ইপেপার । আজ শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কেমন আছে ‘স্মার্ট ভিলেজ’ হিজলী গ্রাম

আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ:
  • আপলোড টাইম : ০৮:৩২:২৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪
  • / ৬৭ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশের প্রথম ‘স্মার্ট ভিলেজ’ ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার হিজলী গ্রাম এখন ‘ভাঙ্গা হাট’। ঢাক ঢোল পিটিয়ে গ্রামটি দেশের প্রথম ‘স্মার্ট ভিলেজ’ বলে প্রচার করা হলেও বাস্তবে সেখানে কিছু সাইনবোর্ড ও হস্তশিল্প ছাড়া এখন কিছুই নেই। স্মার্ট ভিলেজ গড়ার উদ্যোক্তা ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুস্মতা সাহা সম্প্রতি বদলি হওয়ার পরই ‘স্মার্ট ভিলেজ’ হিজলী গ্রামটি ভাঙ্গা হাটে পরিণত হয়েছে বলে গ্রামবাসী অভিযোগ করেছেন। ফলে স্মার্ট ভিলেজ গড়া নিয়ে এই জমকালো প্রচারণায় গ্রামের মানুষ প্রথমে আশায় বুক বাঁধলেও এখন তারা খুবই ক্ষুদ্ধ ও মর্মাহত।

সরেজমিন গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২২ সালে হরিণাকুণ্ডু উপজেলা কাপাশহাটিয়া ইউনিয়নের হিজলী গ্রামকে দেশের প্রথম স্মার্ট ভিলেজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ঝিনাইদহের তৎকালীন জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুস্মতা সাহা এই উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু ২০২৩ সালে তারা বদলি হওয়ার পর এই উদ্যোগ সফল হয়নি। স্মার্ট ভিলেজ করতে তারা হিজলী গ্রামে একাধিক প্রকল্প গ্রহণ করেন। কিন্তু এখন সেখানে সাইনবোর্ড, দেয়াল লিখন ও হস্তশিল্প ছাড়া কিছুই নেই।

হিজলী গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য ইব্রাহীম বিশ^াস জানান, ‘আমাদের স্মার্টটা এখন বাইরে চলে যাচ্ছে। তারপরও এখনো আমরা আশাবাদী।’ তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় হিজলী গ্রামে প্রতিষ্ঠিত স্মার্ট বৈঠকখানাটি খোলা হয় না। বন্ধ রয়েছে লাইব্রেরি ও যুবক্লাব। নারীদের দক্ষতা বাড়ানো এবং অফলাইন-অনলাইনে বাজার ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্তকরণ করার উদ্যোগ ভেস্তে গেছে। গ্রামে শক্তিশালী ইন্টারনেট সংযোগ নেই। বাড়ির আঙিনা ও রাস্তার ধারে পরিত্যক্ত জমিতে আবাদ করার উদ্যোগ কার্যত মাঠে মারা গেছে। কৃষি কর্মকর্তা, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা, যুব উন্নয়ন অফিসার, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ও বিভিণ্ন এনজিওর প্রতিনিধিরা আগে হিজলী গ্রামে আসলেও এখন তাদের টিকিটাও দেখা মেলে না।

গ্রামের বাসিন্দা রুহুল আমিন জানান, যুবকদের কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, ঝরে পড়া, অটিস্টিক এবং এতিম বাঁচ্চাসহ সব শিশুদের শিক্ষার মূলধারায় অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগ থেমে গেছে। গ্রামের নামে খোলা ফেসবুক গ্রুপ বহু আগেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, হিজলী গ্রামে সরকারিভাবে কোনো ইন্টারনেট সুবিধা নেই। ব্যক্তিগত উদ্যোগে ২৫ বাড়িতে ইন্টারনেট সুবিধা থাকলেও ৩০৯টি বাড়িতে কোনো ইন্টারনেট সংযোগ নেই। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের করা স্মার্ট যুব ক্লাবটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। ফলে গ্রামের যুব সমাজ আবারো মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়ে পড়েছে। তবে গ্রামটি বাল্যবিয়ে ও আত্মহত্যা মুক্ত রয়েছে।

গ্রামের আইনুল বিশ^াস জানান, ‘স্মার্ট ভিলেজ ঘোষণা করার খবরে আমরা খুশি ছিলাম। কিন্তু এখন গ্রামে কোনো কার্যক্রম নেই, অন্য সিস্টেমে চলছে।’ তিনি বলেন, স্মার্ট ভিলেজের কার্যক্রম অন্য গ্রামের মানুষ একক কায়দায় চালাচ্ছেন। কাপাশহাটিয়া গ্রামের ইউনুস আলী যিনি হরিণাকুণ্ডু ইউএনও অফিসে চাকরি করেন, তিনিই তাঁর ভাই-ভাতিজা দিয়ে স্মার্ট ভিলেজ উন্নয়নের নামে কাপাশহাটিয়া বাওড়ের ধারে মিনি ইকো পার্ক বানিয়ে লুটপাট করছেন। ওই কার্যক্রমে হিজলী গ্রামের কোনো মানুষকে সম্পৃক্ত করা হয়নি। এখান থেকে অর্জিত টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হয় না বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

গ্রামবাসীর অভিযোগ, হরিণাকুণ্ডুর সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুস্মীতা সাহা আগে সপ্তাহে এক দিন হিজলী গ্রামে আসতেন। কিন্তু নতুন নির্বাহী অফিসার আক্তার হোসেন আসেন না। যান না কৃষি কর্মকর্তাসহ অনেকেই। ফলে হিজলী গ্রাম নিয়ে গ্রামবাসীর যে উচ্চাভিলাসী আকাঙ্খা ছিল, তা মাঠে মারা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, স্মার্ট ভিলেজ হিজলী গ্রামে ঢোকার প্রবেশ পথে রাস্তা দু’ধারে বংশ বিস্তার করেছে ক্ষতিকারক পার্থেনিয়াম গাছ। সেগুলো নির্মূলের কোনো ব্যবস্থা নেই। গ্রামের রাস্তাগুলোর জীর্ণ দশা। একটি সোলার লাইট নষ্ট হয়ে গেছে। গ্রামে হানাহানি বৃদ্ধি পেয়েছে। হিজলী গ্রামের তুহিন, শহিদুল, সেলিম, ইমারুল ও ইসা জোয়ারদারের বরজের পান চুরি হয়েছে। রেজাউল নামে এক কৃষকের গরু চুরি হয়েছে। অথচ সাইনবোর্ড ঝুলানো আছে গ্রামটি অপরাধমুক্ত।

স্মার্ট ভিলেজ নিয়ে কাপাশহাটিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শরাফৎ উদ দৌলা ঝণ্টু বলেন, গ্রামের মানুষের আন্তরিকার অভাব রয়েছে। সে কারণে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমি স্মার্ট ভিলেজ উন্নয়নে টিআর প্রকল্পের এক লাখ ৭২ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। সেই টাকা দিয়ে কী করা হয়েছে জানি না।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল হাকিম জানান, ‘গ্রামবাসী স্মার্ট ভিলেজের কনসেপ্ট গ্রহণ করেনি, সেটা আমাদের ব্যর্থতা। প্রশাসন উন্নয়নের যে ধারাবাহিকতা চালু করে দিয়েছিল, তা ধরে রাখা যায়নি। তবে গ্রামের ৪০ জন মহিলা হাতের কাজ করে প্রতি মাসে আয়-রোজগার করছেন।’

হিজলী স্মার্ট ভিলেজ করার উদ্যোক্তা ঝিনাইদহের সাবেক জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম বলেন, ‘কাপাশহাটিয়া বাওড়ে পর্যটন কেন্দ্র করতে চেয়েছিলাম, তার বর্তমান পরিস্থিতি প্রেরণাদায়ক। আর স্মার্ট হিজলী গ্রামকে আমরা মডেল করতে চেয়েছিলাম, তা করতে না পারার জন্য ব্যর্থতা যদি থাকে তা আমাদের সবার।’

হরিণাকুণ্ডু উপজেলার সাবেক নির্বাহী অফিসার সুস্মতা সাহা বলেন, ‘হিজলী গ্রামকে আমরা স্মার্ট ভিলেজ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু গ্রামের মানুষ সেটা ধরে রাখতে পারিনি। গ্রামের মানুষ কনসেপ্টটা গ্রহণ করেনি, হয়ত এক দিন হবে।’

হরিণাকুণ্ডু উপজেলার বর্তমান নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আক্তার হোসেন জানান, এ বিষয়ে তিনি আবারো সরকারের বিভিন্ন উইং কাজে লাগিয়ে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা যায় কি না চেষ্টা করবেন। তিনি বলেন, স্মার্ট ভিলেজ গড়তে সর্বপ্রথম ওই গ্রামের মানুষদের আগে স্মার্ট ও আন্তরিক হতে হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

কেমন আছে ‘স্মার্ট ভিলেজ’ হিজলী গ্রাম

আপলোড টাইম : ০৮:৩২:২৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪

বাংলাদেশের প্রথম ‘স্মার্ট ভিলেজ’ ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার হিজলী গ্রাম এখন ‘ভাঙ্গা হাট’। ঢাক ঢোল পিটিয়ে গ্রামটি দেশের প্রথম ‘স্মার্ট ভিলেজ’ বলে প্রচার করা হলেও বাস্তবে সেখানে কিছু সাইনবোর্ড ও হস্তশিল্প ছাড়া এখন কিছুই নেই। স্মার্ট ভিলেজ গড়ার উদ্যোক্তা ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুস্মতা সাহা সম্প্রতি বদলি হওয়ার পরই ‘স্মার্ট ভিলেজ’ হিজলী গ্রামটি ভাঙ্গা হাটে পরিণত হয়েছে বলে গ্রামবাসী অভিযোগ করেছেন। ফলে স্মার্ট ভিলেজ গড়া নিয়ে এই জমকালো প্রচারণায় গ্রামের মানুষ প্রথমে আশায় বুক বাঁধলেও এখন তারা খুবই ক্ষুদ্ধ ও মর্মাহত।

সরেজমিন গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২২ সালে হরিণাকুণ্ডু উপজেলা কাপাশহাটিয়া ইউনিয়নের হিজলী গ্রামকে দেশের প্রথম স্মার্ট ভিলেজ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ঝিনাইদহের তৎকালীন জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুস্মতা সাহা এই উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু ২০২৩ সালে তারা বদলি হওয়ার পর এই উদ্যোগ সফল হয়নি। স্মার্ট ভিলেজ করতে তারা হিজলী গ্রামে একাধিক প্রকল্প গ্রহণ করেন। কিন্তু এখন সেখানে সাইনবোর্ড, দেয়াল লিখন ও হস্তশিল্প ছাড়া কিছুই নেই।

হিজলী গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য ইব্রাহীম বিশ^াস জানান, ‘আমাদের স্মার্টটা এখন বাইরে চলে যাচ্ছে। তারপরও এখনো আমরা আশাবাদী।’ তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় হিজলী গ্রামে প্রতিষ্ঠিত স্মার্ট বৈঠকখানাটি খোলা হয় না। বন্ধ রয়েছে লাইব্রেরি ও যুবক্লাব। নারীদের দক্ষতা বাড়ানো এবং অফলাইন-অনলাইনে বাজার ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্তকরণ করার উদ্যোগ ভেস্তে গেছে। গ্রামে শক্তিশালী ইন্টারনেট সংযোগ নেই। বাড়ির আঙিনা ও রাস্তার ধারে পরিত্যক্ত জমিতে আবাদ করার উদ্যোগ কার্যত মাঠে মারা গেছে। কৃষি কর্মকর্তা, মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা, যুব উন্নয়ন অফিসার, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ও বিভিণ্ন এনজিওর প্রতিনিধিরা আগে হিজলী গ্রামে আসলেও এখন তাদের টিকিটাও দেখা মেলে না।

গ্রামের বাসিন্দা রুহুল আমিন জানান, যুবকদের কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, ঝরে পড়া, অটিস্টিক এবং এতিম বাঁচ্চাসহ সব শিশুদের শিক্ষার মূলধারায় অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগ থেমে গেছে। গ্রামের নামে খোলা ফেসবুক গ্রুপ বহু আগেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, হিজলী গ্রামে সরকারিভাবে কোনো ইন্টারনেট সুবিধা নেই। ব্যক্তিগত উদ্যোগে ২৫ বাড়িতে ইন্টারনেট সুবিধা থাকলেও ৩০৯টি বাড়িতে কোনো ইন্টারনেট সংযোগ নেই। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের করা স্মার্ট যুব ক্লাবটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। ফলে গ্রামের যুব সমাজ আবারো মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়ে পড়েছে। তবে গ্রামটি বাল্যবিয়ে ও আত্মহত্যা মুক্ত রয়েছে।

গ্রামের আইনুল বিশ^াস জানান, ‘স্মার্ট ভিলেজ ঘোষণা করার খবরে আমরা খুশি ছিলাম। কিন্তু এখন গ্রামে কোনো কার্যক্রম নেই, অন্য সিস্টেমে চলছে।’ তিনি বলেন, স্মার্ট ভিলেজের কার্যক্রম অন্য গ্রামের মানুষ একক কায়দায় চালাচ্ছেন। কাপাশহাটিয়া গ্রামের ইউনুস আলী যিনি হরিণাকুণ্ডু ইউএনও অফিসে চাকরি করেন, তিনিই তাঁর ভাই-ভাতিজা দিয়ে স্মার্ট ভিলেজ উন্নয়নের নামে কাপাশহাটিয়া বাওড়ের ধারে মিনি ইকো পার্ক বানিয়ে লুটপাট করছেন। ওই কার্যক্রমে হিজলী গ্রামের কোনো মানুষকে সম্পৃক্ত করা হয়নি। এখান থেকে অর্জিত টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হয় না বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

গ্রামবাসীর অভিযোগ, হরিণাকুণ্ডুর সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুস্মীতা সাহা আগে সপ্তাহে এক দিন হিজলী গ্রামে আসতেন। কিন্তু নতুন নির্বাহী অফিসার আক্তার হোসেন আসেন না। যান না কৃষি কর্মকর্তাসহ অনেকেই। ফলে হিজলী গ্রাম নিয়ে গ্রামবাসীর যে উচ্চাভিলাসী আকাঙ্খা ছিল, তা মাঠে মারা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, স্মার্ট ভিলেজ হিজলী গ্রামে ঢোকার প্রবেশ পথে রাস্তা দু’ধারে বংশ বিস্তার করেছে ক্ষতিকারক পার্থেনিয়াম গাছ। সেগুলো নির্মূলের কোনো ব্যবস্থা নেই। গ্রামের রাস্তাগুলোর জীর্ণ দশা। একটি সোলার লাইট নষ্ট হয়ে গেছে। গ্রামে হানাহানি বৃদ্ধি পেয়েছে। হিজলী গ্রামের তুহিন, শহিদুল, সেলিম, ইমারুল ও ইসা জোয়ারদারের বরজের পান চুরি হয়েছে। রেজাউল নামে এক কৃষকের গরু চুরি হয়েছে। অথচ সাইনবোর্ড ঝুলানো আছে গ্রামটি অপরাধমুক্ত।

স্মার্ট ভিলেজ নিয়ে কাপাশহাটিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শরাফৎ উদ দৌলা ঝণ্টু বলেন, গ্রামের মানুষের আন্তরিকার অভাব রয়েছে। সে কারণে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমি স্মার্ট ভিলেজ উন্নয়নে টিআর প্রকল্পের এক লাখ ৭২ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। সেই টাকা দিয়ে কী করা হয়েছে জানি না।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল হাকিম জানান, ‘গ্রামবাসী স্মার্ট ভিলেজের কনসেপ্ট গ্রহণ করেনি, সেটা আমাদের ব্যর্থতা। প্রশাসন উন্নয়নের যে ধারাবাহিকতা চালু করে দিয়েছিল, তা ধরে রাখা যায়নি। তবে গ্রামের ৪০ জন মহিলা হাতের কাজ করে প্রতি মাসে আয়-রোজগার করছেন।’

হিজলী স্মার্ট ভিলেজ করার উদ্যোক্তা ঝিনাইদহের সাবেক জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম বলেন, ‘কাপাশহাটিয়া বাওড়ে পর্যটন কেন্দ্র করতে চেয়েছিলাম, তার বর্তমান পরিস্থিতি প্রেরণাদায়ক। আর স্মার্ট হিজলী গ্রামকে আমরা মডেল করতে চেয়েছিলাম, তা করতে না পারার জন্য ব্যর্থতা যদি থাকে তা আমাদের সবার।’

হরিণাকুণ্ডু উপজেলার সাবেক নির্বাহী অফিসার সুস্মতা সাহা বলেন, ‘হিজলী গ্রামকে আমরা স্মার্ট ভিলেজ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু গ্রামের মানুষ সেটা ধরে রাখতে পারিনি। গ্রামের মানুষ কনসেপ্টটা গ্রহণ করেনি, হয়ত এক দিন হবে।’

হরিণাকুণ্ডু উপজেলার বর্তমান নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আক্তার হোসেন জানান, এ বিষয়ে তিনি আবারো সরকারের বিভিন্ন উইং কাজে লাগিয়ে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা যায় কি না চেষ্টা করবেন। তিনি বলেন, স্মার্ট ভিলেজ গড়তে সর্বপ্রথম ওই গ্রামের মানুষদের আগে স্মার্ট ও আন্তরিক হতে হবে।