চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা শহিদ মিনার মাঠে ১২টি সেফটি ট্যাংক নির্মাণ করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন ব্রাইট মডেল স্কুলের মালিক জাকারিয়া হিরো। শহিদ মিনার স্থাপনার ভেতরে ও তলদেশে সেফটি ট্যাংক নির্মাণ করে পবিত্র স্থাপনাটিকে অপমান ও অপবিত্র করার অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসী। এ ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছে আলমডাঙ্গাবাসী। দাবি উঠেছে-অবিলম্বে এই ট্যাংকগুলো অপসারণ করতে হবে।
সূত্র জানায়, শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত আলমডাঙ্গা সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে নির্মিত শহিদ মিনারটির আশপাশের জায়গা দীর্ঘদিন ধরে দখল করে রেখেছেন স্কুল পরিচালক জাকারিয়া হিরো। অভিযোগ রয়েছে-তিনি তার বহুতল ভবনের পায়খানার সেফটি ট্যাংক স্থাপন করেছেন শহিদ মিনার স্থাপনার মাটির নিচে। বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার মধ্যে থাকলেও প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে জাকারিয়া হিরো সাধারণ মানুষের প্রতিবাদকে উপেক্ষা করে আসছিলেন।
গত ৫ জানুয়ারি চুয়াডাঙ্গা আদালতের নির্দেশে নিয়োগপ্রাপ্ত অ্যাডভোকেট কমিশন এখলাছুর রহমান কাজল ২৮ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার বিতর্কিত জমির মাপজোক করেন। এ সময় দেখা যায়, ব্রাইট মডেল স্কুলের যাতায়াতের রাস্তাটি শহিদমিনার মাঠের অন্তর্ভুক্ত।
জমি নিয়ে চলমান মামলার আসামি করা হয় স্কুলের পাশে থাকা সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নান এবং ব্যায়ামাগার উদ্ধার কমিটির আহ্বায়ক ইকবাল হোসেনসহ কয়েকজনকে। মাপজোক শেষে অ্যাডভোকেট কমিশন জানান, ব্রাইট মডেল স্কুলের রাস্তা শহিদমিনার মাঠের ভেতর পড়েছে এবং সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ঘটনাস্থলে এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক গিয়াস উদ্দিন, সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নান, ব্যায়ামাগার উদ্ধার কমিটির আহ্বায়ক ইকবাল হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুল করিম চনচল, আব্দুর রশিদ মঞ্জু, সাহিত্যিক পিন্টু রহমান, রেজাউল করিম, মোল্লা ফারুক এলাহি ইসলাম, সার্ভেয়ার মাজেদুল ইসলাম, ছাত্রদলের সভাপতি জাহিদ হাসান শুভ, সদস্য সচিব আল ইমরান রাসেল, পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব মাহমুদুল হক তন্ময়সহ স্থানীয় ছাত্রদল, শিক্ষক ও এলাকাবাসী।
জানা গেছে, অতীতে স্কুল পরিচালনার সুবিধার্থে প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রাইভেট স্কুলের সভাপতি বানিয়ে জাকারিয়া হিরো অনিয়ম ও দখল কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন। এমনকি ব্যায়ামাগারের সরকারি জমিও আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। মাপজোক শেষে এখন এলাকাবাসীর দাবি-শহিদমিনারের নিচে থাকা পায়খানার ১২টি সেফটি ট্যাংক দ্রুত অপসারণ করতে হবে।
আলমডাঙ্গা ব্যায়ামাগার উদ্ধার কমিটির সভাপতি ইকবাল হোসেন মিয়া বলেন, ‘মাপজোকের পর কয়েক মাস অতিবাহিত হলেও ভূমিদস্যু জাকারিয়া হিরো শহিদমিনারের জমি দখল করে নির্মিত সেফটি ট্যাংকগুলো অপসারণ করেননি। আমরা জেলা প্রশাসকের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
আলমডাঙ্গা নাগরিক উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘শহিদ মিনার আমাদের জাতীয় গৌরবের প্রতীক। সেই জায়গায় পায়খানার সেফটি ট্যাংক নির্মাণ ঘৃণ্য কাজ। জাকারিয়া হিরো এই অপকর্ম করে জাতির সঙ্গে বেয়াদবি করেছেন। প্রশাসনের উচিত দ্রুত অপসারণ নিশ্চিত করা।’
এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য ব্রাইট মডেল স্কুলের মালিক জাকারিয়া হিরোর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও জাকারিয়া হিরো সেফটি ট্যাংক অপসারণ করেননি। বিষয়টি নিয়ে আলমডাঙ্গায় ক্রমশ জনমনে অসন্তোষ বাড়ছে। শহিদমিনারের পবিত্রতা রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না হলে এলাকাবাসী কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।