ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
জীবননগরের কৃষ্ণপুরে ত্রিফসলি জমিতে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণে তদন্ত দল

কাফন ও বিষের বোতল নিয়ে কৃষকদের মানববন্ধন-বিক্ষোভ

তোপের মুখে তদন্ত কমিটি, দিনভর উত্তেজনা, এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ০৮:৪৬:১১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জুলাই ২০২৪
  • / ৫৫ বার পড়া হয়েছে

oplus_2

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর মাঠে তিন ফসলি জমিতে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ প্রকল্পের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে স্থানীয়রা। এসময় তারা কাফনের কাপড় পরিধান করে ও বিষের বোতল হাতে নিয়ে প্রতিবাদ জানান। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনে সরেজমিনে তদন্তে আসে ৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। এসময় গ্রামের কৃষক-কৃষাণীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন ও এ প্রকল্প বাতিলের দাবি জানান। কৃষকদের বিক্ষোভে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বিশৃঙ্খলা ও যেকোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এসময় হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জীবননগর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর মাঠের জমি খাদ্য উৎপাদনে একটি কৃষি সমৃদ্ধ মাঠ। এ মাঠের জমিতে সব ধরনের ফসল ফলানো হয়। বর্তমান মাঠটি শষ্য-শ্যামল সবুজে ভরা একটি ফসলি মাঠ। কিন্তু কয়েক বছর আগে ওই গ্রামের ১৮০ একর জমিতে ৫০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সিঙ্গাপুরভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ‘সাইক্লেক্ট এনার্জি পিটিই লিমিটেড’। ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল জমি বিক্রির জন্য মালিকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। প্রকল্পের জন্য যে জমি নির্বাচন করা হয়েছে, তা সবই তিন ফসলি।

সেখানে প্রকল্প স্থাপন করলে কৃষির ওপর নির্ভরশীল গ্রামের ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বেন। পুরো গ্রামে জমির পরিমাণ ৬০০ একর। যার মধ্যে ৬০ শতাংশই কৃষিজমি। এছাড়া ২০ শতাংশ বসতভিটা ও বাকি ২০ শতাংশ বাগান ও অন্যান্য স্থাপনা। মাঠের জমিতে সব ধরনের ধান, ডাল, পাট, গম, আলু, ভুট্টা, বাদাম, পেয়ারা, তিল এবং বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি চাষ করা হয়।

ওই সৌর বিদ্যুৎ স্থাপনের বিষয়ে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ভূমি মন্ত্রণালয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে কৃষ্ণপুর গ্রামে তদন্তে আসেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মোছাম্মাৎ মমতাজ বেগম, বিদ্যুৎ বিভাগের (নবায়নযোগ্য জ¦ালানি-১) উপ-সচিব ও তদন্ত কমিটির সদস্য আলী আফরোজ, তদন্ত কমিটির সদস্য ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চুয়াডাঙ্গার উপ-পরিচালক বিভাষ চন্দ্র সাহা ও চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মিজানুর রহমান।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে কৃষ্ণপুর গ্রামে দেখা যায়, সকাল থেকে গ্রামের নারী-পুরুষ একত্র হয়ে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে গ্রামের প্রবেশমুখে মানববন্ধন করছেন। উত্তেজনাকর পরিস্থিতি এড়াতে ওই এলাকার মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশের কড়া নিরাপত্তায় তদন্ত কমিটি দল গ্রামে পৌঁছালে গ্রামবাসী বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। পরে তদন্ত দল ওই গ্রামের মাঠ ঘুরে দেখেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন জীবননগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হাসিনা মমতাজ, জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম জাবীদ হাসানসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

স্থানীয় কৃষকদের তোপের মুখে তড়িঘড়ি করে স্থান ত্যাগ করে তদন্ত দল। যাওয়ার আগে বিক্ষুব্ধ কৃষকদের শান্ত করে ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মোছাম্মাৎ মমতাজ বেগম বলেন, ‘এই ধরনের জমিতে কী ধরনের ফসল হয়, এলাকাবাসী কী চায়, আমাদেরকে এটা তদন্ত করার জন্য পাঠিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। আমরা জমি দেখলাম, এখানকার কৃষি অফিসারের কাছে তথ্য নিয়েছি, আপনাদের কথাও আমরা শুনলাম। সব বিষয় বিবেচনা করে আমরা একটি প্রতিবেদন দেব।’ এসময় গণমাধ্যম কর্মীরা তাঁকে প্রশ্ন করলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।

এদিকে স্থানীয় কৃষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা কৃষিকাজ করে খাই। আমাদের মাঠে বছরে তিনটির অধিক ফসল চাষ হয়। আমাদের মাঠে ভুট্টা, ধান, পাট, আলু, পেয়ারা, বাদাম, সব ধরনের ফসল উৎপাদন হয়। আমরা জীবন দিতে রাজি আছি, কিন্তু আমাদের মাঠ দিতে রাজি নাই।’ বিক্ষোভ প্রদর্শনকারী একজন নারী বলেন, ‘আমাদের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দরকার নেই। আমাদের বেলে মাটি চাই, আমাদের বেলে মাটিই ভালো। আমরা কোনো জমি দেব না। আমাদের কোনো টাকার দরকার নেই, ও টাকা কত দিন যাবে? দুদিন যাবে।’

এক যুবক বলেন, ‘আমরা কখনো এই মাঠ ছাড়তে চাই না। আমাদের রক্তের বিনিময়ে হলেও এ মাঠ আমরা ঠেকাবো। এখানে বারবার দালাল আসছে, ভূমি অফিসার আসছে। তারা রিপোর্ট দিচ্ছে এটা অনাবাদি জমি। আমাদের এটা চার ফসলি জমি। আমরা কখনোই চাই না আমাদের জমি ভূমিদস্যুদের হাদে দিতে।’ আরেক কৃষক বলেন, ‘আমরা জমি দেব না, দেব না। আমরা চাষ করে খাই, চাষী লোক। আমরা জমি দেব না। এতে মেরে ফেলে দেয় দেবে, গুলি করে করবে। এমপি সাহেব আসলেও আমরা জমি দেব না।’

oplus_2

গ্রামের কৃষকদের নেতৃত্ব দেয়া কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম জানান, ‘২০১৯ সাল থেকে একটি বিদেশি সোলার কোম্পানি আমাদের কৃষ্ণপুর গ্রামের মাঠ নেয়ার জন্য অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে। তারই ফলশ্রুতিতে তারা বারবার এই মাঠে হানা দিচ্ছে, গ্রামবাসীর নামে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। গ্রামের ৫ হাজার মানুষ এই মাঠকে কেন্দ্র করে এক যন্ত্রণার মধ্যে আছে। এর আগে আমাদের চুয়াডাঙ্গার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক একটি প্রদিবেদন জমা দিয়েছেন যে এটি একটি ত্রিফসলি জমি। আমাদের জেলা প্রশাসক মহোদয় ভূমি ও বিদ্যুৎ জ¦ালানি মন্ত্রণালয় বরাবর একটি প্রতিবেদন দিয়েছেন, এটা একটি ত্রিফসলি জমি। এটি কোনোভাবেই অনাবাদি খাতে ব্যবহার করা যাবে না। এই প্রতিবেদন দাখিলের পরপরই ভূমি মন্ত্রণালয় একটি প্রতিবেদন দিয়েছে যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি নির্দেশনা আছে, কোনো দুই ফসলি বা তিন ফসলি জমি অনাবাদি খাতে ব্যবহার করা যাবে না।

সেখানে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের কাছে একটি চিঠি দিয়ে প্রকল্পটি বন্ধ করার জন্য বলা হয়েছে। এরপরও গ্রামের প্রায় ২০০ কৃষকের নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। প্রতি মাসে তারা হাঁস-মুরগী, গরু-ছাগল বিক্রি করে কোর্টে হাজিরা দেয়।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের স্থানীয় সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর এই মাঠটি পুনরাছ তদন্তের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় বরাবর একটি ডিও লেটার দিয়েছেন। সেই আলোকেই আজকে চার সদস্যের একটি তদন্ত এসেছে। আমরা গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে তাদেরকে বলেছি, আপনারা আমাদের বাস্তব অবস্থাটা দেখুন। কৃষিকাজের ওপর নির্ভর করে গ্রামবাসী জীবিকা নির্বাহ করে। এসব বিষয়ে বিবেচনা করে আপনারা সুষ্ঠু একটি তদন্ত করে দিয়ে যান।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

জীবননগরের কৃষ্ণপুরে ত্রিফসলি জমিতে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণে তদন্ত দল

কাফন ও বিষের বোতল নিয়ে কৃষকদের মানববন্ধন-বিক্ষোভ

তোপের মুখে তদন্ত কমিটি, দিনভর উত্তেজনা, এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন

আপলোড টাইম : ০৮:৪৬:১১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জুলাই ২০২৪

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর মাঠে তিন ফসলি জমিতে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ প্রকল্পের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে স্থানীয়রা। এসময় তারা কাফনের কাপড় পরিধান করে ও বিষের বোতল হাতে নিয়ে প্রতিবাদ জানান। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনে সরেজমিনে তদন্তে আসে ৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। এসময় গ্রামের কৃষক-কৃষাণীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন ও এ প্রকল্প বাতিলের দাবি জানান। কৃষকদের বিক্ষোভে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বিশৃঙ্খলা ও যেকোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এসময় হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় পুলিশ।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, জীবননগর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর মাঠের জমি খাদ্য উৎপাদনে একটি কৃষি সমৃদ্ধ মাঠ। এ মাঠের জমিতে সব ধরনের ফসল ফলানো হয়। বর্তমান মাঠটি শষ্য-শ্যামল সবুজে ভরা একটি ফসলি মাঠ। কিন্তু কয়েক বছর আগে ওই গ্রামের ১৮০ একর জমিতে ৫০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের উদ্যোগ নেয় সিঙ্গাপুরভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ‘সাইক্লেক্ট এনার্জি পিটিই লিমিটেড’। ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল জমি বিক্রির জন্য মালিকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। প্রকল্পের জন্য যে জমি নির্বাচন করা হয়েছে, তা সবই তিন ফসলি।

সেখানে প্রকল্প স্থাপন করলে কৃষির ওপর নির্ভরশীল গ্রামের ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বেন। পুরো গ্রামে জমির পরিমাণ ৬০০ একর। যার মধ্যে ৬০ শতাংশই কৃষিজমি। এছাড়া ২০ শতাংশ বসতভিটা ও বাকি ২০ শতাংশ বাগান ও অন্যান্য স্থাপনা। মাঠের জমিতে সব ধরনের ধান, ডাল, পাট, গম, আলু, ভুট্টা, বাদাম, পেয়ারা, তিল এবং বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি চাষ করা হয়।

ওই সৌর বিদ্যুৎ স্থাপনের বিষয়ে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ভূমি মন্ত্রণালয়। গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে কৃষ্ণপুর গ্রামে তদন্তে আসেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মোছাম্মাৎ মমতাজ বেগম, বিদ্যুৎ বিভাগের (নবায়নযোগ্য জ¦ালানি-১) উপ-সচিব ও তদন্ত কমিটির সদস্য আলী আফরোজ, তদন্ত কমিটির সদস্য ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চুয়াডাঙ্গার উপ-পরিচালক বিভাষ চন্দ্র সাহা ও চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মিজানুর রহমান।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে কৃষ্ণপুর গ্রামে দেখা যায়, সকাল থেকে গ্রামের নারী-পুরুষ একত্র হয়ে ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে গ্রামের প্রবেশমুখে মানববন্ধন করছেন। উত্তেজনাকর পরিস্থিতি এড়াতে ওই এলাকার মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশের কড়া নিরাপত্তায় তদন্ত কমিটি দল গ্রামে পৌঁছালে গ্রামবাসী বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। পরে তদন্ত দল ওই গ্রামের মাঠ ঘুরে দেখেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন জীবননগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হাসিনা মমতাজ, জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম জাবীদ হাসানসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

স্থানীয় কৃষকদের তোপের মুখে তড়িঘড়ি করে স্থান ত্যাগ করে তদন্ত দল। যাওয়ার আগে বিক্ষুব্ধ কৃষকদের শান্ত করে ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মোছাম্মাৎ মমতাজ বেগম বলেন, ‘এই ধরনের জমিতে কী ধরনের ফসল হয়, এলাকাবাসী কী চায়, আমাদেরকে এটা তদন্ত করার জন্য পাঠিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। আমরা জমি দেখলাম, এখানকার কৃষি অফিসারের কাছে তথ্য নিয়েছি, আপনাদের কথাও আমরা শুনলাম। সব বিষয় বিবেচনা করে আমরা একটি প্রতিবেদন দেব।’ এসময় গণমাধ্যম কর্মীরা তাঁকে প্রশ্ন করলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।

এদিকে স্থানীয় কৃষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা কৃষিকাজ করে খাই। আমাদের মাঠে বছরে তিনটির অধিক ফসল চাষ হয়। আমাদের মাঠে ভুট্টা, ধান, পাট, আলু, পেয়ারা, বাদাম, সব ধরনের ফসল উৎপাদন হয়। আমরা জীবন দিতে রাজি আছি, কিন্তু আমাদের মাঠ দিতে রাজি নাই।’ বিক্ষোভ প্রদর্শনকারী একজন নারী বলেন, ‘আমাদের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দরকার নেই। আমাদের বেলে মাটি চাই, আমাদের বেলে মাটিই ভালো। আমরা কোনো জমি দেব না। আমাদের কোনো টাকার দরকার নেই, ও টাকা কত দিন যাবে? দুদিন যাবে।’

এক যুবক বলেন, ‘আমরা কখনো এই মাঠ ছাড়তে চাই না। আমাদের রক্তের বিনিময়ে হলেও এ মাঠ আমরা ঠেকাবো। এখানে বারবার দালাল আসছে, ভূমি অফিসার আসছে। তারা রিপোর্ট দিচ্ছে এটা অনাবাদি জমি। আমাদের এটা চার ফসলি জমি। আমরা কখনোই চাই না আমাদের জমি ভূমিদস্যুদের হাদে দিতে।’ আরেক কৃষক বলেন, ‘আমরা জমি দেব না, দেব না। আমরা চাষ করে খাই, চাষী লোক। আমরা জমি দেব না। এতে মেরে ফেলে দেয় দেবে, গুলি করে করবে। এমপি সাহেব আসলেও আমরা জমি দেব না।’

oplus_2

গ্রামের কৃষকদের নেতৃত্ব দেয়া কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম জানান, ‘২০১৯ সাল থেকে একটি বিদেশি সোলার কোম্পানি আমাদের কৃষ্ণপুর গ্রামের মাঠ নেয়ার জন্য অপচেষ্টা চালিয়ে আসছে। তারই ফলশ্রুতিতে তারা বারবার এই মাঠে হানা দিচ্ছে, গ্রামবাসীর নামে বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। গ্রামের ৫ হাজার মানুষ এই মাঠকে কেন্দ্র করে এক যন্ত্রণার মধ্যে আছে। এর আগে আমাদের চুয়াডাঙ্গার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক একটি প্রদিবেদন জমা দিয়েছেন যে এটি একটি ত্রিফসলি জমি। আমাদের জেলা প্রশাসক মহোদয় ভূমি ও বিদ্যুৎ জ¦ালানি মন্ত্রণালয় বরাবর একটি প্রতিবেদন দিয়েছেন, এটা একটি ত্রিফসলি জমি। এটি কোনোভাবেই অনাবাদি খাতে ব্যবহার করা যাবে না। এই প্রতিবেদন দাখিলের পরপরই ভূমি মন্ত্রণালয় একটি প্রতিবেদন দিয়েছে যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি নির্দেশনা আছে, কোনো দুই ফসলি বা তিন ফসলি জমি অনাবাদি খাতে ব্যবহার করা যাবে না।

সেখানে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের কাছে একটি চিঠি দিয়ে প্রকল্পটি বন্ধ করার জন্য বলা হয়েছে। এরপরও গ্রামের প্রায় ২০০ কৃষকের নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। প্রতি মাসে তারা হাঁস-মুরগী, গরু-ছাগল বিক্রি করে কোর্টে হাজিরা দেয়।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের স্থানীয় সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর এই মাঠটি পুনরাছ তদন্তের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় বরাবর একটি ডিও লেটার দিয়েছেন। সেই আলোকেই আজকে চার সদস্যের একটি তদন্ত এসেছে। আমরা গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে তাদেরকে বলেছি, আপনারা আমাদের বাস্তব অবস্থাটা দেখুন। কৃষিকাজের ওপর নির্ভর করে গ্রামবাসী জীবিকা নির্বাহ করে। এসব বিষয়ে বিবেচনা করে আপনারা সুষ্ঠু একটি তদন্ত করে দিয়ে যান।’