ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপন আজ

বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি, ঘাটতি ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৭:৪৪:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ জুন ২০২৪
  • / ৬৬ বার পড়া হয়েছে

আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে এবার বাজেটে খরচের লাগাম টানা হচ্ছে। প্রতি বছর গড়ে ১২ থেকে ১৫ শতাংশ আকার বাড়ানো হলেও এবার মাত্র সাড়ে ৪ শতাংশ বাড়িয়ে বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। গত জুনে চলতি অর্থবছরের জন্য যে বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছিল তার থেকে এই বাজেট মাত্র ৪ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। আগামী বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। বাকি ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ঋণের অঙ্ক বাড়ানো হচ্ছে। অবশ্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাব বলছে, আয়-ব্যয়ের সে হিসাব বাজেটে দেওয়া হয় তার কোনোটাই লক্ষ্য পূরণ হয় না। প্রতি অর্থবছর শুরুতে যে বাজেট দেওয়া হয়, ৯ মাস শেষে একবার সংশোধন করা হয়। কিন্তু অর্থবছর শেষে দেখা যায়, বাস্তবায়নের হার আরো কম। গত তিন বছর ধরে ঘোষিত বাজেটের চেয়ে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা কম ব্যয় হচ্ছে। অর্থ বিভাগের গত এক দশকের তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, প্রতি বারই বাজেট বাস্তবায়ন হচ্ছে গড়ে ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ।
এবারের বাজেট বক্তব্যের শিরোনাম করা হয়েছে ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’। অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবুল হাসান মাহমুদ আলীর এটি হবে প্রথম বাজেট ঘোষণা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা চতুর্থ মেয়াদের প্রথম বাজেট। আজ বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করা হবে। পুরো জুন জুড়েই থাকবে আলোচানয়। আর শেষে বাজেট পাশ হওয়ার পর জুলাই থেকে শুরু হবে বাস্তবায়ন। ইতিমধ্যে বিভিন্ন সময়ে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ অগ্রাধিকার পাচ্ছে। বাড়ছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা। তবে সার্বিকভাবে আগামী বাজেট হবে কিছুটা সংকোচনমূলক। দুই বছর ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানাই বাজেটে সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। এ জন্য কমিয়ে আনা হবে বাজেট ঘাটতি।
ঘাটতি পূরণে ব্যাংক থেকে ঋণ বাড়ছে :
নতুন অর্থবছরের যে বাজেট প্রস্তাব করা হচ্ছে, তাতে ঘাটতিই থাকবে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। যা কি না মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে ৪ দশমিক ৫ শতাংশের সমান। এই বিশাল পরিমাণ ঘাটতি পূরণে কয়েকটি খাতকে উৎস হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে ব্যাংকিং খাত। এই খাত থেকে মোটা দাগে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নেওয়া হচ্ছে। এর বাইরে বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য থাকছে ১ লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর পাশাপাশি ব্যাংক বহির্ভূত খাত হিসেবে বিবেচিত সঞ্চপত্র থেকে নেওয়া হবে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
রাজস্ব প্রাপ্তি :
নতুন অর্থবছরে মোট রাজস্ব প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে যা ছিল ৫ লাখ কোটি টাকা। রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮ শতাংশ। নতুন রাজস্ব প্রাপ্তির মধ্যে বরাবরের মতো এবারও বেশির ভাগ আয় করার দায়িত্বটি থাকবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে এনবিআরকে রাজস্ব আয়ের টার্গেট দেওয়া হয়েছে ৪ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা। নন-এনবিআর থেকে আসবে আরো ১৫ হাজার কোটি টাকা। আর কর ব্যতীত প্রাপ্তির টার্গেট থাকছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা। এবার করমুক্ত আয়সীমা বাড়ছে না। তবে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ২৫ শতাংশের ওপরে আরেকটি ধাপ ৩০ শতাংশের প্রস্তাব দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। পাশাপাশি অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব আসছে।
জিডিপি প্রবৃদ্ধি :
আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। পরে তা কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ করা। কিন্তু বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে—চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে বড় জোর ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। বেশ কিছুদিন ধরেই চাপে রয়েছে অর্থনীতির নানা সূচক। আগামী অর্থবছরের বাজেটে উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা, রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, সুদ পরিশোধে বাড়তি খরচ এবং বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারে বকেয়া ভর্তুকি সামলানোর মতো বিষয়কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। ফলে নতুন বাজেট ঘাটতি কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার ওপর দেওয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ জোর।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপন আজ

বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি, ঘাটতি ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা

আপলোড টাইম : ০৭:৪৪:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ জুন ২০২৪

আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে এবার বাজেটে খরচের লাগাম টানা হচ্ছে। প্রতি বছর গড়ে ১২ থেকে ১৫ শতাংশ আকার বাড়ানো হলেও এবার মাত্র সাড়ে ৪ শতাংশ বাড়িয়ে বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। গত জুনে চলতি অর্থবছরের জন্য যে বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছিল তার থেকে এই বাজেট মাত্র ৪ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। আগামী বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। বাকি ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ঋণের অঙ্ক বাড়ানো হচ্ছে। অবশ্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাব বলছে, আয়-ব্যয়ের সে হিসাব বাজেটে দেওয়া হয় তার কোনোটাই লক্ষ্য পূরণ হয় না। প্রতি অর্থবছর শুরুতে যে বাজেট দেওয়া হয়, ৯ মাস শেষে একবার সংশোধন করা হয়। কিন্তু অর্থবছর শেষে দেখা যায়, বাস্তবায়নের হার আরো কম। গত তিন বছর ধরে ঘোষিত বাজেটের চেয়ে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা কম ব্যয় হচ্ছে। অর্থ বিভাগের গত এক দশকের তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, প্রতি বারই বাজেট বাস্তবায়ন হচ্ছে গড়ে ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ।
এবারের বাজেট বক্তব্যের শিরোনাম করা হয়েছে ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’। অর্থমন্ত্রী হিসেবে আবুল হাসান মাহমুদ আলীর এটি হবে প্রথম বাজেট ঘোষণা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা চতুর্থ মেয়াদের প্রথম বাজেট। আজ বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করা হবে। পুরো জুন জুড়েই থাকবে আলোচানয়। আর শেষে বাজেট পাশ হওয়ার পর জুলাই থেকে শুরু হবে বাস্তবায়ন। ইতিমধ্যে বিভিন্ন সময়ে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ অগ্রাধিকার পাচ্ছে। বাড়ছে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা। তবে সার্বিকভাবে আগামী বাজেট হবে কিছুটা সংকোচনমূলক। দুই বছর ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে। খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানাই বাজেটে সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। এ জন্য কমিয়ে আনা হবে বাজেট ঘাটতি।
ঘাটতি পূরণে ব্যাংক থেকে ঋণ বাড়ছে :
নতুন অর্থবছরের যে বাজেট প্রস্তাব করা হচ্ছে, তাতে ঘাটতিই থাকবে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। যা কি না মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে ৪ দশমিক ৫ শতাংশের সমান। এই বিশাল পরিমাণ ঘাটতি পূরণে কয়েকটি খাতকে উৎস হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে ব্যাংকিং খাত। এই খাত থেকে মোটা দাগে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নেওয়া হচ্ছে। এর বাইরে বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য থাকছে ১ লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর পাশাপাশি ব্যাংক বহির্ভূত খাত হিসেবে বিবেচিত সঞ্চপত্র থেকে নেওয়া হবে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
রাজস্ব প্রাপ্তি :
নতুন অর্থবছরে মোট রাজস্ব প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে যা ছিল ৫ লাখ কোটি টাকা। রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮ শতাংশ। নতুন রাজস্ব প্রাপ্তির মধ্যে বরাবরের মতো এবারও বেশির ভাগ আয় করার দায়িত্বটি থাকবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে এনবিআরকে রাজস্ব আয়ের টার্গেট দেওয়া হয়েছে ৪ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা। নন-এনবিআর থেকে আসবে আরো ১৫ হাজার কোটি টাকা। আর কর ব্যতীত প্রাপ্তির টার্গেট থাকছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা। এবার করমুক্ত আয়সীমা বাড়ছে না। তবে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ২৫ শতাংশের ওপরে আরেকটি ধাপ ৩০ শতাংশের প্রস্তাব দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। পাশাপাশি অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ দেওয়ার প্রস্তাব আসছে।
জিডিপি প্রবৃদ্ধি :
আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। পরে তা কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ করা। কিন্তু বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে—চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে বড় জোর ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। বেশ কিছুদিন ধরেই চাপে রয়েছে অর্থনীতির নানা সূচক। আগামী অর্থবছরের বাজেটে উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানা, রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, সুদ পরিশোধে বাড়তি খরচ এবং বিদ্যুৎ, গ্যাস ও সারে বকেয়া ভর্তুকি সামলানোর মতো বিষয়কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। ফলে নতুন বাজেট ঘাটতি কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার ওপর দেওয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ জোর।