অর্থ উপার্জন করতে গিয়ে শিশুরা জড়িয়ে পড়ছে নানাবিধ অপরাধমুলক কর্মকান্ডে
- আপলোড তারিখঃ ১৮-০৯-২০১৭ ইং
দর্শনায় দিন দিন বেড়েই চলেছে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা
ওয়াসিম রয়েল: দর্শনায় দিন দিন বেড়েই চলেছে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা। সেইসাথে একটু বেশি উপার্যনের জন্য কোমলমতি শিশুরা জড়িয়ে পড়ছে নানা রকম অপরাধমুলক কর্মকান্ডে। সীমান্তবর্তী দর্শনার আশপাশ এলাকার অনেক হতদরিদ্র পরিবারের অবিভাবকেরা দারিদ্রতার কারনে ছেলেদের লেখাপড়ার খরচ, চিকিৎসা ও নিজেদের ভরণ-পোষন যোগাতে না পেরে কোমলমতি সস্তানদের বাধ্য করছে শিশুশ্রমে। এসব শিশুরা মুদি দোকান, হোটেল, বেকারী, চায়ের দোকান, ফার্নিচার তৈরি, ওয়েল্ডিংয়ের দোকান, সাইকেল-মোটরসাইকেলের গ্যারেজসহ পাখিভ্যান, ইঞ্জিনচালিত অবৈধযান নছিমন-করিমন চালনার মত কঠিন, বিপজ্জনক ও ঝুকিপুর্ন কাজও করতে দেখা গেছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা এলাকা ভারত সীমান্তবর্তী হওয়ায় এক শ্রেণির মাদক চোরাচালানীরা তাদের মাদকদ্রব্য বহনের জন্য দরিদ্র ঘরের সন্তান অনেক নিষ্পাপ শিশুসন্তানদেরকে ব্যবহার করছে। ফলে কাচা টাকার লোভে তারাও এক সময় মাদকব্যবসা ও মাদক সেবনে জড়িয়ে পড়ছে। অভাবের কারনে এসব শিশুরা সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে অনেক কম মুল্যে তাদের শ্রম বিক্রি করছে, আর বেশির ভাগই খাচ্ছে তাদের ব্যবহারকারী মালিকপক্ষ। বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়োজিত এসব শিশুশ্রমিকদের কর্মক্ষেত্রে নেই কোন স্বাধীনতা। শুধুমাত্র দারিদ্রতার কারনেই দিনের পর দিন এসব নির্যাতন আর বঞ্চনা সহ্য করে ওরা শ্রম বিক্রি করে। শিশুদের মজুরির দাম কম কিন্তু বেশি কাজ করিয়ে নেওয়া যায় বলে এক শ্রেনীর বিবেকহীন মানুষ তাদেও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে বেছে নিচ্ছে এসব শিশু শ্রমিকদের। শিশুশ্রম আইনত নিষিদ্ধ হলেও দর্শনার কোথাও মানা হচ্ছেনা এ আইন। এসব শিশু শ্রমিকদের বেশিরভাগই দুঃস্থ্য ও নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তান।
শিশুশ্রমে ঝুঁকে পড়ার কারন হিসেবে একজন অভিভাবক দর্শনার আজিজের কাছে জনতে চাইলে তিনি বলেন, দারিদ্রতা ও অভাব অনটনের কারনে তাদের শিশু সন্তানদেরকে কাজে দিতে বাধ্য হয়েছে। শিশুদের স্কুলে পাঠানোর ব্যাপারে তিনি জানান, পেটে ভাত না থাকলে কি আর লেখাপড়া হয়? আর লেখাপড়া শিখেই বা কি হবে? চাকরি দেবে কে?
ইটভাটায় কর্মরত ১৪ বছর বয়সী শিশু শ্রমিক শামিম জানায়, তারা দুই ভাই, তাদের বাবা নেই। মা অন্যের বাড়িতে ঝি-এর কাজ করে। তাতে তাদের দু’বেলা পেট পুরে খাবার জোটে না। তাই তার মা তাদেরকে ইভাটায় কাজে লাগিয়ে দিয়েছে। একই গ্রামের ভুমিহীন পরিবারের সন্তান এনামুল (১৪) ও তার সহোদর আলমগীর (১২) দুই ভাই তারা সকলেই ইটভাটায় কাদা তৈরির করার কাজ করে। তাতে প্রতি সপ্তায় তারা একেকজন আড়াইশ থেকে তিনশ টাকা হাজিরা পায়। এদের কেউই কখনো স্কুলে যায়নি।
তবে দর্শনায় বেশির ভাগই লক্ষ করা গেছে ওয়েল্ডিং দোকানে সব চেয়ে বেশি শিশুশ্রমিক কাজ করছে। এমনই এক শিশুশ্রমিক শাকিল (১৩) জানায়, সে ক্লাস ফাইভে পড়ত। দিনমজুর বাবা ছয় সন্তানের ভরণপোষন দিতে পারে না। তাই তাকে এক বছর আগে কাজ শেখার জন্য একটি ওয়েল্ডিংয়ের দোকানে কাজে লাগিয়ে দিয়েছে। আগে সপ্তাহে ২০-৩০ টাকা করে দিত। গত দুই মাস থেকে ৫০০ টাকা করে বেতন দিচ্ছে। কাজের পরিধী জানতে চাইলে মায়া ভরা মুখটি ছোট্ট করে বলে, অনেক সময় তাকেও রড, পাতি ইত্যাদি কাটা, বড় হামার দিয়ে এগুলো সোজা করা ও ওয়েল্ডিংয়ের কাজও করতে হয়।
শিশুশ্রম বৃদ্ধির কারন হিসেবে সুধী মহলের বক্তব্য, শিশুশিক্ষার ব্যাপারে সচেতনতার অভাব, দুস্থ্য ও স্বল্প আয়ের পরিবারের সস্তান, ভুমিহীন পরিবার, স্বামী পরিত্যক্তা বিধবা মায়েদের শিশুসন্তানেরাই বেশিরভাগ শিশুশ্রমে জড়িয়ে পড়ছে। অনেক সময় সারাদিন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের ফলে অল্প উপার্যন হওয়ায় এক শ্রেনীর অসাধু মাদকব্যবসায়ীরা মোটা টাকার লোভ দেখিয়ে তাদের দিয়ে মাদক বিক্রির কাজ করাচ্ছে। এক সময় দেখা যাচ্ছে চুরি, ছিনতাই, চোরাচালানীসহ নানাবিধ অপরাধমুলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে এ সকল শিশুশ্রমিকেরা।
কমেন্ট বক্স