ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আলমডাঙ্গায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মঈনুদ্দিন পারভেজের ইন্তেকাল

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন, সর্বমহলে শোক

আলমডাঙ্গা অফিস:
  • আপলোড টাইম : ১১:৫৬:২৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জুলাই ২০২৪
  • / ৩৯ বার পড়া হয়েছে

আলমডাঙ্গা উপজেলার কালিদাসপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মঈনুদ্দিন পারভেজ ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন। গতকাল সোমবার বেলা তিনটার দিকে আলমডাঙ্গা পৌর শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি দুই ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। এদিকে, গতকাল বিকেলে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধাকে কবরস্থ করা হয়। রাষ্ট্রের পক্ষে সালাম গ্রহণ করেন আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) স্নিগ্ধা দাশ। আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ গণি মিয়ার নেতৃত্বে গার্ড অব অনার প্রদান করে থানা পুলিশের একটি চৌকশ দল। এসময় জাতীয় পতাকা দিয়ে আচ্ছাদিত মরহুমের মরদেহে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর।

জানা গেছে, মঈনুদ্দিন পারভেজ তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মুজিব বাহিনীর কমান্ডো হিসেবে ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সে সময় তিনি ছিলেন একটি দলের গ্রুপ কমান্ডার। মুজিব বাহিনী কমান্ডার কাজী কামাল ও মারফতের অধীনে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যুদ্ধে অংশ নেন এই মুক্তিযোদ্ধা। ১০৭০ সালে চট্টগ্রামে শ্রমিক বিদ্রোহ হলে তাদের গুলি চালানোর প্রতিবাদে আলমডাঙ্গায় ছাত্রলীগের উদ্যোগে একটি মিছিল থানার সামনে দিয়ে যাবার সময় মইনদ্দিন পারভেজ, আব্দুল লতিফসহ আরও একজন ছাত্র থানার ভেতর ঢুকে পাকিস্তানি পতাকা পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ বলেন, পতাকা পোড়ানো হয়নি, নামিয়ে দিয়েছিলাম বলে তৎকালীন পুলিশ আমাদের তিনজনকে ধরে চুয়াডাঙ্গা কোর্টে চালান করে। আমরা জেলও খেটেছিলাম। যে কারণে আলমডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক মেয়র মীর মহিউদ্দিন বীর মুক্তিযোদ্ধা মইনদ্দীন পারভেজকে অগ্নিসেনা উপাধীসহ ক্রেস্ট প্রদান করেছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন তিনি। এলাকায় সাহসী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ আরও বলেন, ১৯৭১ সালে আলমডাঙ্গায় শহিদ মিনার তৈরি হলে প্রথম শহিদ দিবস পালনের প্রস্তুতি নেওয়া হলে প্রভাতফেরি করতে একটি মাইকের প্রয়োজন ছিল। আলমডাঙ্গার একমাত্র মাইকটি একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে ভাড়ায় দেয়া ছিল। মাইকটি আনতে মইনদ্দিন পারভেজকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার হামিদুল ইসলাম আজমকে সঙ্গে নিয়ে একটি ঘোড়ার গাড়িযোগে মাইক আনতে ছুটে যান। দ্রুত সময়ের মঙ্গে তিনি মাইক নিয়ে ফিরে আসেন এবং প্রভাতফেরিতে অংশ নেন। এছাড়া এলাকার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদান অতুলনীয়।

এদিকে, আলমডাঙ্গা উপজেলার কালিদাশপুর ইউনিয়নের কৃতী সন্তান ও কালিদাসপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মঈনুদ্দিন পারভেজের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। বীর মুক্তিযোদ্ধা মঈনুদ্দিন ব্যক্তি জীবনে অত্যন্ত স্বাধীনচেতা এবং সদালাপী মানুষ ছিলেন। ছিপছিপে একহারা গড়নের শক্ত সমর্থ মঈনুদ্দিন পারভেজ আলমডাঙ্গার একজন বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। তাঁর কর্মজীবন ছিল বৈচিত্র্যময়। স্বাধীনতার পরে তিনি জাসদের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। পরে বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে আশির দশক থেকে কাঠের ব্যবসা শুরু করেন। এরপর তিনি কালিদাসপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তাঁর জানাজা ও দাফনকার্যে দল-মত নির্বিশেষে শত শত মুসল্লি অংশ নেন।

এদিকে, বীর মুক্তিযোদ্ধা মঈনুদ্দিন পারভেজের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্নিগ্ধা দাস ‘ইউএনও আলমডাঙ্গা’ ফেসবুক প্রোফাইলে একটি আবেগঘন পোস্ট করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘কিছু মৃত্যু মেনে নেয়া যায় না। আমি কখনোই ভাবতে পারিনি আলমডাঙ্গায় থাকাকালীন ৭০-এর অগ্নিসেনা বীর মুক্তিযোদ্ধা মঈনুদ্দীন পারভেজ-এঁর মৃত্যুতে গার্ড অব অনার প্রদান করতে হবে। এত প্রাণোচ্ছ্বল, সাহসী আর স্পষ্টভাষী প্রশাসনবান্ধব মানুষ আজকাল খুব কমই দেখা যায়।’ তিনি আরও লিখিছেন, ‘যখনই তাঁর সঙ্গে দেখা হতো, তিনি বলতেন, ‘কখন কী হয় বলা যায় না, দোয়া কইরেন।’ তাঁর মৃত্যুতে আলমডাঙ্গা উপজেলা প্রশাসন গভীরভাবে শোকাহত।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

আলমডাঙ্গায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মঈনুদ্দিন পারভেজের ইন্তেকাল

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন, সর্বমহলে শোক

আপলোড টাইম : ১১:৫৬:২৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জুলাই ২০২৪

আলমডাঙ্গা উপজেলার কালিদাসপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মঈনুদ্দিন পারভেজ ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন। গতকাল সোমবার বেলা তিনটার দিকে আলমডাঙ্গা পৌর শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি দুই ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। এদিকে, গতকাল বিকেলে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীর মুক্তিযোদ্ধাকে কবরস্থ করা হয়। রাষ্ট্রের পক্ষে সালাম গ্রহণ করেন আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) স্নিগ্ধা দাশ। আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ গণি মিয়ার নেতৃত্বে গার্ড অব অনার প্রদান করে থানা পুলিশের একটি চৌকশ দল। এসময় জাতীয় পতাকা দিয়ে আচ্ছাদিত মরহুমের মরদেহে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর।

জানা গেছে, মঈনুদ্দিন পারভেজ তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মুজিব বাহিনীর কমান্ডো হিসেবে ট্রেনিং নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সে সময় তিনি ছিলেন একটি দলের গ্রুপ কমান্ডার। মুজিব বাহিনী কমান্ডার কাজী কামাল ও মারফতের অধীনে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যুদ্ধে অংশ নেন এই মুক্তিযোদ্ধা। ১০৭০ সালে চট্টগ্রামে শ্রমিক বিদ্রোহ হলে তাদের গুলি চালানোর প্রতিবাদে আলমডাঙ্গায় ছাত্রলীগের উদ্যোগে একটি মিছিল থানার সামনে দিয়ে যাবার সময় মইনদ্দিন পারভেজ, আব্দুল লতিফসহ আরও একজন ছাত্র থানার ভেতর ঢুকে পাকিস্তানি পতাকা পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ বলেন, পতাকা পোড়ানো হয়নি, নামিয়ে দিয়েছিলাম বলে তৎকালীন পুলিশ আমাদের তিনজনকে ধরে চুয়াডাঙ্গা কোর্টে চালান করে। আমরা জেলও খেটেছিলাম। যে কারণে আলমডাঙ্গা পৌরসভার সাবেক মেয়র মীর মহিউদ্দিন বীর মুক্তিযোদ্ধা মইনদ্দীন পারভেজকে অগ্নিসেনা উপাধীসহ ক্রেস্ট প্রদান করেছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন তিনি। এলাকায় সাহসী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ আরও বলেন, ১৯৭১ সালে আলমডাঙ্গায় শহিদ মিনার তৈরি হলে প্রথম শহিদ দিবস পালনের প্রস্তুতি নেওয়া হলে প্রভাতফেরি করতে একটি মাইকের প্রয়োজন ছিল। আলমডাঙ্গার একমাত্র মাইকটি একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে ভাড়ায় দেয়া ছিল। মাইকটি আনতে মইনদ্দিন পারভেজকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার হামিদুল ইসলাম আজমকে সঙ্গে নিয়ে একটি ঘোড়ার গাড়িযোগে মাইক আনতে ছুটে যান। দ্রুত সময়ের মঙ্গে তিনি মাইক নিয়ে ফিরে আসেন এবং প্রভাতফেরিতে অংশ নেন। এছাড়া এলাকার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদান অতুলনীয়।

এদিকে, আলমডাঙ্গা উপজেলার কালিদাশপুর ইউনিয়নের কৃতী সন্তান ও কালিদাসপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মঈনুদ্দিন পারভেজের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। বীর মুক্তিযোদ্ধা মঈনুদ্দিন ব্যক্তি জীবনে অত্যন্ত স্বাধীনচেতা এবং সদালাপী মানুষ ছিলেন। ছিপছিপে একহারা গড়নের শক্ত সমর্থ মঈনুদ্দিন পারভেজ আলমডাঙ্গার একজন বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। তাঁর কর্মজীবন ছিল বৈচিত্র্যময়। স্বাধীনতার পরে তিনি জাসদের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। পরে বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে আশির দশক থেকে কাঠের ব্যবসা শুরু করেন। এরপর তিনি কালিদাসপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তাঁর জানাজা ও দাফনকার্যে দল-মত নির্বিশেষে শত শত মুসল্লি অংশ নেন।

এদিকে, বীর মুক্তিযোদ্ধা মঈনুদ্দিন পারভেজের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্নিগ্ধা দাস ‘ইউএনও আলমডাঙ্গা’ ফেসবুক প্রোফাইলে একটি আবেগঘন পোস্ট করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘কিছু মৃত্যু মেনে নেয়া যায় না। আমি কখনোই ভাবতে পারিনি আলমডাঙ্গায় থাকাকালীন ৭০-এর অগ্নিসেনা বীর মুক্তিযোদ্ধা মঈনুদ্দীন পারভেজ-এঁর মৃত্যুতে গার্ড অব অনার প্রদান করতে হবে। এত প্রাণোচ্ছ্বল, সাহসী আর স্পষ্টভাষী প্রশাসনবান্ধব মানুষ আজকাল খুব কমই দেখা যায়।’ তিনি আরও লিখিছেন, ‘যখনই তাঁর সঙ্গে দেখা হতো, তিনি বলতেন, ‘কখন কী হয় বলা যায় না, দোয়া কইরেন।’ তাঁর মৃত্যুতে আলমডাঙ্গা উপজেলা প্রশাসন গভীরভাবে শোকাহত।