ইপেপার । আজ রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গবেষণাকেন্দ্রের নামে বিপুল অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব; দুর্নীতির সুযোগ যেন না থাকে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:১০:১৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০২৪
  • / ৪৫ বার পড়া হয়েছে

চারদিকে এখন উন্নয়নের ব্যতিক্রমী তৎপরতা। ক্ষমতায় থাকার ভিত্তি হিসেবে সরকার উন্নয়নের বয়ান দিচ্ছে। দেশকে যেহেতু উন্নত করছে তাই নাগরিকদের সরকারকে অনেক ছাড় দিতে হবে। এক্ষেত্রে বলার চেষ্টা করা হয়ে থাকে, উন্নয়নের স্বার্থে জনসাধারণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দরকার নেই। নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র হলেই চলবে। এমন একটি অবস্থায় প্রশাসন যেন জবাবদিহিহীন। সরকারি প্রশাসন এমন স্বাধীনতা পাচ্ছে; যাতে রাষ্ট্রীয় তহবিলের যথেচ্ছ ব্যবহার করা যায়। প্রয়োজন না থাকলেও নতুন নতুন প্রকল্প প্রণয়ন করা হচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এমন প্রকল্পের লক্ষণীয় দিকটি হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় ব্যয়। সহযোগী একটি দৈনিকে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) একটি গবেষণাকেন্দ্রের প্রস্তাব দিয়েছে। দেশে বিজ্ঞান গবেষণা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এতে আমাদের কৃষি ও শিল্প উপকৃত হবে। তবে কাশিয়ানিতে প্রস্তাবিত গবেষণাকেন্দ্র নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ওই এলাকায় এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের আদৌ প্রয়োজন আছে কিনা। সরকারের পক্ষ থেকে এর সম্ভাব্যতা নিয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত এবং জরিপের বিষয়টি জানা যায়নি। দেখা যাচ্ছে, এই প্রকল্পে বিলাসী সব প্রস্তাব রাখা হয়েছে। বিসিএসআইআরের আগের একেকটি গবেষণাকেন্দ্র বাস্তবায়নে গড়ে ১০০ কোটি টাকা লেগেছে। কাশিয়ানির কেন্দ্র বাস্তবায়নে এক হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এতে বিপুল কৃষিজমি অধিগ্রহণ করতে হবে। সেখানে কর্মকর্তাদের আবাসনে বিলাসী আয়োজন রাখা হয়েছে। বাংলো বাড়ি, ১০টি আবাসিক ভবন, ছয়তলা ডরমিটরি, গেস্ট হাউজ ভবন, তিনতলা স্কুল। সাথে থাকবে বড় বড় পুকুর ও মাঠ। অতিথিদের থাকার ১২টি সাধারণ স্যুইট, চারটি ভিআইপি স্যুইট ও একটি ভিভিআইপি স্যুইট সংবলিত ১০ তলার একটি বহুমুখী ভবন। যে ধরনের অতিথিদের লক্ষ্য করে এই বিপুল আয়োজন তারা হয়তো কয়েক বছরে একবার আসবেন। ভিভিআইপি বলতে যাদের বোঝায় তারা হয়তো এক যুগেও আসবেন না। তার পরেও আবাদি জমি নষ্ট করে বিপুল অর্থ খরচ করে এগুলো তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ সরবরাহে বিশাল সাব-স্টেশন, নিরাপত্তায় থাকবে আনসারের বহর। প্রস্তাবিত ১১টি ভবনের মধ্যে মাত্র চারটি গবেষণায় কাজে লাগবে। এ যেন খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি অবস্থা। আয়োজন দেখে মনে হচ্ছে, গবেষণার চেয়ে এক দল মানুষের আরাম আয়েশে এসব হচ্ছে। তার চেয়েও বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের প্রবণতা। জমি অধিগ্রহণে প্রকল্পে প্রায় পাঁচগুণ বেশি অর্থ চাওয়া হয়েছে। ৫০ একর জমির জন্য ১৫০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। অথচ জেলা প্রশাসন জানিয়েছে মৌজা রেট অনুযায়ী এ জমির জন্য ৩২ কোটি টাকা লাগবে। প্রকল্পের কাজে বিদেশ ভ্রমণের যে বাতিক তাও এখানে দেখা গেল। বিদেশে প্রশিক্ষণ ও ভ্রমণে ১০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। প্রস্তাবটি নিয়ে পরিকল্পনা কমিশন বলেছে, অপ্রয়োজনীয় ভবন নির্মাণে প্রকল্পের বড় অর্থ ব্যয় হয়ে যাবে। এছাড়াও অন্য কিছু খাতে অস্বাভাবিক ব্যয় ধরা হয়েছে। গবেষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হওয়ায় এর সাথে জড়িতরা দুর্নীতি ও অহেতুক আরাম আয়েশে জড়িয়ে পড়বেন তা অগ্রহণযোগ্য। তাই আমরা মনে করি, গবেষণাগারটি নির্মাণের প্রয়োজন থাকলে তা অবশ্যই নির্মাণ করা হোক। তবে মূল লক্ষ্য হতে হবে গবেষণা। সরকারি কোষাগার খালি করার কাজে যেন দুর্নীতিবাজরা একে ব্যবহার করতে না পারেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

গবেষণাকেন্দ্রের নামে বিপুল অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব; দুর্নীতির সুযোগ যেন না থাকে

আপলোড টাইম : ০৯:১০:১৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জুলাই ২০২৪

চারদিকে এখন উন্নয়নের ব্যতিক্রমী তৎপরতা। ক্ষমতায় থাকার ভিত্তি হিসেবে সরকার উন্নয়নের বয়ান দিচ্ছে। দেশকে যেহেতু উন্নত করছে তাই নাগরিকদের সরকারকে অনেক ছাড় দিতে হবে। এক্ষেত্রে বলার চেষ্টা করা হয়ে থাকে, উন্নয়নের স্বার্থে জনসাধারণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার দরকার নেই। নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র হলেই চলবে। এমন একটি অবস্থায় প্রশাসন যেন জবাবদিহিহীন। সরকারি প্রশাসন এমন স্বাধীনতা পাচ্ছে; যাতে রাষ্ট্রীয় তহবিলের যথেচ্ছ ব্যবহার করা যায়। প্রয়োজন না থাকলেও নতুন নতুন প্রকল্প প্রণয়ন করা হচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এমন প্রকল্পের লক্ষণীয় দিকটি হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় ব্যয়। সহযোগী একটি দৈনিকে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) একটি গবেষণাকেন্দ্রের প্রস্তাব দিয়েছে। দেশে বিজ্ঞান গবেষণা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এতে আমাদের কৃষি ও শিল্প উপকৃত হবে। তবে কাশিয়ানিতে প্রস্তাবিত গবেষণাকেন্দ্র নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ওই এলাকায় এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের আদৌ প্রয়োজন আছে কিনা। সরকারের পক্ষ থেকে এর সম্ভাব্যতা নিয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত এবং জরিপের বিষয়টি জানা যায়নি। দেখা যাচ্ছে, এই প্রকল্পে বিলাসী সব প্রস্তাব রাখা হয়েছে। বিসিএসআইআরের আগের একেকটি গবেষণাকেন্দ্র বাস্তবায়নে গড়ে ১০০ কোটি টাকা লেগেছে। কাশিয়ানির কেন্দ্র বাস্তবায়নে এক হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এতে বিপুল কৃষিজমি অধিগ্রহণ করতে হবে। সেখানে কর্মকর্তাদের আবাসনে বিলাসী আয়োজন রাখা হয়েছে। বাংলো বাড়ি, ১০টি আবাসিক ভবন, ছয়তলা ডরমিটরি, গেস্ট হাউজ ভবন, তিনতলা স্কুল। সাথে থাকবে বড় বড় পুকুর ও মাঠ। অতিথিদের থাকার ১২টি সাধারণ স্যুইট, চারটি ভিআইপি স্যুইট ও একটি ভিভিআইপি স্যুইট সংবলিত ১০ তলার একটি বহুমুখী ভবন। যে ধরনের অতিথিদের লক্ষ্য করে এই বিপুল আয়োজন তারা হয়তো কয়েক বছরে একবার আসবেন। ভিভিআইপি বলতে যাদের বোঝায় তারা হয়তো এক যুগেও আসবেন না। তার পরেও আবাদি জমি নষ্ট করে বিপুল অর্থ খরচ করে এগুলো তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ সরবরাহে বিশাল সাব-স্টেশন, নিরাপত্তায় থাকবে আনসারের বহর। প্রস্তাবিত ১১টি ভবনের মধ্যে মাত্র চারটি গবেষণায় কাজে লাগবে। এ যেন খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি অবস্থা। আয়োজন দেখে মনে হচ্ছে, গবেষণার চেয়ে এক দল মানুষের আরাম আয়েশে এসব হচ্ছে। তার চেয়েও বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের প্রবণতা। জমি অধিগ্রহণে প্রকল্পে প্রায় পাঁচগুণ বেশি অর্থ চাওয়া হয়েছে। ৫০ একর জমির জন্য ১৫০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। অথচ জেলা প্রশাসন জানিয়েছে মৌজা রেট অনুযায়ী এ জমির জন্য ৩২ কোটি টাকা লাগবে। প্রকল্পের কাজে বিদেশ ভ্রমণের যে বাতিক তাও এখানে দেখা গেল। বিদেশে প্রশিক্ষণ ও ভ্রমণে ১০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। প্রস্তাবটি নিয়ে পরিকল্পনা কমিশন বলেছে, অপ্রয়োজনীয় ভবন নির্মাণে প্রকল্পের বড় অর্থ ব্যয় হয়ে যাবে। এছাড়াও অন্য কিছু খাতে অস্বাভাবিক ব্যয় ধরা হয়েছে। গবেষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হওয়ায় এর সাথে জড়িতরা দুর্নীতি ও অহেতুক আরাম আয়েশে জড়িয়ে পড়বেন তা অগ্রহণযোগ্য। তাই আমরা মনে করি, গবেষণাগারটি নির্মাণের প্রয়োজন থাকলে তা অবশ্যই নির্মাণ করা হোক। তবে মূল লক্ষ্য হতে হবে গবেষণা। সরকারি কোষাগার খালি করার কাজে যেন দুর্নীতিবাজরা একে ব্যবহার করতে না পারেন।