মেতে উঠবে পূজামন্ডপগুলো : আজ থেকে শুরু হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব
- আপলোড তারিখঃ ২৬-০৯-২০১৭ ইং
ঢাকে পড়বে কাঠি, ধূপের ধোঁয়া, ঘণ্টা, উলুধ্বনি আর কাঁসরের আওয়াজে
হেমন্ত সিংহ রায়: শেষ হলো অপেক্ষার পালা। দুর্গতিনাশিনী দশভুজা দেবীর বোধনের মধ্যে দিয়ে আজ থেকে সারা দেশে মহাধুমধামে শুরু হচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। ঢাকের বোল, কাঁসর ঘণ্টা, শাঁখের ধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠবে সারা দেশের পূজাম-প। বছর ঘুরে দেবীর আগমনিবার্তায় উৎসবের আমেজ এখন হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে। আনন্দময়ীর আগমনী সুরে অনুরণিত চারদিক। আজ ষষ্ঠীতে দশভুজাদেবী দুর্গার অধিবাস। মাতৃরূপে আজ তিনি পূজামন্ডপে আগমন করবেন। উচ্চারিত হবে ‘যা দেবী স্বর্ভূতেষু, মাতৃরূপেণ সংস্থিতা, নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমোঃ নমোঃ। ঢাকে পড়বে কাঠি, ধূপের ধোঁয়া, ঘণ্টা, উলুধ্বনি আর কাঁসরের আওয়াজের সঙ্গে ভক্তিমন্ত্রে মেতে উঠবে পূজামন্ডপগুলো। নৌকায় চড়ে এবার পিতৃগৃহে আসছেন দেবী মেনকা। এর ফল হচ্ছে বসুন্ধরা শস্যপূর্ণা ও জলবৃদ্ধি হয়ে উঠবে। শ্বশুরবাড়ি কৈলাস থেকে কন্যারূপে তিনি মর্ত্যলোকে আসছেন বাপের বাড়ি বেড়াতে। সঙ্গে আসছেন মায়ের চার সন্তান। সিদ্ধিদাতা গণেশ, ধন ও ঐশ্বর্যের প্রতীক দেবী লক্ষ্মী, জ্ঞানের প্রতীক দেবী সরস্বতী এবং বলবীর্য ও পৌরুষের প্রতীক কার্তিক। শারদীয় দুর্গোৎসব সনাতন ধর্মাবলাম্বীদের কাছে সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। এ সময় মা দুর্গা স্বামীর বাড়ি কৈলাশ থেকে পুত্র/কন্যা সঙ্গে নিয়ে বাবার বাড়ি মর্ত্যে এসে ভক্তদের দুর্গতী ও সকল প্রকার অসুরী (অশুভ শক্তি) নাশের মাধ্যমে ভক্তদের আর্শিবাদ এবং ভক্তদের আনন্দ প্রদান করেন। দশমীর দিন দর্পণ বিসর্জনের মাধ্যমে আবার কৈলাশে ফিরে যান এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে যে, ‘আগামী বছর ধরাধামে ফিরে আসবেন ভক্তদের মাঝে কল্যাণ ও সুখের বার্তা নিয়ে’।
বছর বাদে মেয়ে আসছেন বাপের বাড়ি, মেয়েকে বরণ করতে তাই আয়োজনেরও কমতি নেই। ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে ৫ দিনব্যাপী এ পূজার সকল প্রস্তুতি। ধর্মীয় এ উৎসব ঘিরে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহসহ সারাদেশ এখন আন্দনমুখর। ঘরের বউ-ঝিরা নারিকেলের নাড়ু, মুড়ি, চিড়া, খইয়ের মোয়া, সন্দেশসহ বিভিন্ন উপাচার বানানোর কাজে ব্যস্ত।
পঞ্জিকামতে এ বছর ২৫ শে সেপ্টেম্বর (৮ই আশ্বিন) কল্পারোম্ভ ও সন্ধ্যায় বোধনের মাধ্যমে দেবী দুর্গাকে মর্ত্যলোকে আসার জন্য আহ্বান জানানো হয়। ২৬ শে সেপ্টেম্বর (৯ই আশ্বিন) অধিবাসের মাধ্যমে ষষ্টী পূজার মধ্যে দিয়ে মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। ২৭ শে সেপ্টেম্বর (১০ই আশ্বিন) বুধবার সকাল ৮ টা ৫৮ মিনিট হতে ৯ টা ৫৮ মিনিটের মধ্যে নবপত্রিকা প্রবেশের মাধ্যমে মহাসপ্তমী পূজার সূচনা হবে। ২৮ শে সেপ্টেম্বর (১১ই আশ্বিন) বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টা ৫৮ মিনিটে মহাষ্টমী পূজা শুরু হয়ে অঞ্জলী নিবেদনের মাধ্যমে শেষ হবে। এদিন সন্ধ্যা ৭ টা ৩৫ মিনিটে সন্ধ্যিপূজা শুরু হয়ে ৭ টা ৫৯ মিনিটে বলিদান এবং রাত ৮টা ২৩ মিনিটে অঞ্জলী প্রদানের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে। ২৯ শে সেপ্টেম্বর (১২ই আশ্বিন) শুক্রবার সকাল ৮ টা ২২ মিনিটে মহানবমী পূজা শুরু হয়ে দেবীকে অঞ্জলী নিবেদনের মাধ্যমে মহানবমী সমাপণী হবে। ৩০ সেপ্টেম্বর (১৩ই আশ্বিন) সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে মহাদশমী পূজা শুরু হয়ে দর্পণ বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শারদীয় দুর্গা পূজার সমাপ্তি ঘটবে। সন্ধ্যায় প্রতিমা বিসর্জন এবং শান্তিজল গ্রহণ করবে ভক্তরা।
শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সাংসদ জাতীয় সংসদের হুইপ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন, চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজগর টগর, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ, পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দীন, পৌর মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু পৃথক পৃথক ভাবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
হুইপ ছেলুন এক শুভেচ্ছা বিবৃতিতে জানান, দুর্গাপূজা দেশের জনগণের মাঝে পারস্পরিক সহমর্মিতা ও ঐক্য সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশ্ব অঙ্গনে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল এক দৃষ্টান্ত। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এ ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রেখে জাতীয় উন্নয়নে সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখবেন।
জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ জানান, অশুভ শক্তির বিনাশ এবং সত্য ও সুন্দরের আরাধনা শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রধান বৈশিষ্ট্য। দুর্গাপূজা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসব নয়, এটা আজ সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। সব সম্প্রদায়ের মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সুষম উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা পরিবার, দেশ ও দশের সম্পূরক হয়ে থাকবো।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন হিন্দু বোদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের চুয়াডাঙ্গা জেলা সভাপতি ডা. মার্টিন হীরক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক জয়ন্ত কুমার সিংহ রায়, যুগ্ম সম্পাদক কিশোর কুমার কুন্ডুসহ আরো অনেকে।
চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার নিজাম উদ্দীন জানিয়েছেন, চুয়াডাঙ্গায় কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে জেলার ৪টি উপজেলায় ৯৬টি পূজা মন্ডপে পালিত হবে সার্বজনীন দূর্গাপূজা। চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের ২৯টি, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ২৭টি, দামুড়হুদায় উপজেলায় ১৯টি ও জীবননগর উপজেলায় ২১টি পূজা মন্ডপে পূজা উদযাপিত হবে। এর মধ্যে জেলায় অধিক গুরুত্বপূর্ণ পূজা মন্ডপের সংখ্যা হলো ১০টি, গুরুত্বপূর্ণ মন্ডপ ৪০টি ও সাধারণ মন্ডপের সংখ্যা হলো ৪৬টি। আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর হতে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দূর্গাৎসব চলবে। সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য চার-পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করে প্রত্যেকটি পূজা মন্ডপে স্থায়ীভাবে পুলিশ, আনসার সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি থানায় চেকপোস্ট স্থাপনসহ পূজা মন্ডপে ১টি মোবাইল টিম ও অপ্রিতিকর ঘটনা এড়াতে গোয়েন্দা নজরদারী বাড়ানো হয়েছে।
এদিকে গতকাল সোমবার বিভিন্ন পূজা মন্ডপে ঘুরে ঘুরে শারদীয় দুর্গাপূজার শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি পরিদর্শন করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তরিকুল ইসলাম।
কমেন্ট বক্স