ইপেপার । আজ শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
কোটাবিরোধী আন্দোলনে অগ্নিগর্ভা গোটা দেশ, বিচ্ছিন্ন রাজধানী ঢাকা

দিনভর সংঘর্ষে ৬ জন নিহত, বহু হতাহত

অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশের সব স্কুল-কলেজ, বিশ^বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা

অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশের সব স্কুল-কলেজ, বিশ^বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা
  • আপলোড টাইম : ০৮:০৯:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ জুলাই ২০২৪
  • / ৪২ বার পড়া হয়েছে


কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলন এতদিন ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ, হামলা এবং পুলিশের টিয়ার শেল, গুলি ও লাঠিচার্জের মধ্য সীমাবদ্ধ থাকলেও এবার তা প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে। অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে গোটা দেশ। গতকাল মঙ্গলবার এই আন্দোলন ঘিরে দিনভর সংঘর্ষে ৬ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে রংপুরে পুলিশের গুলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের এক সমন্বয়ক, চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে দুই শিক্ষার্থীসহ তিনজন এবং রাজধানীতে ঢাকা কলেজের সামনে আন্দোলনকারী দুই যুবক নিহত হন। এছাড়া ঢাকা ও রংপুরসহ বিভিন্ন স্থানে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরও অন্তত ৩০ জন। এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সারাদেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শ্রেণিকার্যক্রম ও দেশের সব বিশ^বিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। স্থগিত করা হয়েছে বৃহস্পতিবারের এইচএসসি পরীক্ষা।
অন্যদিকে চলমান আন্দোলনে এতদিন শুধু উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাজপথ দাপালেও এবার দেশের বিভিন্ন এলাকায় স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরাও এতে যোগ দেওয়ায় আন্দোলন আরও স্পর্শকাতর হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে যেসব স্পটে আন্দোলনকারীরা খুদে শিক্ষার্থীদের ফ্রন্ট লাইনে রেখে সড়ক, মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি সাজিয়েছে, সেখানে মানবিক কারণেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অ্যাকশনে যেতে পারেনি। ফলে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে গোটা দেশ কার্যত অচল হয়ে পড়ে। বিভিন্ন জেলা থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকা। চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঢাকা, রংপুর, চট্টগ্রাম, বগুড়া ও রাজশাহীতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম গতকাল বিকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশ ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ঢাকা কলেজ এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার দুপুর থেকে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষ চলাকালে দুই যুবক নিহত হন। তাদের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় ঢাকা কলেজ এলাকায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। আর সাধারণ শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন সায়েন্স ল্যাব এলাকায়। এ সময় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীরা ধাওয়া দিয়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে রড ও হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। সংঘর্ষ থেমে যাওয়ার পর স্থানীয়রা ঢাকা কলেজের কাছে পেট্রোল পাম্প এলাকায় এক যুবককে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। তার শরীরে রডের আঘাত ছিল। পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিহত যুবকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া। তার ভাষ্য, নিহতের কানের নিচে ও মুখের বিভিন্ন জায়গায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
এদিকে সন্ধ্যার দিকে আরও এক যুবককে স্থানীয়রা উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার নাম-পরিচয়ও জানা যায়নি। রাজধানীর সিটি কলেজের সামনে থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থীরা জানান, দুপুরে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শহরের লালবাগ এলাকা থেকে ক্যাম্পাসের দিকে যায়। এরপর ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় পুলিশ প্রায় ২০০ রাউন্ড গুলি ও রাবার বুলেট ছোড়ে। পুলিশের গুলিতে আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু সাইদ নিহত হন। তিনি বেরোবির ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তার বাবা মকবুল হোসেন রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুরের বাসিন্দা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেরোবির ইংরেজি বিভাগের প্রধান আসিফ আল মতিন।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ইউনুস আলী বলেন, ‘এক শিক্ষার্থীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। আমি ওই শিক্ষার্থীর মরদেহ দেখিনি। তবে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার শরীরে রাবার বুলেটের ক্ষতের চিহ্ন আছে।’ এছাড়া আহত অবস্থায় আরও ১৫ জন হাসপাতালে এসেছেন বলেও জানান তিনি। এদিকে চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, নিহতদের একজন চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ওয়াসিম আকরাম। তার বাড়ি কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায়। আরেকজন নগরের ওমরগনি এমইএস কলেজের ছাত্র ফয়সাল আহমেদ শান্ত; আরেকজন রট আয়রনের মিস্ত্রি ফারুক। সিএমপি কমিশনার জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। পুলিশ উভয়পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা চালিয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক নুজহাত ইনু জানিয়েছেন, ওয়াসিমকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে এবং ফারুককে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আনা হয়েছিল। আহত আরও ৩০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মুরাদপুর এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। জবাবে তারাও ইটপাটকেল ছুড়ে। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পিছু হটে মুরাদপুর মোড়ে গিয়ে বেলাল কমপ্লেক্সের একটি বাণিজ্যিক ভবনে আশ্রয় নেন। এরপর ওই ভবনের ছাদ থেকে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। একপর্যায়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের মারধর শুরু করেন। চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি জানান, হামলায় ছাত্রলীগের অন্তত ১০ নেতা-কর্মী ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র সুদীপ্ত ও আলমগীরের শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন। আহত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে গতকাল মঙ্গলবারও উত্তাল রাজধানী ঢাকা। নগরীর সাইন্স ল্যাব মোড়, গাবতলী-মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ, নতুন বাজার, মধ্য বাড্ডা থেকে শুরু করে নদ্দা/বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, কুড়িল বিশ্বরোড, মহাখালী-বনানী সড়কসহ অন্তত একডজন সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন ঢাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে যাত্রীবাহী ট্রান্স সিলভা পরিবহণের দুটি বাস ভাঙচুরের পর তাতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, আগুনে কেউ হতাহত হয়নি। এদিকে সকাল থেকে ছোট ছোট দলে যুক্ত হয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহারসহ কোটা সংস্কারের দাবিতে নানা স্লোগান দেয়। রাস্তা অবরোধের কারণে সড়কগুলোতে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। ভোগান্তিতে পড়েন হাজার হাজার যাত্রী।
সাইন্স ল্যাব মোড়ে ঢাকা কলেজ ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা, গাবতলী-মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস (ইউল্যাব), নতুন বাজার/সাতারকুল এলাকায় ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ), মধ্যবাড্ডায় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, নদ্দা/বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার গেটে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, কুড়িল বিশ্বরোডে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এআইইউবি), মিরপুর ১০ নম্বর মোড়ে বিইউবিটি ও মিরপুর বাঙলা কলেজ, মহাখালী-বনানী সড়কে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বেইলি রোড মোড় এবং বাসাবো বৌদ্ধ মন্দির এলাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেন। এর মধ্যে রাজধানীর নতুন বাজার এলাকায় কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। ডিএমপির বাড্ডা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) রাজন কুমার সাহা বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে মতিঝিল শাপলা চত্বর মোড়ে অবস্থান নেন নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা। এতে কার্যত অচল হয়ে পড়ে ব্যাংক পাড়া হিসেবে খ্যাত মতিঝিল এলাকা। দুপুর সাড়ে ১২টার পর শিক্ষার্থীরা সেখানে অবস্থান নেন। রাজধানীর সাইন্স-ল্যাবরেটরি মোড়ে চলে ছাত্রলীগ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া এবং মুখোমুখি সংঘর্ষ। এরই মধ্যে ৩টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। দুপুর ২টায় সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছে। ধানমন্ডি ল্যাবএইড হাসপাতাল থেকে শুরু করে সাইন্স ল্যাবরেটরি মোড় পর্যন্ত কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সমর্থন জানিয়ে আইডিয়াল কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ, ঢাকা কলেজ এবং মুন্সী আব্দুর রউফ কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির শতাধিক শিক্ষার্থী রাস্তা অবরোধ করে অবস্থান নেন। বিপরীত পাশে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ, স্থানীয় ব্যবসায়ী, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। থেমে থেমে তাদের মধ্যে চলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ।
কোটা সংস্কারের দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর গুলির ঘটনায় চার শিক্ষার্থী আহত হন। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েক হাজার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী লাঠিসোটা হাতে নিয়ে রায় সাহেব বাজার অতিক্রম করার সময় এ ঘটনা ঘটে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশকে কেন্দ্র করে লাঠি, বাঁশ, রড, হকিস্টিক হাতে হেলমেট পরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড়ো হন। এ সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সংগঠনটির বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীদের দেখা যায়। তবে দেশীয় অস্ত্র হাতে ছাত্রলীগ নেতারা মহড়া দিলেও নিশ্চুপ ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিকাল সাড়ে ৩টায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দায়সারা মনোভাব দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। এ সময় বহিরাগতদের নিয়ে করা কোনো প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেনি প্রশাসন।
কোটাবিরোধী আন্দোলনে এবার যুক্ত হয়েছে মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা। এরই অংশ হিসেবে পুরান ঢাকায় মাঠে নেমেছেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের (মিটফোর্ড) শিক্ষার্থীরা। তবে তাদের এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করেছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। হামলায় ৬ জনের মতো আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। রাজধানীর পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতাল গেটে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ছাত্রলীগ কর্মীরা শিক্ষার্থীদের উপর্যুপরি চড় থাপ্পড় ও স্ট্যাম্প-লাঠি দিয়ে আঘাত করেছে বলে জানায় আন্দোলনকারীরা। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে আন্দোলনে নামেন রাজধানীর স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার দুপুরের পর তার বেইলি রোডে অবরোধ করেন। এছাড়া, বেইলি রোডে সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের সামনে সড়ক অবরোধ করে নানা সেস্নাগান দিতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।
কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের মধ্যে ঢাকার মহাখালীতে রেললাইন অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাতে সারাদেশের সঙ্গে রাজধানীর রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকা জেলা রেলওয়ের পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন জানান, দুপুর ২টার পর শিক্ষার্থীরা মহাখালী রেল গেইটে অবরোধ করলে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর দেড়টায় বিএএফ শাহীন কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি এবং সিভিল অ্যাভিয়েশন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সেখানে জড়ো হন। বিকাল ৩টার দিকে পুলিশ গিয়ে তাদের বুঝিয়ে সড়ক ছেড়ে যেতে বলে। তাতে সাড়া না দিয়ে শিক্ষার্থীদের ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দিতে দেখা গেছে। ঘটনাস্থলে আটকে আছে ঢাকাগামী বনলতা এক্সপ্রেস এবং রেল গেইটের অদূরে আটকে ছিল রাজশাহীগামী সিল্ক সিটি এক্সপ্রেস। যাত্রীদের অনেকেই নেমে হেঁটে চলে যান।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

কোটাবিরোধী আন্দোলনে অগ্নিগর্ভা গোটা দেশ, বিচ্ছিন্ন রাজধানী ঢাকা

দিনভর সংঘর্ষে ৬ জন নিহত, বহু হতাহত

অনির্দিষ্টকালের জন্য দেশের সব স্কুল-কলেজ, বিশ^বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা

আপলোড টাইম : ০৮:০৯:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ জুলাই ২০২৪


কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলন এতদিন ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ, হামলা এবং পুলিশের টিয়ার শেল, গুলি ও লাঠিচার্জের মধ্য সীমাবদ্ধ থাকলেও এবার তা প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে। অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে গোটা দেশ। গতকাল মঙ্গলবার এই আন্দোলন ঘিরে দিনভর সংঘর্ষে ৬ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে রংপুরে পুলিশের গুলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের এক সমন্বয়ক, চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে দুই শিক্ষার্থীসহ তিনজন এবং রাজধানীতে ঢাকা কলেজের সামনে আন্দোলনকারী দুই যুবক নিহত হন। এছাড়া ঢাকা ও রংপুরসহ বিভিন্ন স্থানে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরও অন্তত ৩০ জন। এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সারাদেশে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শ্রেণিকার্যক্রম ও দেশের সব বিশ^বিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। স্থগিত করা হয়েছে বৃহস্পতিবারের এইচএসসি পরীক্ষা।
অন্যদিকে চলমান আন্দোলনে এতদিন শুধু উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাজপথ দাপালেও এবার দেশের বিভিন্ন এলাকায় স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরাও এতে যোগ দেওয়ায় আন্দোলন আরও স্পর্শকাতর হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে যেসব স্পটে আন্দোলনকারীরা খুদে শিক্ষার্থীদের ফ্রন্ট লাইনে রেখে সড়ক, মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি সাজিয়েছে, সেখানে মানবিক কারণেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অ্যাকশনে যেতে পারেনি। ফলে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে গোটা দেশ কার্যত অচল হয়ে পড়ে। বিভিন্ন জেলা থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকা। চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঢাকা, রংপুর, চট্টগ্রাম, বগুড়া ও রাজশাহীতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম গতকাল বিকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশ ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, ঢাকা কলেজ এলাকায় গতকাল মঙ্গলবার দুপুর থেকে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগের দফায় দফায় সংঘর্ষ চলাকালে দুই যুবক নিহত হন। তাদের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় ঢাকা কলেজ এলাকায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। আর সাধারণ শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন সায়েন্স ল্যাব এলাকায়। এ সময় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীরা ধাওয়া দিয়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে রড ও হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। সংঘর্ষ থেমে যাওয়ার পর স্থানীয়রা ঢাকা কলেজের কাছে পেট্রোল পাম্প এলাকায় এক যুবককে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। তার শরীরে রডের আঘাত ছিল। পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিহত যুবকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া। তার ভাষ্য, নিহতের কানের নিচে ও মুখের বিভিন্ন জায়গায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
এদিকে সন্ধ্যার দিকে আরও এক যুবককে স্থানীয়রা উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার নাম-পরিচয়ও জানা যায়নি। রাজধানীর সিটি কলেজের সামনে থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থীরা জানান, দুপুরে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শহরের লালবাগ এলাকা থেকে ক্যাম্পাসের দিকে যায়। এরপর ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় পুলিশ প্রায় ২০০ রাউন্ড গুলি ও রাবার বুলেট ছোড়ে। পুলিশের গুলিতে আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু সাইদ নিহত হন। তিনি বেরোবির ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তার বাবা মকবুল হোসেন রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুরের বাসিন্দা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেরোবির ইংরেজি বিভাগের প্রধান আসিফ আল মতিন।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ইউনুস আলী বলেন, ‘এক শিক্ষার্থীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। আমি ওই শিক্ষার্থীর মরদেহ দেখিনি। তবে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার শরীরে রাবার বুলেটের ক্ষতের চিহ্ন আছে।’ এছাড়া আহত অবস্থায় আরও ১৫ জন হাসপাতালে এসেছেন বলেও জানান তিনি। এদিকে চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার সাইফুল ইসলাম। তিনি জানান, নিহতদের একজন চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ওয়াসিম আকরাম। তার বাড়ি কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায়। আরেকজন নগরের ওমরগনি এমইএস কলেজের ছাত্র ফয়সাল আহমেদ শান্ত; আরেকজন রট আয়রনের মিস্ত্রি ফারুক। সিএমপি কমিশনার জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। পুলিশ উভয়পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা চালিয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক নুজহাত ইনু জানিয়েছেন, ওয়াসিমকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে এবং ফারুককে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আনা হয়েছিল। আহত আরও ৩০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মুরাদপুর এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। জবাবে তারাও ইটপাটকেল ছুড়ে। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পিছু হটে মুরাদপুর মোড়ে গিয়ে বেলাল কমপ্লেক্সের একটি বাণিজ্যিক ভবনে আশ্রয় নেন। এরপর ওই ভবনের ছাদ থেকে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। একপর্যায়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের মারধর শুরু করেন। চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি জানান, হামলায় ছাত্রলীগের অন্তত ১০ নেতা-কর্মী ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে চট্টগ্রাম কলেজের ছাত্র সুদীপ্ত ও আলমগীরের শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন। আহত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে গতকাল মঙ্গলবারও উত্তাল রাজধানী ঢাকা। নগরীর সাইন্স ল্যাব মোড়, গাবতলী-মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ, নতুন বাজার, মধ্য বাড্ডা থেকে শুরু করে নদ্দা/বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, কুড়িল বিশ্বরোড, মহাখালী-বনানী সড়কসহ অন্তত একডজন সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন ঢাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে যাত্রীবাহী ট্রান্স সিলভা পরিবহণের দুটি বাস ভাঙচুরের পর তাতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, আগুনে কেউ হতাহত হয়নি। এদিকে সকাল থেকে ছোট ছোট দলে যুক্ত হয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহারসহ কোটা সংস্কারের দাবিতে নানা স্লোগান দেয়। রাস্তা অবরোধের কারণে সড়কগুলোতে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। ভোগান্তিতে পড়েন হাজার হাজার যাত্রী।
সাইন্স ল্যাব মোড়ে ঢাকা কলেজ ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা, গাবতলী-মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস (ইউল্যাব), নতুন বাজার/সাতারকুল এলাকায় ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ), মধ্যবাড্ডায় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, নদ্দা/বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার গেটে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, কুড়িল বিশ্বরোডে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (এআইইউবি), মিরপুর ১০ নম্বর মোড়ে বিইউবিটি ও মিরপুর বাঙলা কলেজ, মহাখালী-বনানী সড়কে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বেইলি রোড মোড় এবং বাসাবো বৌদ্ধ মন্দির এলাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেন। এর মধ্যে রাজধানীর নতুন বাজার এলাকায় কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। ডিএমপির বাড্ডা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) রাজন কুমার সাহা বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে মতিঝিল শাপলা চত্বর মোড়ে অবস্থান নেন নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা। এতে কার্যত অচল হয়ে পড়ে ব্যাংক পাড়া হিসেবে খ্যাত মতিঝিল এলাকা। দুপুর সাড়ে ১২টার পর শিক্ষার্থীরা সেখানে অবস্থান নেন। রাজধানীর সাইন্স-ল্যাবরেটরি মোড়ে চলে ছাত্রলীগ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া এবং মুখোমুখি সংঘর্ষ। এরই মধ্যে ৩টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। দুপুর ২টায় সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়েছে। ধানমন্ডি ল্যাবএইড হাসপাতাল থেকে শুরু করে সাইন্স ল্যাবরেটরি মোড় পর্যন্ত কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সমর্থন জানিয়ে আইডিয়াল কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ, ঢাকা কলেজ এবং মুন্সী আব্দুর রউফ কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির শতাধিক শিক্ষার্থী রাস্তা অবরোধ করে অবস্থান নেন। বিপরীত পাশে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ, স্থানীয় ব্যবসায়ী, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। থেমে থেমে তাদের মধ্যে চলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ।
কোটা সংস্কারের দাবিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর গুলির ঘটনায় চার শিক্ষার্থী আহত হন। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েক হাজার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী লাঠিসোটা হাতে নিয়ে রায় সাহেব বাজার অতিক্রম করার সময় এ ঘটনা ঘটে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবেশকে কেন্দ্র করে লাঠি, বাঁশ, রড, হকিস্টিক হাতে হেলমেট পরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড়ো হন। এ সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সংগঠনটির বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীদের দেখা যায়। তবে দেশীয় অস্ত্র হাতে ছাত্রলীগ নেতারা মহড়া দিলেও নিশ্চুপ ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিকাল সাড়ে ৩টায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দায়সারা মনোভাব দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। এ সময় বহিরাগতদের নিয়ে করা কোনো প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেনি প্রশাসন।
কোটাবিরোধী আন্দোলনে এবার যুক্ত হয়েছে মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা। এরই অংশ হিসেবে পুরান ঢাকায় মাঠে নেমেছেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের (মিটফোর্ড) শিক্ষার্থীরা। তবে তাদের এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করেছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। হামলায় ৬ জনের মতো আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। রাজধানীর পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতাল গেটে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ছাত্রলীগ কর্মীরা শিক্ষার্থীদের উপর্যুপরি চড় থাপ্পড় ও স্ট্যাম্প-লাঠি দিয়ে আঘাত করেছে বলে জানায় আন্দোলনকারীরা। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে আন্দোলনে নামেন রাজধানীর স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার দুপুরের পর তার বেইলি রোডে অবরোধ করেন। এছাড়া, বেইলি রোডে সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের সামনে সড়ক অবরোধ করে নানা সেস্নাগান দিতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।
কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের মধ্যে ঢাকার মহাখালীতে রেললাইন অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাতে সারাদেশের সঙ্গে রাজধানীর রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকা জেলা রেলওয়ের পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন জানান, দুপুর ২টার পর শিক্ষার্থীরা মহাখালী রেল গেইটে অবরোধ করলে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুর দেড়টায় বিএএফ শাহীন কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি এবং সিভিল অ্যাভিয়েশন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সেখানে জড়ো হন। বিকাল ৩টার দিকে পুলিশ গিয়ে তাদের বুঝিয়ে সড়ক ছেড়ে যেতে বলে। তাতে সাড়া না দিয়ে শিক্ষার্থীদের ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দিতে দেখা গেছে। ঘটনাস্থলে আটকে আছে ঢাকাগামী বনলতা এক্সপ্রেস এবং রেল গেইটের অদূরে আটকে ছিল রাজশাহীগামী সিল্ক সিটি এক্সপ্রেস। যাত্রীদের অনেকেই নেমে হেঁটে চলে যান।