ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সেনাবাহিনীকে কৃতজ্ঞতা জানালেন নারী

কার্পাসডাঙ্গায় জমি দখলের চেষ্টা, উদ্ধার করলেন সেনা সদস্যরা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৪:১০:৩২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৪
  • / ২৪ বার পড়া হয়েছে

সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় জোরপূর্বক দখলে থাকা সম্পত্তি ফিরে পেয়েছেন দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গার কোমরপুর গ্রামের চামেলী বেগম। ইতোমধ্যে নির্বিঘ্নে সেখানে প্রাচীর নির্মাণকাজ শুরু করে সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন চামেলী বেগম। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরই অস্থিতিশিল পরিবেশ সৃষ্টির সুযোগে তার জমি দখলের চেষ্টা করে স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা। তবে সেনাবাহিনী ক্যাম্পে অভিযোগের পরপরই তারা সেই সম্পত্তি উদ্ধারে সহযোগিতা করেন।

জানা গেছে, শেখ হাসিনা পদত্যাগের পরই সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙ্গে পড়ে। এই সুযোগে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মনিরুজ্জামান মণ্টু (৪০) মেম্বারের নেতৃত্বে চামেলী বেগমের সম্পত্তি দখল করার চেষ্টা করে তার আরও চার ভাই। তারা সম্পর্কে চামেলী বেগমের চাচাতো মামা। ভুক্তভোগী চামেলী বেগম চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার গোরস্থানপাড়ার সাকের আলীর মেয়ে। তার মা উজালা বেগম দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা কোমরপুর গ্রামের তৈয়ব আলী মণ্ডলের কন্যা। পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া জমি উজলা বেগমের থেকে আগেও বেশ কয়েকবার অভিযুক্তরা দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।

দুটি বাগানের সেগুন, শিশু ও কাঁঠালসহ বিভিন্ন প্রকার গাছ তারা কেটে নেয়। শেষ মেষ নিরুপায় হয়ে উজালা বেগম মেয়ে চামেলী বেগমের নামে নিজের প্রাপ্ত অংশ রেজিস্ট্রি করে দেন। যার খারিজ খতিয়ান নম্বর ৭১৬। ছয় দাগে দুই একর ৫৩ শতক ৩৮ পয়েন্ট এই সম্পত্তির দিকে তার চাচাতো মামাদের নজর ছিল শুরু থেকেই। পুলিশ আসবে না জেনে তারা জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা করেন। এদিন জমিতে থাকা সাইনবোর্ড, সীমানা প্রাচীর উপড়ে ফেলা হয়। বাঁধা দিতে গেলে চামেলী বেগমের গলায় হেঁসো (দেশীয় অস্ত্র/দা বিশেষ) ধরে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে গত বুধবার চামেলী বেগম জোরপূর্বক তার জমি দখল ও মারধর চেষ্টার ঘটনায় পাঁচ চাচাতো মামার নাম উল্লেখ করে সেনাবাহিনীর চুয়াডাঙ্গা ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযুক্তরা হলেন- দামুড়হুদা উপজেলার কোমরপুর গ্রামের মেহের আলীর পাঁচ ছেলে মনিরুজ্জামান মণ্টু (৪০) (মেম্বার), মহাসীন (৫০), রাইজুল্লাহ (৪৮), শাহজাহান (৪৬) ও জিহন (৪৩)।

এদিকে, অভিযোগ পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাটির তদন্ত শুরু করেন। এতে চামেলী বেগম ভুক্তভোগী হওয়ার প্রমাণ পেলে চুয়াডাঙ্গার দায়িত্বে থাকা সেনা কর্মকর্তার নির্দেশে সেনাসদস্যরা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেন। জমির দখল ফিরে পেয়ে সেনাবাহিনীর চুয়াডাঙ্গা ক্যাম্পের সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন চামেলী বেগম।

চ্যামেলী বেগম বলেন, যেদিন সরকার পদত্যাগ করলো, সেদিন পুলিশ আসবে না ভেবে আমার চাচাতো মামারা জোরপূর্বক আমার সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করেছিলেন। সীমানা পিলার, সাইবোর্ড সব উপড়ে দিয়েছিলো। আমার বাবা-ভাই নেই। বাঁধা দিতে গেলে আমার গলায় হেঁসো ধরে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এলাকাবাসীর সামনে ফিরে যেতে পারবি না বলেও হুমকি দেয়। বাজে বাজে ভাষায় গালাগালি করে। তখন এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ফিরে এসে আমি সেনাবাহিনীর কাছে অভিযোগ দিই।

সেনাবাহিনীর প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে চামেলী বেগম বলেন, গত ১০ তারিখে সেনাবাহিনীকে জানিয়ে আমার জমিতে থাকা গাছগুলো কাটার জন্য আমি সেখানে যায়। তখনও আমার চাচাতো মামারা লোকজন ভাড়া করে নিয়ে এসে গাছ কাটতে বাধা দেয়। তবে সেই সময়ই সেনাবাহিনী সেখানে উপস্থিত হন। তারা আমাকে সব রকমের সহযোগিতা করেছেন। আমার জমি আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। সেনাবাহিনী আমাকে বলেছেন, ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা হলে তারা আসবেন। এবং ন্যায় করবেন। আমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানায়। আমার মতো অসহায় এর পাশে সেনাবাহিনী দাঁড়িয়েছে সেজন্য আমি কৃতজ্ঞ।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

সেনাবাহিনীকে কৃতজ্ঞতা জানালেন নারী

কার্পাসডাঙ্গায় জমি দখলের চেষ্টা, উদ্ধার করলেন সেনা সদস্যরা

আপলোড টাইম : ০৪:১০:৩২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৪

সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় জোরপূর্বক দখলে থাকা সম্পত্তি ফিরে পেয়েছেন দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গার কোমরপুর গ্রামের চামেলী বেগম। ইতোমধ্যে নির্বিঘ্নে সেখানে প্রাচীর নির্মাণকাজ শুরু করে সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন চামেলী বেগম। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরই অস্থিতিশিল পরিবেশ সৃষ্টির সুযোগে তার জমি দখলের চেষ্টা করে স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা। তবে সেনাবাহিনী ক্যাম্পে অভিযোগের পরপরই তারা সেই সম্পত্তি উদ্ধারে সহযোগিতা করেন।

জানা গেছে, শেখ হাসিনা পদত্যাগের পরই সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙ্গে পড়ে। এই সুযোগে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মনিরুজ্জামান মণ্টু (৪০) মেম্বারের নেতৃত্বে চামেলী বেগমের সম্পত্তি দখল করার চেষ্টা করে তার আরও চার ভাই। তারা সম্পর্কে চামেলী বেগমের চাচাতো মামা। ভুক্তভোগী চামেলী বেগম চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার গোরস্থানপাড়ার সাকের আলীর মেয়ে। তার মা উজালা বেগম দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা কোমরপুর গ্রামের তৈয়ব আলী মণ্ডলের কন্যা। পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া জমি উজলা বেগমের থেকে আগেও বেশ কয়েকবার অভিযুক্তরা দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।

দুটি বাগানের সেগুন, শিশু ও কাঁঠালসহ বিভিন্ন প্রকার গাছ তারা কেটে নেয়। শেষ মেষ নিরুপায় হয়ে উজালা বেগম মেয়ে চামেলী বেগমের নামে নিজের প্রাপ্ত অংশ রেজিস্ট্রি করে দেন। যার খারিজ খতিয়ান নম্বর ৭১৬। ছয় দাগে দুই একর ৫৩ শতক ৩৮ পয়েন্ট এই সম্পত্তির দিকে তার চাচাতো মামাদের নজর ছিল শুরু থেকেই। পুলিশ আসবে না জেনে তারা জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা করেন। এদিন জমিতে থাকা সাইনবোর্ড, সীমানা প্রাচীর উপড়ে ফেলা হয়। বাঁধা দিতে গেলে চামেলী বেগমের গলায় হেঁসো (দেশীয় অস্ত্র/দা বিশেষ) ধরে মেরে ফেলারও হুমকি দেয়। পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে গত বুধবার চামেলী বেগম জোরপূর্বক তার জমি দখল ও মারধর চেষ্টার ঘটনায় পাঁচ চাচাতো মামার নাম উল্লেখ করে সেনাবাহিনীর চুয়াডাঙ্গা ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযুক্তরা হলেন- দামুড়হুদা উপজেলার কোমরপুর গ্রামের মেহের আলীর পাঁচ ছেলে মনিরুজ্জামান মণ্টু (৪০) (মেম্বার), মহাসীন (৫০), রাইজুল্লাহ (৪৮), শাহজাহান (৪৬) ও জিহন (৪৩)।

এদিকে, অভিযোগ পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাটির তদন্ত শুরু করেন। এতে চামেলী বেগম ভুক্তভোগী হওয়ার প্রমাণ পেলে চুয়াডাঙ্গার দায়িত্বে থাকা সেনা কর্মকর্তার নির্দেশে সেনাসদস্যরা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেন। জমির দখল ফিরে পেয়ে সেনাবাহিনীর চুয়াডাঙ্গা ক্যাম্পের সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন চামেলী বেগম।

চ্যামেলী বেগম বলেন, যেদিন সরকার পদত্যাগ করলো, সেদিন পুলিশ আসবে না ভেবে আমার চাচাতো মামারা জোরপূর্বক আমার সম্পত্তি দখলের চেষ্টা করেছিলেন। সীমানা পিলার, সাইবোর্ড সব উপড়ে দিয়েছিলো। আমার বাবা-ভাই নেই। বাঁধা দিতে গেলে আমার গলায় হেঁসো ধরে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এলাকাবাসীর সামনে ফিরে যেতে পারবি না বলেও হুমকি দেয়। বাজে বাজে ভাষায় গালাগালি করে। তখন এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ফিরে এসে আমি সেনাবাহিনীর কাছে অভিযোগ দিই।

সেনাবাহিনীর প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে চামেলী বেগম বলেন, গত ১০ তারিখে সেনাবাহিনীকে জানিয়ে আমার জমিতে থাকা গাছগুলো কাটার জন্য আমি সেখানে যায়। তখনও আমার চাচাতো মামারা লোকজন ভাড়া করে নিয়ে এসে গাছ কাটতে বাধা দেয়। তবে সেই সময়ই সেনাবাহিনী সেখানে উপস্থিত হন। তারা আমাকে সব রকমের সহযোগিতা করেছেন। আমার জমি আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। সেনাবাহিনী আমাকে বলেছেন, ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা হলে তারা আসবেন। এবং ন্যায় করবেন। আমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানায়। আমার মতো অসহায় এর পাশে সেনাবাহিনী দাঁড়িয়েছে সেজন্য আমি কৃতজ্ঞ।