ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব বিস্তার না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়ে এমপিদের রোষানলে অনেক নেতা

আওয়ামী লীগের তৃণমূলে বিভেদ বাড়ছে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:২৭:৪৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪
  • / ৪৪ বার পড়া হয়েছে

আওয়ামী লীগের তৃণমূলে বিভেদের দেওয়াল বড় হচ্ছে। গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেতাকর্মীদের মধ্যে যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে সেটা আরো ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে। আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্যদের রোষানলে পড়েছেন অনেক নেতা। ‘এমপি লীগের’ দাপটে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন অনেক প্রার্থী। নাটোরে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তার ভাইসহ তিন জনকে অপহরণ করার অভিযোগ উঠেছে একজন প্রতিমন্ত্রীর শ্যালকের বিরুদ্ধে। ঐ প্রতিমন্ত্রী কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করে তার শ্যালককে একক চেয়ারম্যান প্রার্থী ঘোষণা করেছেন বলে তৃণমূলের নেতাদের দাবি। শুধু নাটোর নয়, সারা দেশে মূল ধারার আওয়ামী লীগের বাইরে নিজস্ব বলয় সৃষ্টি করেছেন একশ্রেণির সংসদ সদস্য। যেটা ‘এমপি লীগ’ হিসেবে পরিচিত। এই এমপি লীগে রয়েছেন এমপিদের স্বজনদের পাশাপাশি স্বাধীনতাবিরোধীদের সন্তান-স্বজনরা।
সারা দেশের ৫০টি উপজেলা আওয়ামী লীগের ৬০ জন ত্যাগী নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইত্তেফাককে বলেন, ‘ভাই! আর পারি না। ১৫ বছর দলের নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে এমপি সাহেবরা ব্যস্ত নিজেদের স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, ভাই-ভাতিজা, শ্যালক, ভগ্নিপতি, মামা, ভাগ্নে, বেয়াইসহ স্বজন ও অনুগতদের নিয়ে। এক জনকে বানিয়েছেন মেয়র, আরেক জনকে বানাতে চাচ্ছেন উপজেলা চেয়ারম্যান, আরেক জনকে দিয়েছেন দলের দেখভালের দায়িত্ব। এখানে দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতাকর্মীরা মূল্যহীন। যেখানে এমপি সাহেবরা দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনা না মেনেও বহাল তবিয়তে আছেন, সেখানে আমরা যে কত নির্যাতিত ও অবহেলিত সেটা বুঝে নেন। প্রতিনিয়ত ত্যাগী নেতাকর্মীদের সঙ্গে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ব্যবহার করা হয়। অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার মিলছে না। এ কারণে দল ক্ষমতায় থাকার পরও বাধ্য হয়ে নির্যাতন সহ্য করছেন অনেক নেতা। ত্যাগের বিনিময়ে শুধুই পেলাম বঞ্চনা। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের মতো দলের নেতাকর্মীকে ঘায়েল করা হচ্ছে।’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বলেন, আগামী ৮ মে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের প্রথম ধাপ অনুষ্ঠিত হবে। উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীদের প্রভাব বিস্তার কিংবা হস্তক্ষেপ না করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবার দুপুরে আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডি রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রশাসনের হস্তক্ষেপও থাকবে না। অবাধ-সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বিঘ্নে ভোটদানের ব্যবস্থা করেছে নির্বাচন কমিশন। উপজেলা নির্বাচনের একজন প্রার্থীকে অপহরণ করা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, এত বড় একটা নির্বাচন, তাতে টুকটাক কিছু ঘটনা যে ঘটবে না, এমন তো ঘটেনি। তবে তা নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করছি। কোথাও ব্যত্যয় ঘটলে প্রশাসনিকভাবে আমরা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি।
এবার চার ধাপে হবে দেশের ৪৮১টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ আগামী ৮ মে অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে প্রথম ধাপে ১৫২টি ও দ্বিতীয় ধাপে দেশের ১৬১টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ২১ মে দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ হবে। আওয়ামী লীগের দলীয় এই নির্বাচনে প্রার্থিতা উন্মুক্ত রেখেছে। দলে হাইকমান্ড আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কাউকে সমর্থন না দিতে এমপিদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু এ নির্দেশনা মানছেন না একশ্রেণির সংসদ সদস্য। এমনকি দলের কেন্দ্রীয় নেতাও কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মানছেন না। কেন্দ্রীয় দুই জন প্রেসিডিয়াম সদস্য হাইকমান্ডের নির্দেশনা উপেক্ষা করে পছন্দের চেয়ারম্যান প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছেন। উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে যেসব এলাকায় কখনোই মনান্তর ছিল না, সেখানকার নেতাকর্মীরাও হয়ে উঠছেন পরস্পরের চক্ষুশূল। কোনো কোনো এলাকায় দলীয় সংসদ সদস্য (এমপি) এবং স্বতন্ত্র এমপিরা নিজেদের একক কর্তৃত্ব ধরে রাখতে বিরোধের আগুনে ঘি ঢালছেন। এর সঙ্গে যোগ দিয়েছেন জাতীয় নির্বাচনে দলের মনোনয়নবঞ্চিত গত সংসদের এমপিরা। তারাও দলের ভেতরে নিজেদের বলয় তৈরির কৌশল খুঁজছেন। কোথাও চলছে ‘দলীয় এমপি বনাম স্বতন্ত্র এমপি’ লড়াই। যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে হেরেছেন, তারাও আছেন গ্রুপিং রাজনীতির অশুভ প্রতিযোগিতায়।
আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা জানান, বিএনপির ভোট বর্জনের পটভূমিতে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে গত জাতীয় নির্বাচনে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উত্সাহ দেওয়ার পর বিবাদে জড়ান স্থানীয় নেতাকর্মীরা। নির্বাচনের পর বেশির ভাগ স্বতন্ত্র এমপি দলে ‘চালকের আসনে’ বসতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এতে করে তাদের সঙ্গে সাবেক এমপিদের লাগছে ঠোকাঠুকি। এ পটভূমিতে দলের দুটি ধারা চলে এসেছে সর্বসমক্ষে। সাধারণত সংসদের ভোট এলে দলীয় বিরোধ মেটে। এবার হয়েছে উলটোটা। প্রায় প্রতিটি নির্বাচনি এলাকায় পরিষ্কার দুই বলয়ে, দুই পথে হেঁটেছেন নেতাকর্মীরা। কোনো কোনো এলাকায় ছাইচাপা পুরোনো দ্বন্দ্বও সামনে চলে আসে। বিভিন্ন স্থানে এ বিরোধের অবসান হয় রক্তারক্তি আর খুনাখুনির মতো নির্মমতায়। বিচ্ছিন্ন সংঘাত, হামলা, মামলা-পালটা মামলা এখনো চলছে। এ নিয়ে অস্থির, অশান্ত হয়ে আছেন দলের নেতাকর্মীরা। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের চার জন নেতা বলেন, নতুন করে কত যে গ্রুপ তৈরি হচ্ছে, তার কোনো হিসাব নেই। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যেসব এলাকায় কখনোই বিরোধ ছিল না, সেসব এলাকায়ও গ্রুপিংয়ের রাজনীতি শুরু হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের মতো দলের নেতাকর্মীকে ঘায়েল করা হচ্ছে। দলীয় নেতাকর্মীদের পাশ কাটিয়ে চলছেন তারা। তাদের অনেক দম্ভ! নেতাকর্মীরা কোনো কাজে এমপিদের কাছে গেলে চরম দুর্ব্যবহার করেন। নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগও তারা কমিয়ে দিয়েছেন। কেউ কেউ মাসে একবার নির্বাচনি এলাকায় গেলেও সরকারি কর্মসূচিতে অংশ নিয়েই ঢাকায় চলে আসেন। ফলে নেতাকর্মীরা একশ্রেণির এমপিকে দলীয় কর্মকাণ্ডে পান না। কেউ কেউ এলাকার নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়েছেন এমন অভিযোগও আছে। এভাবে গত ১৫ বছরে কিছু এমপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, এ দূরত্ব আর ঘোচানো সম্ভব নয়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব বিস্তার না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়ে এমপিদের রোষানলে অনেক নেতা

আওয়ামী লীগের তৃণমূলে বিভেদ বাড়ছে

আপলোড টাইম : ০৮:২৭:৪৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪

আওয়ামী লীগের তৃণমূলে বিভেদের দেওয়াল বড় হচ্ছে। গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেতাকর্মীদের মধ্যে যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সামনে রেখে সেটা আরো ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে। আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্যদের রোষানলে পড়েছেন অনেক নেতা। ‘এমপি লীগের’ দাপটে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন অনেক প্রার্থী। নাটোরে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তার ভাইসহ তিন জনকে অপহরণ করার অভিযোগ উঠেছে একজন প্রতিমন্ত্রীর শ্যালকের বিরুদ্ধে। ঐ প্রতিমন্ত্রী কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অমান্য করে তার শ্যালককে একক চেয়ারম্যান প্রার্থী ঘোষণা করেছেন বলে তৃণমূলের নেতাদের দাবি। শুধু নাটোর নয়, সারা দেশে মূল ধারার আওয়ামী লীগের বাইরে নিজস্ব বলয় সৃষ্টি করেছেন একশ্রেণির সংসদ সদস্য। যেটা ‘এমপি লীগ’ হিসেবে পরিচিত। এই এমপি লীগে রয়েছেন এমপিদের স্বজনদের পাশাপাশি স্বাধীনতাবিরোধীদের সন্তান-স্বজনরা।
সারা দেশের ৫০টি উপজেলা আওয়ামী লীগের ৬০ জন ত্যাগী নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইত্তেফাককে বলেন, ‘ভাই! আর পারি না। ১৫ বছর দলের নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে এমপি সাহেবরা ব্যস্ত নিজেদের স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, ভাই-ভাতিজা, শ্যালক, ভগ্নিপতি, মামা, ভাগ্নে, বেয়াইসহ স্বজন ও অনুগতদের নিয়ে। এক জনকে বানিয়েছেন মেয়র, আরেক জনকে বানাতে চাচ্ছেন উপজেলা চেয়ারম্যান, আরেক জনকে দিয়েছেন দলের দেখভালের দায়িত্ব। এখানে দীর্ঘদিনের ত্যাগী নেতাকর্মীরা মূল্যহীন। যেখানে এমপি সাহেবরা দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনা না মেনেও বহাল তবিয়তে আছেন, সেখানে আমরা যে কত নির্যাতিত ও অবহেলিত সেটা বুঝে নেন। প্রতিনিয়ত ত্যাগী নেতাকর্মীদের সঙ্গে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ব্যবহার করা হয়। অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার মিলছে না। এ কারণে দল ক্ষমতায় থাকার পরও বাধ্য হয়ে নির্যাতন সহ্য করছেন অনেক নেতা। ত্যাগের বিনিময়ে শুধুই পেলাম বঞ্চনা। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের মতো দলের নেতাকর্মীকে ঘায়েল করা হচ্ছে।’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বলেন, আগামী ৮ মে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের প্রথম ধাপ অনুষ্ঠিত হবে। উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীদের প্রভাব বিস্তার কিংবা হস্তক্ষেপ না করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবার দুপুরে আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডি রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রশাসনের হস্তক্ষেপও থাকবে না। অবাধ-সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বিঘ্নে ভোটদানের ব্যবস্থা করেছে নির্বাচন কমিশন। উপজেলা নির্বাচনের একজন প্রার্থীকে অপহরণ করা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, এত বড় একটা নির্বাচন, তাতে টুকটাক কিছু ঘটনা যে ঘটবে না, এমন তো ঘটেনি। তবে তা নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করছি। কোথাও ব্যত্যয় ঘটলে প্রশাসনিকভাবে আমরা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি।
এবার চার ধাপে হবে দেশের ৪৮১টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ আগামী ৮ মে অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে প্রথম ধাপে ১৫২টি ও দ্বিতীয় ধাপে দেশের ১৬১টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ২১ মে দ্বিতীয় ধাপের ভোটগ্রহণ হবে। আওয়ামী লীগের দলীয় এই নির্বাচনে প্রার্থিতা উন্মুক্ত রেখেছে। দলে হাইকমান্ড আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কাউকে সমর্থন না দিতে এমপিদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু এ নির্দেশনা মানছেন না একশ্রেণির সংসদ সদস্য। এমনকি দলের কেন্দ্রীয় নেতাও কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মানছেন না। কেন্দ্রীয় দুই জন প্রেসিডিয়াম সদস্য হাইকমান্ডের নির্দেশনা উপেক্ষা করে পছন্দের চেয়ারম্যান প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছেন। উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে যেসব এলাকায় কখনোই মনান্তর ছিল না, সেখানকার নেতাকর্মীরাও হয়ে উঠছেন পরস্পরের চক্ষুশূল। কোনো কোনো এলাকায় দলীয় সংসদ সদস্য (এমপি) এবং স্বতন্ত্র এমপিরা নিজেদের একক কর্তৃত্ব ধরে রাখতে বিরোধের আগুনে ঘি ঢালছেন। এর সঙ্গে যোগ দিয়েছেন জাতীয় নির্বাচনে দলের মনোনয়নবঞ্চিত গত সংসদের এমপিরা। তারাও দলের ভেতরে নিজেদের বলয় তৈরির কৌশল খুঁজছেন। কোথাও চলছে ‘দলীয় এমপি বনাম স্বতন্ত্র এমপি’ লড়াই। যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে হেরেছেন, তারাও আছেন গ্রুপিং রাজনীতির অশুভ প্রতিযোগিতায়।
আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা জানান, বিএনপির ভোট বর্জনের পটভূমিতে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে গত জাতীয় নির্বাচনে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উত্সাহ দেওয়ার পর বিবাদে জড়ান স্থানীয় নেতাকর্মীরা। নির্বাচনের পর বেশির ভাগ স্বতন্ত্র এমপি দলে ‘চালকের আসনে’ বসতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এতে করে তাদের সঙ্গে সাবেক এমপিদের লাগছে ঠোকাঠুকি। এ পটভূমিতে দলের দুটি ধারা চলে এসেছে সর্বসমক্ষে। সাধারণত সংসদের ভোট এলে দলীয় বিরোধ মেটে। এবার হয়েছে উলটোটা। প্রায় প্রতিটি নির্বাচনি এলাকায় পরিষ্কার দুই বলয়ে, দুই পথে হেঁটেছেন নেতাকর্মীরা। কোনো কোনো এলাকায় ছাইচাপা পুরোনো দ্বন্দ্বও সামনে চলে আসে। বিভিন্ন স্থানে এ বিরোধের অবসান হয় রক্তারক্তি আর খুনাখুনির মতো নির্মমতায়। বিচ্ছিন্ন সংঘাত, হামলা, মামলা-পালটা মামলা এখনো চলছে। এ নিয়ে অস্থির, অশান্ত হয়ে আছেন দলের নেতাকর্মীরা। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের চার জন নেতা বলেন, নতুন করে কত যে গ্রুপ তৈরি হচ্ছে, তার কোনো হিসাব নেই। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যেসব এলাকায় কখনোই বিরোধ ছিল না, সেসব এলাকায়ও গ্রুপিংয়ের রাজনীতি শুরু হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের মতো দলের নেতাকর্মীকে ঘায়েল করা হচ্ছে। দলীয় নেতাকর্মীদের পাশ কাটিয়ে চলছেন তারা। তাদের অনেক দম্ভ! নেতাকর্মীরা কোনো কাজে এমপিদের কাছে গেলে চরম দুর্ব্যবহার করেন। নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগও তারা কমিয়ে দিয়েছেন। কেউ কেউ মাসে একবার নির্বাচনি এলাকায় গেলেও সরকারি কর্মসূচিতে অংশ নিয়েই ঢাকায় চলে আসেন। ফলে নেতাকর্মীরা একশ্রেণির এমপিকে দলীয় কর্মকাণ্ডে পান না। কেউ কেউ এলাকার নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়েছেন এমন অভিযোগও আছে। এভাবে গত ১৫ বছরে কিছু এমপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, এ দূরত্ব আর ঘোচানো সম্ভব নয়।