ইপেপার । আজ সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝিনাইদহে টপসয়েল কেটে আবাদি জমির ওপর অত্যাচার

পুষ্টিগুণ হারাচ্ছে মাটি, কমছে ফসল উৎপাদন

ঝিনাইদহ অফিস:
  • আপলোড টাইম : ০৯:০৭:০৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ৭ বার পড়া হয়েছে

টপসয়েল কেটে আবাদি জমির ওপর অত্যাচার চালানোর ফলে পুষ্টিগুণ হারাচ্ছে ঝিনাইদহ অঞ্চলের মাটি। এতে ফসল উৎপাদনে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। ফলে কৃষি জমিতে এখন সার না দিলে ফসলে ভালো ফলন হচ্ছে  না। সার প্রয়োগে কৃষকদের মধ্যে তাই প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জমিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহার ও জমির টপসয়েল কেটে বিক্রি করার কারণে মাটির পুষ্টিগুণ হারানোর অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন ঝিনাইদহ মৃত্তিকা গবেষণাগারের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা।

এ অবস্থা থেকে বাঁচতে তারা বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি কৃষিজমির মাটি পরীক্ষা করে সার ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঝিনাইদহের ছয় উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাটি ল্যাব টেস্ট করে কম মাত্রার পুষ্টি উপাদান পাওয়া গেছে। ফসল উৎপাদনের জন্য যে ১৭টি পুষ্টি উপাদান দরকার, তা ঝিনাইদহের মাটিতে নেই। ঝিনাইদহ অঞ্চলে প্রতি ১০০ গ্রাম মাটিতে নাইট্রোজেন দশমিক ২৭ মাইক্রোগ্রামের পরিবর্তে রয়েছে দশমিক ০৯ মাইক্রোগ্রাম, যা অতি নি¤œ মাত্রার। ফসফরাস ২৩-৩০ মাইক্রোগ্রামের পরিবর্তে আছে ১৫ থেকে ২২। পটাশিয়াম দশমিক ২৭ এর পরিবর্তে আছে ১৮ মিলিতুল্যাংক। সালফার ২৭ মাইক্রোগ্রামের পরিবর্তে মধ্যে ২২ থেকে ৩০। জিংক ১ দশমিক ৩৫ এর স্থলে দশমিক ৪৫ থেকে দশমিক ৯০ মাইক্রোগ্রাম রয়েছে। পাশাপাশি বোরণ দশমিক ৪৫ মাইক্রোগ্রামের পরিবর্তে উচ্চমাত্রায় দশমিক ৬১, অম্লান ৬ দশমিক ৬০ থেকে ৮ দশমিক ৪০ যা নিরপেক্ষ মাত্রার এবং বেশি দরকারি জৈব পদার্থ রয়েছে ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১ থেকে ১ দশমিক ৭০ শতাংশ, যা অতি নি¤œ মাত্রায় রয়েছে। শাহীন নামে এক কৃষক জানান, ভুট্টা চাষের জন্য তিনি তার জমির মাটি পরীক্ষা করতে দিয়েছিলেন ঝিনাইদহ মৃত্তিকা গবেষণা ইনস্টিটিউটে।

পরীক্ষায় তার জমিতে ফসফরাস, পটাশিয়াম ও জৈব পদার্থ নি¤œমানের পাওয়া গেছে। তাছাড়া নাইট্রোজেন, সালফার ও জিঙ্ক পাওয়া গেছে মধ্যম। জমির মাটিতে বোরন রয়েছে অতি উচ্চমাত্রায়। সদর উপজেলার বংকিরার কৃষক বাবলুর রহমান বিশ^াস বলেন, ধানের পাশাপাশি পাট ও গমের চাষ করেন তিনি। তবে কয়েক বছর ধরে অতিরিক্ত সার না দিলে জমিতে ভালো ফলন আসে না। আবার সার না দিলে উৎপাদন কমে যায়। আমন মৌসুমে এক বিঘা জমিতে ৩০ কেজি ইউরিয়া সার দিলে বোরো মৌসুমে ৪৫ কেজি প্রয়োজন হয়। অন্য সারও বেশি লাগছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বছর ভাটা মালিকরা নানা প্রলোভন দেখিয়ে কৃষকের জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যায়। না বুঝে নানা অজুহাতে কৃষকও বিক্রি করছেন মাটি। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, পাঁচ বছরে জেলায় আবাদযোগ্য কৃষিজমি কমেছে ৪ হাজার ৬৫৩ হেক্টর। চাষযোগ্য জমি রয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার ২৩৫ হেক্টর।

বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ইসতিয়াক আহম্মেদ জানান, ঝিনাইদহ অঞ্চলের মাটিতে প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি রয়েছে। এজন্য একই জমিতে বছরে তিনের অধিক ফসল চাষ ও সারের অতিরিক্ত ব্যবহার বিশেষভাবে দায়ী। নাইট্রোজেন মাটিতে স্থায়ীভাবে থাকে না।

ঝিনাইদহ মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের আঞ্চলিক গবেষণাগারের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শিখা নাসরিন বলেন, মাটির পুষ্টি উপাদান বজায় রেখে উৎপাদন বাড়াতে কৃষক সচেতনতা জরুরি হয়ে পড়েছে। রাসায়নিক সার কমিয়ে জৈব সারের ব্যবহার বাড়াতে হবে। এতে ফসলের দারকারি প্রায় সব উপাদান থাকে। জমি থেকে ফসল কাটার সময় নিচের কিছু অংশ রেখে দেওয়ার পাশাপাশি সবুজ সার চাষ করে মাটিতে মিশিয়ে দিয়ে জৈব সারের চাহিদা পূরণ করা যায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ষষ্টি চন্দ্র রায় বলেন, বাড়তি রাসায়নিক সার ফসল উৎপাদনে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করছে। কৃষকদের বেশি বেশি করে জৈব সারের ব্যবহার বাড়াতে হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

ঝিনাইদহে টপসয়েল কেটে আবাদি জমির ওপর অত্যাচার

পুষ্টিগুণ হারাচ্ছে মাটি, কমছে ফসল উৎপাদন

আপলোড টাইম : ০৯:০৭:০৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

টপসয়েল কেটে আবাদি জমির ওপর অত্যাচার চালানোর ফলে পুষ্টিগুণ হারাচ্ছে ঝিনাইদহ অঞ্চলের মাটি। এতে ফসল উৎপাদনে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। ফলে কৃষি জমিতে এখন সার না দিলে ফসলে ভালো ফলন হচ্ছে  না। সার প্রয়োগে কৃষকদের মধ্যে তাই প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জমিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহার ও জমির টপসয়েল কেটে বিক্রি করার কারণে মাটির পুষ্টিগুণ হারানোর অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন ঝিনাইদহ মৃত্তিকা গবেষণাগারের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা।

এ অবস্থা থেকে বাঁচতে তারা বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি কৃষিজমির মাটি পরীক্ষা করে সার ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঝিনাইদহের ছয় উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাটি ল্যাব টেস্ট করে কম মাত্রার পুষ্টি উপাদান পাওয়া গেছে। ফসল উৎপাদনের জন্য যে ১৭টি পুষ্টি উপাদান দরকার, তা ঝিনাইদহের মাটিতে নেই। ঝিনাইদহ অঞ্চলে প্রতি ১০০ গ্রাম মাটিতে নাইট্রোজেন দশমিক ২৭ মাইক্রোগ্রামের পরিবর্তে রয়েছে দশমিক ০৯ মাইক্রোগ্রাম, যা অতি নি¤œ মাত্রার। ফসফরাস ২৩-৩০ মাইক্রোগ্রামের পরিবর্তে আছে ১৫ থেকে ২২। পটাশিয়াম দশমিক ২৭ এর পরিবর্তে আছে ১৮ মিলিতুল্যাংক। সালফার ২৭ মাইক্রোগ্রামের পরিবর্তে মধ্যে ২২ থেকে ৩০। জিংক ১ দশমিক ৩৫ এর স্থলে দশমিক ৪৫ থেকে দশমিক ৯০ মাইক্রোগ্রাম রয়েছে। পাশাপাশি বোরণ দশমিক ৪৫ মাইক্রোগ্রামের পরিবর্তে উচ্চমাত্রায় দশমিক ৬১, অম্লান ৬ দশমিক ৬০ থেকে ৮ দশমিক ৪০ যা নিরপেক্ষ মাত্রার এবং বেশি দরকারি জৈব পদার্থ রয়েছে ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১ থেকে ১ দশমিক ৭০ শতাংশ, যা অতি নি¤œ মাত্রায় রয়েছে। শাহীন নামে এক কৃষক জানান, ভুট্টা চাষের জন্য তিনি তার জমির মাটি পরীক্ষা করতে দিয়েছিলেন ঝিনাইদহ মৃত্তিকা গবেষণা ইনস্টিটিউটে।

পরীক্ষায় তার জমিতে ফসফরাস, পটাশিয়াম ও জৈব পদার্থ নি¤œমানের পাওয়া গেছে। তাছাড়া নাইট্রোজেন, সালফার ও জিঙ্ক পাওয়া গেছে মধ্যম। জমির মাটিতে বোরন রয়েছে অতি উচ্চমাত্রায়। সদর উপজেলার বংকিরার কৃষক বাবলুর রহমান বিশ^াস বলেন, ধানের পাশাপাশি পাট ও গমের চাষ করেন তিনি। তবে কয়েক বছর ধরে অতিরিক্ত সার না দিলে জমিতে ভালো ফলন আসে না। আবার সার না দিলে উৎপাদন কমে যায়। আমন মৌসুমে এক বিঘা জমিতে ৩০ কেজি ইউরিয়া সার দিলে বোরো মৌসুমে ৪৫ কেজি প্রয়োজন হয়। অন্য সারও বেশি লাগছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বছর ভাটা মালিকরা নানা প্রলোভন দেখিয়ে কৃষকের জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যায়। না বুঝে নানা অজুহাতে কৃষকও বিক্রি করছেন মাটি। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, পাঁচ বছরে জেলায় আবাদযোগ্য কৃষিজমি কমেছে ৪ হাজার ৬৫৩ হেক্টর। চাষযোগ্য জমি রয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার ২৩৫ হেক্টর।

বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ইসতিয়াক আহম্মেদ জানান, ঝিনাইদহ অঞ্চলের মাটিতে প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি রয়েছে। এজন্য একই জমিতে বছরে তিনের অধিক ফসল চাষ ও সারের অতিরিক্ত ব্যবহার বিশেষভাবে দায়ী। নাইট্রোজেন মাটিতে স্থায়ীভাবে থাকে না।

ঝিনাইদহ মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের আঞ্চলিক গবেষণাগারের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শিখা নাসরিন বলেন, মাটির পুষ্টি উপাদান বজায় রেখে উৎপাদন বাড়াতে কৃষক সচেতনতা জরুরি হয়ে পড়েছে। রাসায়নিক সার কমিয়ে জৈব সারের ব্যবহার বাড়াতে হবে। এতে ফসলের দারকারি প্রায় সব উপাদান থাকে। জমি থেকে ফসল কাটার সময় নিচের কিছু অংশ রেখে দেওয়ার পাশাপাশি সবুজ সার চাষ করে মাটিতে মিশিয়ে দিয়ে জৈব সারের চাহিদা পূরণ করা যায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ষষ্টি চন্দ্র রায় বলেন, বাড়তি রাসায়নিক সার ফসল উৎপাদনে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করছে। কৃষকদের বেশি বেশি করে জৈব সারের ব্যবহার বাড়াতে হবে।