ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে না থাকায় সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছে দুষ্কৃতিকারীরারা

চুয়াডাঙ্গায় লুটতরাজের বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়াবার আহ্বান

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ১০:৩৭:২৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ অগাস্ট ২০২৪
  • / ৩৪ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গায় এখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে ফেরেনি। এই সুযোগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করছে কিছু দুষ্কৃতিকারীরা। বিভিন্ন স্থানে হুমকি, চাঁদাবাজীর অভিযোগ উঠছে। আবার জেলায় থাকা আওয়ামী লীগের বা এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নিজেদের মধ্যেকার সংঘর্ষের সংবাদও আসছে। সচেতন মহল বলছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে সবাই মিলেই রুখে দাঁড়াতে হবে। একটি সুন্দর রাষ্ট্র গড়ার প্রত্যায়ে যে আন্দোলন, এতো প্রাণ-রক্তের বিনিময়ে যে সফলতা, সেই সফলতাকে টিকিয়ে রাখতে হবে।

গত সোমবার বেলা তিনটার দিকে ছাত্র-জনতা চুয়াডাঙ্গা শহরে আনন্দ-উল্লাস করে। এক ঐতিহাসিক ক্ষণ তৈরি হয় চুয়াডাঙ্গার জন্য। হাজার হাজার সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। পুলিশ নেই, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যও নেই। তবুও মানুষের মধ্যে হাসি, আনন্দ অত্যাধিক বেশি। অন্য রকম খুশিতে মুক্ত হওয়ার নিঃশ্বাস নিচ্ছে যেন সাধারণ মানুষ, ছাত্র-জনতা। কিন্তু এই উল্লাসের মধ্যে ঢুকে বেশকিছু দুষ্কৃতিকারী শহরের কয়েকটি স্থানে ব্যাপক হামলা ভাঙচুর ও লুটতরাজ করেছে। সোমবার বেলা ৩টা থেকে মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত হামলা ভাঙচুরকৃত স্থানগুলোতে লুটপাট দেখা গেছে। তবে মাঠে কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিল না। আগুন নেভাতে আসেনি ফায়ার সার্ভিস।

বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িসহ শহরের বড় বাজার পুলিশ বক্স, তারাদেবী ফাউন্ডেশনের অ্যাম্বুলেন্স, একটি স্থানীয় দৈনিক পত্রিকার অফিসসহ বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙচুর লুটপাট করা হয়। মাঠে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী না থাকায় কিছু দুষ্কৃতিকারী সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছে। এই সুযোগে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাছিলের চেষ্টাও করছেন কেউ কেউ। আবার ইতোমধ্যে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে অভিযোগ আসছে, কয়েকজন যুবক বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে চাঁদা দাবি করছে, না দিলে পুড়িয়ে দেয়ার হুমকি আসছে। যদিও চুয়াডাঙ্গাতে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে কোনো সংখ্যালঘুর পরিবারের হামলার খবর পাওয়া যায়নি। তবে কয়েকজন সংখ্যালঘু আওয়ামী লীগ নেতার দখলে থাকা বিল-জলমহাল দখলের অভিযোগ উঠেছে। সব মিলিয়ে মানুষের মধ্যে এক দিকে হাসিনা সরকারের পতনের খুশি, আরেক দিকে দুষ্কৃতিকারীদের ভয়। আইনশৃঙ্খলার এক চরম অবনতির এই সময়ে রুখে দাঁড়াবার আহ্বান জানাচ্ছেন সচেতন মহলের মানুষ।

ইতোমধ্যে চুয়াডাঙ্গা শহরে দেখা গেছে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবু ও সদস্যসচিব শরীফুজ্জামান শরীফ নেতা-কর্মীদের সচেতন, সজাগ ও জনগণের জানমাল রক্ষা করার জন্য বার্তা দিয়েছেন। বিজ্ঞপ্তি ও মাইকিং করে প্রতিশোধ পরায়ণ না হওয়া, সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভাই-বোনদের বাসা-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে নিরাপত্তা রক্ষার্থে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। এছাড়াও জামায়াত ইসলামও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

সচেতন মহল, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সমাজ বিজ্ঞানীরা বলছেন, যে কোনোরকম ট্রানজিশনে, যেকোনো রকম বিপ্লব, অভ্যুত্থান সংঘটিত হলে কিছু দুর্ঘটনা ঘটে। কিন্তু আমাদের তরুণ নেতারা প্রয়োজনে যেভাবে বুক পেতে দিয়েছে। তাদেরকে সম্মান জানাতে হলে সম্প্রতি বজায় রাখতে হবে। আর বাংলাদেশের কোথাও কোনো রকম লুটতরাজ যেন না হয়। যেন কোনো ধর্মের মানুষের ওপর আঘাত না করে, সেই নিশ্চয়তা আমাদের-আপনাদের দিতে হবে। এই বাংলাদেশকে একটা সকলের বাংলাদেশ হিসেবে পরিচিত করার চেষ্টা করতে হবে।

তরুণরা কিন্তু সে চেষ্টা করছেন। তরুণ প্রজন্ম এক রক্তাক্ত লড়াইয়ের মধ্যদিয়ে এই জায়গায় এসেছে। তাদেরকে দেখে আমাদের শেখার অনেক কিছু আছে। এই গণঅভ্যুত্থানের পর যে হামলাগুলো হচ্ছে, সেখানেও যথেষ্ট ভূমিকা তারা নিয়েছেন। তারা পাড়ায় পাড়ায় কমিটি গঠন করছেন। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম রুখে দাঁড়িয়েছে। এই প্রতিবাদ জারি রাখতে হবে দেশের সকল পথে-প্রান্তরে, সকল গ্রাম থেকে শহরে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির এই সময়ে স্থানীয় জনতা, সাধারণ মানুষকে একত্রিত হতেই হবে। একটি সুন্দর রাষ্ট্র গড়ার প্রত্যায়ে যে আন্দোলন, এতো প্রাণ-রক্তের বিনিময়ে যে সফলতা, সেই সফলতাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। আমাদের এটিও মনে রাখতে হবে, স্বাধিনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধিনতা রক্ষা করা কঠিন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে না থাকায় সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছে দুষ্কৃতিকারীরারা

চুয়াডাঙ্গায় লুটতরাজের বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়াবার আহ্বান

আপলোড টাইম : ১০:৩৭:২৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ অগাস্ট ২০২৪

চুয়াডাঙ্গায় এখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে ফেরেনি। এই সুযোগে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করছে কিছু দুষ্কৃতিকারীরা। বিভিন্ন স্থানে হুমকি, চাঁদাবাজীর অভিযোগ উঠছে। আবার জেলায় থাকা আওয়ামী লীগের বা এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নিজেদের মধ্যেকার সংঘর্ষের সংবাদও আসছে। সচেতন মহল বলছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে সবাই মিলেই রুখে দাঁড়াতে হবে। একটি সুন্দর রাষ্ট্র গড়ার প্রত্যায়ে যে আন্দোলন, এতো প্রাণ-রক্তের বিনিময়ে যে সফলতা, সেই সফলতাকে টিকিয়ে রাখতে হবে।

গত সোমবার বেলা তিনটার দিকে ছাত্র-জনতা চুয়াডাঙ্গা শহরে আনন্দ-উল্লাস করে। এক ঐতিহাসিক ক্ষণ তৈরি হয় চুয়াডাঙ্গার জন্য। হাজার হাজার সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। পুলিশ নেই, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যও নেই। তবুও মানুষের মধ্যে হাসি, আনন্দ অত্যাধিক বেশি। অন্য রকম খুশিতে মুক্ত হওয়ার নিঃশ্বাস নিচ্ছে যেন সাধারণ মানুষ, ছাত্র-জনতা। কিন্তু এই উল্লাসের মধ্যে ঢুকে বেশকিছু দুষ্কৃতিকারী শহরের কয়েকটি স্থানে ব্যাপক হামলা ভাঙচুর ও লুটতরাজ করেছে। সোমবার বেলা ৩টা থেকে মঙ্গলবার গভীর রাত পর্যন্ত হামলা ভাঙচুরকৃত স্থানগুলোতে লুটপাট দেখা গেছে। তবে মাঠে কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিল না। আগুন নেভাতে আসেনি ফায়ার সার্ভিস।

বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িসহ শহরের বড় বাজার পুলিশ বক্স, তারাদেবী ফাউন্ডেশনের অ্যাম্বুলেন্স, একটি স্থানীয় দৈনিক পত্রিকার অফিসসহ বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙচুর লুটপাট করা হয়। মাঠে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী না থাকায় কিছু দুষ্কৃতিকারী সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছে। এই সুযোগে ব্যক্তিগত স্বার্থ হাছিলের চেষ্টাও করছেন কেউ কেউ। আবার ইতোমধ্যে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে অভিযোগ আসছে, কয়েকজন যুবক বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে চাঁদা দাবি করছে, না দিলে পুড়িয়ে দেয়ার হুমকি আসছে। যদিও চুয়াডাঙ্গাতে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে কোনো সংখ্যালঘুর পরিবারের হামলার খবর পাওয়া যায়নি। তবে কয়েকজন সংখ্যালঘু আওয়ামী লীগ নেতার দখলে থাকা বিল-জলমহাল দখলের অভিযোগ উঠেছে। সব মিলিয়ে মানুষের মধ্যে এক দিকে হাসিনা সরকারের পতনের খুশি, আরেক দিকে দুষ্কৃতিকারীদের ভয়। আইনশৃঙ্খলার এক চরম অবনতির এই সময়ে রুখে দাঁড়াবার আহ্বান জানাচ্ছেন সচেতন মহলের মানুষ।

ইতোমধ্যে চুয়াডাঙ্গা শহরে দেখা গেছে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবু ও সদস্যসচিব শরীফুজ্জামান শরীফ নেতা-কর্মীদের সচেতন, সজাগ ও জনগণের জানমাল রক্ষা করার জন্য বার্তা দিয়েছেন। বিজ্ঞপ্তি ও মাইকিং করে প্রতিশোধ পরায়ণ না হওয়া, সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভাই-বোনদের বাসা-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে নিরাপত্তা রক্ষার্থে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। এছাড়াও জামায়াত ইসলামও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

সচেতন মহল, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সমাজ বিজ্ঞানীরা বলছেন, যে কোনোরকম ট্রানজিশনে, যেকোনো রকম বিপ্লব, অভ্যুত্থান সংঘটিত হলে কিছু দুর্ঘটনা ঘটে। কিন্তু আমাদের তরুণ নেতারা প্রয়োজনে যেভাবে বুক পেতে দিয়েছে। তাদেরকে সম্মান জানাতে হলে সম্প্রতি বজায় রাখতে হবে। আর বাংলাদেশের কোথাও কোনো রকম লুটতরাজ যেন না হয়। যেন কোনো ধর্মের মানুষের ওপর আঘাত না করে, সেই নিশ্চয়তা আমাদের-আপনাদের দিতে হবে। এই বাংলাদেশকে একটা সকলের বাংলাদেশ হিসেবে পরিচিত করার চেষ্টা করতে হবে।

তরুণরা কিন্তু সে চেষ্টা করছেন। তরুণ প্রজন্ম এক রক্তাক্ত লড়াইয়ের মধ্যদিয়ে এই জায়গায় এসেছে। তাদেরকে দেখে আমাদের শেখার অনেক কিছু আছে। এই গণঅভ্যুত্থানের পর যে হামলাগুলো হচ্ছে, সেখানেও যথেষ্ট ভূমিকা তারা নিয়েছেন। তারা পাড়ায় পাড়ায় কমিটি গঠন করছেন। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম রুখে দাঁড়িয়েছে। এই প্রতিবাদ জারি রাখতে হবে দেশের সকল পথে-প্রান্তরে, সকল গ্রাম থেকে শহরে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির এই সময়ে স্থানীয় জনতা, সাধারণ মানুষকে একত্রিত হতেই হবে। একটি সুন্দর রাষ্ট্র গড়ার প্রত্যায়ে যে আন্দোলন, এতো প্রাণ-রক্তের বিনিময়ে যে সফলতা, সেই সফলতাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। আমাদের এটিও মনে রাখতে হবে, স্বাধিনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধিনতা রক্ষা করা কঠিন।