ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সেনা অফিসারদের বিচারিক ক্ষমতা, এই মুহূর্তে জরুরি ছিল

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:০৯:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ৫ বার পড়া হয়েছে

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেয়া হলো সেনাবাহিনীকে। এ ক্ষমতার আওতায় সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এখন দেশের ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি আইনের ৬৪, ৬৫, ৮৩, ৮৪, ৮৬, ৯৫(২), ১০০, ১০৫, ১০৭, ১০৯, ১১০, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১৩০, ১৩৩ ও ১৪২ ধারার অপরাধ বিবেচনায় নিতে পারবেন। গত মঙ্গলবার এ নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারির পর বিষয়টি তুমুল আলোচনায় এসেছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সেনা কর্মকর্তারা আইনের ১২(১) ধারা অনুযায়ী, দুই মাসের (৬০ দিন) জন্য এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন। তবে তারা সেটি পারবেন কেবল মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে সারা দেশে।

আইনের এসব ধারা অনুযায়ী, একজন সেনা অফিসার অপরাধীকে গ্রেফতার, গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে এবং হেফাজতে রাখতে পারবেন। তিনি যেকোনো স্থানে অনুসন্ধানের জন্য তল্লাশির নির্দেশ এবং সরাসরি তল্লাশি করতে, জামিনের নিষ্পত্তি করতে পারবেন। বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার আদেশ দান, ছত্রভঙ্গ করতে বেসামরিক ও সামরিক শক্তির প্রয়োগ এবং ক্ষেত্রবিশেষে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ দিতে পারবেন। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে পারবেন।

দেশ স্বৈরাচারমুক্ত হওয়ার দেড় মাস না যেতে এই ব্যবস্থা নেয়া হলো বিশেষ কারণে। স্বৈরাচারী হাসিনা ও তার মন্ত্রী-এমপিদের অনেকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও তার সুবিধাভোগী প্রশাসন ও পুলিশের লোকেরা এখনো বহাল। আছে ফ্যাসিস্ট দলটির সব খুনে সন্ত্রাসী কর্মীবাহিনীও। তারা প্রতি মুহূর্তে চক্রান্ত করছে। খোদ শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বিদেশে বসে প্রতিবিপ্লব ঘটানোর ছক কষছে। ৫ আগস্টের পর থেকে ডাকাতি, লুটপাট, সংখ্যালঘু ইস্যু, জুডিশিয়াল ক্যুর চেষ্টা, ১৫ আগস্টে বিশৃঙ্খলা, আনসারদের সহিংসতা, পোশাক শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষ থেকে শুরু করে ক’দিন আগের মাজার ভাঙার ঘটনাগুলো সেই ছকের অংশ। পুলিশের ভূমিকা কাক্সিক্ষত পর্যায়ে নেই।

সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। অথচ অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা না হলে সার্বিকভাবে সরকারে স্থিতিশীলতা আসবে না। গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশে নিরবচ্ছিন্ন সংস্কার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে এগোনো সরকারের পক্ষে অসম্ভব। সরকার শুরুতেই পুলিশ সদস্যদের কাজে যোগদানের সময় বেঁধে দিয়েছিল। এখনো অনেক পুলিশ সদস্য কাজে যোগ দেননি। পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারেনি থানাগুলো। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক অবস্থায়। দেশ এই অবস্থায় রেখে এমনকি প্রধান উপদেষ্টার জাতিসঙ্ঘ অধিবেশনে যোগ দিতে যাওয়ার ঘোষণা অনেকের কাছে বিস্ময়কর ছিল। যদিও সেটি দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্ভবত এসব কারণেই আপাতত সেনাবাহিনীকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেয়া হলো। সমালোচনা যতই হোক, এই মুহূর্তে এটি নিঃসন্দেহে জরুরি ছিল। এই ব্যবস্থা নেয়ার পর অনেকেই স্বস্তি বোধ করেছেন।

তবে আমরা আশা করি, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা বুদ্ধি-বিবেচনার সাথে এই ক্ষমতার প্রয়োগ করবেন। গণ-অভ্যুত্থানের সময় জনগণের ওপর গুলি চালাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তারা প্রমাণ করেছেন, তারা সত্যিই জনগণের জন্য নিবেদিত, জনগণের বাহিনী। সেই ভাবমর্যাদা যেন মাঠপর্যায়ের দায়িত্ব পালনেও ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

সেনা অফিসারদের বিচারিক ক্ষমতা, এই মুহূর্তে জরুরি ছিল

আপলোড টাইম : ০৯:০৯:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেয়া হলো সেনাবাহিনীকে। এ ক্ষমতার আওতায় সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এখন দেশের ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি আইনের ৬৪, ৬৫, ৮৩, ৮৪, ৮৬, ৯৫(২), ১০০, ১০৫, ১০৭, ১০৯, ১১০, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১৩০, ১৩৩ ও ১৪২ ধারার অপরাধ বিবেচনায় নিতে পারবেন। গত মঙ্গলবার এ নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারির পর বিষয়টি তুমুল আলোচনায় এসেছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সেনা কর্মকর্তারা আইনের ১২(১) ধারা অনুযায়ী, দুই মাসের (৬০ দিন) জন্য এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন। তবে তারা সেটি পারবেন কেবল মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে সারা দেশে।

আইনের এসব ধারা অনুযায়ী, একজন সেনা অফিসার অপরাধীকে গ্রেফতার, গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে এবং হেফাজতে রাখতে পারবেন। তিনি যেকোনো স্থানে অনুসন্ধানের জন্য তল্লাশির নির্দেশ এবং সরাসরি তল্লাশি করতে, জামিনের নিষ্পত্তি করতে পারবেন। বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার আদেশ দান, ছত্রভঙ্গ করতে বেসামরিক ও সামরিক শক্তির প্রয়োগ এবং ক্ষেত্রবিশেষে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ দিতে পারবেন। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে পারবেন।

দেশ স্বৈরাচারমুক্ত হওয়ার দেড় মাস না যেতে এই ব্যবস্থা নেয়া হলো বিশেষ কারণে। স্বৈরাচারী হাসিনা ও তার মন্ত্রী-এমপিদের অনেকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও তার সুবিধাভোগী প্রশাসন ও পুলিশের লোকেরা এখনো বহাল। আছে ফ্যাসিস্ট দলটির সব খুনে সন্ত্রাসী কর্মীবাহিনীও। তারা প্রতি মুহূর্তে চক্রান্ত করছে। খোদ শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বিদেশে বসে প্রতিবিপ্লব ঘটানোর ছক কষছে। ৫ আগস্টের পর থেকে ডাকাতি, লুটপাট, সংখ্যালঘু ইস্যু, জুডিশিয়াল ক্যুর চেষ্টা, ১৫ আগস্টে বিশৃঙ্খলা, আনসারদের সহিংসতা, পোশাক শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষ থেকে শুরু করে ক’দিন আগের মাজার ভাঙার ঘটনাগুলো সেই ছকের অংশ। পুলিশের ভূমিকা কাক্সিক্ষত পর্যায়ে নেই।

সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। অথচ অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা না হলে সার্বিকভাবে সরকারে স্থিতিশীলতা আসবে না। গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশে নিরবচ্ছিন্ন সংস্কার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে এগোনো সরকারের পক্ষে অসম্ভব। সরকার শুরুতেই পুলিশ সদস্যদের কাজে যোগদানের সময় বেঁধে দিয়েছিল। এখনো অনেক পুলিশ সদস্য কাজে যোগ দেননি। পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারেনি থানাগুলো। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক অবস্থায়। দেশ এই অবস্থায় রেখে এমনকি প্রধান উপদেষ্টার জাতিসঙ্ঘ অধিবেশনে যোগ দিতে যাওয়ার ঘোষণা অনেকের কাছে বিস্ময়কর ছিল। যদিও সেটি দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্ভবত এসব কারণেই আপাতত সেনাবাহিনীকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেয়া হলো। সমালোচনা যতই হোক, এই মুহূর্তে এটি নিঃসন্দেহে জরুরি ছিল। এই ব্যবস্থা নেয়ার পর অনেকেই স্বস্তি বোধ করেছেন।

তবে আমরা আশা করি, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা বুদ্ধি-বিবেচনার সাথে এই ক্ষমতার প্রয়োগ করবেন। গণ-অভ্যুত্থানের সময় জনগণের ওপর গুলি চালাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তারা প্রমাণ করেছেন, তারা সত্যিই জনগণের জন্য নিবেদিত, জনগণের বাহিনী। সেই ভাবমর্যাদা যেন মাঠপর্যায়ের দায়িত্ব পালনেও ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।