ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বন্ধুর মায়ের অপমানের বদলা নিতে গিয়ে লাশ হলো দুজন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৩:০২:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৩
  • / ৩২ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গার ভালাইপুরে দুই গজ কাপড়ের দাম নিয়ে তর্কের জেরে সংঘর্ষে দুই যুবককে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের ভালাইপুর বাজরের টাইলস্ মার্টের অদূরে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়রাডাঙ্গা গ্রামের নতুনপাড়ার আমজাদ হোসেনের ছেলে আলমসাধু চালক সজল আলী (২৭) ও একই গ্রামের স্কুলপাড়ার আজিজুল হকের ছেলে এনজিওকর্মী মামুন অর রশিদ (২৪)। এদিকে, গতকাল রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকেল চারটার দিকে ভালাইপুর বাজারের মন্ডল মার্কেটে ছিট-কাপড় কিনতে যান কয়েরাডাঙ্গা গ্রামের আব্দুর রশিদের স্ত্রী ছামেনা বেগম। মার্কেটের আশাবুল গার্মেন্টস ও বস্ত্রালয়ে ছামেনা বেগম দুই গজ কাপড়ের জন্য দরদাম করেন। দোকানের কর্মচারী রিয়ন ৮২ টাকা দরে কাপড় কেটে ভাজ করেন। কিন্তু দাম বেশির অভিযোগে তা না কিনেই চলে যেতে চান ছামেনা বেগম। এসময় রিয়নের সঙ্গে তার বাগবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে রিয়ন গালি গালাজ করে ছামেনা বেগমকে দোকান থেকে বের করে দেয়।
এদিকে, ছামেনা বেগম বাড়ি ফিরে তার ছেলে টিপুকে ঘটনাটি জানলে টিপুর বন্ধু সজল ও মামুনসহ বেশ কয়েকজন যুবক বিষয়টি জানার জন্য ওই দোকানে যায়। সেসময় দোকানে না থাকায় তার এলাকা থেকে রিয়নকে মোটরসাইকেলেযোগে তুলে নিয়ে ভালাইপুর মোড়ে আসে সজল ও মামুনসহ তাদের বন্ধুরা। মোড়ে পৌঁছালে স্থানীয়রা মোটরসাইকেলের পথ রোধ করলে দুই পক্ষের ৪০ থেকে ৫০ জন ঘটনাস্থলে জড় হয়। এরই মধ্যে দুই-তিনজন সজল ও মামুনকে ছুরিকাঘাতে জখম করে। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম জখম দুজনকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নেয়। পরে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন।

ছামেনা খাতুনের ছেলে টিপু বলেন, ‘আমার মা ভালাইপুর মোড়ে আসাবুলের দোকানে ছিট-কাপড় কিনতে যায়। দাম বেশি বলায় মা কাপড় না কিনে চলে যেতে গেলে দোকানের কর্মচারী রিয়ন আমার মায়ের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে ও তাকে কাঠের স্কেল দিয়ে মেরে এবং গালিগালাজ করে দোকান থেকে বের করে দেয়। এসময় বিষয়টি মিমাংসাও হয়। রাত আটটার দিকে আমিসহ আমার বন্ধু মামুন ও সজল ভালাইপুর বাজারে চা খাওয়ার যায়। সেখাসে থাকা ওই দোকানের কর্মচারী রিয়ন, তার সহযোগীরা সানোয়ার ও আকাশসহ বেশ কয়েকজন আমাদের উপর হামলা চালায়। তাদের ছুরির আঘাতে সজল ও মামুন জখম হয়। পরে হাসপাতালে নিলে দুজনেরই মৃত্যু হয়।’

নিহত সজলের স্ত্রী জেসমিন খাতুন বলেন, ‘দুপুরে আমার স্বামী আলমসাধু নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। রাতে খরব পায় তাকে কারা ছুড়ি মেরেছে। হাসপাতালে এসে জানতে পারি আমার স্বামী মারা গেছে। এখন আমার দেড় বছর বয়সী এই ছেলেকে কে দেখবে। যারা আমার স্বামীকে খুন করেছে আমি তাদের বিচার চাই।’

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক হাসানুর রহমান বলেন, ‘রাতে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা জখম অবস্থায় দুই যুবককে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে। এর মধ্যে সজলকে আমরা মৃত অবস্থায় পেয়েছি। অন্যজনকে জরুরি বিভাগ থেকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে সার্জারি বিভাগে অবজারভেশনে রাখা হয় এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজে রেফার্ড করা হয়। তবে কিছুক্ষনের মধ্যে সার্জারি বিভাগেই তার মৃত্যু হয়। দুজনের বুকে ও পেটে ছুরি জাতীয় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ময়নাতদন্ত হলে মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত করে বলা সম্ভব হবে।’

চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বিকেলে ভালাইপুর বাজারে ছিট-কাপড়ের দরদামকে কেন্দ্র করে ছামেনা বেগম নামের এক নারীকে দোকানের কর্মচারী রিয়ন তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে বের করে দেয়। ছামেনা খাতুর বাড়ি ফিরে ঘটনাটি তার ছেলে টিপুকে জানায়। সন্ধ্যায় টিপুর বন্ধু সজল ও মামুনসহ বেশ কয়েকজন যুবক রিয়নকে তার এলাকা থেকে মোটরসাইকেলেযোগে তুলে নিয়ে ভালাইপুর মোড়ে পৌঁছালে স্থানীয়রা তাদেরকে থামায়। এসময় দুই পক্ষের ৪০ থেকে ৫০ জন সেখানে জড় হয়। এরই মধ্যে সজল ও মামুন ছুরিকাঘাতে জখম হলে তাদেরকে দ্রুত উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে দুজনেরই মৃত্যু হয়।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ধরতে আমাদের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। আমরা ইতোমধ্যে ঘটনার মূল কারণ খুঁজে পেয়েছি। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে হত্যা ঘটনার সঙ্গে জড়িতদেরকে আইনের আওতায় নিতে পারবো।’

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নিহত দুই যুবকের মরদেহ সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা ছিলো। আজ (বুধবার) ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের সদস্যদের নিকট হস্তান্তর করা হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

বন্ধুর মায়ের অপমানের বদলা নিতে গিয়ে লাশ হলো দুজন

আপলোড টাইম : ০৩:০২:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গার ভালাইপুরে দুই গজ কাপড়ের দাম নিয়ে তর্কের জেরে সংঘর্ষে দুই যুবককে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে সদর উপজেলার আলুকদিয়া ইউনিয়নের ভালাইপুর বাজরের টাইলস্ মার্টের অদূরে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন, আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়রাডাঙ্গা গ্রামের নতুনপাড়ার আমজাদ হোসেনের ছেলে আলমসাধু চালক সজল আলী (২৭) ও একই গ্রামের স্কুলপাড়ার আজিজুল হকের ছেলে এনজিওকর্মী মামুন অর রশিদ (২৪)। এদিকে, গতকাল রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকেল চারটার দিকে ভালাইপুর বাজারের মন্ডল মার্কেটে ছিট-কাপড় কিনতে যান কয়েরাডাঙ্গা গ্রামের আব্দুর রশিদের স্ত্রী ছামেনা বেগম। মার্কেটের আশাবুল গার্মেন্টস ও বস্ত্রালয়ে ছামেনা বেগম দুই গজ কাপড়ের জন্য দরদাম করেন। দোকানের কর্মচারী রিয়ন ৮২ টাকা দরে কাপড় কেটে ভাজ করেন। কিন্তু দাম বেশির অভিযোগে তা না কিনেই চলে যেতে চান ছামেনা বেগম। এসময় রিয়নের সঙ্গে তার বাগবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে রিয়ন গালি গালাজ করে ছামেনা বেগমকে দোকান থেকে বের করে দেয়।
এদিকে, ছামেনা বেগম বাড়ি ফিরে তার ছেলে টিপুকে ঘটনাটি জানলে টিপুর বন্ধু সজল ও মামুনসহ বেশ কয়েকজন যুবক বিষয়টি জানার জন্য ওই দোকানে যায়। সেসময় দোকানে না থাকায় তার এলাকা থেকে রিয়নকে মোটরসাইকেলেযোগে তুলে নিয়ে ভালাইপুর মোড়ে আসে সজল ও মামুনসহ তাদের বন্ধুরা। মোড়ে পৌঁছালে স্থানীয়রা মোটরসাইকেলের পথ রোধ করলে দুই পক্ষের ৪০ থেকে ৫০ জন ঘটনাস্থলে জড় হয়। এরই মধ্যে দুই-তিনজন সজল ও মামুনকে ছুরিকাঘাতে জখম করে। খবর পেয়ে চুয়াডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম জখম দুজনকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নেয়। পরে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন।

ছামেনা খাতুনের ছেলে টিপু বলেন, ‘আমার মা ভালাইপুর মোড়ে আসাবুলের দোকানে ছিট-কাপড় কিনতে যায়। দাম বেশি বলায় মা কাপড় না কিনে চলে যেতে গেলে দোকানের কর্মচারী রিয়ন আমার মায়ের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে ও তাকে কাঠের স্কেল দিয়ে মেরে এবং গালিগালাজ করে দোকান থেকে বের করে দেয়। এসময় বিষয়টি মিমাংসাও হয়। রাত আটটার দিকে আমিসহ আমার বন্ধু মামুন ও সজল ভালাইপুর বাজারে চা খাওয়ার যায়। সেখাসে থাকা ওই দোকানের কর্মচারী রিয়ন, তার সহযোগীরা সানোয়ার ও আকাশসহ বেশ কয়েকজন আমাদের উপর হামলা চালায়। তাদের ছুরির আঘাতে সজল ও মামুন জখম হয়। পরে হাসপাতালে নিলে দুজনেরই মৃত্যু হয়।’

নিহত সজলের স্ত্রী জেসমিন খাতুন বলেন, ‘দুপুরে আমার স্বামী আলমসাধু নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। রাতে খরব পায় তাকে কারা ছুড়ি মেরেছে। হাসপাতালে এসে জানতে পারি আমার স্বামী মারা গেছে। এখন আমার দেড় বছর বয়সী এই ছেলেকে কে দেখবে। যারা আমার স্বামীকে খুন করেছে আমি তাদের বিচার চাই।’

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক হাসানুর রহমান বলেন, ‘রাতে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা জখম অবস্থায় দুই যুবককে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে। এর মধ্যে সজলকে আমরা মৃত অবস্থায় পেয়েছি। অন্যজনকে জরুরি বিভাগ থেকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে সার্জারি বিভাগে অবজারভেশনে রাখা হয় এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজে রেফার্ড করা হয়। তবে কিছুক্ষনের মধ্যে সার্জারি বিভাগেই তার মৃত্যু হয়। দুজনের বুকে ও পেটে ছুরি জাতীয় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ময়নাতদন্ত হলে মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত করে বলা সম্ভব হবে।’

চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বিকেলে ভালাইপুর বাজারে ছিট-কাপড়ের দরদামকে কেন্দ্র করে ছামেনা বেগম নামের এক নারীকে দোকানের কর্মচারী রিয়ন তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে বের করে দেয়। ছামেনা খাতুর বাড়ি ফিরে ঘটনাটি তার ছেলে টিপুকে জানায়। সন্ধ্যায় টিপুর বন্ধু সজল ও মামুনসহ বেশ কয়েকজন যুবক রিয়নকে তার এলাকা থেকে মোটরসাইকেলেযোগে তুলে নিয়ে ভালাইপুর মোড়ে পৌঁছালে স্থানীয়রা তাদেরকে থামায়। এসময় দুই পক্ষের ৪০ থেকে ৫০ জন সেখানে জড় হয়। এরই মধ্যে সজল ও মামুন ছুরিকাঘাতে জখম হলে তাদেরকে দ্রুত উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে দুজনেরই মৃত্যু হয়।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের ধরতে আমাদের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে। আমরা ইতোমধ্যে ঘটনার মূল কারণ খুঁজে পেয়েছি। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে হত্যা ঘটনার সঙ্গে জড়িতদেরকে আইনের আওতায় নিতে পারবো।’

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নিহত দুই যুবকের মরদেহ সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা ছিলো। আজ (বুধবার) ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের সদস্যদের নিকট হস্তান্তর করা হবে।