শনিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৫
সর্বশেষ স্থানীয় সংবাদ জাতীয় রাজনীতি আর্ন্তজাতিক সারাদেশ অর্থনীতি খেলা বিনোদন ফ্যাক্টচেক আজকের পত্রিকা প্রযুক্তি চাকরি
শোকে স্তব্ধ স্বজন-সহকর্মীরা, আজ সকাল সাড়ে ১০টায় জানাজা

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ‘প্রিয় মুখ’ মির্জা শিপলুর অকাল প্রয়াণ

বিএনপির মহাসচিব, জেলা বিএনপির সভাপতি-সম্পাদকসহ বিভিন্ন মহলের শোক
  • আপলোড তারিখঃ ০৬-১০-২০২৫ ইং
চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ‘প্রিয় মুখ’ মির্জা শিপলুর অকাল প্রয়াণ

চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক, ছাত্রদল থেকে উঠে আসা একনিষ্ঠ সংগঠক মির্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলু আর নেই। মাত্র ৪৭ বছর বয়সে তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন। গতকাল রোববার সকালে ঢাকার ধানমণ্ডিতে মেজো ভাইয়ের বাসায় স্ট্রোকে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এদিন আছর নামাজের পর মরহুমের প্রথম জানাজা ঢাকার মোহাম্মদপুরের আল মারকাজুল ইসলাম আল মাদানি মসজিদের সামনে অনুষ্ঠিত হয়। আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় চুয়াডাঙ্গা টাউন ফুটবল মাঠে দ্বিতীয় জানাজা শেষে জান্নাতুল মাওলা কবরস্থানে তাঁর দাফনকার্য সম্পন্ন হবে।


মির্জা শিপলুর মৃত্যুতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু ও সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। দলীয় ত্যাগ ও রাজনৈতিক শিষ্টাচারে প্রশংসিত এই নেতার মৃত্যুতে চুয়াডাঙ্গার রাজনৈতিক অঙ্গনে নেমে আসে শোকের ছায়া। দুপুর ১২টায় মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তাঁর বাড়িতে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সমবেদনা জানাতে আসেন।


পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার মেডিকেল চেকআপের জন্য রাজধানী ঢাকায় যান মির্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলু। পূজার ছুটির কারণে গত শনিবার রাতে ধানমণ্ডিতে ভাইয়ের বাড়িতে একাই অবস্থান করছিলেন তিনি। সেদিন রাতেই ছোট ভাই ও স্ত্রীর সঙ্গে শেষবার কথা হয় তাঁর। তবে গতকাল রোববার সকালে তাঁর ফোনে একাধিকবার কল দিয়েও কোনো সাড়া পাননি স্বজনরা।


পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দিকে ছোট ভাই মির্জা রাতুল মেজো ভাইয়ের বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে প্রবেশ করলে বড় ভাইকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান। তিন ভাইয়ের মধ্যে বড় ছিলেন মির্জা শিপলু। তিনি চুয়াডাঙ্গা শহরের কোর্টপাড়া এলাকার প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হকের ছেলে। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে, দুই ভাইসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
মির্জা শিপলুর রাজনীতির হাতেখড়ি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলে। চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নেতৃত্বের সূচনা। পরে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, আর শেষ পর্যন্ত জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক- এভাবেই গড়ে ওঠে তার রাজনৈতিক পথচলা। নেতৃত্বে ছিলেন দৃঢ়, কিন্তু ব্যবহারে ছিলেন নম্র। দলের ভেতর-বাইরে পরিচিত ছিলেন ‘সৃজনশীল রাজনীতির প্রতীক’। সবার মতে, ‘মির্জা শিপলু ছিলেন একাধারে নেতা, কর্মী ও বন্ধু।’




মির্জা শিপলুর বাল্যবন্ধু, প্রতিবেশী ও জেলা জাসাসের সাধারণ সম্পাদক সেলিমুল হাবীব সেলিম জানান, ‘তিনি শুধু রাজনীতিবিদ ছিলেন না, মানবিক একজন মানুষও ছিলেন। দলের দুঃসময়ে যেভাবে ছুটে বেড়াতেন, সেটা আজও চোখে ভাসে।’


মির্জা শিপলুর মেজো ভাই নেত্রকোনা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মির্জা সায়েম বলেন, ‘ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়েই আমি নেত্রকোনা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হই। চিকিৎসার জন্য তিনি ঢাকায় এসে আমার বাড়িতে উঠেছিলেন। আজ (গতকাল রোববার) তার কয়েকটি মেডিকেল চেকআপের কথা ছিল। কিন্তু দুপুর ১২টার দিকে ছোট ভাই মোবাইলে জানায়- ভাইয়া (শিপলু) আর আমাদের মাঝে নেই। রাতে ঘুমের মধ্যে স্ট্রোকে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।’


এদিকে, গতকাল আছর নামাজের পর ঢাকার মোহাম্মদপুর বাবর রোডের সোবাহানবাগ আল মারকাজুল ইসলাম আল মাদানি মসজিদের সামনে মরহুম মির্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলুর প্রথম জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অংশ নেন বিএনপির নির্বাহী কমিটির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, খুলনা বিভাগীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক ফিরোজ, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-কোষাধ্যক্ষ ও চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু, প্রয়াতের স্বজনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।


জানাজা শেষে মরদেহ লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সযোগে চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। রোববার মধ্যরাতের পরে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সটি কোর্টপাড়ায় মির্জা শিপলুর বাড়ির সামনে এসে পৌঁছায়। এসময় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মী, প্রয়াতের স্বজন, প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধবসহ শত শত মানুষ তার বাড়ির সামনে ভিড় করেন। তাদের কান্নার শব্দে পুরো এলাকাজুড়ে শোকের আবহ সৃষ্টি হয়।


মির্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলুর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-কোষাধ্যক্ষ, চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু ও সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন ও দৈনিক সময়ের সমীকরণ-এর পক্ষ থেকেও এই নেতার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়েছে।
গতকাল এক শোকবার্তায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সাবেক রাষ্ট্রপতি শহিদ জিয়াউর রহমানের (বীর উত্তম) নীতি ও আদর্শ এবং বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী দর্শনে গভীরভাবে আস্থাশীল মরহুম মির্জা শিপলু চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপিকে শক্তিশালী, গতিশীল ও সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করতে নিবেদিতপ্রাণ হয়ে কাজ করেছেন। এছাড়া বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন। আমি তাঁর মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত ও ব্যথিত হয়েছি।


মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে দোয়া করি- তিনি যেন মির্জা শিপলুকে জান্নাত নসিব এবং শোকাহত পরিবারবর্গকে ধৈর্য্য ধারণের ক্ষমতা দান করেন।’ বিএনপি মহাসচিব শোকবার্তায় মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যবর্গ, আত্মীয়-স্বজন, গুণগ্রাহী ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।



এদিকে, গতকাল রাতে বিএনপির নিবেদিতপ্রাণ মির্জা শিপলুর মরদেহ তাঁর বাড়িতে পৌঁছানোর পূর্বেই সেখানে উপস্থিত হন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ, অন্যতম সদস্য খন্দকার আব্দুল জব্বার সোনা, সাংগঠনিক সম্পাদক সফিকুল ইসলাম পিটু ও অপর সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ। এছাড়াও চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সকল পৌর, থানা, উপজেলা কমিটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা মির্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলুর বাড়িতে উপস্থিত হন।


চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে তিনি দলীয় ত্যাগ, নেতৃত্ব ও সৌজন্যমূলক রাজনীতির জন্য জেলার রাজনীতিতে সবার প্রিয়মুখ পরিচিতি পেয়েছিলেন। তাঁর অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। তাঁর এই মৃত্যু দলের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। মির্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলুর মৃত্যুতে চুয়াডাঙ্গার রাজনৈতিক অঙ্গন, সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।’


এদিকে, মির্জা শিপলুর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রদল। জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মো. শাহাজান খান ও সাধারণ সম্পাদক মোমিন মালিতা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘একজন সাচ্চা জাতীয়তাবাদী, অমিত সম্ভাবনাময়ী তরুণ তুর্কি মির্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলুর মৃত্যুতে বিএনপির অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। ছাত্রদলের মাঝ থেকে উঠে আসা নেতৃত্ব মির্জা শিপলু ছিলেন অনেকের জন্য অনুকরণীয়। মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। সেই সাথে শোক সন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছি।’



কমেন্ট বক্স
notebook

আলমডাঙ্গার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কাবিল উদ্দিনের ইন্তেকাল