ইপেপার । আজ রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ; নিরপেক্ষ-বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত জরুরি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৪:০৫:৩০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪
  • / ৪০ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশে রাজনৈতিক কর্মসূচি মোকাবেলায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে। এ সরকারের আমলে বিরোধী নেতাকর্মীদের দমনে আইনের তোয়াক্কা কমই করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বহিনীর সদস্যরা। দিন যত গেছে তাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড বেড়েছে। ছাত্রদের কোটাবিরোধী আন্দোলনে এর তীব্রতা বিকট রূপে প্রকাশ পয়েছে। এ আন্দোলনে হতাহতের সংখ্যা থেকে এটি স্পষ্ট, আন্দোলন দমনে প্রাণঘাতী অস্ত্রের নির্বিচার ব্যবহার করেছে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ নিয়ে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের বিবৃতির পর জাতিসঙ্ঘও উদ্বেগ জানিয়েছে। দেশের মানুষের বিরুদ্ধে কেন অস্ত্র প্রয়োগ করতে হবে, নাগরিক সমাজ, সুশীলগোষ্ঠী ও বুদ্ধিজীবীরা সরকারের কাছে এই প্রশ্ন রাখলেও কোনো প্রতিকার নেই। বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীকে দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেয়া হয়। এর প্রভাব দেখা গেছে সারা দেশে। কিছু এলাকায় যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত ২০০ জনের বেশি প্রাণ হারানোর কথা বলা হলেও নিহতের সংখ্যা নিয়ে সংশয় রয়েছে। রাজধানীর দুটো এলাকা বাড্ডা ও উত্তরার পাঁচটি হাসপাতালে প্রায় তিন হাজার মানুষ গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন। তাদের অনেকে মারা গেছেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে সর্বোচ্চ ৮৯ লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। বাড্ডার এএমজেড হাসপাতালে ২৩, রামপুরার ফরাজি হাসপাতালে ১৫ লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। এভাবে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে কিছু লাশের ময়নাতদন্তের খবর গণমাধ্যমে এসেছে। সোহরাওয়ার্দী হাসাপাতালে ময়নাতদন্ত ছাড়া ১৩টি লাশ স্বজনদের হস্তান্তর করা হয়।
হতাহতের মধ্যে নারী পুরুষ শিশু সব শ্রেণীর মানুষ রয়েছে। নিহতের বেশির ভাগ ছিলেন গুলিবিদ্ধ। মূল ধারার গণমাধ্যম চাপের মুখে সীমাবদ্ধতা নিয়ে কোটা আন্দোলনের সময় কাজ করেছে। সরেজমিন সংবাদ সংগ্রহের সুযোগ সীমিত ছিল। অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ থাকায় সঠিক খবর সংগ্রহের সুযোগ ছিল না বললে চলে। খবরের উৎসগুলোর একক নিয়ন্ত্রণ ছিল সরকারের কাছে। তাই কোটা আন্দোলনে মানুষের হতাহতের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় বাংলাদেশে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সরাসরি গুলিবর্ষণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসঙ্ঘ। উদ্বেগের বিষয়টি বিবৃতির মাধ্যমে ঢাকায় ও নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। নিউইয়র্কে জাতিসঙ্ঘের মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারেক এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান, ‘আমরা এটি নিশ্চিত করতে চাই যে, আমাদের মানবাধিকারবিষয়ক নীতির সব চাহিদা মেনে চলা হয়েছে’। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যা ঘটেছে, গণগ্রেফতার ও হত্যাকাণ্ড হয়েছে, তা আমরা দেখেছি। জাতিসঙ্ঘের পক্ষ থেকে ক্র্যাকডাউনের বিস্তারিত তথ্য জরুরিভাবে প্রকাশেরও আহ্বান জানানো হয়েছে’। লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কোটা আন্দোলন ঘিরে শিক্ষার্থীদের ওপর আইনবহির্ভূতভাবে পুলিশ প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার করেছে বলে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। প্রাপ্ত কিছু ভিডিও ও আলোকচিত্র যাচাই করে সংস্থাটি পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে। মানবাধিকার সংস্থাটি জানায়, কারফিউ জারি ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয়ায় বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি মনিটরিংয়ের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। প্রকৃত হতাহতের সংখ্যা ও সহিংসতার বাস্তব চিত্র জানা সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য দরকার একটি বিশ্বাসযোগ্য ও নিরপেক্ষ তদন্ত। যেমনটি সারা বিশ্ব থেকে দাবি উঠেছে। বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের সময় ঘটা গুরুতর ঘটনাগুলোর একটিরও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত হয়নি। ফলে প্রত্যেকটি ঘটনার দায় রয়ে গেছে। আমরা আশা করব, দেশী-বিদেশী দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এবার তেমন একটি তদন্ত করবে। হতাহতের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগ; নিরপেক্ষ-বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত জরুরি

আপলোড টাইম : ০৪:০৫:৩০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

বাংলাদেশে রাজনৈতিক কর্মসূচি মোকাবেলায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে। এ সরকারের আমলে বিরোধী নেতাকর্মীদের দমনে আইনের তোয়াক্কা কমই করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বহিনীর সদস্যরা। দিন যত গেছে তাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড বেড়েছে। ছাত্রদের কোটাবিরোধী আন্দোলনে এর তীব্রতা বিকট রূপে প্রকাশ পয়েছে। এ আন্দোলনে হতাহতের সংখ্যা থেকে এটি স্পষ্ট, আন্দোলন দমনে প্রাণঘাতী অস্ত্রের নির্বিচার ব্যবহার করেছে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ নিয়ে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের বিবৃতির পর জাতিসঙ্ঘও উদ্বেগ জানিয়েছে। দেশের মানুষের বিরুদ্ধে কেন অস্ত্র প্রয়োগ করতে হবে, নাগরিক সমাজ, সুশীলগোষ্ঠী ও বুদ্ধিজীবীরা সরকারের কাছে এই প্রশ্ন রাখলেও কোনো প্রতিকার নেই। বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীকে দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেয়া হয়। এর প্রভাব দেখা গেছে সারা দেশে। কিছু এলাকায় যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত ২০০ জনের বেশি প্রাণ হারানোর কথা বলা হলেও নিহতের সংখ্যা নিয়ে সংশয় রয়েছে। রাজধানীর দুটো এলাকা বাড্ডা ও উত্তরার পাঁচটি হাসপাতালে প্রায় তিন হাজার মানুষ গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসেন। তাদের অনেকে মারা গেছেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে সর্বোচ্চ ৮৯ লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। বাড্ডার এএমজেড হাসপাতালে ২৩, রামপুরার ফরাজি হাসপাতালে ১৫ লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। এভাবে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে কিছু লাশের ময়নাতদন্তের খবর গণমাধ্যমে এসেছে। সোহরাওয়ার্দী হাসাপাতালে ময়নাতদন্ত ছাড়া ১৩টি লাশ স্বজনদের হস্তান্তর করা হয়।
হতাহতের মধ্যে নারী পুরুষ শিশু সব শ্রেণীর মানুষ রয়েছে। নিহতের বেশির ভাগ ছিলেন গুলিবিদ্ধ। মূল ধারার গণমাধ্যম চাপের মুখে সীমাবদ্ধতা নিয়ে কোটা আন্দোলনের সময় কাজ করেছে। সরেজমিন সংবাদ সংগ্রহের সুযোগ সীমিত ছিল। অন্যদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ থাকায় সঠিক খবর সংগ্রহের সুযোগ ছিল না বললে চলে। খবরের উৎসগুলোর একক নিয়ন্ত্রণ ছিল সরকারের কাছে। তাই কোটা আন্দোলনে মানুষের হতাহতের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় বাংলাদেশে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর সরাসরি গুলিবর্ষণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসঙ্ঘ। উদ্বেগের বিষয়টি বিবৃতির মাধ্যমে ঢাকায় ও নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। নিউইয়র্কে জাতিসঙ্ঘের মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারেক এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান, ‘আমরা এটি নিশ্চিত করতে চাই যে, আমাদের মানবাধিকারবিষয়ক নীতির সব চাহিদা মেনে চলা হয়েছে’। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যা ঘটেছে, গণগ্রেফতার ও হত্যাকাণ্ড হয়েছে, তা আমরা দেখেছি। জাতিসঙ্ঘের পক্ষ থেকে ক্র্যাকডাউনের বিস্তারিত তথ্য জরুরিভাবে প্রকাশেরও আহ্বান জানানো হয়েছে’। লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কোটা আন্দোলন ঘিরে শিক্ষার্থীদের ওপর আইনবহির্ভূতভাবে পুলিশ প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার করেছে বলে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। প্রাপ্ত কিছু ভিডিও ও আলোকচিত্র যাচাই করে সংস্থাটি পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে। মানবাধিকার সংস্থাটি জানায়, কারফিউ জারি ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয়ায় বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি মনিটরিংয়ের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। প্রকৃত হতাহতের সংখ্যা ও সহিংসতার বাস্তব চিত্র জানা সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য দরকার একটি বিশ্বাসযোগ্য ও নিরপেক্ষ তদন্ত। যেমনটি সারা বিশ্ব থেকে দাবি উঠেছে। বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের সময় ঘটা গুরুতর ঘটনাগুলোর একটিরও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত হয়নি। ফলে প্রত্যেকটি ঘটনার দায় রয়ে গেছে। আমরা আশা করব, দেশী-বিদেশী দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এবার তেমন একটি তদন্ত করবে। হতাহতের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।