বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫
সর্বশেষ স্থানীয় সংবাদ জাতীয় রাজনীতি আর্ন্তজাতিক সারাদেশ অর্থনীতি খেলা বিনোদন ফ্যাক্টচেক আজকের পত্রিকা প্রযুক্তি চাকরি

এক প্ল্যাটফর্মে চুয়াডাঙ্গার শিক্ষার্থীরা, শুরু হলো বদলে দেওয়ার যাত্রা

উঠে এলো জেলার সমস্যা, সম্ভাবনা ও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার বার্তা
  • আপলোড তারিখঃ ১১-০৬-২০২৫ ইং
এক প্ল্যাটফর্মে চুয়াডাঙ্গার শিক্ষার্থীরা, শুরু হলো বদলে দেওয়ার যাত্রা


এ এক দারুণ সম্ভাবনা। নাড়ির টানকে চেনার দৃঢ় প্রত্যায়। মা-মাটির জন্য অঙ্গীকার। প্রতিবেশী, সমাজ, জেলা তথা দেশের জন্য কল্যাণের শপথ। যে শপথ ছিল, তবে একত্রিত হচ্ছিল না। কত সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও চুয়াডাঙ্গার কতজনের কত কষ্ট। তবুও এবার মুখ তুলে চাওয়ার যেন সময় হয়েছে। নিজের আপনদের প্রতি দায়িত্ব ছিল, আছে, থাকবে। তবে সেই থাকাই যেন একত্রের সুর নতুন করে উকি দিচ্ছে। সেই দশে মিলে করি কাজ আবার ফিরছে। এতো সূচনা, কেন দিচ্ছি? কেনই বা দেব না? যাদের ওপর ভবিষ্যৎ, তাদের ভালো কিছু বহু সূচনা তথা প্রশংসার দাবি রাখে।


বলছিলাম গতকাল অনুষ্ঠিত হওয়া চুয়াডাঙ্গা জেলার শিক্ষার্থীদের আয়োজনে ঈদ পুনর্মিলনীর কথা। এটি শুধুই একটি ঈদ পুনর্মিলনী ছিল না। ছিল চুয়াডাঙ্গার শিক্ষার্থীদের একে অন্যের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ তৈরির মহৎ ভাবনা। মূলত এই আয়োজনের মাধ্যমে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত চুয়াডাঙ্গা জেলার শিক্ষার্থীরা এক প্লাটফর্মে কাজ শুরু করলেন। চুয়াডাঙ্গার কৃতী সন্তান বিশ্বের প্রবাসী বাঙালিদের সবথেকে বড় সংগঠন এনআরবি ওয়ার্ল্ড ও বাংলাদেশ বিজনেস চেম্বার অব সিঙ্গাপুরের (বিডিচ্যাম) প্রেসিডেন্ট আলহাজ্ব সাহিদুজ্জামান টরিকের পৃষ্ঠপোষকতায় চুয়াডাঙ্গা জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতি নামে একটি সংগঠন প্রায় তিন দশক পর আবারও কার্যক্রম শুরু করলো।


এ কার্যক্রমে চুয়াডাঙ্গাকে নিয়ে কী ভাবছে চুয়াডাঙ্গার তরুণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা? তা শিক্ষার্থীরাই প্রকাশ করেন। তরুণ মেধাবী এই শিক্ষার্থীরা এদিন যেন জানান দিলেন, আমরা আছি, আমরা আমাদের প্রতিবেশী তথা জেলার কথা ভাবি। আমরা চুয়াডাঙ্গার জন্য অনেক কিছুর পরিবর্তন চাই আবার আমরাও অনেক ভালো কিছু করতে পারি। শিক্ষার্থীদের বক্তব্যে চুয়াডাঙ্গা নানা সমস্যা এবং সম্ভাবনা উঠে আসে। উঠে আসে আত্মপ্রত্যায়। উঠে আসে এ প্রজন্মের মেধাবী শিক্ষার্থীর জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসা, দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধের উজ্জল চেতনা।


অনুষ্ঠানে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী মেজবাউল হক বলেন, ‘আমাদের চুয়াডাঙ্গা জেলা কতটা অবহেলিত, তা উপলব্ধি করতে সদর হাসপাতালের দিকে একবার তাকালেই যথেষ্ট। মানুষের সবচেয়ে অসহায় মুহূর্ত অসুস্থতার সময়। আমি একজন মেডিকেল শিক্ষার্থী, অথচ আমার বাবাকে নিজ জেলার হাসপাতালেই কোনো সেবা দিতে পারিনি। চিকিৎসা যেন শুধু নামমাত্র রয়ে গেছে। এটা আমাদের অধিকার হরণের শামিল। প্রত্যেকেই তো পরিচিতি বা সামর্থ্য নিয়ে বড় শহরের হাসপাতালগুলোতে যেতে পারে না। তাহলে কেন নিজ জেলাতেই আমরা এমন বঞ্চনার শিকার হবো? এ প্রশ্নের উত্তর আমাদেরকেই খুঁজে বের করতে হবে।


একজন কৃষক বা দিনমজুরের জীবনের কি কোনো মূল্য নেই? আমরা চাই সম্মানজনক, উন্নত চুয়াডাঙ্গা। একদিনে পরিবর্তন সম্ভব না হলেও, ধারাবাহিক প্রচেষ্টায় নিশ্চয়ই একদিন আমরা মাথা তুলে দাঁড়াবো। যেমন একজন মানুষ শিক্ষার্থীদের একত্র করেছেন, তেমনই আমরাও একসঙ্গে এগিয়ে যাবো।’ তিনি আরও বলেন, ‘আর একটা বিষয় না বললেই নয়- মাদক! সীমান্তঘেঁষা এই জেলায় মাদকের সহজ প্রবেশপথ রয়েছে, যা ভয়ংকর বাস্তবতা। আমরা চুয়াডাঙ্গার সন্তানরা চাই, জেলাটিকে বদলে দিতে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করছি, ঠিক তেমনভাবেই আমরা আবার ফিরে আসবো নিজেদের মাটিতে, নিজের জেলার জন্য কাজ করতে। সাহিদুজ্জামান টরিক ভাইয়ের মতো মানুষ আমাদের জন্য প্রেরণা হয়ে আছেন, যিনি নিজের স্বাচ্ছন্দ্যের জীবন ত্যাগ করে বারবার ফিরছেন মানুষের টানে।’


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানথ্রোপলজি বিভাগের শিক্ষার্থী সবুজ আহম্মেদ বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা জেলা স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন আমাদের বহুদিনের প্রত্যাশা পূরণ করেছে। এতদিন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলো এখন বৃহৎ পরিসরে এক প্ল্যাটফর্মে রূপ নিচ্ছে। দেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা চুয়াডাঙ্গার কৃতী সন্তানদের একত্রিত করে একটি সহায়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা সম্ভব হবে এই উদ্যোগের মাধ্যমে। একজন শিক্ষার্থী তার সমস্যার কথা সহজেই তুলে ধরতে পারবে- এমন একটি প্রক্রিয়া চালু হলো আজ, যা আগে ছিল না। এটি সম্ভব হয়েছে সাহিদুজ্জামান টরিক স্যারের নিরলস অনুপ্রেরণায়। এখন আমরা জানি, আমরা আর একা নই। দেশের যে প্রান্তেই থাকি না কেন, চুয়াডাঙ্গার কেউ না কেউ পাশে থাকবে-এই বিশ্বাসই আমাদের শক্তি।’


সাত কলেজ স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি ও তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী নোবেল ইসলাম সূর্য বলেন, ‘সাহিদুজ্জামান টরিক স্যারের চিন্তা-ভাবনা থেকে যে উদ্যোগের সূচনা, তা আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা চুয়াডাঙ্গার শিক্ষার্থীরা আজ এক ছাদের নিচে এসে দাঁড়িয়েছে-এটা ভাবাই যায় না! একটি শিক্ষার্থী যখন নতুন শহরে পা রাখে, তখন তাকে অনেক প্রতিকূলতা পেরোতে হয়। কিন্তু এই উদ্যোগ সেই কঠিন সময়েও পাশে থাকার মতো একটি বন্ধন তৈরি করেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আজ আমরা শিক্ষার্থী, কাল যখন দেশের নানা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কাজ করব, তখনও এই বন্ধন আমাদের চুয়াডাঙ্গা জেলার উন্নয়নে কাজে আসবে। একসঙ্গে থাকলে পিছিয়ে পড়া জেলাকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।’


ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এমএইচ হৃদয় বলেন, ‘যখন পরিচয় দিতে হয়, তখন কেউ কেউ পাশের জেলার নাম ব্যবহার করে, কারণ চুয়াডাঙ্গাকে সবাই চেনেন না। এটা কষ্টের, অপমানেরও। আজকের এই মিলনমেলায় এসে সাহস পেয়েছি- একদিন এমন সময় আসবে, যখন ‘চুয়াডাঙ্গা’ নামটি উচ্চারণ করলেই তা সম্মান পাবে, চিনতে ভুল করবে না কেউ। এই অনুষ্ঠানে এসে আমি জেনেছি, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এত চুয়াডাঙ্গার শিক্ষার্থী আছেন! এই বন্ধন, এই পরিচয়-আমাদের নতুন করে ভাবতে শেখায়। সাহিদুজ্জামান টরিক স্যারের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে আমরা সবাই সহযাত্রী।


ধন্যবাদ জানাতে চাই সেই মানুষটিকে, যিনি এই স্বপ্ন দেখেছেন- চুয়াডাঙ্গাকে নতুনরূপে সারাদেশের সামনে উপস্থাপন করার যে প্রয়াস তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন, তা নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। আমি তাকে প্রথম দেখেছি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, তার বিভিন্ন উদ্যোগে একজন চুয়াডাঙ্গাবাসী হিসেবে নিজেকে গর্বিত বোধ করেছি। আজ প্রথমবার তাকে সামনে থেকে দেখার সুযোগ হলো। তার মুখে উচ্চারিত প্রতিটি কথা শুধু আমার নয়, এখানে উপস্থিত সবার হৃদয়ে নতুন শক্তি ও প্রেরণা সঞ্চার করেছে। আমি বিশ্বাস করি, এই অনুপ্রেরণাই আমাদেরকে নিজ জেলার পরিচিতি দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করবে।’


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদেক মুনিম বলেন, ‘সবচেয়ে বেদনার বিষয়, যখন দেখি নিজের জেলার কেউ রাষ্ট্রীয় বা প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদে আছেন, অথচ তার জেলার শিক্ষার্থীরা কোনো সহায়তা পায় না- এটা হয় পরিচয় না থাকার কারণে। বন্ধন না থাকার কারণে। আজকের এই উদ্যোগ সেই শূন্যস্থান পূরণ করছে। আমরা হয়ত এখনই কিছু করতে পারছি না, তবে এই অনুষ্ঠানের শিক্ষা আমাদের ভেতরে রয়ে যাবে। আগামী দিনে এই বন্ধনই কাউকে হতাশ হতে দেবে না। চুয়াডাঙ্গার যে কোনো শিক্ষার্থী আজ জানে-তার পাশে কেউ না কেউ আছে।’


সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি উমে মাহবুবা বলেন, ‘আমরা যদি একে অপরের পাশে থাকি, তবে আমাদের পথ চলা সহজ হবে। আমরা পরস্পরের থেকে শিখতে পারব, ছোটদের শিখাতে পারব। চুয়াডাঙ্গার শিক্ষার্থীরা এই প্ল্যাটফর্মে এসে নিজেদের একটি পরিবার খুঁজে পাচ্ছে। আমরা কাউকে পেছনে টানতে চাই না, আমরা চাই সবাইকে এগিয়ে দিতে। তবেই আমাদের জেলা এগিয়ে যাবে, গড়ে উঠবে এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।’



কমেন্ট বক্স
notebook

নৈশপ্রহরী না থাকায় নিরাপত্তাহীন দত্তনগর হাইস্কুল