ইপেপার । আজশনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উথলী ইউপি চেয়ারম্যানের ওপর দুর্বৃত্তের হামলা

ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ফুসফুসে ক্ষতসৃষ্টি ; এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে নেওয়া হয় ঢাকায়

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ১০:১৮:৪৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ মে ২০২৪
  • / ৩৭ বার পড়া হয়েছে

জীবননগর উপজেলার উথলী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হান্নানের ওপর হামলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে দর্শনা-জীবননগর সড়কে আকন্দবাড়ীয়া আবাসন এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে। তার অবস্থা গুরুতর। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে তাকে গতকালই উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকার জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তার ফুসফুসের অস্ত্রপচার করা হয়েছে।
এদিকে ঘটনার খবরে আব্দুল হান্নানের খোঁজ নিতে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে উপস্থিত হন চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর ও জেলা পুলিশ সুপার আরএম ফয়জুর রহমান। এসময় দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলী মুনছুর বাবু এবং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও হাসপাতালে ছুটে আসেন।


এমপি আলী আজগার টগর বলেন, আব্দুল হান্নানই ফোনে আমাকে জানান, তার ওপর হামলা করা হয়েছে। তিনি বাঁচবেন না। হাসপাতালে নিতে দ্রুত গাড়ির ব্যবস্থা করে তাকে সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। এরমধ্যে আমিও হাসপাতালে উপস্থিত হয়েছি। ঘটনাটির বিষয়ে তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কিছুদিন পূর্বে তার ওপর একটি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এটি তারই ধারাবাহিকতা হতে পারে। প্রথমে বিষয়টি গুরুত্ব না দিলেও এবার ঘটনাটি গুরুত্ব দেব।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকালে আব্দুল হান্নান ব্যক্তিগত কাজে দর্শনায় গিয়েছিলেন। ফেরার পথে আকন্দবাড়ীয়া আবাসন এলাকায় মোল্লাবাড়ির সামনে পৌঁছালে হেলমেট পরিহিত দুজন মোটরসাইকেলযোগে পেছন থেকে তাঁর পিঠে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দেয়। তিনি সেই অবস্থায় মোটরসাইকেল চালিয়ে দ্রুত ইউনিয়ন পরিষদে চলে আসেন। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে সার্জারি বিভাগে ভর্তি রাখেন। তবে জখম গুরুতর ও ফুসফুসে ক্ষত সৃষ্টি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনে ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
উথলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মনিরুল ইসলাম মনি বলেন, ‘আব্দুল হান্নান চাচা ব্যক্তিগত কাজ শেষে মোটরসাইকেলে করে জেলার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা থেকে উথলী ইউনিয়ন পরিষদে আসছিলেন। তিনি আকন্দবাড়িয়া আবাসন পার হলে মোটরসাইকেলে দুজন পেছন থেকে তাঁর পিঠে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দেয়। তিনি কোথাও না থেমে রক্তাক্ত অবস্থাতে মোটরসাইকেল চালিয়ে সরাসারি ইউনিয়ন পরিষদে চলে আসেন। পরে ক্ষতস্থান বেঁধে তাঁকে দ্রুত চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসক তাকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে সার্জারি বিভাগে ভর্তি রাখেন। তবে অবস্থা শঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনে তাকে দ্রুত ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

এদিকে, অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য গতকাল বেলা ২টা ৪০ মিনিটে বেসরকারি একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে আব্দুল হান্নানকে ঢাকায় জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে পৌঁছানোর পর তার ফুসফুসের অস্ত্রপচার করা হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তার অবস্থা উন্নতির দিকে ছিল।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. শাপলা খাতুন বলেন, রোগীর পিঠের বামপাশে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিলো। তার ফুসফুসে ক্ষতসৃষ্টি হওয়ায় আমরা দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম জাবীদ হাসান জানান, গতকাল রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত থানায় কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। তবে ঘটনার পেছনের কারণ জানতে চেষ্টা চলছে। ঘাতকদের পরিচয় শনাক্ত ও আটকের চেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগের ঘটনা থেকে তদন্ত করা হচ্ছে। এছাড়া সদস্য সমাপ্ত ইউপি নির্বাচন ও দলীয় কোনো বিরোধের কারণে এটি ঘটানো হতে পারে। তদন্ত চলছে। ওসি জানান, রাতে আব্দুল হান্নানের সঙ্গে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ হয়েছে। তার অবস্থা ভালোর দিকে ছিল।
চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান বলেন, চেয়ারম্যানকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশের পাঁচটি ইউনিট কাজ করছে। উল্লেখ্য, এর আগে ২০২৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর রাত ১০টার দিকে মোটরসাইকেলে বাড়িতে ফেরার সময় দুর্বৃত্তদের হামলায় তিনি আহত হয়েছিলেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

উথলী ইউপি চেয়ারম্যানের ওপর দুর্বৃত্তের হামলা

ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ফুসফুসে ক্ষতসৃষ্টি ; এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে নেওয়া হয় ঢাকায়

আপলোড টাইম : ১০:১৮:৪৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ মে ২০২৪

জীবননগর উপজেলার উথলী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হান্নানের ওপর হামলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে দর্শনা-জীবননগর সড়কে আকন্দবাড়ীয়া আবাসন এলাকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে। তার অবস্থা গুরুতর। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে তাকে গতকালই উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকার জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তার ফুসফুসের অস্ত্রপচার করা হয়েছে।
এদিকে ঘটনার খবরে আব্দুল হান্নানের খোঁজ নিতে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে উপস্থিত হন চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর ও জেলা পুলিশ সুপার আরএম ফয়জুর রহমান। এসময় দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলী মুনছুর বাবু এবং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও হাসপাতালে ছুটে আসেন।


এমপি আলী আজগার টগর বলেন, আব্দুল হান্নানই ফোনে আমাকে জানান, তার ওপর হামলা করা হয়েছে। তিনি বাঁচবেন না। হাসপাতালে নিতে দ্রুত গাড়ির ব্যবস্থা করে তাকে সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। এরমধ্যে আমিও হাসপাতালে উপস্থিত হয়েছি। ঘটনাটির বিষয়ে তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কিছুদিন পূর্বে তার ওপর একটি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এটি তারই ধারাবাহিকতা হতে পারে। প্রথমে বিষয়টি গুরুত্ব না দিলেও এবার ঘটনাটি গুরুত্ব দেব।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকালে আব্দুল হান্নান ব্যক্তিগত কাজে দর্শনায় গিয়েছিলেন। ফেরার পথে আকন্দবাড়ীয়া আবাসন এলাকায় মোল্লাবাড়ির সামনে পৌঁছালে হেলমেট পরিহিত দুজন মোটরসাইকেলযোগে পেছন থেকে তাঁর পিঠে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দেয়। তিনি সেই অবস্থায় মোটরসাইকেল চালিয়ে দ্রুত ইউনিয়ন পরিষদে চলে আসেন। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে সার্জারি বিভাগে ভর্তি রাখেন। তবে জখম গুরুতর ও ফুসফুসে ক্ষত সৃষ্টি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনে ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
উথলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মনিরুল ইসলাম মনি বলেন, ‘আব্দুল হান্নান চাচা ব্যক্তিগত কাজ শেষে মোটরসাইকেলে করে জেলার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা থেকে উথলী ইউনিয়ন পরিষদে আসছিলেন। তিনি আকন্দবাড়িয়া আবাসন পার হলে মোটরসাইকেলে দুজন পেছন থেকে তাঁর পিঠে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দেয়। তিনি কোথাও না থেমে রক্তাক্ত অবস্থাতে মোটরসাইকেল চালিয়ে সরাসারি ইউনিয়ন পরিষদে চলে আসেন। পরে ক্ষতস্থান বেঁধে তাঁকে দ্রুত চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসক তাকে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে সার্জারি বিভাগে ভর্তি রাখেন। তবে অবস্থা শঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনে তাকে দ্রুত ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

এদিকে, অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য গতকাল বেলা ২টা ৪০ মিনিটে বেসরকারি একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে আব্দুল হান্নানকে ঢাকায় জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে পৌঁছানোর পর তার ফুসফুসের অস্ত্রপচার করা হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তার অবস্থা উন্নতির দিকে ছিল।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. শাপলা খাতুন বলেন, রোগীর পিঠের বামপাশে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিলো। তার ফুসফুসে ক্ষতসৃষ্টি হওয়ায় আমরা দ্রুত প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম জাবীদ হাসান জানান, গতকাল রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত থানায় কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। তবে ঘটনার পেছনের কারণ জানতে চেষ্টা চলছে। ঘাতকদের পরিচয় শনাক্ত ও আটকের চেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগের ঘটনা থেকে তদন্ত করা হচ্ছে। এছাড়া সদস্য সমাপ্ত ইউপি নির্বাচন ও দলীয় কোনো বিরোধের কারণে এটি ঘটানো হতে পারে। তদন্ত চলছে। ওসি জানান, রাতে আব্দুল হান্নানের সঙ্গে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ হয়েছে। তার অবস্থা ভালোর দিকে ছিল।
চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান বলেন, চেয়ারম্যানকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশের পাঁচটি ইউনিট কাজ করছে। উল্লেখ্য, এর আগে ২০২৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর রাত ১০টার দিকে মোটরসাইকেলে বাড়িতে ফেরার সময় দুর্বৃত্তদের হামলায় তিনি আহত হয়েছিলেন।