ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অবৈধ দখলমুক্ত হলো আলমডাঙ্গার শহীদ মিনার মাঠ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ০৯:০৬:৫১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৪
  • / ৯ বার পড়া হয়েছে

অবশেষে আলমডাঙ্গার শহীদ মিনার মাঠ ব্রাইট মডেল স্কুলের পরিচালক জাকারিয়া হিরোর কবল থেকে অবৈধ দখলমুক্ত করে ছেড়েছে ছাত্র-জনতা। গতকাল বুধবার দুপুরে মাঠের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে গেলে বাঁধা দেন জাকারিয়া হিরো। বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষোভে ফেটে পড়ে শহরের ছাত্র-জনতা। তোপের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হন দখলদার হিরো। শহীদ মিনার মাঠ উদ্ধারে শক্ত অবস্থান নিয়ে প্রশংসিত হয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।

জানা যায়, কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার আমবাড়িয়া গ্রামের জাকারিয়া হিরো। সন্ত্রাসী সিরাজ বাহিনীর রাজত্বকালে তাদের পরিবারের উত্থান। এক পর্যায়ে জাকারিয়া হিরো আলমডাঙ্গায় শহীদ মিনারের পাশে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এক খন্ড জমি লিজ নেন। সেখানে গড়ে তোলেন ব্রাইট মডেল স্কুল। পরবর্তীতে নানা কৌশলে খুলনা বিভাগের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ব্যায়ামাগার করায়ত্ত করে সেখানে গড়ে তোলেন বহুতল ভবন। এমনকি ব্যায়ামাগারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মরহুম ইসলাম খানের বাড়ি ছিল পাশে। ইসলাম খানের বিধবা স্ত্রীকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে অসহায় পরিবারটির মাথা গোজার ঠাইটুকু কেড়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কয়েক মাস আগে জাকারিয়া হিরো আলমডাঙ্গা কলেজের অভ্যন্তরে থাকা খাস জমি দখল করতে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন। তখনও সর্বস্তরের মানুষ ফুঁসে উঠে ভূমিদস্যু হিরোর বিরুদ্ধে।

এদিকে, আলমডাঙ্গা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার মাঠ (আলমডাঙ্গা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জমি) কিছুটা দখল করে ভোগ করে আসছিলেন জাকারিয়া হিরো। অভিযোগ ওঠে, হিরো তার বহুতল ভবনের পায়খানার টাংকি তৈরি করেছেন শহীদ মিনার স্থাপনার ভেতরে (শহীদ মিনার স্থাপনার মাটির নীচে)। এমন অভিযোগের কারণে শহরের আম-জনতা ফুঁসছিল দীর্ঘ বছর ধরে। বিগত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় অত্যান্ত প্রভাবশালী হয়ে ওঠা জাকারিয়া হিরোর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করতে সাহস পেতো না। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের ম্যানেজ করেই এতকাল তিনি এসব অপকর্ম করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এক সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পৌর মেয়রসহ প্রভাবশালী নেতাদের ব্রাইট মডেল স্কুলের সভাপতি করে নির্বিঘ্নে ভূমি দস্যুতা অব্যাহত রেখেছিলেন।

সম্প্রতি রাজনৈতিক পট পরিনর্তনের পর আলমডাঙ্গা সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবারও মাঠটির চারদিকে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটিকে ম্যানেজ করেই ইতোপূর্বে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ প্রক্রিয়া বারবার নস্যাৎ করে আসছিলেন হিরো। বর্তমানে বিদ্যালয়টির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্নিগ্ধা দাস। তিনি সীমানা প্রাচীর নির্মাণে বদ্ধপরিকর। ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক গতকাল বুধবার সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ শুরু হলে জাকারিয়া হিরো বাঁধা দেন। বিষয়টি জানাজানি হলে শহরের ছাত্র-জনতা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। সে সময় জাকারিয়া হিরো ব্রাইট মডেল স্কুলের সকল শিক্ষক-কর্মচারীকে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে চড়াও হন। ছাত্র-জনতাও বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপজেলা চত্বরে উপস্থিত হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রাচীর নির্মাণের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। এমন পরিস্থিতে পিছু হটতে বাধ্য হন হিরো। সারাদিন ছাত্র-জনতা মাঠে উপস্থিত ছিল। তারা জাকারিয়া হিরোর অপতৎপরতা রুখে দিতে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সারা শহর দখলদার জাকারিয়া হিরোর বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে। শহরজুড়ে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

অবৈধ দখলমুক্ত হলো আলমডাঙ্গার শহীদ মিনার মাঠ

আপলোড টাইম : ০৯:০৬:৫১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৪

অবশেষে আলমডাঙ্গার শহীদ মিনার মাঠ ব্রাইট মডেল স্কুলের পরিচালক জাকারিয়া হিরোর কবল থেকে অবৈধ দখলমুক্ত করে ছেড়েছে ছাত্র-জনতা। গতকাল বুধবার দুপুরে মাঠের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করতে গেলে বাঁধা দেন জাকারিয়া হিরো। বিষয়টি জানতে পেরে ক্ষোভে ফেটে পড়ে শহরের ছাত্র-জনতা। তোপের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হন দখলদার হিরো। শহীদ মিনার মাঠ উদ্ধারে শক্ত অবস্থান নিয়ে প্রশংসিত হয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।

জানা যায়, কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার আমবাড়িয়া গ্রামের জাকারিয়া হিরো। সন্ত্রাসী সিরাজ বাহিনীর রাজত্বকালে তাদের পরিবারের উত্থান। এক পর্যায়ে জাকারিয়া হিরো আলমডাঙ্গায় শহীদ মিনারের পাশে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এক খন্ড জমি লিজ নেন। সেখানে গড়ে তোলেন ব্রাইট মডেল স্কুল। পরবর্তীতে নানা কৌশলে খুলনা বিভাগের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ব্যায়ামাগার করায়ত্ত করে সেখানে গড়ে তোলেন বহুতল ভবন। এমনকি ব্যায়ামাগারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মরহুম ইসলাম খানের বাড়ি ছিল পাশে। ইসলাম খানের বিধবা স্ত্রীকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে অসহায় পরিবারটির মাথা গোজার ঠাইটুকু কেড়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কয়েক মাস আগে জাকারিয়া হিরো আলমডাঙ্গা কলেজের অভ্যন্তরে থাকা খাস জমি দখল করতে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন। তখনও সর্বস্তরের মানুষ ফুঁসে উঠে ভূমিদস্যু হিরোর বিরুদ্ধে।

এদিকে, আলমডাঙ্গা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার মাঠ (আলমডাঙ্গা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জমি) কিছুটা দখল করে ভোগ করে আসছিলেন জাকারিয়া হিরো। অভিযোগ ওঠে, হিরো তার বহুতল ভবনের পায়খানার টাংকি তৈরি করেছেন শহীদ মিনার স্থাপনার ভেতরে (শহীদ মিনার স্থাপনার মাটির নীচে)। এমন অভিযোগের কারণে শহরের আম-জনতা ফুঁসছিল দীর্ঘ বছর ধরে। বিগত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় অত্যান্ত প্রভাবশালী হয়ে ওঠা জাকারিয়া হিরোর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করতে সাহস পেতো না। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের ম্যানেজ করেই এতকাল তিনি এসব অপকর্ম করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এক সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পৌর মেয়রসহ প্রভাবশালী নেতাদের ব্রাইট মডেল স্কুলের সভাপতি করে নির্বিঘ্নে ভূমি দস্যুতা অব্যাহত রেখেছিলেন।

সম্প্রতি রাজনৈতিক পট পরিনর্তনের পর আলমডাঙ্গা সরকারি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবারও মাঠটির চারদিকে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটিকে ম্যানেজ করেই ইতোপূর্বে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ প্রক্রিয়া বারবার নস্যাৎ করে আসছিলেন হিরো। বর্তমানে বিদ্যালয়টির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্নিগ্ধা দাস। তিনি সীমানা প্রাচীর নির্মাণে বদ্ধপরিকর। ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক গতকাল বুধবার সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ শুরু হলে জাকারিয়া হিরো বাঁধা দেন। বিষয়টি জানাজানি হলে শহরের ছাত্র-জনতা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। সে সময় জাকারিয়া হিরো ব্রাইট মডেল স্কুলের সকল শিক্ষক-কর্মচারীকে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে চড়াও হন। ছাত্র-জনতাও বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপজেলা চত্বরে উপস্থিত হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রাচীর নির্মাণের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। এমন পরিস্থিতে পিছু হটতে বাধ্য হন হিরো। সারাদিন ছাত্র-জনতা মাঠে উপস্থিত ছিল। তারা জাকারিয়া হিরোর অপতৎপরতা রুখে দিতে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সারা শহর দখলদার জাকারিয়া হিরোর বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে। শহরজুড়ে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।