ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনা

ঈদের চার দিনে ঝরল ৫ প্রাণ, আহত অর্ধশতাধিক

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:০১:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪
  • / ৩২ বার পড়া হয়েছে


দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে মোটরসাইকেল। দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল চালানোয় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে ঈদের দিন বৃহস্পতিবার থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এসময় আহত হয়েছেন অন্তত অর্ধশতাধিক।
চুয়াডাঙ্গা:
ঈদের দিন বন্ধুদের সঙ্গে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন শামীম (১৭) নামে এক কিশোর। গত বৃহস্পতিবার বিকেল চারটায় চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থানাধীন ডিহি কেষ্টপুর ফার্মের সামনে শামীমের মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে গুরুতর জখম হলে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার তাকে জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সদর হাসপাতাল থেকে রাজশাহী নেওয়ার পথে সন্ধ্যা ৭টায় তার মৃত্যু হয়। নিহত শামীম সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের বোয়ালমারী পাড়ার মো. শাহ জামালের ছেলে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঈদের দিন বিকেলে শামীম বন্ধুদের সঙ্গে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বের হয়। এসময় তারা একে অপরের সঙ্গে পাল্টা-পাল্লিও দিচ্ছিলো। দোস্ত বাজার হয়ে হিজলগাড়ির দিকে যাওয়ার পথে ডিহি কেষ্টপুর ফার্মের সামনে পৌঁছালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে খেজুর গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে গুরুতর আহত হয় সে। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিলে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী নেওয়ার পথে সন্ধ্যা ৭টায় তার মৃত্যু হয়। দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বিপ্লব কুমার সাহা জানান, কোনো অভিযোগ না থাকায় ঘটনার দিনই মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এদিকে, ঈদের দিন চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন আরও তিনজন। আহতরা হলেন- চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সুমিরদিয়াপাড়ার জেহের আলীর ছেলে ইব্রাহীম (১৮), একই এলাকার শুকুর আলীর ছেলে আনারুল (১৮) ও দর্শনার গফুর মন্ডলের ছেলে সাহেব আলী (৭০)। ঈদের দ্বিতীয় দিন সড়ক দুর্ঘটনায় জখম হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন সদর উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের পলাশের ছেলে আব্দুল্লাহ (৪০) ও আকবার আলীর ছেলে আরজুল্লাহ (৪৫), আলমডাঙ্গা উপজেলার আঠারোখাদা গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে নাজমুল (১৮), একই উপজেলার বড় গাংনী গ্রামের মানিকের স্ত্রী কহিনুর (৩৫) ও চুয়াডাঙ্গার নূরনগর গ্রামের লিটনের ছেলে চঞ্চল (১৬)। ঈদের তৃতীয় দিন সদর হাসপাতালের জরুরি ও অন্তবিভাগ চিকিৎসা নিয়েছেন আরও চারজন। এরা হলেন- চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের উজ্জল আলীর ছেলে মিঠুন (২০), ভিমরুল্লার আফজাল আলীর ছেলে ফিরোজ (২৪), দামুড়হুদার দলকা লক্ষ্মীপুর গ্রামের ইলিয়াসের স্ত্রী মিতা ও একই উপজেলার কুড়ুলগাছি গ্রামের হালিমের স্ত্রী মরিয়ম (২৫)।
আলমডাঙ্গা:
ঈদের চতুর্থ দিনে আলমডাঙ্গার পৃথক স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই বন্ধুসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এসময় আহত হয়েছেন আরও একজন। নিহতরা হলেন- ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাধুহাটি ইউনিয়নের বড়াই গ্রামের সেণ্টুর ছেলে মো. খালিদ (১৮), তার বন্ধু একই গ্রামের আরিফের ছেলে তামিম (১৮) ও আলমডাঙ্গার চিৎলা ইউনিয়নের কূলপালা গ্রামের পশ্চিমপাড়া মৃত. শরবত আলী মন্ডলের ছেলে ইখতার মণ্ডল (৭০)। আহত সজিব চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের সিন্দুরিয়া গ্রামের শরিফুল ইসলামের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত রোববার ভোর পাঁচটার দিকে আলমডাঙ্গার খাসকররা ইউনিয়নের পারলক্ষ্মীপুর গ্রামে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন খালিদ, তামিম ও তাদের বন্ধু সজিব। ঘটনাস্থলেই খালিদ ও তামিমের মৃত্যু হয়। গুরুতর জখম অবস্থায় সজিবকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সজিবকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিল।
খালিদের পরিবারের সদস্যরা জানায়, রোজার পূর্বে খালিদের পিতা তাকে একটি নতুন মোটরসাইকেল কিনে দেয়। খালিদ ঘুরতে ভালোবাসতো। মোটরসাইকেল পাওয়ার পর সে দু-একদিন পরপরই বিভিন্ন স্থানে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে যেত। গত শনিবারও সে কুষ্টিয়ায় একটি গানের অনুষ্ঠানে যায়। রোববার ভোরে ফেরার পথে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে খালিদ ও তার বন্ধু তামিমের মৃত্যু হয়।
আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ গণি মিয়া বলেন, ভোরে জানতে পারি পারলক্ষ্মীপুর গ্রামে রাস্তার পাশে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই যুবক নিহত ও একজন আহত হয়েছে। তারা তিনজনই একই মোটরসাইকেলের আরোহী ছিল। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। সেখানে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ভেঙেচুরে যাওয়া একটি মোটরসাইকলেও পাওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যায়, দ্রুতগতির মোটরসাইকেলটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে গুরুতর জখম হলে ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়ায় লাশ হস্তান্তর করা হয়।
এদিকে, একই দিন সন্ধ্যায় আলমডাঙ্গার উপজেলার কুলপালা গ্রামে লাটাহাম্বারের (স্যালো ইঞ্জিনচালিত অবৈধ যান) ধাক্কায় ইখতার মণ্ডল (৭০) নামে এক বৃদ্ধ প্রাণ হারান। তিনি উপজেলার চিৎলা ইউনিয়নের কুলপালা গ্রামের পশ্চিমপাড়া মৃত শরবত আলী মন্ডলের ছেলে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাড়ির পাশেই ইখতার মণ্ডলের মেয়ের বিবাহ হয়েছে। গত রোববার সন্ধ্যায় নামাজ শেষে রাস্তার পাশ দিয়ে পায়ে হেঁটে মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে যাচ্ছিলেন তিনি। এসময় পেছন থেকে আলোছাড়া একটি লাটাহাম্বার তাকে ধাক্কা দেয়। এতে ইখতার মণ্ডল গুরুতর জখম হলে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়। তবে হাসপাতালে পৌঁছানোর আগে পথেই তার মৃত্যু হয়। পরে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ইখতার উদ্দীনকে মৃত ঘোষণা করেন।
দামুড়হুদা:
ঈদের দিন মোটরসাইকেলযোগে ঘুরতে বেড়িয়ে দামুড়হুদায় সড়ক দুর্ঘটনায় দুই কিশোর জখম হয়েছে। এসময় স্থানীয়রা চিকিৎসার জন্য তাদের উদ্ধার করে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়। দুজনেই হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়। আহত দুজন হলেন- উপজেলার কানাইডাঙ্গা গ্রামের মুনছুর আলীর ছেলে সাইফুল ইসলাম (১৪) ও মেহেরপুর চাঁদবিলা গ্রামের মহিবুল হকের ছেলে মোজাম্মেল হক।
গাংনী:
মেহেরপুরের গাংনীতে মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে হেলাল উদ্দীন (২৬) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। এসময় আহত হয়েছেন নারীসহ আরও পাঁচজন। ঈদের চতুর্থ দিন গত রোববার দিবাগত রাত ৯টার দিকে মেহেরপুর-কুষ্টিয়ার সড়কের শুকুরকান্দি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত হেলাল উদ্দীন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার হাটবোয়ালিয়া গ্রামের মোড়ভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা ও মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার আকুবপুর গ্রামের আব্দুল জলিলের জামাতা। আহতরা হলেন- নিহত হেলালের স্ত্রী জুই খাতুন (১৯), শালক জীবন হাসেনসহ (১৫) ভ্যানের দুইজন যাত্রী।
নিহত হেলালের চাচাশ্বশুর জিয়াউদ্দীন জানান, আকুবপুর গ্রামে হেলাল তার শ্বশুরবাড়ি দাওয়াত খেয়ে স্ত্রী ও শ্যালককে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে মোড়ভাঙ্গা এলাকায় যাচ্ছিলেন। তারা গাংনী উপজেলার শুকুরকান্দি নামক স্থানে পৌঁছালে একটি ব্যাটারিচালিত ভ্যানের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এসময় হেলালসহ ৬ জন আহত হন। পথচারীরা আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিলে, কর্তব্যরত চিকিৎসক হেলালকে মৃত ঘাষেণা করেন।
গাংনী থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি (তদন্ত) মনোজিৎ কুমার নন্দী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে, তবে কোনো পক্ষ থেকে অভিযোগ হয়নি। নিহতের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনা

ঈদের চার দিনে ঝরল ৫ প্রাণ, আহত অর্ধশতাধিক

আপলোড টাইম : ১০:০১:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪


দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে মোটরসাইকেল। দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল চালানোয় প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে ঈদের দিন বৃহস্পতিবার থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এসময় আহত হয়েছেন অন্তত অর্ধশতাধিক।
চুয়াডাঙ্গা:
ঈদের দিন বন্ধুদের সঙ্গে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন শামীম (১৭) নামে এক কিশোর। গত বৃহস্পতিবার বিকেল চারটায় চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থানাধীন ডিহি কেষ্টপুর ফার্মের সামনে শামীমের মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে গুরুতর জখম হলে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার তাকে জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সদর হাসপাতাল থেকে রাজশাহী নেওয়ার পথে সন্ধ্যা ৭টায় তার মৃত্যু হয়। নিহত শামীম সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের বোয়ালমারী পাড়ার মো. শাহ জামালের ছেলে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঈদের দিন বিকেলে শামীম বন্ধুদের সঙ্গে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বের হয়। এসময় তারা একে অপরের সঙ্গে পাল্টা-পাল্লিও দিচ্ছিলো। দোস্ত বাজার হয়ে হিজলগাড়ির দিকে যাওয়ার পথে ডিহি কেষ্টপুর ফার্মের সামনে পৌঁছালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে খেজুর গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে গুরুতর আহত হয় সে। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিলে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী নেওয়ার পথে সন্ধ্যা ৭টায় তার মৃত্যু হয়। দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বিপ্লব কুমার সাহা জানান, কোনো অভিযোগ না থাকায় ঘটনার দিনই মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এদিকে, ঈদের দিন চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন আরও তিনজন। আহতরা হলেন- চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সুমিরদিয়াপাড়ার জেহের আলীর ছেলে ইব্রাহীম (১৮), একই এলাকার শুকুর আলীর ছেলে আনারুল (১৮) ও দর্শনার গফুর মন্ডলের ছেলে সাহেব আলী (৭০)। ঈদের দ্বিতীয় দিন সড়ক দুর্ঘটনায় জখম হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন সদর উপজেলার বোয়ালিয়া গ্রামের পলাশের ছেলে আব্দুল্লাহ (৪০) ও আকবার আলীর ছেলে আরজুল্লাহ (৪৫), আলমডাঙ্গা উপজেলার আঠারোখাদা গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে নাজমুল (১৮), একই উপজেলার বড় গাংনী গ্রামের মানিকের স্ত্রী কহিনুর (৩৫) ও চুয়াডাঙ্গার নূরনগর গ্রামের লিটনের ছেলে চঞ্চল (১৬)। ঈদের তৃতীয় দিন সদর হাসপাতালের জরুরি ও অন্তবিভাগ চিকিৎসা নিয়েছেন আরও চারজন। এরা হলেন- চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের উজ্জল আলীর ছেলে মিঠুন (২০), ভিমরুল্লার আফজাল আলীর ছেলে ফিরোজ (২৪), দামুড়হুদার দলকা লক্ষ্মীপুর গ্রামের ইলিয়াসের স্ত্রী মিতা ও একই উপজেলার কুড়ুলগাছি গ্রামের হালিমের স্ত্রী মরিয়ম (২৫)।
আলমডাঙ্গা:
ঈদের চতুর্থ দিনে আলমডাঙ্গার পৃথক স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই বন্ধুসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এসময় আহত হয়েছেন আরও একজন। নিহতরা হলেন- ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাধুহাটি ইউনিয়নের বড়াই গ্রামের সেণ্টুর ছেলে মো. খালিদ (১৮), তার বন্ধু একই গ্রামের আরিফের ছেলে তামিম (১৮) ও আলমডাঙ্গার চিৎলা ইউনিয়নের কূলপালা গ্রামের পশ্চিমপাড়া মৃত. শরবত আলী মন্ডলের ছেলে ইখতার মণ্ডল (৭০)। আহত সজিব চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের সিন্দুরিয়া গ্রামের শরিফুল ইসলামের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত রোববার ভোর পাঁচটার দিকে আলমডাঙ্গার খাসকররা ইউনিয়নের পারলক্ষ্মীপুর গ্রামে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন খালিদ, তামিম ও তাদের বন্ধু সজিব। ঘটনাস্থলেই খালিদ ও তামিমের মৃত্যু হয়। গুরুতর জখম অবস্থায় সজিবকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সজিবকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিল।
খালিদের পরিবারের সদস্যরা জানায়, রোজার পূর্বে খালিদের পিতা তাকে একটি নতুন মোটরসাইকেল কিনে দেয়। খালিদ ঘুরতে ভালোবাসতো। মোটরসাইকেল পাওয়ার পর সে দু-একদিন পরপরই বিভিন্ন স্থানে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে যেত। গত শনিবারও সে কুষ্টিয়ায় একটি গানের অনুষ্ঠানে যায়। রোববার ভোরে ফেরার পথে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে খালিদ ও তার বন্ধু তামিমের মৃত্যু হয়।
আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ গণি মিয়া বলেন, ভোরে জানতে পারি পারলক্ষ্মীপুর গ্রামে রাস্তার পাশে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই যুবক নিহত ও একজন আহত হয়েছে। তারা তিনজনই একই মোটরসাইকেলের আরোহী ছিল। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। সেখানে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ভেঙেচুরে যাওয়া একটি মোটরসাইকলেও পাওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যায়, দ্রুতগতির মোটরসাইকেলটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে গুরুতর জখম হলে ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্ত ছাড়ায় লাশ হস্তান্তর করা হয়।
এদিকে, একই দিন সন্ধ্যায় আলমডাঙ্গার উপজেলার কুলপালা গ্রামে লাটাহাম্বারের (স্যালো ইঞ্জিনচালিত অবৈধ যান) ধাক্কায় ইখতার মণ্ডল (৭০) নামে এক বৃদ্ধ প্রাণ হারান। তিনি উপজেলার চিৎলা ইউনিয়নের কুলপালা গ্রামের পশ্চিমপাড়া মৃত শরবত আলী মন্ডলের ছেলে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বাড়ির পাশেই ইখতার মণ্ডলের মেয়ের বিবাহ হয়েছে। গত রোববার সন্ধ্যায় নামাজ শেষে রাস্তার পাশ দিয়ে পায়ে হেঁটে মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে যাচ্ছিলেন তিনি। এসময় পেছন থেকে আলোছাড়া একটি লাটাহাম্বার তাকে ধাক্কা দেয়। এতে ইখতার মণ্ডল গুরুতর জখম হলে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়। তবে হাসপাতালে পৌঁছানোর আগে পথেই তার মৃত্যু হয়। পরে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ইখতার উদ্দীনকে মৃত ঘোষণা করেন।
দামুড়হুদা:
ঈদের দিন মোটরসাইকেলযোগে ঘুরতে বেড়িয়ে দামুড়হুদায় সড়ক দুর্ঘটনায় দুই কিশোর জখম হয়েছে। এসময় স্থানীয়রা চিকিৎসার জন্য তাদের উদ্ধার করে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়। দুজনেই হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়। আহত দুজন হলেন- উপজেলার কানাইডাঙ্গা গ্রামের মুনছুর আলীর ছেলে সাইফুল ইসলাম (১৪) ও মেহেরপুর চাঁদবিলা গ্রামের মহিবুল হকের ছেলে মোজাম্মেল হক।
গাংনী:
মেহেরপুরের গাংনীতে মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে হেলাল উদ্দীন (২৬) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। এসময় আহত হয়েছেন নারীসহ আরও পাঁচজন। ঈদের চতুর্থ দিন গত রোববার দিবাগত রাত ৯টার দিকে মেহেরপুর-কুষ্টিয়ার সড়কের শুকুরকান্দি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত হেলাল উদ্দীন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার হাটবোয়ালিয়া গ্রামের মোড়ভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা ও মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার আকুবপুর গ্রামের আব্দুল জলিলের জামাতা। আহতরা হলেন- নিহত হেলালের স্ত্রী জুই খাতুন (১৯), শালক জীবন হাসেনসহ (১৫) ভ্যানের দুইজন যাত্রী।
নিহত হেলালের চাচাশ্বশুর জিয়াউদ্দীন জানান, আকুবপুর গ্রামে হেলাল তার শ্বশুরবাড়ি দাওয়াত খেয়ে স্ত্রী ও শ্যালককে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে মোড়ভাঙ্গা এলাকায় যাচ্ছিলেন। তারা গাংনী উপজেলার শুকুরকান্দি নামক স্থানে পৌঁছালে একটি ব্যাটারিচালিত ভ্যানের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এসময় হেলালসহ ৬ জন আহত হন। পথচারীরা আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিলে, কর্তব্যরত চিকিৎসক হেলালকে মৃত ঘাষেণা করেন।
গাংনী থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি (তদন্ত) মনোজিৎ কুমার নন্দী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে, তবে কোনো পক্ষ থেকে অভিযোগ হয়নি। নিহতের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে।