সোমবার, ২৩ জুন, ২০২৫
সর্বশেষ স্থানীয় সংবাদ জাতীয় রাজনীতি আর্ন্তজাতিক সারাদেশ অর্থনীতি খেলা বিনোদন ফ্যাক্টচেক আজকের পত্রিকা প্রযুক্তি চাকরি

চুয়াডাঙ্গায় আত্মহত্যার উদ্বেগজনক ঊর্ধ্বগতি

ছয় দিনে ৪ জনের মৃত্যু, একই দিনে কিশোর-যুবতীর ফাঁস
  • আপলোড তারিখঃ ১৯-০৫-২০২৫ ইং
চুয়াডাঙ্গায় আত্মহত্যার উদ্বেগজনক ঊর্ধ্বগতি

চুয়াডাঙ্গা জেলাজুড়ে বৃদ্ধি পেয়েছে আত্মহত্যার প্রবণতা। গত ৬ দিনে গলায় ফাঁস ও বিষপানে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল রোববার চুয়াডাঙ্গা সদর ও আলমডাঙ্গার বেতবাড়িয়ায় গলায় ফাঁস দিয়ে এক যুবতী ও কিশোর আত্মহত্যা করেছেন। একই দিনে বিষপান করে আরও একজন যুবক গুরুতর অসুস্থ হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নিহত কিশোর অপূর্ব দাস (১৬) আলমডাঙ্গার জেহালা ইউনিয়নের বেতবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা নরসুন্দর সাধন দাশের ছেলে।


অপূর্বর পরিবারের সদস্যরা জানায়, রোববার দুপুর ১২টার দিকে নিজ ঘরে ছেঁড়া লুঙ্গি দিয়ে গলায় ফাঁস দেয় সে। শব্দ পেয়ে পরিবারের সদস্যরা দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তার মৃত্যু হয়। অপূর্বর দাদী কনিকা দাশ জানান, ‘দুই মাস হলো পাঁচকমলাপুর ব্রিজ মোড়ের সঞ্জুর সেলুনে কাজে দিয়েছিলাম অপূর্ব। কিন্তু ও যেতে চাইতো না। সকাল ৯টার দিকে আমি নিজে গিয়ে দোকানে যায়, যেন তারা অপূর্বকে ডেকে নিয়ে যায়। ফিরে এসে শুনি, ও ঘরে ফাঁস দিয়েছে।’


চাচা মদন দাশ বলেন, ‘ঘরের মধ্যে শব্দ পেয়ে অপূর্বর দাদা আমাকে ডাকলে গিয়ে দেখি দরজা বন্ধ। দরজার ফাঁকা দিয়ে তাকালে ভেতরে অপূর্বকে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়। এসময় দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করি। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যায় সে মারা যায়। অপূর্ব ছোটবেলা থেকেই একটু হালকা বুদ্ধিসম্পন্ন ছিল। ক্লাস ‘টু’ পর্যন্ত লেখাপড়ার পর আর স্কুলেও যায়নি সে।’


চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. আফরিনা ইসলাম বলেন, ‘অপূর্বকে গুরুতর অবস্থায় আনা হয়। গলায় ফাঁসের দাগ ছিল। ভর্তি রাখা হয়, কিন্তু সন্ধ্যায় সে মারা যায়। বিষয়টি থানা পুলিশকে জানানো হয়েছে।’ 


অন্যদিকে, চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের ইসলামপাড়ার চাঁন মিয়ার মেয়ে বিপাসা খাতুন (২৬) পারিবারিক মনোমালিন্যে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সদর হাসপাতাল সড়কের মা ক্লিনিকে রিসিপশনিস্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। বিপাশা'র বড় ভাবি ফতে খাতুন বলেন, ‘সকালে মায়ের সঙ্গে তুচ্ছ বিষয়ে ঝগড়া হয়। দুপুর ১২টার দিকে তার ঘর থেকে কোনো শব্দ না পেয়ে পেয়ে উঁকি দিয়ে দেখি, গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে আছে। এসময় আমার চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে দরজা ভেঙে তাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে।’


এদিকে, একই দিনে মজিবর ওরফে সুমন (২৮) এক যুবক বিষপান করে অসুস্থ হয়ে পড়ে। রোববার বেলা ৩টার দিকে নিজ বাড়িতে তিনি বিষপান করেন। পরিবারের সদষ্যরা তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা তাকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। মজিবর দর্শনা থানাধীন নেহালপুর গ্রামের শহর আলীর ছেলে। গতকাল সন্ধ্যায় পরিবারের সদস্যরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মজিবর কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।


এর আগে গত ১১ মে স্ত্রীর সঙ্গে অভিমানে বিষপান করেন চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বুজরুকগড়গড়ী মাদরাসাপাড়ার মৃত আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে মিরাজুল ইসলাম (২০)। উনরত চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতাল থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৩ মে (সোমবার) দিবাগত রাত ১টার দিকে তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যু সম্পর্কে স্থানীয় সূত্র জানায়, স্ত্রী সাথীর সঙ্গে মিরাজের মনোমালিন্য চলছিল। এরইমধ্যে স্ত্রী বাপের বাড়ি চলে যায়। ঘটনার আগে মিরাজ স্ত্রীকে আনতে তাকে ফিরিয়ে দিয়ে তালাক চাই। পরে তিনি ঘাসমারা বিষপান করেন।


গত ১৫ মে আলমডাঙ্গায় বিষপানে শিমুল হোসেন (২০) নামে অপর এক যুবকের আত্মহত্যা করে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহত শিমুল জোড়গাছা গ্রামের সোনা মিয়ার ছেলে। স্থানীয় সূত্র জানায়, শিমুল কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। অতিরিক্ত জেদের কারণে পরিবারের সঙ্গে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে তিনি অভিমানে বিষপান করেন। বিষয়টি টের পেয়ে সকাল সাড়ে ঘটনার দিন  ৮টার দিকে পরিবারের সদস্যরা শিমুলকে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। তবে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল ৯টা ১০ মিনিটে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. ওয়াহেদ মাহমুদ রবিন তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কোনো অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ।


এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খালেদুর রহমান বলেন, রোববার থানায় পৃথক দুটি অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। দুপুরে অপমৃত্যুর খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে বিপাসা খাতুনের লাশ উদ্ধার করে সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ে বিপাশার লাশের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’


আত্মহত্যার প্রবণতার বিষয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আত্মহত্যা কোনো সমস্যার সমাধান নয়। যে কোনো মানসিক চাপ বা সংকটে পরিবার ও সমাজের সহযোগিতা নেওয়া জরুরি। এমন ঘটনা এড়াতে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আমরা সব সময় উঠান বৈঠক, সামাজিক অনুষ্ঠানহ বিভিন্ন সেমিনারে সাধারণ মানুষদেরকে এ বিষয়ে সতর্ক করে চলেছি। পরিবার থেকে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে, মোবাইল গেম, টিকটকসহ বিভিন্ন কারণে কিশোর-কিশোরী, যুবক-যবতীদের এমনকি বিবাহিতদের মধ্যেও আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ধর্মীয় অনুশাসনসহ সামাজিক মূল্যবোধ বাড়িয়ে এই প্রবণতা কমিয়ে আনা সম্ভব।’ 



কমেন্ট বক্স
notebook

পানি খেতে গিয়ে বিদ্যুতের ফাঁদে যুবকের মৃত্যু