ইপেপার । আজ রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিক্ষাক্রম নিয়ে উদ্বেগ ঘনীভূত; পুনর্মূল্যায়নে বাধা কোথায়

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:৩৮:০৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ জুলাই ২০২৪
  • / ৫১ বার পড়া হয়েছে

বিদ্যমান পাঠ্যক্রম শিক্ষার্থীদের মেধাহীন ও চরিত্রহীন করে তুলছে। এমন আশঙ্কা দি দিন তীব্র হচ্ছে। নতুন শিক্ষাক্রমে পরীক্ষা ও মূল্যায়ন পুরোমাত্রায় সঙ্কুচিত করা হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশ কীভাবে সম্ভব সে প্রশ্ন উঠেছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে পরীক্ষামূলক যে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করা হয়েছে তাতে দেশের সর্বস্তরের মানুষ তাদের সন্তান-সন্ততির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত। গত বুধবার ‘বিতর্কিত জাতীয় পাঠ্যক্রম : দেশপ্রেমিক সচেতন নাগরিকদের করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ আট দফা দাবি এবং তিন দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
নতুন শিক্ষাক্রম পর্যালোচনায় দেখা যায়, এটি দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সব দিক থেকেই ভয়াবহ। শিক্ষার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষিত, মার্জিত, দেশপ্রেমিক ও ঐতিহ্য সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার কথা। কিন্তু বর্তমান শিক্ষা কারিকুলামে ভাষা, নীতি-নৈতিকাবোধ ও চরিত্রগত বিষয়ে এমন সামগ্রিক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে, যা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর চিন্তা ও মননের সাথে সাংঘর্ষিক। শিক্ষার কাজ হলো দেশের জনগণের বোধ-বিশ্বাস, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের সাথে সঙ্গতি রেখে একজন নাগরিককে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও পেশাগত জীবনে সৎ, দায়িত্ববান, ধর্মপরায়ণ ও দেশপ্রেমী হিসাবে গড়ে তোলা। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমে তা চরমভাবে উপেক্ষিত। বরং বর্তমান শিক্ষাক্রম থেকে ধর্ম ও নৈতিকতা বাদ দিয়ে মৌলিক দর্শন হিসেবে পৌত্তলিকতা, সেক্যুলারিজম ও ধর্মহীনতা শেখানোর অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। সূক্ষ¥ভাবে বিজাতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, জাতীয় স্বার্থবিরোধী বিষয় নতুন শিক্ষাক্রমে সংযোজন করা হয়েছে। শিল্প ও সংস্কৃতির নামে ইসলামী সংস্কৃতি মুছে ফেলার অপপ্রয়াস চালানো হয়েছে। একমুখী শিক্ষার নামে মাদরাসা শিক্ষা ধ্বংসের সূক্ষ¥ পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিজ্ঞান শিক্ষা সঙ্কোচনে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মেধা ধ্বংস করে জাতিকে পরনির্ভরশীল করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ধর্মীয় পরিচয় যাতে না থাকে সেভাবে তাদের মস্তিষ্ক প্রস্তুত করা হচ্ছে। মানব প্রকৃতি বিরুদ্ধ মতবাদ ও যৌনাচার উৎসাহিত করা হয়েছে। এ ছাড়া ‘কৃষি শিক্ষা’ বাদ দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির মূলভিত্তি অস্বীকার করা হয়েছে। ‘গার্হস্থ্য বিজ্ঞান’ শিক্ষা বাদ দিয়ে কিশোরীদের পশ্চিমা কেতায় পেশা পছন্দকে উসকে দেয়া হচ্ছে।
অবাক করা বিষয় হলো, মুসলিমপ্রধান দেশে মুসলমানদের অবদান আড়ালের চেষ্টা স্পষ্ট। ক্ষেত্রবিশেষে ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে সচেতনভাবে। মুসলিম শাসকদের ইতিহাস এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের চরিত্র হনন করা হয়েছে। ২০২৪ সালের পাঠ্যপুস্তকগুলোতে এমন কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে, যার ব্যাপকতা সুদূরপ্রসারী। ইবতেদায়ি প্রথম শ্রেণীর ইংলিশ ফর টুডে বইয়ের দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় শিক্ষার্থীদের পরস্পর কথোপকথনের সময় সালাম বিনিময়ের সচিত্র শিক্ষা ছিল। তা এখন বাদ দেয়া হয়েছে। এই কারিকুলাম একমুখী হওয়ায় পাঠ্যবইয়ে এমন অনেক বিষয় রয়েছে, যা মাদরাসা শিক্ষার বোধ-বিশ্বাসের বিপরীত। সঙ্গত কারণে দেশের প্রায় সব নাগরিকের মতো আমরা মনে করি, সব মত-পথের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি গঠন করে নতুন শিক্ষাক্রম পুনর্মূল্যায়নের মাধ্যমে বিতর্কিত সব বিষয় বাদ দিয়ে ঢেলে সাজানো হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

শিক্ষাক্রম নিয়ে উদ্বেগ ঘনীভূত; পুনর্মূল্যায়নে বাধা কোথায়

আপলোড টাইম : ১১:৩৮:০৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ জুলাই ২০২৪

বিদ্যমান পাঠ্যক্রম শিক্ষার্থীদের মেধাহীন ও চরিত্রহীন করে তুলছে। এমন আশঙ্কা দি দিন তীব্র হচ্ছে। নতুন শিক্ষাক্রমে পরীক্ষা ও মূল্যায়ন পুরোমাত্রায় সঙ্কুচিত করা হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশ কীভাবে সম্ভব সে প্রশ্ন উঠেছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে পরীক্ষামূলক যে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করা হয়েছে তাতে দেশের সর্বস্তরের মানুষ তাদের সন্তান-সন্ততির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত। গত বুধবার ‘বিতর্কিত জাতীয় পাঠ্যক্রম : দেশপ্রেমিক সচেতন নাগরিকদের করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ আট দফা দাবি এবং তিন দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
নতুন শিক্ষাক্রম পর্যালোচনায় দেখা যায়, এটি দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সব দিক থেকেই ভয়াবহ। শিক্ষার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষিত, মার্জিত, দেশপ্রেমিক ও ঐতিহ্য সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার কথা। কিন্তু বর্তমান শিক্ষা কারিকুলামে ভাষা, নীতি-নৈতিকাবোধ ও চরিত্রগত বিষয়ে এমন সামগ্রিক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে, যা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর চিন্তা ও মননের সাথে সাংঘর্ষিক। শিক্ষার কাজ হলো দেশের জনগণের বোধ-বিশ্বাস, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের সাথে সঙ্গতি রেখে একজন নাগরিককে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও পেশাগত জীবনে সৎ, দায়িত্ববান, ধর্মপরায়ণ ও দেশপ্রেমী হিসাবে গড়ে তোলা। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমে তা চরমভাবে উপেক্ষিত। বরং বর্তমান শিক্ষাক্রম থেকে ধর্ম ও নৈতিকতা বাদ দিয়ে মৌলিক দর্শন হিসেবে পৌত্তলিকতা, সেক্যুলারিজম ও ধর্মহীনতা শেখানোর অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। সূক্ষ¥ভাবে বিজাতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, জাতীয় স্বার্থবিরোধী বিষয় নতুন শিক্ষাক্রমে সংযোজন করা হয়েছে। শিল্প ও সংস্কৃতির নামে ইসলামী সংস্কৃতি মুছে ফেলার অপপ্রয়াস চালানো হয়েছে। একমুখী শিক্ষার নামে মাদরাসা শিক্ষা ধ্বংসের সূক্ষ¥ পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিজ্ঞান শিক্ষা সঙ্কোচনে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মেধা ধ্বংস করে জাতিকে পরনির্ভরশীল করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ধর্মীয় পরিচয় যাতে না থাকে সেভাবে তাদের মস্তিষ্ক প্রস্তুত করা হচ্ছে। মানব প্রকৃতি বিরুদ্ধ মতবাদ ও যৌনাচার উৎসাহিত করা হয়েছে। এ ছাড়া ‘কৃষি শিক্ষা’ বাদ দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির মূলভিত্তি অস্বীকার করা হয়েছে। ‘গার্হস্থ্য বিজ্ঞান’ শিক্ষা বাদ দিয়ে কিশোরীদের পশ্চিমা কেতায় পেশা পছন্দকে উসকে দেয়া হচ্ছে।
অবাক করা বিষয় হলো, মুসলিমপ্রধান দেশে মুসলমানদের অবদান আড়ালের চেষ্টা স্পষ্ট। ক্ষেত্রবিশেষে ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে সচেতনভাবে। মুসলিম শাসকদের ইতিহাস এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের চরিত্র হনন করা হয়েছে। ২০২৪ সালের পাঠ্যপুস্তকগুলোতে এমন কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে, যার ব্যাপকতা সুদূরপ্রসারী। ইবতেদায়ি প্রথম শ্রেণীর ইংলিশ ফর টুডে বইয়ের দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় শিক্ষার্থীদের পরস্পর কথোপকথনের সময় সালাম বিনিময়ের সচিত্র শিক্ষা ছিল। তা এখন বাদ দেয়া হয়েছে। এই কারিকুলাম একমুখী হওয়ায় পাঠ্যবইয়ে এমন অনেক বিষয় রয়েছে, যা মাদরাসা শিক্ষার বোধ-বিশ্বাসের বিপরীত। সঙ্গত কারণে দেশের প্রায় সব নাগরিকের মতো আমরা মনে করি, সব মত-পথের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি গঠন করে নতুন শিক্ষাক্রম পুনর্মূল্যায়নের মাধ্যমে বিতর্কিত সব বিষয় বাদ দিয়ে ঢেলে সাজানো হবে।