ঝিনাইদহে ‘ভুল অপারেশনে’ প্রসূতি মায়ের লাশের সারি দীর্ঘ হচ্ছে
মানুষের মাঝে ক্ষোভ, ৬ ক্লিনিকের ওটি সিলগালা
- আপলোড টাইম : ০৭:৪৮:৪১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
- / ২১ বার পড়া হয়েছে
ঝিনাইদহের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে মানুষের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। হাসপাতালের লিফ্ট মাসের পর মাস বন্ধ। কতিপয় চিকিৎসকদের অবহেলা ও দুর্ব্যবহার। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে দুগর্ন্ধ। খাবারের মান নিম্ন। সর্বোপরি লোকবলের অভাবে স্বাস্থ্যসেবা পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ নিয়ে মানুষ প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। সেই ঢেউ আছড়ে পড়ছে সামাজিক যোগোযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। স্বাস্থ্য বিভাগের এই বেহাল দশা নিরসনে ঝিনাইদহে কোনো ‘কাণ্ডারী’ নেই। জনপ্রতিনিধি থাকলেও তারা আছেন নিজের ব্যবসা ও সুনাম অর্জনের কৌশল নিয়ে। অবহেলিত চিকিৎসা প্রত্যাশীরা তাদের কাছে পান না। ইচ্ছা করলেও তাদের সঙ্গে দেখা মেলে না। এ অবস্থায় অভিভাবক শূন্য হয়ে পড়েছেন তারা। এদিকে, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক-ডায়নস্টিক সেন্টারগুলোতে প্রসূতি মায়ের লাশের সারি লম্বা হচ্ছে। চলতি মাসে অন্তত ৬ জন মায়ের মৃত্যু হয়েছে। চলমান নাজুক পরিস্থিতি সামাল দিতে কঠোর কোনো পদক্ষেপ নেই। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ যেন নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, অসহায় মানুষের আহাজারি শোনার কেউ নেই।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, শৈলকুপা উপজেলার ফুলহরী ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের আমিন বিশ্বাসের স্ত্রী লিপি খাতুন গত ১৬ এপ্রিল জেলা শহরের শামিমা ক্লিনিকে সন্তান প্রসবের জন্য ভর্তি হয়েছিলেন। লিপি খাতুন সুস্থ সবলভাবে অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করলেও সিজারের সময় তার কিডনির একটি রক্তনালী কেটে ফেলা হয়। ফলে তাকে পুলিশ দিয়ে জোরপূর্বক ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে পাঠানো হয়। যাওয়ার সময় ৩৫ হাজার টাকা হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় ওই হতদরিদ্র পরিবারকে। এর আগে গত ১২ এপ্রিল ওই একই ক্লিনিকে হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ভবিতপুর গ্রাামে রিনা খাতুন (২২), গত ২৫ মার্চ আরাপপুরের রাবেয়া হাসপাতালে শারমিন, গত ২৯ মার্চ কালীগঞ্জের দারুস শেফা ক্লিনিকে ও শহরের হামদহ এলাকার প্রিন্স হাসপাতালে একাধিক প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হয়।
এদিকে, গত বৃহস্পতিবার জেলা শহরের শামিমা ক্লিনিকসহ ৬টি বেসরকারি হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ ক্লিনিকগুলোর মধ্যে রয়েছে- ঝিনাইদহ শহরের শামিমা ক্লিনিক, হাবিবা ক্লিনিক, স্মৃতি ক্লিনিক, ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল, হাবিবা ডায়গনস্টিক সেন্টার ও পপুলার ডায়গনস্টিক সেন্টার। সিভিল সার্জন ডা. শুভ্রা রানী দেব নাথ এ খবর নিশ্চিত করেন। এদিকে, শামিমা ক্লিনিকে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য অধিদপ্তর) খুলনার পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সিভিল সার্জন ডা. শুভ্রা রানী দেব নাথ জানান, সিজার করার সময় যেসব ওষুধ কিংবা স্যালাইন ব্যবহার করা হয়, সেগুলো ভেজাল বা নকল বলে কোনো কোনো ডাক্তার দাবি করছেন। ফলে ওটিতে ব্যবহৃত স্যালাইনসহ ওষুধের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ওষুধ প্রশাসনের কাছ থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ফলাফল জানানো হবে। ওষুধের কারণে মৃত্যু ঘটছে দায়ী চিকিৎসকরা দাবি করলেও ঢাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ওই সব প্রসূতির কারো কিডনির রক্তনালী ও কারো জরায়ু কাটার অভিযোগ ওঠে।
সিভিল সার্জন আরও জানান, শিগগিরই জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে নিয়ে জেলার মানহীন ক্লিনিক ডায়গনস্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচলনা করা হবে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মিথিলা ইসলাম বলেছেন, চলতি মাসে ৫০টির বেশি সিজার হয়েছে। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। তিনি বলেন, বেশিরভাগ বেসরকারি ক্লিনিকে পোস্ট অপারেটিভ ব্যবস্থা নেই।
ঝিনাইদহের ড্রাগ সুপার সিরাজুম মনিরা জানিয়েছেন, ঝিনাইদহ জেলা শহরের শামিমা ক্লিনিক ও বেসরকারি প্রিন্স হাসপাতালে প্রসূতি মৃত্যুর পর ওটিতে ব্যবহৃত স্যালাইন, ইনজেকশন ট্যাবলেটসহ ১৭টি আইটেম পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। নমুনাগুলো পরীক্ষার জন্য ওষুধ প্রশাসনের ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। লিবরা কোম্পানির হার্টসল স্যালাইনের পরীক্ষার ফলাফল ইতিমেধ্য তারা হাতে পেয়েছেন। ওই ফলাফলে স্যালাইনে কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়নি। বাকি ১৭টির ফলাফল আসতে ১৫ দিন লাগবে বলে তিনি জানান।