


অন্যদের মধ্যে জেলা মৎসজীবী দলের আহ্বায়ক কামরুজ্জামান বাবলু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহসভাপতি শরিফুল আলম বিলাস, সাধারণ সম্পাদক এম.এ তালহা, সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম হাসান টুটুল, জেলা জাসাসের সভাপতি সহিদুল হক বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক সেলিমুল হাবিব সেলিম, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি শাহজাহান খান, সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান মোমিন, জেলা ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা আনোয়ার হোসেন, সদসসচিব হাফেজ মাহবুব আলম মাহবুব, চুয়াডাঙ্গা জেলা জজকোর্টের পিপি অ্যাড. মারুফ সারোয়ার বাবু, জেলা আইনজীবী ফোরামের আহ্বায়ক অ্যাড. আ.স.ম আব্দুর রউফ, সদসসচিব অ্যাড. মানজারুল আলম জোয়ার্দার হেলাল, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার আহ্বায়ক মনজুর লার্জ, সদস্যসচিব সুমন পারভেজ খান, প্রবীণ আইনজীবী অ্যাড. সেলিম উদ্দিন খান, অ্যাড. শাহজাহান মুকুল, মির্জা ফরিদুল ইসলাম শিপুলন স্বজন, প্রতিবেশী, বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।



কমেন্ট বক্স