ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সবাইকে কাঁঠালের ঐতিহ্য ধরে রাখার আহ্বান

চুয়াডাঙ্গায় উদীচীর আয়োজনে ৬ষ্ঠ বারের মতো কাঁঠাল উৎসব

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ০৩:৩৭:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ জুলাই ২০২৪
  • / ৮৮ বার পড়া হয়েছে

কাঁঠাল শুধু আমাদের জাতীয় ফলই নয়, খুবই পুষ্টিকর ও ভেষজগুণ সমৃদ্ধ, সুলভ ও উপকারী ফল। এর কাণ্ড, শাখা, পাতা, শেকড় কোনো কিছুই বাদ দেওয়ার মতো নয়। কিন্তু ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে নতুন প্রজন্মের ছেলে—মেয়েরা কাঁঠাল খেতে আগ্রহী নয়, বরং তাদের মধ্যে বিরূপ মনোভাব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চাহিদা না থাকায় মূল্য হ্রাস পাচ্ছে, ফলে কাঁঠাল গাছ উজাড় হচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী বাঙালী সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা বাংলাদেশের এই জাতীয় ফল কাঁঠাল। এবারে ৬ষ্ঠ বারের মতো ভিন্ন রকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করল বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী চুয়াডাঙ্গা জেলা সংসদ। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটায় চুয়াডাঙ্গা ওয়েভ ফাউন্ডেশনের প্রশিক্ষণ সেন্টারে জাতীয় ফল কাঁঠাল উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

এ অনুষ্ঠানে উদীচী চুয়াডাঙ্গার সহসভাপতি শেখ ফরিদ আহম্মেদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর সিদ্দিকুর রহমান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন কাঁঠাল উৎসবের আহ্বায়ক ও উদীচী চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি হাবীবী জহির রায়হান। কাঁঠাল উৎসবের সদস্যসচিব এবং আজকের পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি ও সময়ের সমীকরণ—এর নিজস্ব প্রতিবেদক সাংবাদিক মেহেরাব্বিন সানভীর পরিচালনায় সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন চুয়াডাঙ্গার বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাহিত্যিক আলী হোসেন, বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী অ্যাড. বজলুর রহমান, সদর উপজেলা লোকমোর্চার সভাপতি অ্যাড. মানিক আকবর, ওয়েভ ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা শুকুর আলী, ভাষানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক লিটু বিশ্বাস ও বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কাজল মাহমুদ।

এসময় উপস্থিতির মধ্যে থেকে কাঁঠাল নিয়ে রসিকতার স্মৃতিচারণ করেন জেলা লোকমোর্চার সচিব কানিজ সুলতানা, বিশিষ্ট লেখক শফিকুল ইসলাম, অরিন্দম সাংস্কৃতিক সংগঠনের সহসাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মানিক, দৈনিক সময়ের সমীকরণ পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক রুদ্র রাসেল, আকাশ খবর পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার শেখ লিটন প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর সিদ্দিকুর রহমান বলেন, কোলস্টেরলমুক্ত এ ফলে নেই কোনো ক্ষতিকারক চর্বি। রয়েছে প্রচুর ক্যালরিসহ ভিটামিন ‘এ’ এবং ভিটামিন ‘সি’, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, আয়রন, সোডিয়াম, জিঙ্ক এবং নায়াসিনসহ বিভিন্ন প্রকার পুষ্টি উপাদান। অন্যদিকে কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, শর্করা ও ভিটামিন থাকায় তা মানবদেহের জন্য বিশেষ উপকারী। কাঁঠালে বিদ্যমান ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস—আলসার, ক্যানসার, উচ্চরক্তচাপ এবং বার্ধক্য প্রতিরোধে সক্ষম। কাঁঠালে আছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের দেহকে ক্ষতিকর ফ্রির‌্যাডিকেলস থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও সর্দি—কাঁশি রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। বদহজম রোধ করে কাঁঠাল। উদীচীর এই আয়োজন নতুন প্রজন্মের মাঝে জাতীয় ফল কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতাকে তুলে ধরছে যা অবশ্যই প্রশংসনীয়।

তিনি আরও বলেন, কাঁঠালের ঐতিহ্য সবাইকে ধরে রাখতে হবে। কাঁঠালে অনেক পুষ্টি। আর ফলের অর্ধেক পুষ্টি চাহিদা মেটায় কাঁঠাল। কাঁঠাল বাগান উজাড় হয়ে যাচ্ছে। তাই এটা থামাতে হবে। সময়ের সাথে পরিবর্তন হয়ে কাঁঠাল হারিয়ে যাচ্ছে। তাই কাঁঠাল ফল ধরে রাখতে হবে। কাঁঠাল হচ্ছে ফলের রাজা। আর এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে হলে সবাইকে কাঁঠালের প্রতি ভালোবাসা জন্মাতে হবে। বিলুপ্ত প্রায় ফলটিকে টিকিয়ে রাখতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাহিত্যিক আলী হোসেন বলেন, গ্রাম—বাংলা সংস্কৃতির সাথে জড়িত কাঁঠালের বহু মজার মজার কাহিনী আছে। রসিকতার ছলে হলেও কাঁঠাল নিয়ে রঙ্গ তামাসাগুলোও বেশ জনপ্রিয়। কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল। এ ফলটি বহু প্রাকৃতিক গুণ আছে। আমাদেরকে কাঁঠালের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে মানুষের মাঝে জানতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সদর উপজেলা লোকমোর্চার সভাপতি অ্যাড. মানিক আকবর বলেন, কাঁঠাল শুধু সুস্বাদু খাদ্য না, আমাদের সভ্যতা—সংস্কৃতির অংশ। যারা ব্যবসায়ী আছেন, তারা পশ্চিমা দেশগুলোর মতো কাঁঠাল নিয়ে নানা রকম ব্যবসা করতে পারেন। উদীচীর এ ধরণের আয়োজনকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, উদীচীর এই ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন মানুষের মধ্যে কাঁঠালের যে পুষ্টিগুণাগুণ আছে, তার সঠিক ধারণা দিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

উদীচী চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি হাবীবী জহির রায়হান বলেন, কাঁঠাল কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থায় খাওয়া যায়। কাঁচা কাঁঠাল সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। কাঁঠাল পাকলে কোষ খাওয়া হয়। এ কোষ নিংড়ে রস বের করেও খাওয়া যায়। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে খাওয়ার ধরণ পরিবর্তন করা দরকার। থাইল্যান্ডে কাঁঠালের চিপস তৈরি করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে কাঁঠাল জনপ্রিয় করার বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শুকিয়ে সংরক্ষণের পাশাপাশি স্যুপ, চিপস, রস (জুস), আইসক্রিম ইত্যাদি খাবার তৈরিতেও কাঁঠাল ব্যবহার করা হচ্ছে। বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে না যায় সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কাজল মাহমুদ বাংলা সাহিত্যে এবং বাগধায় কাঁঠাল নিয়ে রসকিতাপূর্ণ আলোচনা করেন। বিশেষ করে ইচড়ে পাকা, গাছে কাঠাঁল গোঁফে তেল, পিরিতি কাঁঠালের আঁঠাসহ নানা রকম বিষয় নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা করেন। তিনি আরও বলেন, স্মরণ রাখতে হবে, বহু কিছু বিবেচনা করেই কাঁঠাল এ দেশের জাতীয় ফল। কাঁঠালের সবকিছু কাজে লাগে। এমন যেন না হয় যে, আমাদের জাতীয় ফলকেই আমরা ভুলে যাচ্ছি। চুয়াডাঙ্গায় জাতীয় ফল কাঁঠালের চাষ দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এভাবে হ্রাস পেতে থাকলে কাঁঠাল গাছ বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। হ্রাসের ফলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইতঃমধ্যে কৃষি বিভাগ কাঁঠাল নিয়ে গবেষণা করছে। আলোচনা সভা শেষে বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি কোরবান আলী মণ্ডলের হাটবোয়ালিয়া গ্রামের বাগান থেকে উপহার দেয়া কাঁঠাল ভক্ষণ করে কাঁঠাল প্রেমিরা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

সবাইকে কাঁঠালের ঐতিহ্য ধরে রাখার আহ্বান

চুয়াডাঙ্গায় উদীচীর আয়োজনে ৬ষ্ঠ বারের মতো কাঁঠাল উৎসব

আপলোড টাইম : ০৩:৩৭:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ জুলাই ২০২৪

কাঁঠাল শুধু আমাদের জাতীয় ফলই নয়, খুবই পুষ্টিকর ও ভেষজগুণ সমৃদ্ধ, সুলভ ও উপকারী ফল। এর কাণ্ড, শাখা, পাতা, শেকড় কোনো কিছুই বাদ দেওয়ার মতো নয়। কিন্তু ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে নতুন প্রজন্মের ছেলে—মেয়েরা কাঁঠাল খেতে আগ্রহী নয়, বরং তাদের মধ্যে বিরূপ মনোভাব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চাহিদা না থাকায় মূল্য হ্রাস পাচ্ছে, ফলে কাঁঠাল গাছ উজাড় হচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী বাঙালী সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা বাংলাদেশের এই জাতীয় ফল কাঁঠাল। এবারে ৬ষ্ঠ বারের মতো ভিন্ন রকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করল বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী চুয়াডাঙ্গা জেলা সংসদ। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটায় চুয়াডাঙ্গা ওয়েভ ফাউন্ডেশনের প্রশিক্ষণ সেন্টারে জাতীয় ফল কাঁঠাল উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

এ অনুষ্ঠানে উদীচী চুয়াডাঙ্গার সহসভাপতি শেখ ফরিদ আহম্মেদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর সিদ্দিকুর রহমান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন কাঁঠাল উৎসবের আহ্বায়ক ও উদীচী চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি হাবীবী জহির রায়হান। কাঁঠাল উৎসবের সদস্যসচিব এবং আজকের পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি ও সময়ের সমীকরণ—এর নিজস্ব প্রতিবেদক সাংবাদিক মেহেরাব্বিন সানভীর পরিচালনায় সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন চুয়াডাঙ্গার বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাহিত্যিক আলী হোসেন, বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী অ্যাড. বজলুর রহমান, সদর উপজেলা লোকমোর্চার সভাপতি অ্যাড. মানিক আকবর, ওয়েভ ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা শুকুর আলী, ভাষানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক লিটু বিশ্বাস ও বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কাজল মাহমুদ।

এসময় উপস্থিতির মধ্যে থেকে কাঁঠাল নিয়ে রসিকতার স্মৃতিচারণ করেন জেলা লোকমোর্চার সচিব কানিজ সুলতানা, বিশিষ্ট লেখক শফিকুল ইসলাম, অরিন্দম সাংস্কৃতিক সংগঠনের সহসাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মানিক, দৈনিক সময়ের সমীকরণ পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক রুদ্র রাসেল, আকাশ খবর পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার শেখ লিটন প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর সিদ্দিকুর রহমান বলেন, কোলস্টেরলমুক্ত এ ফলে নেই কোনো ক্ষতিকারক চর্বি। রয়েছে প্রচুর ক্যালরিসহ ভিটামিন ‘এ’ এবং ভিটামিন ‘সি’, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, আয়রন, সোডিয়াম, জিঙ্ক এবং নায়াসিনসহ বিভিন্ন প্রকার পুষ্টি উপাদান। অন্যদিকে কাঁঠালে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, শর্করা ও ভিটামিন থাকায় তা মানবদেহের জন্য বিশেষ উপকারী। কাঁঠালে বিদ্যমান ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস—আলসার, ক্যানসার, উচ্চরক্তচাপ এবং বার্ধক্য প্রতিরোধে সক্ষম। কাঁঠালে আছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের দেহকে ক্ষতিকর ফ্রির‌্যাডিকেলস থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও সর্দি—কাঁশি রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। বদহজম রোধ করে কাঁঠাল। উদীচীর এই আয়োজন নতুন প্রজন্মের মাঝে জাতীয় ফল কাঁঠাল খাওয়ার উপকারিতাকে তুলে ধরছে যা অবশ্যই প্রশংসনীয়।

তিনি আরও বলেন, কাঁঠালের ঐতিহ্য সবাইকে ধরে রাখতে হবে। কাঁঠালে অনেক পুষ্টি। আর ফলের অর্ধেক পুষ্টি চাহিদা মেটায় কাঁঠাল। কাঁঠাল বাগান উজাড় হয়ে যাচ্ছে। তাই এটা থামাতে হবে। সময়ের সাথে পরিবর্তন হয়ে কাঁঠাল হারিয়ে যাচ্ছে। তাই কাঁঠাল ফল ধরে রাখতে হবে। কাঁঠাল হচ্ছে ফলের রাজা। আর এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে হলে সবাইকে কাঁঠালের প্রতি ভালোবাসা জন্মাতে হবে। বিলুপ্ত প্রায় ফলটিকে টিকিয়ে রাখতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাহিত্যিক আলী হোসেন বলেন, গ্রাম—বাংলা সংস্কৃতির সাথে জড়িত কাঁঠালের বহু মজার মজার কাহিনী আছে। রসিকতার ছলে হলেও কাঁঠাল নিয়ে রঙ্গ তামাসাগুলোও বেশ জনপ্রিয়। কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল। এ ফলটি বহু প্রাকৃতিক গুণ আছে। আমাদেরকে কাঁঠালের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে মানুষের মাঝে জানতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সদর উপজেলা লোকমোর্চার সভাপতি অ্যাড. মানিক আকবর বলেন, কাঁঠাল শুধু সুস্বাদু খাদ্য না, আমাদের সভ্যতা—সংস্কৃতির অংশ। যারা ব্যবসায়ী আছেন, তারা পশ্চিমা দেশগুলোর মতো কাঁঠাল নিয়ে নানা রকম ব্যবসা করতে পারেন। উদীচীর এ ধরণের আয়োজনকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, উদীচীর এই ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন মানুষের মধ্যে কাঁঠালের যে পুষ্টিগুণাগুণ আছে, তার সঠিক ধারণা দিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

উদীচী চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি হাবীবী জহির রায়হান বলেন, কাঁঠাল কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থায় খাওয়া যায়। কাঁচা কাঁঠাল সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। কাঁঠাল পাকলে কোষ খাওয়া হয়। এ কোষ নিংড়ে রস বের করেও খাওয়া যায়। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে খাওয়ার ধরণ পরিবর্তন করা দরকার। থাইল্যান্ডে কাঁঠালের চিপস তৈরি করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে কাঁঠাল জনপ্রিয় করার বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শুকিয়ে সংরক্ষণের পাশাপাশি স্যুপ, চিপস, রস (জুস), আইসক্রিম ইত্যাদি খাবার তৈরিতেও কাঁঠাল ব্যবহার করা হচ্ছে। বাংলাদেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে না যায় সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কাজল মাহমুদ বাংলা সাহিত্যে এবং বাগধায় কাঁঠাল নিয়ে রসকিতাপূর্ণ আলোচনা করেন। বিশেষ করে ইচড়ে পাকা, গাছে কাঠাঁল গোঁফে তেল, পিরিতি কাঁঠালের আঁঠাসহ নানা রকম বিষয় নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা করেন। তিনি আরও বলেন, স্মরণ রাখতে হবে, বহু কিছু বিবেচনা করেই কাঁঠাল এ দেশের জাতীয় ফল। কাঁঠালের সবকিছু কাজে লাগে। এমন যেন না হয় যে, আমাদের জাতীয় ফলকেই আমরা ভুলে যাচ্ছি। চুয়াডাঙ্গায় জাতীয় ফল কাঁঠালের চাষ দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এভাবে হ্রাস পেতে থাকলে কাঁঠাল গাছ বিলুপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। হ্রাসের ফলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ইতঃমধ্যে কৃষি বিভাগ কাঁঠাল নিয়ে গবেষণা করছে। আলোচনা সভা শেষে বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি কোরবান আলী মণ্ডলের হাটবোয়ালিয়া গ্রামের বাগান থেকে উপহার দেয়া কাঁঠাল ভক্ষণ করে কাঁঠাল প্রেমিরা।