এবার চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইনস্টিটিউটে নানা অনিয়মের সরেজমিন তদন্ত করেছেন নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের গঠিত তদন্ত কমিটি। গতকাল মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইনস্টিটিউটে এ তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেন তারা। আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমে কোনো বক্তব্য দেয়নি ওই তদন্ত কমিটি। আবার এই তদন্ত কমিটির প্রতি সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করেছেন চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষকদের একটি পক্ষ।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইনস্টিটিউট শিক্ষার্থীদের
ভর্তিতে সরকার নির্ধারিত ফি’র চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ নানা অভিযোগে চুয়াডাঙ্গার
স্থানীয় বেশ কয়েকটি পত্রিকায় ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরই প্রেক্ষিতে অভিযোগ
তদন্তে নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর একটি তদন্ত কমিটি এবং চুয়াডাঙ্গা সিভিল
সার্জন ডা. হাদী জিয়াউদ্দীন আহমেদ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা
ডা. আওলিয়ার রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চুয়াডাঙ্গা
নার্সিং ইনস্টিটিউটে ৩ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি
কোর্সে ২৫ জন এবং ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্সে আরও ৫০ জন ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন
করে। তাদের ভর্তির জন্য সরকারিভাবে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রতি ৬ হাজার ৮১০ টাকা করে
ভর্তি ফি নির্ধারণ করে দেয়া হয়। অথচ চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ সেই সরকারি
নিয়ম অমান্য করে অতিরিক্ত ফি ধরে রশিদ তৈরি করে।
চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইনস্টিটিউটের ভর্তি ফি’র জন্য অর্থ
আদায় রশিদে দেখা যায়, ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্সে ১৫টি খাতে ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ
করেছে। এছাড়া ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কোর্সে ১৪টি খাত দেখিয়ে
৮ হাজার ৫ শ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে হিসেবে ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্সে ৫০
জনের কাছ থেকে জনপ্রতি ৩ হাজার ১৯০ টাকা অতিরিক্ত অর্থ হিসেবে আদায় করেছে এবং ডিপ্লোমা
ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কোর্সের ২৫ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে জনপ্রতি আরও
১ হাজার ৬৯০ টাকা করে আদায় করা হয়েছে।
এছাড়া চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইন্সট্রাক্টর ইনচার্জ
ফরিদা ইয়াছমিনের বিরুদ্ধে আরও উঠেছে নানা অভিযোগ। শিক্ষার্থীদের মেডিকেল টেস্টের জন্য
পাঠানো হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল মেডিকেল সেন্টারে। সেখানেও কমিশন বাণিজ্য
করেন তিনি। রেজিস্ট্রেশন কিংবা অ্যাডমিট কার্ডের জন্য টাকা আদায় করেন নিয়মিত। অপর দিকে,
নার্সিং ইনস্টিটিটিউটে যে কোনো উন্নয়নমূলক কাজে স্বজনপ্রীতি, মিলের বাজারের জন্য স্বেচ্ছাচারিতা,
অফিস নিয়ন্ত্রণে ইনচার্জ ফরিদা ইয়াছমিন ও ইন্সট্রাক্টর আনোয়ারা খাতুনের স্বামীদের অনধিকার
চর্চা ও অফিস স্টাফদের হুমকি-ধমকি দেয়ার অভিযোগও রয়েছে ইনচার্জ ফরিদা ইয়াছমিনের বিরুদ্ধে।
চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জনের গঠিত ওই তদন্ত কমিটি গত ৬
জানুয়ারি নার্সিং ইনস্টিটিউট পরিদর্শন শেষে ১৩ জানুয়ারি তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। তদন্ত
প্রতিবেদনে ওই কমিটি স্পষ্ট করে জানিয়েছিল, চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইনস্টিটিউটে ভর্তি কমিটি
থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত রেজ্যুলেশন না করে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের জন্য ব্যাংক রশিদের মাধ্যমে
অর্থ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করে, পরবর্তীতে এই ধরনের আর্থিক লেনদেনের
বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে কাজ করা যেতে পারে। এছাড়া ভর্তি কমিটির
৫ সদস্যের মধ্যে ৩ জন জানিয়েছেন, তারা মৌখিকভাবে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের কথা জানতেন,
কিন্তু অন্য ২ সদস্য এ ব্যাপারে কিছু জানতেন না। প্রতিবেদনে এই পরিসংখ্যানের পার্থক্যকে
সমীচীন না বলে মন্তব্য করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটি জানিয়েছিল, শিক্ষার্থীদের সাদা কাগজে স্বাক্ষর
করানোর অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। তবে শিক্ষার্থীদের তদন্তে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও
শুধুমাত্র তিনজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। এছাড়া ইন্সট্রাক্টরদের স্বামীদের
অনধিকার চর্চার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। প্রতিবেদনে অধিকাংশ স্থানেই পরামর্শের প্রস্তাব
দেয়া হয়েছে, যেখানে ‘আর্থিক বিষয়ে অডিট করা যেতে পারে’ বলেও উল্লেখ করা হয়। তবে জেলা
স্বাস্থ্য বিভাগ এ বিষয়ে কোনো পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়নি। নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি
অধিদপ্তরের গঠিত তদন্ত কমিটি গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে তদন্ত করে গেলেও কোনো আনুষ্ঠানিক
বক্তব্য দেয়নি।