পবিত্র ঈদুল আযহা যাতে সুশৃঙ্খল, নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণভাবে উদ্যাপিত হয়, সে লক্ষ্যে চুয়াডাঙ্গায় অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রস্তুতিমূলক সভা। গতকাল রোববার সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজানুর রহমান পূর্ববর্তী সভার কার্যবিবরণী উপস্থাপন করেন এবং তার আলোকে এবারের প্রস্তুতি পরিকল্পনা তুলে ধরেন। সভায় ঈদুল আযহাকে কেন্দ্র করে কোরবানির পশুর হাটে জাল নোট সনাক্তকরণ, বর্জ্য দ্রুত অপসারণ, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও জনসচেতনতা বাড়ানোর বিষয়ে নানা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়- কোরবানির পশু নির্ধারিত স্থানে জবাই করতে হবে এবং প্রত্যেকে নিজ দায়িত্বে পরিবেশ পরিষ্কার রাখতে হবে। হাসপাতাল, জেলখানা ও শিশু পরিবারে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করতে হবে। ঈদুল আযহা উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশি তৎপরতা জোরদার করতে হবে। জাল টাকা চক্র ও অজ্ঞান পার্টির অপতৎপরতা রোধে নজরদারি বাড়াতে হবে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা, সিভিল সার্জন হাদী জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এম সাইফুল্লাহ, জীবননগরের ইউএনও মো. আল-আমীন, দামুড়হুদার ইউএনও তিথি মিত্র, কৃত্রিম প্রজনন বিভাগের উপ-পরিচালক ডা. শামিমুজ্জামান, এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার, জেলা সঞ্চয় কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম, মৎস্য কর্মকর্তা দীপক কুমার পাল, মহিলা বিষয়ক উপ-পরিচালক (অ.দা.) মাকসুরা জান্নাত, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-সহকারী পরিচালক এস এম জাকির হোসেন, শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা আফসানা ফেরদৌস, তথ্য কর্মকর্তা শিল্পী মণ্ডল, পরিবার পরিকল্পনা উপ-পরিচালক দীপক কুমার সাহা, টিটিসির অধ্যক্ষ মো. মুছাবেরুজ্জামান এবং প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বিপুল আশরাফসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা।
সভায় যেসব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়:
কোরবানির পশুর হাটগুলোতে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। হাটগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। বিদেশ থেকে অবৈধভাবে গবাদিপশু আমদানি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। পশু বিক্রির সময় হাসিলের হার নির্ধারণ করতে হবে। নির্ধারিত স্থানে পশু জবাই নিশ্চিত করতে পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। বর্জ্য দ্রুত অপসারণে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় ইমামদের মাধ্যমে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। কোরবানির চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ যথাযথভাবে করতে হবে। হাটে জালনোট শনাক্তকরণে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করতে হবে।
ঈদুল আযহা উপলক্ষে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ঈদের জামাত সংক্রান্ত বিষয়ে বলা হয়— সংশ্লিষ্ট ঈদগাহ কমিটি আবহাওয়া বিবেচনায় জামাতের সময় নির্ধারণ ও প্রয়োজনে পরিবর্তন করতে পারবে। ক্ষুদ্র জামাতগুলোকে একত্রিত করে বড় জামাত আয়োজনের পাশাপাশি বৃষ্টির সম্ভাবনায় বিকল্প হিসেবে মসজিদে ঈদের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিজ নিজ উপজেলায় জেলার কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কর্মসূচি গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়। জেল সুপারকে কারাগারে বন্দিদের ঈদের জামাতে অংশগ্রহণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়। জেলা শহরের জামাত ও কর্মসূচি ব্যাপকভাবে প্রচারের জন্য জেলা তথ্য অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ঈদগাহ মাঠে মাইক সরবরাহে সংশ্লিষ্ট পরিচালনা কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সভায় আরও বলা হয়- তোরণ নির্মাণের কারণে যেন সড়ক চলাচলে বিঘ্ন না ঘটে এবং যানবাহন এলোমেলোভাবে পার্কিং না করে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকতে হবে। ঈদের দিন শহরের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করার আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া ঈদের আগের রাতে কোনো বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ড যেমন—নাচ-গান, মাইকিং, আতশবাজি, পটকা ফোটানো বা মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা যেন না হয়, সে বিষয়ে কঠোর নজরদারির আহ্বান জানানো হয়। ঈদের রাতের মাইকিং কেবল ঈদের জামাতের তথ্য প্রচারের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে। যাত্রীবাহী যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া ও অতিরিক্ত যাত্রী বহনের প্রবণতা রোধে পুলিশের পাশাপাশি বিআরটিএর সহকারী পরিচালককেও তদারকিতে থাকার অনুরোধ জানানো হয়। কোরবানির পশুর চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে লবণের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া ঈদের পূর্বে শহরের ট্রেনসমূহ পরিষ্কার রাখা এবং কোরবানির বর্জ্য দ্রুত অপসারণে পৌরসভাকে সক্রিয় ভূমিকা পালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়।