ইপেপার । আজশনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মালয়েশিয়া যেতে পারেননি হাজারো শ্রমিক; দায় সরকার ও এজেন্সির

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১২:৪৮:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ জুন ২০২৪
  • / ৪৭ বার পড়া হয়েছে

আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খাত প্রবাসী আয়; কিন্তু যারা এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অবদান রাখেন তাদের প্রাপ্য মর্যাদা তো দূরের কথা সামান্য সুযোগ-সুবিধা করে দিতেও যত কার্পণ্য। প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশীরা সব অপমান-বঞ্চনা মুখ বুজে সহ্য করেন কেবল নিজের ও পরিবারের সুসময় ফেরানোর আশায়। এ দেশে সরকার নির্ধারিত ফিতে কোনো কাজ সম্পন্ন করা প্রায় অসম্ভব। এ ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি বঞ্চনার শিকার অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। যেমন বাংলাদেশী শ্রমিকদের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার ছিল মালয়েশিয়া। দেশটিতে যেতে সরকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ অভিবাসন ব্যয় ধরা হয় ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা। বাস্তবে ওই দেশে যেতে লেগেছে ছয় থেকে সাড়ে ছয় লাখ টাকা। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধের ঘোষণা আসার আগে সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা নিতো রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো। গত শুক্রবার বন্ধের শেষ সময়ে এসে আরো দেড়-দুই লাখ টাকা বাড়তি নিয়েছে এজেন্সি ও দালালরা। কিন্তু তারপরও হাজার হাজার শ্রমিক শেষ সময়েও দেশটিতে যেতে পারেননি।

শ্রমিকদের মালয়েশিয়ায় যেতে না পারার দায় কে নেবে? তারা কি আদৌ দেশটিতে যেতে পারবেন? না পারলে এজেন্সিতে জমা দেয়া অর্থ কিভাবে ফেরত পাবেন, তা নিয়ে হাজারো শ্রমিকের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। কিভাবে তারা টাকা উদ্ধার করবেন তা নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। অথচ অনেকে জমিজমা বিক্রি কিংবা সুদে ধার নিয়ে ওই অর্থ জমা দিয়েছেন। তাদের স্বপ্ন ছিল, মালয়েশিয়ায় অর্জিত অর্থ দেশে পাঠিয়ে ফেরাবেন সংসারে সচ্ছলতা। কার ব্যর্থতায় তাদের সেই আশা দুরাশায় পরিণত হলো?

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ভিসা ও জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো থেকে মালয়েশিয়া যাওয়ার সব অনুমোদন পাওয়ার পরও শুধু বিমানের টিকিট না পাওয়ায় ৩১ হাজার ৭০১ শ্রমিক দেশটির বেঁধে দেয়া সময়ে যেতে পারেননি। এসব কর্মীর এখন কী হবে, সেই বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কিংবা শ্রমিক পাঠানোর সাথে জড়িত এজেন্সি মালিকদের পক্ষ থেকে কোনো কিছু জানানো হচ্ছে না। মালয়েশিয়া সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, ৩১ মে রাত ১২টার পর বাংলাদেশসহ ১৪ দেশ থেকে আর কোনো শ্রমিক দেশটিতে ঢুকতে পারবে না।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) পরিসংখ্যান, গত ২১ মে পর্যন্ত পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ৮৩৪ কর্মীকে মালয়েশিয়া যাওয়ার অনুমোদন দেয়া হয়। ২১ মে’র পর আর অনুমোদন দেয়ার কথা না থাকলেও বিএমইটির তথ্য মতে, মন্ত্রণালয় আরো এক হাজার ১১২ কর্মীকে দেশটিতে যাওয়ার অনুমোদন দিয়েছে। অর্থাৎ, গত ৩০ মে পর্যন্ত পাঁচ লাখ ২৪ হাজার ৯৪৬ কর্মীকে মালয়েশিয়া যাওয়ার অনুমোদন দেয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চার লাখ ৯১ হাজার ৭৪৫ কর্মী মালয়েশিয়ায় গেছেন। আমরা মনে করি, অভিবাসনপ্রত্যাশী শ্রমিকদের মালয়েশিয়ায় যেতে না পারার সব দায় সরকার ও রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর। তাই যারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মালয়েশিয়া যেতে পারেননি তাদের খরচের টাকা উদ্ধারে সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

মালয়েশিয়া যেতে পারেননি হাজারো শ্রমিক; দায় সরকার ও এজেন্সির

আপলোড টাইম : ১২:৪৮:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ জুন ২০২৪

আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খাত প্রবাসী আয়; কিন্তু যারা এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অবদান রাখেন তাদের প্রাপ্য মর্যাদা তো দূরের কথা সামান্য সুযোগ-সুবিধা করে দিতেও যত কার্পণ্য। প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশীরা সব অপমান-বঞ্চনা মুখ বুজে সহ্য করেন কেবল নিজের ও পরিবারের সুসময় ফেরানোর আশায়। এ দেশে সরকার নির্ধারিত ফিতে কোনো কাজ সম্পন্ন করা প্রায় অসম্ভব। এ ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি বঞ্চনার শিকার অভিবাসনপ্রত্যাশীরা। যেমন বাংলাদেশী শ্রমিকদের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার ছিল মালয়েশিয়া। দেশটিতে যেতে সরকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ অভিবাসন ব্যয় ধরা হয় ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা। বাস্তবে ওই দেশে যেতে লেগেছে ছয় থেকে সাড়ে ছয় লাখ টাকা। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধের ঘোষণা আসার আগে সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা নিতো রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো। গত শুক্রবার বন্ধের শেষ সময়ে এসে আরো দেড়-দুই লাখ টাকা বাড়তি নিয়েছে এজেন্সি ও দালালরা। কিন্তু তারপরও হাজার হাজার শ্রমিক শেষ সময়েও দেশটিতে যেতে পারেননি।

শ্রমিকদের মালয়েশিয়ায় যেতে না পারার দায় কে নেবে? তারা কি আদৌ দেশটিতে যেতে পারবেন? না পারলে এজেন্সিতে জমা দেয়া অর্থ কিভাবে ফেরত পাবেন, তা নিয়ে হাজারো শ্রমিকের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। কিভাবে তারা টাকা উদ্ধার করবেন তা নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। অথচ অনেকে জমিজমা বিক্রি কিংবা সুদে ধার নিয়ে ওই অর্থ জমা দিয়েছেন। তাদের স্বপ্ন ছিল, মালয়েশিয়ায় অর্জিত অর্থ দেশে পাঠিয়ে ফেরাবেন সংসারে সচ্ছলতা। কার ব্যর্থতায় তাদের সেই আশা দুরাশায় পরিণত হলো?

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ভিসা ও জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো থেকে মালয়েশিয়া যাওয়ার সব অনুমোদন পাওয়ার পরও শুধু বিমানের টিকিট না পাওয়ায় ৩১ হাজার ৭০১ শ্রমিক দেশটির বেঁধে দেয়া সময়ে যেতে পারেননি। এসব কর্মীর এখন কী হবে, সেই বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কিংবা শ্রমিক পাঠানোর সাথে জড়িত এজেন্সি মালিকদের পক্ষ থেকে কোনো কিছু জানানো হচ্ছে না। মালয়েশিয়া সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, ৩১ মে রাত ১২টার পর বাংলাদেশসহ ১৪ দেশ থেকে আর কোনো শ্রমিক দেশটিতে ঢুকতে পারবে না।

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) পরিসংখ্যান, গত ২১ মে পর্যন্ত পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ৮৩৪ কর্মীকে মালয়েশিয়া যাওয়ার অনুমোদন দেয়া হয়। ২১ মে’র পর আর অনুমোদন দেয়ার কথা না থাকলেও বিএমইটির তথ্য মতে, মন্ত্রণালয় আরো এক হাজার ১১২ কর্মীকে দেশটিতে যাওয়ার অনুমোদন দিয়েছে। অর্থাৎ, গত ৩০ মে পর্যন্ত পাঁচ লাখ ২৪ হাজার ৯৪৬ কর্মীকে মালয়েশিয়া যাওয়ার অনুমোদন দেয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চার লাখ ৯১ হাজার ৭৪৫ কর্মী মালয়েশিয়ায় গেছেন। আমরা মনে করি, অভিবাসনপ্রত্যাশী শ্রমিকদের মালয়েশিয়ায় যেতে না পারার সব দায় সরকার ও রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর। তাই যারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মালয়েশিয়া যেতে পারেননি তাদের খরচের টাকা উদ্ধারে সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে।