বুধবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৫
সর্বশেষ স্থানীয় সংবাদ জাতীয় রাজনীতি আর্ন্তজাতিক সারাদেশ অর্থনীতি খেলা বিনোদন ফ্যাক্টচেক আজকের পত্রিকা প্রযুক্তি চাকরি

শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত লড়াই করেই থামলেন নুসরাত

  • আপলোড তারিখঃ ১১-০৪-২০১৯ ইং
শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত লড়াই করেই থামলেন নুসরাত
সমীকরণ প্রতিবেদন: অনেক স্বপ্ন ছিল নুসরাত জাহান রাফির। পাশবিক লালসার আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেল তার সব স্বপ্ন। প্রতিবাদী নুসরাতের সংকল্প ছিল যারা তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে, সেই দুর্বৃত্তদের সাজা নিশ্চিত করতে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার। নিজের খাতায় লিখেছিলেন, ‘আমি লড়ব শেষ নিশ^াস পর্যন্ত।’ করেছেনও তাই। লাইফ সাপোর্টে যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তেও বিচার চেয়েছেন তার গায়ে আগুন দেয়া দুর্বৃত্ত ও তাদের নির্দেশদাতা মাদ্রাসা অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার। অবশেষে তার সেই লড়াই থামল। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে গতকাল বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ^াস ত্যাগ করেন লড়াকু মেয়েটি। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাতকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। ঢামেক বার্ন ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নুসরাতকে বাঁচাতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাকে বাঁচানো গেল না। ডা. সেন জানান, রাতে নুসরাতের মরদেহ ঢামেক হিমাগারে থাকবে। আজ সকালে ময়নাতদন্তের পর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এর আগে গতকাল সকাল থেকেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এক পর্যায়ে লাইফ সাপোর্টও তেমন কাজ করছিল না। নুসরাত জাহান রাফির চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম গতকাল রাতে সাংবাদিকদের বলেন, নুসরাতকে বাঁচাতে আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু পারিনি। তিনি বলেন, আজ (গতকাল বুধবার) সকাল থেকে নুসরাতের অবস্থা অবনতি হতে থাকে। একাধিকবার তার হার্ট অ্যাটাক করেছিল, তারপরও সে সার্ভাইভ করছিল। কিন্তু রাত সাড়ে ৯টার দিকে মারা যায় সে। বিষয়টি নিহতের পরিবারকে জানানো হয়েছে। নুসরাতের চাচাতো ভাই ওমর ফারুক বলেন, দুপুরে রক্তের দরকার পড়েছিল, তখন আমরা রক্ত সংগ্রহ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু চিকিৎসকরা সকাল থেকে বারবার আমাদেরকে নুসরাতের স্বাস্থ্যের অবনতির কথা বলছিলেন। চিকিৎসকদের আশঙ্কাই সত্যি হলো। নুসরাতের মৃত্যুর খবর শুনে বার্ন ইউনিটের আইসিইউর সামনে থাকা নুসরাতের বাবা, বড় ভাই ও মামা কান্নায় ভেঙে পড়েন। বুক চাপড়ে তারা আহাজারি করতে থাকেন। এ সময় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। নুসরাতের চাচাতো ভাই ফরহাদ হোসেন বলেন, আমরা নুসরাতের হত্যার বিচার চাই, আর কিছু বলার নাই। যারা এমন একটা কাজ করল, তারা এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরা তাদের শান্তি চাই। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে নুসরাতের আত্মা অন্তত শান্তি পাবে। ঢামেক হাসপাতালের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও নুসরাতের মৃত্যুটা ঠেকানো গেল না। কারণ, তার শরীরের ৮৫ ভাগ মেজর বার্ন ছিল। এর মধ্যে ৬০ ভাগ গভীর পোড়া। তার শ^াসতন্ত্র পোড়া আছে। কেরোসিন নিজেই টক্সিক। এটা ফুসফুস এবং ব্রেনের কার্যক্ষমতাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়। এর ৪টা কারণই তার মৃত্যুর প্রধান কারণ বলা যায়। প্রসঙ্গত, গত ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজীতে পরীক্ষাকেন্দ্রের ভেতর রাফির গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যাচেষ্টা চালায় দুর্বৃত্তরা। সোনাগাজী পৌর এলাকার ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসাকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। নুসরাত ওই মাদ্রাসা থেকেই আলিম পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত কক্ষ থেকে ছাদে ডেকে নিয়ে কয়েকজন বোরকাপরা নারী পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ করেছেন ওই শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যরা। তারা জানান, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে দায়ের করা মামলা তুলে না নেয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে। এ তথ্য ফেনী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্থানীয় পুলিশকেও জানিয়েছেন ওই শিক্ষার্থী। তার অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় এ দিন বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের ১০২ নম্বর কক্ষে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়। পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন ওই ছাত্রীর মা। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৭ মার্চ সকাল ১০টার দিকে অধ্যক্ষ তার অফিসের পিয়ন নূরুল আমিনের মাধ্যমে ছাত্রীকে ডেকে নেন। পরীক্ষার আধা ঘণ্টা আগে প্রশ্নপত্র দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ওই ছাত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন অধ্যক্ষ। পরে পরিবারের দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হন অধ্যক্ষ। সেই মামলা তুলে না নেয়ায় অধ্যক্ষের লোকজন ওই ছাত্রীর গায়ে আগুন দিয়েছে।


কমেন্ট বক্স
notebook

হারদী ইউনিয়নে ধানের শীষের প্রচারণায় শরীফুজ্জামান শরীফের পাশে তৃণমূলের ঢল