ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গায় বেড়েই চলেছে তাপমাত্রার পারদ, ৪০.৭ ডিগ্রিতে পুড়ছে মানুষ

দুর্ভোগের সাথে হাসপাতালে বাড়তি রোগীর চাপ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপলোড টাইম : ০৮:৩৩:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
  • / ১৩ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গায় বেড়েই চলেছে তাপমাত্রার পারদ। তীব্র তাপদাহে দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাওয়ায় চুয়াডাঙ্গার মানুষের মধ্যে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। সেই সঙ্গে জেলা সদর হাসপাতালে বেড়েই চলেছে জ্বর, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। শয্যা সংকুলান না হওয়ায় রোগীরা হাসপাতালের বারান্দা ও করিডোরে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।

গতকাল বুধবার বেলা ছয়টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এসময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল মাত্র ২২ শতাংশ। যা চলতি মৌসুমে এ জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর আগে মঙ্গলবার বেলা তিনটায় এ জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি সারাদেশেরও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল।

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, ঈদের পরদিন থেকেই চুয়াডাঙ্গা জেলায় তাপপ্রবাহ শুরু হয়। ১২ এপ্রিল শুক্রবার জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর থেকে ক্রমেই উপরে উঠতে থাকে তাপমাত্রার পারদ। শনিবার (১৩ এপ্রিল) ৩৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রোববার (১৪ এপ্রিল) ৩৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি ও সোমবার (১৫ এপ্রিল) এ জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) বেলা তিনটায় জেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুপুর ১২টায় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। এটি দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর আগে গত ৬ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।

এদিকে, তীব্র গরমের কারণে প্রাণ-প্রকৃতিতে নেমে এসেছে স্থবিরতা। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে মানুষ বাইরে বের হচ্ছেন না।

স্বাভাবিক দিনের তুলনায় শহরে যানবাহন ও মানুষের সংখ্যাও কম। বিশেষ করে চরম বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। কাজের তাগিদে বাইরে বেরিয়ে তীব্র গরমে অসহ্য কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে তাঁদেরকেই। চুয়াডাঙ্গা জেলার চার উপজেলার বিভিন্ন এলাকার নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তীব্র গরমে এ জেলার মানুষের কষ্টের শেষ নেই। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত প্রখর তাপ নিয়ে আলো ছড়াচ্ছে সূর্য। কড়া রোদ আর ভ্যাপসা গরমে বিপর্যস্ত জনজীবন। তীব্র দাবদাহে প্রকৃতিও নিস্তেজ। হালকা বাতাস থাকলেও সেটিও গরম ছড়াচ্ছে। প্রাণিকূলও ছড়াচ্ছে তপ্ত নিশ্বাস। গরমে হাপসাতালে জ্বর, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গতকাল হাসপাতালের পুরুষ ও মহিলা মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হয়েছেন ৮১ জন। এ মধ্যে পুরুষ ওয়ার্ডে ৩৫ জন ও মহিলা ওয়ার্ডে ৪৬ জন। শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে ৩১ জন ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে ৩২ জন নারী পুুরুষ ও শিশু। এদিন হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায় শয্যা সংখার কয়েকগুন বেশি রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ওয়ার্ডে স্থান সংকুলান না হওয়ায় রোগীরা মেঝে ও বারান্দায় বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছয় বছর বয়সী সিনথিয়ার পিতা সেলিম হোসেন বলেন, তীব্র গড়মে বড়রাই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। সারারাত মেয়ে ছটফট করেছে। সকালে সে অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। ওয়ার্ডে এসে দেখি এখানে রোগীর অনেক চাপ। দুপুরে বেশ কিছু শিশুর ছুটি হলে মেয়ের জন্য বিছানা পেয়েছি। চিকিৎসক ও নার্সদেরও এত রোগীকে সামাল দিতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে।

হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র স্টাফ নার্স সাকিলা খাতুন বলেন, অসহ্য গরমে ডিউটি করায় মুশিকিল হয়ে পড়ছে। তার ওপরে বাড়তি রোগীর চাপ। শয্যা সংখ্যার থেকে অনেক বেশি রোগী চিকিৎসাধীন থাকছেন। এত রোগীকে চিকিৎসা দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। আগুন গরম না কমা পর্যন্ত এর থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে না।

জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলা শহরের চা-দোকানী নিয়াজ আলী বলেন, ‘খরিদদার কম। বেচা বিক্রি নেই। গরমে মানুষ রাতেও চা কম খাচ্ছে। কিন্তু আমাদের কি করার, পেটের দায়ে দোকান খুলে বসতেই হচ্ছে।’

আলমডাঙ্গা শহরের হোটেল ব্যবসায়ী বাবু মিয়া বলেন, ’গরমে দ্রুতই খাবার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। খুব কম করে রান্না করা হচ্ছে। একটা বিরাট সমস্যা, একে তো কাস্টমার কম, তারপর আবার দিনে তিন/চারবার অল্প অল্প করে রান্না করতে হচ্ছে।’

সদর উপজেলার বদরগঞ্জ বাজারের শরবত বিক্রেতা আলম হোসেন বলেন, ’গরমে বেঁচাবিক্রি ভালো। মানুষ শরবত খাচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বিট লবণ দিয়ে লেবুর শরবত বিক্রি বেশি। সন্ধ্যার পরও প্রচুর ভিড় হচ্ছে।’ দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা বাজারের ডাব বিক্রেতা তরু মিয়া বলেন, ’অন্য সময়ের থেকে বেশি ডাব বিক্রি হচ্ছে। সন্ধ্যার পরও বিক্রি বেড়েছে। তবে সারাদিন আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের কৃষক মজম মালিতা বলেন, মাঠে কাজ করা যাচ্ছে না। ভুট্টা পেকে গেছে। কিন্তু ভয় করছে কাটতে। কিভাবে কাটবো? একা তো সম্ভব না। আবার কৃষকরা এতো রোদে কাজ করতে চাচ্ছেও না। সব মিলিয়ে একটা বাজে অবস্থা।’

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান বলেন, ’আগামী কয়েকদিন আবহাওয়া পরিস্থিতি একই রকম থাকবে। এসময় তাপমাত্রা আরও বাড়বে। আপাতত স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে কালবৈশাখী ঝড় হলে তার সাথে বৃষ্টি হতে পারে। এটা আগে থেকে বলা সম্ভব নয়।’

তিনি জানান, ‘বুধবার দুপুর ১২টায় ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। দুপুর তিনটায় তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে ৪০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়। এবং বেলা ছয়টায় তাপমাত্রা আরও বেড়ে দাড়ায় ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ ছিলো ২২ শতাংশ। আগেরদিন মঙ্গলবার ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি তাপমাত্রা নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো চুয়াডাঙ্গায়। আজও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে এটি বিকেল ৬টার পর বলা যাবে।’

চুয়াডাঙ্গা সদর হাপসাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. উম্মে ফারহানা বলেন, গরম বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাপসাতালে জ্বর, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর চাপ বাড়ছে। ঈদেও পর থেকে এখনপর্যন্ত শয্যা সংখ্যার বেশি রোগী বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন থাকছেন। শয্যা সংকুলান না হওয়ার রোগীদের যেমন বারান্দা ও করিডোরে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে একই সঙ্গে অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামাল দিয়ে চিকিৎসক ও নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

এই চিকিৎসা কর্মকর্তা পরামর্শ হিসেবে বলেন, ‘তীব্র গরমে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি রোগাক্রান্ত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বাড়তি সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। বেশি করে পানি পান করতে হবে। ঠান্ডাজাতীয় পানীয় বিশেষ করে লেবুর শরবত, ডাবের পানি বেশি করে পান করতে হবে। এ সময় তাপ এড়িয়ে ঠান্ডা স্থানে থাকতে হবে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

চুয়াডাঙ্গায় বেড়েই চলেছে তাপমাত্রার পারদ, ৪০.৭ ডিগ্রিতে পুড়ছে মানুষ

দুর্ভোগের সাথে হাসপাতালে বাড়তি রোগীর চাপ

আপলোড টাইম : ০৮:৩৩:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

চুয়াডাঙ্গায় বেড়েই চলেছে তাপমাত্রার পারদ। তীব্র তাপদাহে দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাওয়ায় চুয়াডাঙ্গার মানুষের মধ্যে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। সেই সঙ্গে জেলা সদর হাসপাতালে বেড়েই চলেছে জ্বর, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। শয্যা সংকুলান না হওয়ায় রোগীরা হাসপাতালের বারান্দা ও করিডোরে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।

গতকাল বুধবার বেলা ছয়টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এসময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল মাত্র ২২ শতাংশ। যা চলতি মৌসুমে এ জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর আগে মঙ্গলবার বেলা তিনটায় এ জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি সারাদেশেরও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল।

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, ঈদের পরদিন থেকেই চুয়াডাঙ্গা জেলায় তাপপ্রবাহ শুরু হয়। ১২ এপ্রিল শুক্রবার জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর থেকে ক্রমেই উপরে উঠতে থাকে তাপমাত্রার পারদ। শনিবার (১৩ এপ্রিল) ৩৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রোববার (১৪ এপ্রিল) ৩৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি ও সোমবার (১৫ এপ্রিল) এ জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) বেলা তিনটায় জেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দুপুর ১২টায় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। এটি দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর আগে গত ৬ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।

এদিকে, তীব্র গরমের কারণে প্রাণ-প্রকৃতিতে নেমে এসেছে স্থবিরতা। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে মানুষ বাইরে বের হচ্ছেন না।

স্বাভাবিক দিনের তুলনায় শহরে যানবাহন ও মানুষের সংখ্যাও কম। বিশেষ করে চরম বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। কাজের তাগিদে বাইরে বেরিয়ে তীব্র গরমে অসহ্য কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে তাঁদেরকেই। চুয়াডাঙ্গা জেলার চার উপজেলার বিভিন্ন এলাকার নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তীব্র গরমে এ জেলার মানুষের কষ্টের শেষ নেই। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত প্রখর তাপ নিয়ে আলো ছড়াচ্ছে সূর্য। কড়া রোদ আর ভ্যাপসা গরমে বিপর্যস্ত জনজীবন। তীব্র দাবদাহে প্রকৃতিও নিস্তেজ। হালকা বাতাস থাকলেও সেটিও গরম ছড়াচ্ছে। প্রাণিকূলও ছড়াচ্ছে তপ্ত নিশ্বাস। গরমে হাপসাতালে জ্বর, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গতকাল হাসপাতালের পুরুষ ও মহিলা মেডিসিন বিভাগে ভর্তি হয়েছেন ৮১ জন। এ মধ্যে পুরুষ ওয়ার্ডে ৩৫ জন ও মহিলা ওয়ার্ডে ৪৬ জন। শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে ৩১ জন ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে ৩২ জন নারী পুুরুষ ও শিশু। এদিন হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায় শয্যা সংখার কয়েকগুন বেশি রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ওয়ার্ডে স্থান সংকুলান না হওয়ায় রোগীরা মেঝে ও বারান্দায় বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছয় বছর বয়সী সিনথিয়ার পিতা সেলিম হোসেন বলেন, তীব্র গড়মে বড়রাই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। সারারাত মেয়ে ছটফট করেছে। সকালে সে অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। ওয়ার্ডে এসে দেখি এখানে রোগীর অনেক চাপ। দুপুরে বেশ কিছু শিশুর ছুটি হলে মেয়ের জন্য বিছানা পেয়েছি। চিকিৎসক ও নার্সদেরও এত রোগীকে সামাল দিতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে।

হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র স্টাফ নার্স সাকিলা খাতুন বলেন, অসহ্য গরমে ডিউটি করায় মুশিকিল হয়ে পড়ছে। তার ওপরে বাড়তি রোগীর চাপ। শয্যা সংখ্যার থেকে অনেক বেশি রোগী চিকিৎসাধীন থাকছেন। এত রোগীকে চিকিৎসা দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। আগুন গরম না কমা পর্যন্ত এর থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে না।

জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলা শহরের চা-দোকানী নিয়াজ আলী বলেন, ‘খরিদদার কম। বেচা বিক্রি নেই। গরমে মানুষ রাতেও চা কম খাচ্ছে। কিন্তু আমাদের কি করার, পেটের দায়ে দোকান খুলে বসতেই হচ্ছে।’

আলমডাঙ্গা শহরের হোটেল ব্যবসায়ী বাবু মিয়া বলেন, ’গরমে দ্রুতই খাবার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। খুব কম করে রান্না করা হচ্ছে। একটা বিরাট সমস্যা, একে তো কাস্টমার কম, তারপর আবার দিনে তিন/চারবার অল্প অল্প করে রান্না করতে হচ্ছে।’

সদর উপজেলার বদরগঞ্জ বাজারের শরবত বিক্রেতা আলম হোসেন বলেন, ’গরমে বেঁচাবিক্রি ভালো। মানুষ শরবত খাচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বিট লবণ দিয়ে লেবুর শরবত বিক্রি বেশি। সন্ধ্যার পরও প্রচুর ভিড় হচ্ছে।’ দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা বাজারের ডাব বিক্রেতা তরু মিয়া বলেন, ’অন্য সময়ের থেকে বেশি ডাব বিক্রি হচ্ছে। সন্ধ্যার পরও বিক্রি বেড়েছে। তবে সারাদিন আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের কৃষক মজম মালিতা বলেন, মাঠে কাজ করা যাচ্ছে না। ভুট্টা পেকে গেছে। কিন্তু ভয় করছে কাটতে। কিভাবে কাটবো? একা তো সম্ভব না। আবার কৃষকরা এতো রোদে কাজ করতে চাচ্ছেও না। সব মিলিয়ে একটা বাজে অবস্থা।’

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান বলেন, ’আগামী কয়েকদিন আবহাওয়া পরিস্থিতি একই রকম থাকবে। এসময় তাপমাত্রা আরও বাড়বে। আপাতত স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে কালবৈশাখী ঝড় হলে তার সাথে বৃষ্টি হতে পারে। এটা আগে থেকে বলা সম্ভব নয়।’

তিনি জানান, ‘বুধবার দুপুর ১২টায় ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। দুপুর তিনটায় তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে ৪০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়। এবং বেলা ছয়টায় তাপমাত্রা আরও বেড়ে দাড়ায় ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ ছিলো ২২ শতাংশ। আগেরদিন মঙ্গলবার ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি তাপমাত্রা নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো চুয়াডাঙ্গায়। আজও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তবে এটি বিকেল ৬টার পর বলা যাবে।’

চুয়াডাঙ্গা সদর হাপসাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. উম্মে ফারহানা বলেন, গরম বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাপসাতালে জ্বর, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর চাপ বাড়ছে। ঈদেও পর থেকে এখনপর্যন্ত শয্যা সংখ্যার বেশি রোগী বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন থাকছেন। শয্যা সংকুলান না হওয়ার রোগীদের যেমন বারান্দা ও করিডোরে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে একই সঙ্গে অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামাল দিয়ে চিকিৎসক ও নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

এই চিকিৎসা কর্মকর্তা পরামর্শ হিসেবে বলেন, ‘তীব্র গরমে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি রোগাক্রান্ত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বাড়তি সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। বেশি করে পানি পান করতে হবে। ঠান্ডাজাতীয় পানীয় বিশেষ করে লেবুর শরবত, ডাবের পানি বেশি করে পান করতে হবে। এ সময় তাপ এড়িয়ে ঠান্ডা স্থানে থাকতে হবে।’