ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গায় সেই চুরি হওয়া ভ্যান উদ্ধার করল পুলিশ, একজন গ্রেপ্তার

ভ্যান ফিরে পেয়ে খুশি শিশু জিহাদের পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ০৯:৪৯:৩৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ৫ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার দীননাথপুর গ্রামের শিশু জিহাদের চুরি হওয়া ভ্যান উদ্ধারসহ বকুল শেখ নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার বিকেলে সদর থানায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনের মধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান। গ্রেপ্তারকৃত বকুল শেখ কুষ্টিয়া জেলর কুমারখালি থানাধীন উত্তর চাঁদপুর গ্রামের সুরুজ শেখের ছেলে। এদিকে, ভ্যানটি ফিরে পেয়ে শিশু জিহাদ ও তার পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফুটেছে। এসময় তারা জেলা পুলিশের সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান জানান, গত ৪ সেপ্টেম্বর শিশু জিহাদ তার পিতার পাখিভ্যান নিয়ে ভাড়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। পরে সদর হাসপাতালের সামনে থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তি কৌশলে ভাড়ার কথা বলে জিহাদকে আলমডাঙ্গায় নিয়ে যায়। পথে পিটিআই মোড়ে পৌঁছালে অজ্ঞাত আর এক ব্যক্তি শিশু জিহাদের ভ্যানে চড়েন। পরে আলমডাঙ্গা পৌঁছালে জিহাদকে পাশের দোকানে পাঠিয়ে ভ্যান নিয়ে পালিয়ে যায় তারা।

এ ঘটনার বিষয়ে দৈনিক সময়ের সমীকরণসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে চোর সনাক্ত এবং চক্রটিকে গ্রেপ্তারে মাঠে নামে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার পুলিশ। চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান, সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন ও পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) আলী হোসেনসহ সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাসানুজ্জামান চোর সনাক্ত ও ভ্যানটি উদ্ধারে বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ শুরু করেন। ঘটনার ১২ দিনের মধ্যে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি থানা এলাকায় অভিযান চলিয়ে বকুল শেখ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার নিকট থেকে শিশু জিহাদের ভ্যানটি উদ্ধার হয়।

ভ্যান ফিরে পাওয়ার অনুভূতি জানয়ে শিশু জিহাদের পিতা বৃদ্ধ তাহাজ্জেল মিয়া বলেন, ‘ভ্যানটি ফিরে পাওয়া যাবে ভাবিনি। পুলিশ সদস্যরা আমার মতন দরিদ্র মানুষের ভ্যানটি উদ্ধার করে দিয়েছে, তাদের ব্যবহার আমাকে ভ্যান ফিরিয়ে দেয়ার থেকেও আনন্দ দিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি ও স্ত্রী দুজনেই অসুস্থ। শিশু ছেলেটি ভ্যান চালিয়ে সংসারের ভার কাঁধে নিয়েছিল। ভ্যানটি হারানোর পর আমরা নিরুপায় হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু অনেকে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, খাবার কিনে দিয়েছেন, একটি নতুন পাখিভ্যানও কিনে দিয়েছেন। আজ পুলিশ চুরি হওয়া ভ্যানটিও উদ্ধার করেছে। আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ এবং মন থেকে সকলের জন্য দোয়া কামনা করি আমার মত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।’

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অপর আসামির সহযোগিতায় শিশু জিহাদের ভ্যান চুরির ঘটনা স্বীকার করেছে বকুল শেখ। এ ঘটনায় জিহাদের পরিবার বাদী হয়ে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। সংশ্লিষ্ট মামলায় তাকে আগামীকাল (আজ) আদালতে সোপর্দ কর হবে। তিনি আরও বলেন, নিজেদের দায়িত্ব পালনের মধ্যদিয়ে অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে পেরে ভালো লাগছে। আমরা মানুষের সেবা দেয়ার জন্য সব সময় প্রস্তুত রয়েছি।’

উল্লেখ্য, গত ৪ সেপ্টেম্বর শিশু জিহাদের পরিবারে পাশ দাঁড়াতে একটি নতুন ভ্যান উপহার দেয় আলমডাঙ্গার ব্যবসায়ী সংগঠন ‘মানবতা ফাউন্ডেশন’। ভ্যান চুরির পর পরিবারটির অসহায় হড়ে পড়ার খবর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হলে পরিবারটির পাশে এগিয়ে আসে কয়েকজন মানবিক মানুষ। তারা শিশু জিহাদের বাড়িতে এক মাসের খাদ্য সামগ্রীও পৌঁছে দেয়। এরই মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ ছিনিয়ে নেয়া ভ্যান ও আমাসিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চুয়াডাঙ্গায় সেই চুরি হওয়া ভ্যান উদ্ধার করল পুলিশ, একজন গ্রেপ্তার

ভ্যান ফিরে পেয়ে খুশি শিশু জিহাদের পরিবার

আপলোড টাইম : ০৯:৪৯:৩৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার দীননাথপুর গ্রামের শিশু জিহাদের চুরি হওয়া ভ্যান উদ্ধারসহ বকুল শেখ নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার বিকেলে সদর থানায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনের মধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান। গ্রেপ্তারকৃত বকুল শেখ কুষ্টিয়া জেলর কুমারখালি থানাধীন উত্তর চাঁদপুর গ্রামের সুরুজ শেখের ছেলে। এদিকে, ভ্যানটি ফিরে পেয়ে শিশু জিহাদ ও তার পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফুটেছে। এসময় তারা জেলা পুলিশের সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান জানান, গত ৪ সেপ্টেম্বর শিশু জিহাদ তার পিতার পাখিভ্যান নিয়ে ভাড়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। পরে সদর হাসপাতালের সামনে থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তি কৌশলে ভাড়ার কথা বলে জিহাদকে আলমডাঙ্গায় নিয়ে যায়। পথে পিটিআই মোড়ে পৌঁছালে অজ্ঞাত আর এক ব্যক্তি শিশু জিহাদের ভ্যানে চড়েন। পরে আলমডাঙ্গা পৌঁছালে জিহাদকে পাশের দোকানে পাঠিয়ে ভ্যান নিয়ে পালিয়ে যায় তারা।

এ ঘটনার বিষয়ে দৈনিক সময়ের সমীকরণসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে চোর সনাক্ত এবং চক্রটিকে গ্রেপ্তারে মাঠে নামে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার পুলিশ। চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান, সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) আনোয়ার হোসেন ও পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) আলী হোসেনসহ সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাসানুজ্জামান চোর সনাক্ত ও ভ্যানটি উদ্ধারে বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ শুরু করেন। ঘটনার ১২ দিনের মধ্যে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালি থানা এলাকায় অভিযান চলিয়ে বকুল শেখ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার নিকট থেকে শিশু জিহাদের ভ্যানটি উদ্ধার হয়।

ভ্যান ফিরে পাওয়ার অনুভূতি জানয়ে শিশু জিহাদের পিতা বৃদ্ধ তাহাজ্জেল মিয়া বলেন, ‘ভ্যানটি ফিরে পাওয়া যাবে ভাবিনি। পুলিশ সদস্যরা আমার মতন দরিদ্র মানুষের ভ্যানটি উদ্ধার করে দিয়েছে, তাদের ব্যবহার আমাকে ভ্যান ফিরিয়ে দেয়ার থেকেও আনন্দ দিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি ও স্ত্রী দুজনেই অসুস্থ। শিশু ছেলেটি ভ্যান চালিয়ে সংসারের ভার কাঁধে নিয়েছিল। ভ্যানটি হারানোর পর আমরা নিরুপায় হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু অনেকে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, খাবার কিনে দিয়েছেন, একটি নতুন পাখিভ্যানও কিনে দিয়েছেন। আজ পুলিশ চুরি হওয়া ভ্যানটিও উদ্ধার করেছে। আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ এবং মন থেকে সকলের জন্য দোয়া কামনা করি আমার মত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।’

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অপর আসামির সহযোগিতায় শিশু জিহাদের ভ্যান চুরির ঘটনা স্বীকার করেছে বকুল শেখ। এ ঘটনায় জিহাদের পরিবার বাদী হয়ে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। সংশ্লিষ্ট মামলায় তাকে আগামীকাল (আজ) আদালতে সোপর্দ কর হবে। তিনি আরও বলেন, নিজেদের দায়িত্ব পালনের মধ্যদিয়ে অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে পেরে ভালো লাগছে। আমরা মানুষের সেবা দেয়ার জন্য সব সময় প্রস্তুত রয়েছি।’

উল্লেখ্য, গত ৪ সেপ্টেম্বর শিশু জিহাদের পরিবারে পাশ দাঁড়াতে একটি নতুন ভ্যান উপহার দেয় আলমডাঙ্গার ব্যবসায়ী সংগঠন ‘মানবতা ফাউন্ডেশন’। ভ্যান চুরির পর পরিবারটির অসহায় হড়ে পড়ার খবর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হলে পরিবারটির পাশে এগিয়ে আসে কয়েকজন মানবিক মানুষ। তারা শিশু জিহাদের বাড়িতে এক মাসের খাদ্য সামগ্রীও পৌঁছে দেয়। এরই মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ ছিনিয়ে নেয়া ভ্যান ও আমাসিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে।