ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাট জাগ দেওয়া নিয়ে বিপাকে চাষিরা

অনাবৃষ্টিতে মেহেরপুরে অধিকাংশ খাল-বিল এখনো শুকনো

প্রতিবেদক, গাংনী:
  • আপলোড টাইম : ০৯:৩১:০৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ জুলাই ২০২৪
  • / ৩৬ বার পড়া হয়েছে

মেহেরপুরে তীব্র তাপদাহ ও প্রয়োজনীয় পানির অভাবে পাট জাগ (পচন) দেওয়া নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাষিরা। এমনিতেই পাটে তিড়িং পোকার আক্রমণ ও মাঝারি থেকে তীব্র তাপদাহের কারণে কিছু জমির পাট মরে ও শুকিয়ে গেছে। তার ওপর বৃষ্টির দেখা না মেলাতে চরম বিপাকে রয়েছেন চাষিরা। আষাঢ় পেরিয়ে শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝিতেও কাক্সিক্ষত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় চাষিদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে খাল-বিল, মাঠ-ঘাট ও ডোবা পানিতে ভরপুর থাকার কথা থাকলেও অধিকাংশ খাল-বিল এখন শুকনো।
জেলার আকাশ জুড়ে বেশ কয়েকদিন ধরে কালো মেঘের ঘনঘটা দেখা দিলেও হলেও মাঝে মধ্যে ২/৩ মিনিটের বেশি বৃষ্টিপাত হতে দেখা যায়নি। দু-একটি এলাকায় হালকা বৃষ্টি হলেও জলাশয়ে যে পানি রয়েছে তা অপ্রতুল এবং পাট পচানোর জন্য যথেষ্ট নয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শ্রাবণের শুরু থেকেই মেহেরপুর সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পাট কর্তন শুরু হয়েছে। তীব্র তাপদাহ থেকে পাট রক্ষার্থে যারা পাট কর্তন করেছেন তাদের কেউ কেউ মাঠেই পানির অভাবে খড় ও আবর্জনা দিয়ে পাট ঢেকে রেখেছেন। কেউ কেউ ভারী বৃষ্টিপাতের আশায় পাট কর্তন করে জমির পাশে, রাস্তার পাশে কিংবা খাল-বিল ও ডোবার পাশে স্তূপ করে রেখেছেন। অনেকে আবার খাল-বিল, জলাশয় কিংবা জমিতে অল্প গর্ত খুঁড়ে পাট সাজিয়ে উপরে মাটি বা মাটি ভর্তি বস্তা চাপিয়ে পাট পচানোর জন্য শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে পানি দিচ্ছেন।
জেলার নওপাড়া গ্রামের পাট চাষি আব্দুস সালাম জানান, বৃষ্টি না হওয়ায় পাট কর্তন করে স্থানীয় বিলে জাগ দেওয়া হচ্ছে। শ্যালো ইঞ্জিনে সেচ কাজে গুনতে হচ্ছে বিঘা প্রতি জমির পাটে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২’শ টাকা। এছাড়াও পাট কর্তন, পরিবহন ও ডোবানোতে যে খরচ হবে তাতে করে পাটে লোকসান গুনতে হবে। মাইলমারী গ্রামের কবির হোসেন, মোফাজ্জেল ও আব্বাস আলী জানান, পদ্ম বিলে প্রতি বছর পানি ভরপুর থাকলেও এবছর অনাবৃষ্টিতে ছেলেরা ফুটবল খেলছে বিলে। বাধ্য হয়ে খাদ করে পাট পচন দিলেও প্রতিদিন সেচ দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
করমদী গ্রামের শফিকুল ইসলাম জানান, অনাবৃষ্টিতে পাট কাটা হয়নি। মাঠের পাট মাঠেই পুড়ছে। এমন অবস্থায় সময় হলেও জাগ দেওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় পাট কাটা হয়নি। লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের কয়েকজন পাট চাষি জানান, মাঠে খাদ করে রাখলেও বৃষ্টির আশা ছেড়ে দিয়ে পুকুরে এনে জাগ দিয়েছি। গুনতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ। পাটে যে খরচ হয়েছে তা পুশিয়ে দিতে মূল্য বৃদ্ধির দাবি তিনাদের।
হিন্দা গ্রামের কয়েকজন চাষি জানান, প্রচণ্ড রোদ ও অনাবৃষ্টিতে পাট পুড়ে মারা যাচ্ছিল। একারণে খালে এনে জাগ দেওয়া হয়েছে। শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে সেচের ব্যবস্থা চলছে। প্রথম থেকে শেষ অবধি পাটে খরচ প্রায় ২০ হাজার টাকা কিন্তু বিক্রি করে জমবে ১৫/১৬ হাজার টাকা। নিশ্চিত লাভ জেনেও প্রকৃতির বিরূপ আচরণে কৃষকের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাচ্ছে।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, চলতি মৌসুমে জেলার সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলায় ১৬ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। এতে ২ লাখ ৪০ হাজার ৬৩৬ বেল পাট উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

পাট জাগ দেওয়া নিয়ে বিপাকে চাষিরা

অনাবৃষ্টিতে মেহেরপুরে অধিকাংশ খাল-বিল এখনো শুকনো

আপলোড টাইম : ০৯:৩১:০৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ জুলাই ২০২৪

মেহেরপুরে তীব্র তাপদাহ ও প্রয়োজনীয় পানির অভাবে পাট জাগ (পচন) দেওয়া নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাষিরা। এমনিতেই পাটে তিড়িং পোকার আক্রমণ ও মাঝারি থেকে তীব্র তাপদাহের কারণে কিছু জমির পাট মরে ও শুকিয়ে গেছে। তার ওপর বৃষ্টির দেখা না মেলাতে চরম বিপাকে রয়েছেন চাষিরা। আষাঢ় পেরিয়ে শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝিতেও কাক্সিক্ষত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় চাষিদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে খাল-বিল, মাঠ-ঘাট ও ডোবা পানিতে ভরপুর থাকার কথা থাকলেও অধিকাংশ খাল-বিল এখন শুকনো।
জেলার আকাশ জুড়ে বেশ কয়েকদিন ধরে কালো মেঘের ঘনঘটা দেখা দিলেও হলেও মাঝে মধ্যে ২/৩ মিনিটের বেশি বৃষ্টিপাত হতে দেখা যায়নি। দু-একটি এলাকায় হালকা বৃষ্টি হলেও জলাশয়ে যে পানি রয়েছে তা অপ্রতুল এবং পাট পচানোর জন্য যথেষ্ট নয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শ্রাবণের শুরু থেকেই মেহেরপুর সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পাট কর্তন শুরু হয়েছে। তীব্র তাপদাহ থেকে পাট রক্ষার্থে যারা পাট কর্তন করেছেন তাদের কেউ কেউ মাঠেই পানির অভাবে খড় ও আবর্জনা দিয়ে পাট ঢেকে রেখেছেন। কেউ কেউ ভারী বৃষ্টিপাতের আশায় পাট কর্তন করে জমির পাশে, রাস্তার পাশে কিংবা খাল-বিল ও ডোবার পাশে স্তূপ করে রেখেছেন। অনেকে আবার খাল-বিল, জলাশয় কিংবা জমিতে অল্প গর্ত খুঁড়ে পাট সাজিয়ে উপরে মাটি বা মাটি ভর্তি বস্তা চাপিয়ে পাট পচানোর জন্য শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে পানি দিচ্ছেন।
জেলার নওপাড়া গ্রামের পাট চাষি আব্দুস সালাম জানান, বৃষ্টি না হওয়ায় পাট কর্তন করে স্থানীয় বিলে জাগ দেওয়া হচ্ছে। শ্যালো ইঞ্জিনে সেচ কাজে গুনতে হচ্ছে বিঘা প্রতি জমির পাটে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২’শ টাকা। এছাড়াও পাট কর্তন, পরিবহন ও ডোবানোতে যে খরচ হবে তাতে করে পাটে লোকসান গুনতে হবে। মাইলমারী গ্রামের কবির হোসেন, মোফাজ্জেল ও আব্বাস আলী জানান, পদ্ম বিলে প্রতি বছর পানি ভরপুর থাকলেও এবছর অনাবৃষ্টিতে ছেলেরা ফুটবল খেলছে বিলে। বাধ্য হয়ে খাদ করে পাট পচন দিলেও প্রতিদিন সেচ দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
করমদী গ্রামের শফিকুল ইসলাম জানান, অনাবৃষ্টিতে পাট কাটা হয়নি। মাঠের পাট মাঠেই পুড়ছে। এমন অবস্থায় সময় হলেও জাগ দেওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় পাট কাটা হয়নি। লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামের কয়েকজন পাট চাষি জানান, মাঠে খাদ করে রাখলেও বৃষ্টির আশা ছেড়ে দিয়ে পুকুরে এনে জাগ দিয়েছি। গুনতে হচ্ছে বাড়তি অর্থ। পাটে যে খরচ হয়েছে তা পুশিয়ে দিতে মূল্য বৃদ্ধির দাবি তিনাদের।
হিন্দা গ্রামের কয়েকজন চাষি জানান, প্রচণ্ড রোদ ও অনাবৃষ্টিতে পাট পুড়ে মারা যাচ্ছিল। একারণে খালে এনে জাগ দেওয়া হয়েছে। শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে সেচের ব্যবস্থা চলছে। প্রথম থেকে শেষ অবধি পাটে খরচ প্রায় ২০ হাজার টাকা কিন্তু বিক্রি করে জমবে ১৫/১৬ হাজার টাকা। নিশ্চিত লাভ জেনেও প্রকৃতির বিরূপ আচরণে কৃষকের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাচ্ছে।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, চলতি মৌসুমে জেলার সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলায় ১৬ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। এতে ২ লাখ ৪০ হাজার ৬৩৬ বেল পাট উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।