ইপেপার । আজ শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগে বিভক্তি, পালটা কর্মসূচি

রাজনৈতিক কোন্দলেই বাবাকে হত্যা :ডরিন, হত্যার প্রকৃত কারণ জানে শাহীন : ডিবি প্রধান

সমীকরণ প্রতিবেদন:
  • আপলোড টাইম : ০৯:৪১:৪২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ জুলাই ২০২৪
  • / ৪৮ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকান্ডের মোটিভ ‘আড়াল করতে’ রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগে বিভক্তি স্পষ্ট হয়েছে, চলছে পাল্টাপাল্টি নানা কর্মসূচি ও বক্তব্য। গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির দাবি তুলে মিছিল করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপ। অন্যদিকে এমপি আনারকে নৃশংসভাবে হত্যার সুষ্ঠু বিচার, পরিকল্পনাকারীকে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমুলকমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীরা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একজন সদস্য বলেন, স্বর্ণ চোরাচালানের পুরো একক নিয়ন্ত্রণ চলে গিয়েছিল এমপি আনারের হাতে। এই টাকার  ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। এছাড়া এলাকায় রাজনৈতিক আধিপত্য নিয়েও দ্বন্দ্ব ছিল।

এই দুই ক্ষেত্রের লোকজন একত্রে মিলে সিদ্ধান্ত নেয় এমপি আনারকে হত্যা করতে হবে। তবে আনার হত্যার মূল কারণ স্বর্ণ চোরাচালানের নিয়ন্ত্রণ। এলাকাবাসীরও অভিযোগ, স্বর্ণ চোরাচালানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধেই এমপি আনার হত্যার শিকার হয়েছেন। তাকে হত্যা করতে কয়েকশ’ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। স্বর্ণ চোরাচালানের সাথে যারা জড়িত তারা অনেক প্রভাবশালী। সব সরকারের সময়ই তারা প্রভাবশালী থাকে। অতীতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে শতাধিক নেতাকর্মী নিহত হন। একটি হত্যারও বিচার হয়নি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এক শ্রেণীর সদস্য হত্যার পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবায়নকারীদের চিনলেও গ্রেফতার করবে না। কারণ তারা তাদের কাছ থেকে উপকৃত হয়েছেন। সব সরকারের আমলেই প্রশাসন, দল, ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এক শ্রেণীর কর্মকর্তারা স্বর্ণ চোরাচালানের মাফিয়াদের দ্বারা উপকৃত হয়েছেন।

শুরুতে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকান্ডের মোটিভ নিয়ে আলোচনায় আসলো স্বর্ণ চোরাচালান। এখন আবার বলা হচ্ছে রাজনৈতিক হত্যাকান্ড। আবার বলা হচ্ছে মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেন নিয়ে বিরোধ। স্বর্ণ চোরাচালানের টাকার ভাগ কাউকে দিতো না আনার। এখন প্রকাশ্যে আসছে রাজনৈতিক বিরোধ। কিছু দিন চুপ থেকে এখন আবার মুখ খুললেন এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে তিনি বলেন, রাজনৈতিক কোন্দলেই এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। যারা এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত তাদেরকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও বিভিন্ন তথ্য প্রমাণের সাপেক্ষেই তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বলেন, ইতিমধ্যে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের দু’জন নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। কেন গ্রেপ্তার হয়েছেন? যথেষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতেই হয়েছেন। শিমুল ভূঁইয়া তার জবানবন্দিতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু এবং ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ ওরফে গ্যাস বাবুর কথা বলেছেন। আবার গ্যাস বাবুও তার জবানবন্দিতে মিন্টুর কথা বলেছেন। অবশ্যই তাদের সংশ্লিষ্টতা আছে বলে আদালতে গিয়ে বলেছেন। এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ-৪ আসনের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, এটা আসলে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনের মনের কথা কিনা সন্দেহ আছে। তাকে দিয়ে একথা বলানো হচ্ছে কিনা কে জানে।

এদিকে, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর মুক্তির দাবিতে এলাকায় মিছিল হয়েছে। আসলে হত্যাকান্ডের প্রকৃত মোটিভ নিয়ে এখন বিতর্ক শুরু হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতে এটা করা হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্ন অনেকের। এই হত্যাকান্ডে যারা কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে তারা অনেক প্রভাবশালী। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও গোয়েন্দা তথ্যে উঠে এসেছে, দুই বছর ধরে এমপি আনারকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তার বাল্য বন্ধু আখতারুজ্জামান শাহীনকে হত্যাকান্ডের পুরো দায়িত্ব দেওয়া হয়। নেপথ্যে কারা আছে? দলীয় লোক, নাকি স্বর্ণ চোরাচালানকারী। এটা নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে আলোচনা চলছে। ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ ওরফে গ্যাস বাবুকে ঝিনাইদহ সদর পৌরসভার মেয়র বানানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিন্টু। এ কারণে গ্যাস বাবুও এমপি আনার হত্যাকান্ডে জড়িত থাকতে পারে। এদিকে মিন্টু আবার ওই আসনে এমপি পদে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন। এটা নিয়েও তাদের মধ্যে বিরোধ আছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, এমপি আনার হত্যাকান্ডের মাস্টারমাইন্ড হলো পলাতক আখতারুজ্জামান শাহীন। কিলার ভাড়া করা থেকে শুরু করে পুরো হত্যাকান্ড সে সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করেছে। তাকে গ্রেফতার করতে পারলেই এমপি আনার হত্যাকান্ডের প্রকৃত কারণ জানা যাবে। এ পর্যন্ত মোট ৯ জন গ্রেফতার হয়েছেন। সাত জন বাংলাদেশে ও দুই জন ভারতে। বিভিন্ন তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। হত্যার মোটিভ সম্পর্কে তিনি বলেন, টাকার লেনদেন নিয়ে দ্বন্দ এবং এলাকায় রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব থাকতে পারে।  এই দুটি বিষয়ের পাশাপাশি পারিপার্শ্বিক নানা কারণ থাকতে পারে। প্রকৃত কারণ জানে শাহীন।

এমপি আনারের ঘনিষ্ঠজন এবং ওই এলাকার বাসিন্দারা বলেন, এমপি আনার হত্যাকান্ডের প্রকৃত ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। এখনো পর্যন্ত পুলিশ মোটিভ নির্দিষ্ট করতে পারেনি। কারণ বলতে পারেনি। ডিএনএ পরীক্ষা করে লাশ শনাক্ত করা হয়নি। এসব আলামতের প্রেক্ষিতে মনে হচ্ছে এই মামলা আর কোন দিন আলোর মুখ নাও দেখতে পারে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতে অতীতে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং এখনো করছেন তাদের কেউ কেউ বলেন, এমপি আনার এক সময় মাদক ব্যবসা করতেন, স্বর্ণ চোরাচালানের সাথেও জড়িত ছিলেন। স্বর্ণ চোরাচালান ও হুন্ডি ব্যবসায়ীরা খুবই প্রভাবশালী। এপার-ওপার দুই পাড়েই রয়েছে তাদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট। আনার হত্যার তদন্ত সে অবধি পৌছায়নি। নেপথ্যের মাফিয়ারা টাকা দিয়ে সব ম্যানেজ করে ফেলে। অনেক রাজনৈতিক নেতাদের নির্বাচনের খরচও দিয়েছেন এই মাফিয়ারা। সাবেক ও বর্তমান একাধিক এমপির নামও এলাকাবাসীর মুখে মুখে, যারা এই হত্যাকান্ডে জড়িত।

ঝিনাইদহের সীমান্ত, চুয়াডাঙ্গার সীমান্ত ও যশোর সীমান্ত এলাকায় একেকটি থানার ওসিসহ অন্যান্য কর্মকর্তার বদলি হতে একেক জনের কয়েক কোটি টাকা লাগে। এমন তথ্যও এলাকাবাসী জানান। স্থানীয় প্রশাসন সূত্র একই তথ্য জানিয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এক শ্রেণীর কর্মকর্তা আনার হত্যাকান্ডে কারা জড়িত সেটা জানেন। কিন্তু জানলেও টাকার কারণে সবার মুখ বন্ধ । স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এক শ্রেণীর সদস্য কে কত টাকা পায় সবই আমরা জানি। আমাদের কলকাতার সংবাদদাতা তারিক হাসান বলেন, গতকাল পর্যন্ত এমপি আনার হত্যাকান্ডের ডিএনএ টেস্ট করার জন্য আবেদন করা হয়নি। সেখানকার সিআইডি স্থানীয় সন্দেহভাজন একজনকে খুঁজছে, যে গাড়ি দিয়ে, লাশ সরানোসহ হত্যাকান্ডে সহযোগিতা করেছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগে বিভক্তি, পালটা কর্মসূচি

রাজনৈতিক কোন্দলেই বাবাকে হত্যা :ডরিন, হত্যার প্রকৃত কারণ জানে শাহীন : ডিবি প্রধান

আপলোড টাইম : ০৯:৪১:৪২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ জুলাই ২০২৪

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকান্ডের মোটিভ ‘আড়াল করতে’ রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগে বিভক্তি স্পষ্ট হয়েছে, চলছে পাল্টাপাল্টি নানা কর্মসূচি ও বক্তব্য। গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির দাবি তুলে মিছিল করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপ। অন্যদিকে এমপি আনারকে নৃশংসভাবে হত্যার সুষ্ঠু বিচার, পরিকল্পনাকারীকে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমুলকমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাকর্মীরা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একজন সদস্য বলেন, স্বর্ণ চোরাচালানের পুরো একক নিয়ন্ত্রণ চলে গিয়েছিল এমপি আনারের হাতে। এই টাকার  ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। এছাড়া এলাকায় রাজনৈতিক আধিপত্য নিয়েও দ্বন্দ্ব ছিল।

এই দুই ক্ষেত্রের লোকজন একত্রে মিলে সিদ্ধান্ত নেয় এমপি আনারকে হত্যা করতে হবে। তবে আনার হত্যার মূল কারণ স্বর্ণ চোরাচালানের নিয়ন্ত্রণ। এলাকাবাসীরও অভিযোগ, স্বর্ণ চোরাচালানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধেই এমপি আনার হত্যার শিকার হয়েছেন। তাকে হত্যা করতে কয়েকশ’ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। স্বর্ণ চোরাচালানের সাথে যারা জড়িত তারা অনেক প্রভাবশালী। সব সরকারের সময়ই তারা প্রভাবশালী থাকে। অতীতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে শতাধিক নেতাকর্মী নিহত হন। একটি হত্যারও বিচার হয়নি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এক শ্রেণীর সদস্য হত্যার পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবায়নকারীদের চিনলেও গ্রেফতার করবে না। কারণ তারা তাদের কাছ থেকে উপকৃত হয়েছেন। সব সরকারের আমলেই প্রশাসন, দল, ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এক শ্রেণীর কর্মকর্তারা স্বর্ণ চোরাচালানের মাফিয়াদের দ্বারা উপকৃত হয়েছেন।

শুরুতে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকান্ডের মোটিভ নিয়ে আলোচনায় আসলো স্বর্ণ চোরাচালান। এখন আবার বলা হচ্ছে রাজনৈতিক হত্যাকান্ড। আবার বলা হচ্ছে মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেন নিয়ে বিরোধ। স্বর্ণ চোরাচালানের টাকার ভাগ কাউকে দিতো না আনার। এখন প্রকাশ্যে আসছে রাজনৈতিক বিরোধ। কিছু দিন চুপ থেকে এখন আবার মুখ খুললেন এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে তিনি বলেন, রাজনৈতিক কোন্দলেই এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। যারা এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত তাদেরকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও বিভিন্ন তথ্য প্রমাণের সাপেক্ষেই তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বলেন, ইতিমধ্যে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের দু’জন নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। কেন গ্রেপ্তার হয়েছেন? যথেষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতেই হয়েছেন। শিমুল ভূঁইয়া তার জবানবন্দিতে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু এবং ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ ওরফে গ্যাস বাবুর কথা বলেছেন। আবার গ্যাস বাবুও তার জবানবন্দিতে মিন্টুর কথা বলেছেন। অবশ্যই তাদের সংশ্লিষ্টতা আছে বলে আদালতে গিয়ে বলেছেন। এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ-৪ আসনের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, এটা আসলে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনের মনের কথা কিনা সন্দেহ আছে। তাকে দিয়ে একথা বলানো হচ্ছে কিনা কে জানে।

এদিকে, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর মুক্তির দাবিতে এলাকায় মিছিল হয়েছে। আসলে হত্যাকান্ডের প্রকৃত মোটিভ নিয়ে এখন বিতর্ক শুরু হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতে এটা করা হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্ন অনেকের। এই হত্যাকান্ডে যারা কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে তারা অনেক প্রভাবশালী। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও গোয়েন্দা তথ্যে উঠে এসেছে, দুই বছর ধরে এমপি আনারকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তার বাল্য বন্ধু আখতারুজ্জামান শাহীনকে হত্যাকান্ডের পুরো দায়িত্ব দেওয়া হয়। নেপথ্যে কারা আছে? দলীয় লোক, নাকি স্বর্ণ চোরাচালানকারী। এটা নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে আলোচনা চলছে। ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ ওরফে গ্যাস বাবুকে ঝিনাইদহ সদর পৌরসভার মেয়র বানানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিন্টু। এ কারণে গ্যাস বাবুও এমপি আনার হত্যাকান্ডে জড়িত থাকতে পারে। এদিকে মিন্টু আবার ওই আসনে এমপি পদে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন। এটা নিয়েও তাদের মধ্যে বিরোধ আছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, এমপি আনার হত্যাকান্ডের মাস্টারমাইন্ড হলো পলাতক আখতারুজ্জামান শাহীন। কিলার ভাড়া করা থেকে শুরু করে পুরো হত্যাকান্ড সে সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করেছে। তাকে গ্রেফতার করতে পারলেই এমপি আনার হত্যাকান্ডের প্রকৃত কারণ জানা যাবে। এ পর্যন্ত মোট ৯ জন গ্রেফতার হয়েছেন। সাত জন বাংলাদেশে ও দুই জন ভারতে। বিভিন্ন তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। হত্যার মোটিভ সম্পর্কে তিনি বলেন, টাকার লেনদেন নিয়ে দ্বন্দ এবং এলাকায় রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব থাকতে পারে।  এই দুটি বিষয়ের পাশাপাশি পারিপার্শ্বিক নানা কারণ থাকতে পারে। প্রকৃত কারণ জানে শাহীন।

এমপি আনারের ঘনিষ্ঠজন এবং ওই এলাকার বাসিন্দারা বলেন, এমপি আনার হত্যাকান্ডের প্রকৃত ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। এখনো পর্যন্ত পুলিশ মোটিভ নির্দিষ্ট করতে পারেনি। কারণ বলতে পারেনি। ডিএনএ পরীক্ষা করে লাশ শনাক্ত করা হয়নি। এসব আলামতের প্রেক্ষিতে মনে হচ্ছে এই মামলা আর কোন দিন আলোর মুখ নাও দেখতে পারে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতে অতীতে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং এখনো করছেন তাদের কেউ কেউ বলেন, এমপি আনার এক সময় মাদক ব্যবসা করতেন, স্বর্ণ চোরাচালানের সাথেও জড়িত ছিলেন। স্বর্ণ চোরাচালান ও হুন্ডি ব্যবসায়ীরা খুবই প্রভাবশালী। এপার-ওপার দুই পাড়েই রয়েছে তাদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট। আনার হত্যার তদন্ত সে অবধি পৌছায়নি। নেপথ্যের মাফিয়ারা টাকা দিয়ে সব ম্যানেজ করে ফেলে। অনেক রাজনৈতিক নেতাদের নির্বাচনের খরচও দিয়েছেন এই মাফিয়ারা। সাবেক ও বর্তমান একাধিক এমপির নামও এলাকাবাসীর মুখে মুখে, যারা এই হত্যাকান্ডে জড়িত।

ঝিনাইদহের সীমান্ত, চুয়াডাঙ্গার সীমান্ত ও যশোর সীমান্ত এলাকায় একেকটি থানার ওসিসহ অন্যান্য কর্মকর্তার বদলি হতে একেক জনের কয়েক কোটি টাকা লাগে। এমন তথ্যও এলাকাবাসী জানান। স্থানীয় প্রশাসন সূত্র একই তথ্য জানিয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এক শ্রেণীর কর্মকর্তা আনার হত্যাকান্ডে কারা জড়িত সেটা জানেন। কিন্তু জানলেও টাকার কারণে সবার মুখ বন্ধ । স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এক শ্রেণীর সদস্য কে কত টাকা পায় সবই আমরা জানি। আমাদের কলকাতার সংবাদদাতা তারিক হাসান বলেন, গতকাল পর্যন্ত এমপি আনার হত্যাকান্ডের ডিএনএ টেস্ট করার জন্য আবেদন করা হয়নি। সেখানকার সিআইডি স্থানীয় সন্দেহভাজন একজনকে খুঁজছে, যে গাড়ি দিয়ে, লাশ সরানোসহ হত্যাকান্ডে সহযোগিতা করেছে।