ইপেপার । আজ রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে নেমে এসেছে স্থবিরতা

ফের অগ্নি পরীক্ষায় বিএনপি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৪:০৯:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪
  • / ৪৯ বার পড়া হয়েছে

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে দেশজুড়ে সহিংসতার জন্য বিএনপিকে দায়ী করছে সরকার। ইতোমধ্যে এসব ঘটনায় জড়িত অভিযোগে বিএনপি নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও রুহুল কবির রিজভীসহ অঙ্গসংগঠনের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা ও বিপুলসংখ্যক কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রতিদিনই বাড়ছে এ সংখ্যা। তৃণমূল পর্যন্ত বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে আছেন। নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলছে। সব মিলিয়ে বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে নেমে এসেছে স্থবিরতা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানান, সরকার পতনের এক দফা দাবিতে সর্বাত্মক আন্দোলনের ডাক দিলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি বিএনপি। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে ব্যর্থতার কারণে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে নেমে আসে হতাশা। সেই সময় বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী জেল খাটেন। দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকতে বাধ্য হন বাকিরা। ওই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি ও নেতা-কর্মীদের মনোবল ফেরাতে বেশ কিছু দিন ধরেই নানা পদক্ষেপ নিচ্ছিল বিএনপি। সাংগঠনিক পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে ছাত্রদল, যুবদল এবং ঢাকা মহানগর উত্তর, দক্ষিণসহ চারটি মহানগরের নতুন কমিটি গঠন করা হয়। খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে রাজপথে সোচ্চার হতে শুরু করে দলটি। সেইসঙ্গে দুর্নীতি ও অর্থ পাচার ইস্যুতেও সরব হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল বিএনপি। তবে কোটাবিরোধী আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার পর বদলে গেছে সার্বিক পরিস্থিতি। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার জন্য সরকারের দিক থেকে বিএনপিকে দায়ী করা হচ্ছে। যদিও এ ধরনের অভিযোগকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও কাল্পনিক বলছে বিএনপি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক সিনিয়র নেতা বলেন, ‘কারা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তা সবাই জানেন। বিএনপির চল্লিশ বছরের ইতিহাসে নেই যে, রাষ্ট্রীয় স্থাপনার ওপরে আক্রমণ করেছে। বিরোধীদের ওপর দোষ চাপানো আওয়ামী লীগের অভ্যাস।’ কোটাবিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ও জ্বালাও-পোড়াওয়ের ঘটনায় এরই মধ্যে আড়াই হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর বেশিরভাগই বিএনপি, জামায়াত, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী। বিএনপির দেওয়া তথ্য মতে, এখন পর্যন্ত পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চলমান গ্রেপ্তার অভিযানে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের দুই হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনেকের বাসাবাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাও রয়েছেন, যাদের কাউকে কাউকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন তাদের পরিবার ও আইনজীবী। তবে গ্রেপ্তারের সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে দলটির নেতাদের ধারণা। তারা বলছেন, ইন্টারনেট সংযোগ স্বাভাবিক না হওয়ায় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। এ কারণে গ্রেপ্তারের প্রকৃত পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে বিএনপির ওই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও এখন পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনেককে রিমান্ডে নিয়ে চরম নির্যাতন করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলন দমনে আওয়ামী সরকারের আগ্রাসী ও নির্মম ভূমিকার নজির পৃথিবীর কোথাও নেই।’ তিনি গ্রেপ্তার, নির্যাতন, বাসাবাড়িতে তলস্নাশির নামে হয়রানি বন্ধ এবং গ্রেপ্তার হওয়া নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপি আরও একবার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ল কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ওই নেতা বলেন, ‘আমাদের অনেক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বেশিরভাগ নেতাই কারাগারে। কারফিউ চলমান। এরপরও যে কয়েকজন আছেন, তাদের সঙ্গে এবং আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করে করণীয় ঠিক করা হবে।’
জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এক দফার আন্দোলন করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন বিএনপির প্রায় ২৭ হাজার নেতা-কর্মী। এতে সারাদেশে অনেকটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল দলটি। তবে গত দু-তিন মাসে বেশিরভাগ নেতা-কর্মী জামিনে কারামুক্ত হয়েছিলেন। বিএনপিও সংগঠন গুছিয়ে ফের রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয় হওয়ার পরিকল্পনা করছিল। গত ১ মার্চ রাকিব-নাছিরের নেতৃত্বে ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। ১৫ জুন দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল করা হয়। ৭ জুলাই ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নতুন আহ্বায়ক (আংশিক) কমিটি ঘোষণা করা হয়। ৯ জুলাই জাতীয়তাবাদী যুবদলের নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করা হয়। তবে নিজেদের সক্ষমতা দেখানোর আগেই এই নেতাদের বেশিরভাগই গ্রেপ্তার হয়েছেন।
জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার বিভিন্ন মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। একই অবস্থা জেলা পর্যায়েও। গ্রেপ্তার এড়াতে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী আত্মগোপনে গেছেন। ফলে আবারও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম খান সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেন। তিনি গ্রেপ্তার হওয়ায় যুগপৎ আন্দোলনে প্রভাব পড়বে। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বিএনপির ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্য। তিনি কূটনৈতিক অঙ্গনে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। তার নেতৃত্বে কূটনীতিকদের সঙ্গে বেশিরভাগ বৈঠক করত বিএনপি। তিনি গ্রেপ্তার হওয়ায় আন্তর্জাতিক যোগাযোগে কিছুটা হলেও প্রভাব পড়বে বলে দলটির নেতা-কর্মীরা মনে করেন। এছাড়া কেন্দ্রীয় পর্যায়ের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নেতা গ্রেপ্তার হওয়ায় সাংগঠনিক কর্মকান্ড ব্যাহত হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে নেমে এসেছে স্থবিরতা

ফের অগ্নি পরীক্ষায় বিএনপি

আপলোড টাইম : ০৪:০৯:৩৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে দেশজুড়ে সহিংসতার জন্য বিএনপিকে দায়ী করছে সরকার। ইতোমধ্যে এসব ঘটনায় জড়িত অভিযোগে বিএনপি নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও রুহুল কবির রিজভীসহ অঙ্গসংগঠনের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা ও বিপুলসংখ্যক কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রতিদিনই বাড়ছে এ সংখ্যা। তৃণমূল পর্যন্ত বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে আছেন। নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলছে। সব মিলিয়ে বিএনপির সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে নেমে এসেছে স্থবিরতা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানান, সরকার পতনের এক দফা দাবিতে সর্বাত্মক আন্দোলনের ডাক দিলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি বিএনপি। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে ব্যর্থতার কারণে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে নেমে আসে হতাশা। সেই সময় বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী জেল খাটেন। দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকতে বাধ্য হন বাকিরা। ওই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি ও নেতা-কর্মীদের মনোবল ফেরাতে বেশ কিছু দিন ধরেই নানা পদক্ষেপ নিচ্ছিল বিএনপি। সাংগঠনিক পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে ছাত্রদল, যুবদল এবং ঢাকা মহানগর উত্তর, দক্ষিণসহ চারটি মহানগরের নতুন কমিটি গঠন করা হয়। খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে রাজপথে সোচ্চার হতে শুরু করে দলটি। সেইসঙ্গে দুর্নীতি ও অর্থ পাচার ইস্যুতেও সরব হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল বিএনপি। তবে কোটাবিরোধী আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার পর বদলে গেছে সার্বিক পরিস্থিতি। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার জন্য সরকারের দিক থেকে বিএনপিকে দায়ী করা হচ্ছে। যদিও এ ধরনের অভিযোগকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও কাল্পনিক বলছে বিএনপি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক সিনিয়র নেতা বলেন, ‘কারা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তা সবাই জানেন। বিএনপির চল্লিশ বছরের ইতিহাসে নেই যে, রাষ্ট্রীয় স্থাপনার ওপরে আক্রমণ করেছে। বিরোধীদের ওপর দোষ চাপানো আওয়ামী লীগের অভ্যাস।’ কোটাবিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ও জ্বালাও-পোড়াওয়ের ঘটনায় এরই মধ্যে আড়াই হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর বেশিরভাগই বিএনপি, জামায়াত, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী। বিএনপির দেওয়া তথ্য মতে, এখন পর্যন্ত পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চলমান গ্রেপ্তার অভিযানে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের দুই হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনেকের বাসাবাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাও রয়েছেন, যাদের কাউকে কাউকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন তাদের পরিবার ও আইনজীবী। তবে গ্রেপ্তারের সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে দলটির নেতাদের ধারণা। তারা বলছেন, ইন্টারনেট সংযোগ স্বাভাবিক না হওয়ায় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। এ কারণে গ্রেপ্তারের প্রকৃত পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে বিএনপির ওই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও এখন পর্যন্ত দুই হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনেককে রিমান্ডে নিয়ে চরম নির্যাতন করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলন দমনে আওয়ামী সরকারের আগ্রাসী ও নির্মম ভূমিকার নজির পৃথিবীর কোথাও নেই।’ তিনি গ্রেপ্তার, নির্যাতন, বাসাবাড়িতে তলস্নাশির নামে হয়রানি বন্ধ এবং গ্রেপ্তার হওয়া নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপি আরও একবার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ল কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ওই নেতা বলেন, ‘আমাদের অনেক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বেশিরভাগ নেতাই কারাগারে। কারফিউ চলমান। এরপরও যে কয়েকজন আছেন, তাদের সঙ্গে এবং আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করে করণীয় ঠিক করা হবে।’
জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এক দফার আন্দোলন করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন বিএনপির প্রায় ২৭ হাজার নেতা-কর্মী। এতে সারাদেশে অনেকটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল দলটি। তবে গত দু-তিন মাসে বেশিরভাগ নেতা-কর্মী জামিনে কারামুক্ত হয়েছিলেন। বিএনপিও সংগঠন গুছিয়ে ফের রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয় হওয়ার পরিকল্পনা করছিল। গত ১ মার্চ রাকিব-নাছিরের নেতৃত্বে ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। ১৫ জুন দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল করা হয়। ৭ জুলাই ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নতুন আহ্বায়ক (আংশিক) কমিটি ঘোষণা করা হয়। ৯ জুলাই জাতীয়তাবাদী যুবদলের নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা করা হয়। তবে নিজেদের সক্ষমতা দেখানোর আগেই এই নেতাদের বেশিরভাগই গ্রেপ্তার হয়েছেন।
জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার বিভিন্ন মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। একই অবস্থা জেলা পর্যায়েও। গ্রেপ্তার এড়াতে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী আত্মগোপনে গেছেন। ফলে আবারও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম খান সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেন। তিনি গ্রেপ্তার হওয়ায় যুগপৎ আন্দোলনে প্রভাব পড়বে। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বিএনপির ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্য। তিনি কূটনৈতিক অঙ্গনে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। তার নেতৃত্বে কূটনীতিকদের সঙ্গে বেশিরভাগ বৈঠক করত বিএনপি। তিনি গ্রেপ্তার হওয়ায় আন্তর্জাতিক যোগাযোগে কিছুটা হলেও প্রভাব পড়বে বলে দলটির নেতা-কর্মীরা মনে করেন। এছাড়া কেন্দ্রীয় পর্যায়ের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নেতা গ্রেপ্তার হওয়ায় সাংগঠনিক কর্মকান্ড ব্যাহত হবে।