ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কোথায় গেলেন চুয়াডাঙ্গার আ.লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ০৫:২৮:২৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ অগাস্ট ২০২৪
  • / ১৯৩ বার পড়া হয়েছে


এ এক অন্য রকম পরিস্থিতি। সব আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের পদধারী নেতারা শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার বা পদত্যাগ করার কিছুটা আগে থেকেই আত্মগোপনে যান। কেউ কেউ দেশ ছেড়েছেন। পরিস্থিতি ভয়াবহ। চুয়াডাঙ্গাতেও আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা পালিয়েছেন। তবে কীভাবে কে কোথায় পালালেন, কেনই বা তাদের এই পরিণিতি, সেটা বোঝা দায়। এই মুহূর্তে দৈনিক সময়ের সমীকরণ-এর হাতে চুয়াডাঙ্গার নেতাদের অবস্থান নিয়ে কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, সেই পরিস্থিতিতে এরা কোথায় গেলেন, কেন গেলেন, কীভাবে গেলেন, সেটার সামান্য তথ্য এসেছে হাতে।
গতকাল ৫ই আগস্ট ছিল চুয়াডাঙ্গার স্থানীয় শহীদ দিবস। এদিন সকালে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন আটকবর শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে গিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। সেখান থেকে একসাথে নেতা-কর্মীরা ফিরে আসেন। তবে এই সময়েই তারা পরিস্থিতির আঁচ পান। দুপুরের পর শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে হেলিকপ্টারে ভারত হয়ে দিল্লি থেকে লন্ডন গেছেন বলে জানা যায়। মূলত এসব বিষয় কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকে আঁচ করে বিদেশে পাড়ি জমান। ঘটনার প্রবাহ চুয়াডাঙ্গাতেও এসে ঠেকে। এ জেলার নেতা-কর্মীরা কীভাবে কোথায় কখন গেলেন, সেটিও এখন মানুষের মধ্যে আলোচনার অংশ।
বিশ্বাসযোগ্য সূত্রে জানা যায়, আটকবর থেকে ফেরার পথেই চুয়াডাঙ্গার নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে যাওয়া শুরু করেন। ধীরে ধীরে একে একে তারা নিরাপদ স্থানে চলে যান। জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন আটকবর থেকে আসার খানিক পরেই একা নিজ বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। তবে তিনি কোথায় গেছেন, সেটা জানা সম্ভব হয়নি। রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটনের স্ত্রী বাড়িতে ছিলেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তিনিও বাড়ি থেকে বাইরে চলে গেছেন বলেই খবর পাওয়া গেছে। সেই বাড়ি এখন ভষ্মিভূত। এ বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা নিশ্চিত করেছেন।
খবর পাওয়া গেছে, জেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক আরেফিন আলম রঞ্জুর বাড়িতে হামলা ও আগুন দেওয়ার সময় তিনিও বাড়িতে ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, সে সময় একটি এমন কিছু যা ব্লাস্ট করা হয়েছে বা ককটেল জাতীয় কিছু ওপর থেকে ফেলে বিস্ফোরণ করা হয়। একই সময়ে তিন বা চার রাউন্ড গুলির শব্দও শোনা যায় বলে জানা গেছে। আশপাশের মানুষ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, আরেফিন আলম রঞ্জু বিকেলে যশোর বিমান বন্দরে পৌঁছেছিলেন। তবে কোথায় কে কে যাবেন বা যাবেন না সেটা জানা যায়নি।
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান, সাবেক উপ-প্রচার সম্পাদক শওকত আলী বিশ্বাস, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আলাউদ্দিন হেলা, সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল কাদের, যুবলীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম আসমান, আব্দুর রশিদ, শেখ সেলিম, টুটুল, চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মালিক খোকন, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আফজালুল হক বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক রিপন মন্ডলের কোনো খোঁজখবর পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপির ভাস্তে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার চেয়ারম্যান নঈম হাসান জোয়ার্দ্দারকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার অবস্থানের নিশ্চয়তাও পাওয়া যায়নি। জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক ও চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপুর কোনো খোঁজখবর পাওয়া যায়নি।
জেলা আওয়ামী লীগের বর্ষিয়ান নেতা, দীর্ঘকালীন সময়ের সভাপতি চারবারের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপিরও কোনো খোঁজখবর পাওয়া যায়নি। এ এক অন্য রকম পরিস্থিতি। তবে সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপির একান্তই কাছের কয়েকজনের মাধ্যমে কিছুটা তথ্য পাওয়া গেছে। জানা গেছে, আটকবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষ করেই বাড়িতে ফিরে যান তিনি। বাড়িতে সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন, তার স্ত্রী ও কন্যাও ছিলেন। নিকট আত্মীয়-স্বজন, ভাই, সকলেই যখন নিরাপদ স্থানে গেছেন, তখনও সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন বাড়িতেই ছিলেন। তারপর সাধারণ জনতার একটি উত্তেজিত অংশ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের পুরাতন বাড়িতে আগুন দেয়। সে সময় সেখান থেকে পিছনের দরজা দিয়ে তিনি তখন নতুন বাড়িতে প্রবেশ করেন। নতুন বাড়িটি তার ছোট ভাই রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটনের বাড়ির ঠিক পিছনেই। উত্তেজিত জনতা সেদিকেও ইট ছোড়া আরম্ভ করলে তখনো পিছনের নিজের নতুন বাড়িতেই ছিলেন সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলনু। তখন তিনি কিছুক্ষণের জন্য নতুন বাড়ির রান্নাঘরে অবস্থান নেন। এরপর তার নতুন বাড়িতে আগুন দেয়া হলে সে সময় তিনি পিছনের গেট দিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান বলে জানা গেছে। তবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি, তিনি কোথায় আছেন? চুয়াডাঙ্গা থেকে কোথায় গেলেন। সম্ভবত তা ভবিষ্যত বলে দেবে। তবে নিজ চোখে তিনি নিজ পৈত্রিক বাড়িতে আগুন দেয়া দেখেছেন। দেখেছেন চুয়াডাঙ্গার সাধারণ মানুষের ক্ষোভ-দুঃখ।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

কোথায় গেলেন চুয়াডাঙ্গার আ.লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা

আপলোড টাইম : ০৫:২৮:২৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ অগাস্ট ২০২৪


এ এক অন্য রকম পরিস্থিতি। সব আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের পদধারী নেতারা শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার বা পদত্যাগ করার কিছুটা আগে থেকেই আত্মগোপনে যান। কেউ কেউ দেশ ছেড়েছেন। পরিস্থিতি ভয়াবহ। চুয়াডাঙ্গাতেও আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা পালিয়েছেন। তবে কীভাবে কে কোথায় পালালেন, কেনই বা তাদের এই পরিণিতি, সেটা বোঝা দায়। এই মুহূর্তে দৈনিক সময়ের সমীকরণ-এর হাতে চুয়াডাঙ্গার নেতাদের অবস্থান নিয়ে কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, সেই পরিস্থিতিতে এরা কোথায় গেলেন, কেন গেলেন, কীভাবে গেলেন, সেটার সামান্য তথ্য এসেছে হাতে।
গতকাল ৫ই আগস্ট ছিল চুয়াডাঙ্গার স্থানীয় শহীদ দিবস। এদিন সকালে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় থেকে দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন আটকবর শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে গিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। সেখান থেকে একসাথে নেতা-কর্মীরা ফিরে আসেন। তবে এই সময়েই তারা পরিস্থিতির আঁচ পান। দুপুরের পর শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে হেলিকপ্টারে ভারত হয়ে দিল্লি থেকে লন্ডন গেছেন বলে জানা যায়। মূলত এসব বিষয় কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকে আঁচ করে বিদেশে পাড়ি জমান। ঘটনার প্রবাহ চুয়াডাঙ্গাতেও এসে ঠেকে। এ জেলার নেতা-কর্মীরা কীভাবে কোথায় কখন গেলেন, সেটিও এখন মানুষের মধ্যে আলোচনার অংশ।
বিশ্বাসযোগ্য সূত্রে জানা যায়, আটকবর থেকে ফেরার পথেই চুয়াডাঙ্গার নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে যাওয়া শুরু করেন। ধীরে ধীরে একে একে তারা নিরাপদ স্থানে চলে যান। জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন আটকবর থেকে আসার খানিক পরেই একা নিজ বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। তবে তিনি কোথায় গেছেন, সেটা জানা সম্ভব হয়নি। রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটনের স্ত্রী বাড়িতে ছিলেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তিনিও বাড়ি থেকে বাইরে চলে গেছেন বলেই খবর পাওয়া গেছে। সেই বাড়ি এখন ভষ্মিভূত। এ বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা নিশ্চিত করেছেন।
খবর পাওয়া গেছে, জেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক আরেফিন আলম রঞ্জুর বাড়িতে হামলা ও আগুন দেওয়ার সময় তিনিও বাড়িতে ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, সে সময় একটি এমন কিছু যা ব্লাস্ট করা হয়েছে বা ককটেল জাতীয় কিছু ওপর থেকে ফেলে বিস্ফোরণ করা হয়। একই সময়ে তিন বা চার রাউন্ড গুলির শব্দও শোনা যায় বলে জানা গেছে। আশপাশের মানুষ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, আরেফিন আলম রঞ্জু বিকেলে যশোর বিমান বন্দরে পৌঁছেছিলেন। তবে কোথায় কে কে যাবেন বা যাবেন না সেটা জানা যায়নি।
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান, সাবেক উপ-প্রচার সম্পাদক শওকত আলী বিশ্বাস, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আলাউদ্দিন হেলা, সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল কাদের, যুবলীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম আসমান, আব্দুর রশিদ, শেখ সেলিম, টুটুল, চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মালিক খোকন, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আফজালুল হক বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক রিপন মন্ডলের কোনো খোঁজখবর পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপির ভাস্তে জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার চেয়ারম্যান নঈম হাসান জোয়ার্দ্দারকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার অবস্থানের নিশ্চয়তাও পাওয়া যায়নি। জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক আহ্বায়ক ও চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপুর কোনো খোঁজখবর পাওয়া যায়নি।
জেলা আওয়ামী লীগের বর্ষিয়ান নেতা, দীর্ঘকালীন সময়ের সভাপতি চারবারের সদ্য সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপিরও কোনো খোঁজখবর পাওয়া যায়নি। এ এক অন্য রকম পরিস্থিতি। তবে সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন এমপির একান্তই কাছের কয়েকজনের মাধ্যমে কিছুটা তথ্য পাওয়া গেছে। জানা গেছে, আটকবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষ করেই বাড়িতে ফিরে যান তিনি। বাড়িতে সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন, তার স্ত্রী ও কন্যাও ছিলেন। নিকট আত্মীয়-স্বজন, ভাই, সকলেই যখন নিরাপদ স্থানে গেছেন, তখনও সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন বাড়িতেই ছিলেন। তারপর সাধারণ জনতার একটি উত্তেজিত অংশ সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের পুরাতন বাড়িতে আগুন দেয়। সে সময় সেখান থেকে পিছনের দরজা দিয়ে তিনি তখন নতুন বাড়িতে প্রবেশ করেন। নতুন বাড়িটি তার ছোট ভাই রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটনের বাড়ির ঠিক পিছনেই। উত্তেজিত জনতা সেদিকেও ইট ছোড়া আরম্ভ করলে তখনো পিছনের নিজের নতুন বাড়িতেই ছিলেন সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলনু। তখন তিনি কিছুক্ষণের জন্য নতুন বাড়ির রান্নাঘরে অবস্থান নেন। এরপর তার নতুন বাড়িতে আগুন দেয়া হলে সে সময় তিনি পিছনের গেট দিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান বলে জানা গেছে। তবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি, তিনি কোথায় আছেন? চুয়াডাঙ্গা থেকে কোথায় গেলেন। সম্ভবত তা ভবিষ্যত বলে দেবে। তবে নিজ চোখে তিনি নিজ পৈত্রিক বাড়িতে আগুন দেয়া দেখেছেন। দেখেছেন চুয়াডাঙ্গার সাধারণ মানুষের ক্ষোভ-দুঃখ।