চুয়াডাঙ্গায় গ্রীষ্মের আকর্ষণীয় ফল তাল ও তার কচি কচি শাঁস। তাপপ্রবাহে জেলায় বেড়েছে ফলটির কদর। জেলা শহরের অলি-গলিসহ উপজেলাগুলোর বিভিন্ন বাজার এলাকার মোড়ে মোড়ে বিক্রি হচ্ছে তালশাঁস। জানা গেছে, একটি শাঁস আকারভেদে ৫ থেকে ৭ টাকা, একটি তাল ১৫ থেকে ২০ টাকা এবং হালি হিসেবে ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সরেজমিন দেখা গেছে, শহরের বিভিন্ন স্থানে তালশাঁস বিক্রি হচ্ছে। তালের পসরা নিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে এক সময় প্রচুর পরিমাণ তালগাছ দেখা যেত। কিন্তু বর্তমানে তেমন একটা দেখা যায় না।
গতকাল সোমবার চুয়াডাঙ্গার শহরের কলেজ রোডে দেখা যায়, পাশাপাশি দুজন বিক্রেতা তাল বিক্রি করছেন। বিক্রেতারা ধারালো দা দিয়ে কেটে শাঁস তুলে বিক্রি করছেন। একটি তালে সাধারণত তিনটি শাঁস থাকে। আর একটি শাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ৭ টাকায়। প্রতিদিন প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ পিচ তাল বিক্রি হয় বলে একজন বিক্রেতা জানান। বেসরকারি চাকরিজীবী সিরাজুল ইসলাম তাল শাঁস কিনছিলেন। তিনি বলেন, ‘বছরের ভেতর তালটা খুব সুস্বাদু খাবার। খেতেও মজা। যেহেতু বছরের ফল খেতে হয়, সবারই খাওয়া প্রয়োজন। আমি নিজেও খাচ্ছি এবং বাসার জন্য নিয়ে যাচ্ছি।’
আরেকজন ক্রেতা মোস্তাক খন্দকার জানান, ‘তাল আমাদের চুয়াডাঙ্গার একটি ভালো ফল। বছরে একবার তো, তাই ছোট বড় সকলের তাল শাঁস খাওয়া দরকার। আমার নাতির জন্য নিয়ে যাচ্ছি।’ সদর উপজেলার বেলগাছি গ্রামের আরিফুর রহমান জানান, ‘তাঁদের ১০টি তালগাছ রয়েছে। এ মৌসুমে কাঁচা তাল বিক্রি করে ভালো টাকা আয়ও হয়েছে তাঁর।’ খুচরা বিক্রেতা মনিরুল হোসেন বলেন, ‘তাল এবার খুব ভালো হয়েছে। চাহিদাও খুব ভালো। গরমে সকলে ঠাণ্ডা তালশাস খাচ্ছেন।’ আরেক খুচরা বিক্রেতা মো. লিটন আলী বলেন, ‘তাল এবছর ভালোই হয়েছে। খাওয়ার লোকও ভালো। আমাদের বেচেও মজা হচ্ছে। দামও কম আছে। ২০ টাকা হালি। সদর উপজেলার দিগড়ী গ্রামের বৃদ্ধ মসলে উদ্দীন বলেন, ‘আগে প্রচুর তাল গাছ ছিল। এখন আর তেমন দেখা যায় না। দিন দিন এই গাছটি কমে আসছে।’
তালশাঁসের পুষ্টি গুনাগুণ সম্পর্কে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আওলিয়ার রহমান বলেন, ‘তালের শাঁস শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল। গরমের দিনে তালের শাঁসে থাকা জলীয় অংশ পানি শূন্যতা দূর করে। এছাড়া ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, এ, বি কমপ্লেক্সসহ নানা ধরনের ভিটামিন রয়েছে। তালে থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। কচি তালের শাঁস রক্তশূন্যতা দূর করে। চোখের দৃষ্টি শক্তি ও মুখের রুচি বাড়ায়। মৌসুমি ফল হিসেবে তাল খাওয়া উচিত।’