ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জীবননগরের তেঁতুলিয়ায় সরকারি জমি দখল করে বেড়া দিয়ে মাছ চাষ

রাস্তা বন্ধ করে দেয়ায় দুই শতাধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত

সমীকরণ প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ১০:০১:৪৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ জুলাই ২০২৪
  • / ৪১ বার পড়া হয়েছে

জীবননগর উপজেলার বাঁকা ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া গ্রামবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি তেঁতুলিয়া দুবলের মাঠে ৩০০ বিঘা জমির উৎপাদিত ফসল আনার জন্য পূর্বপাড়ায় সরকারি ১৫ বিঘা খাস জমির মধ্যে মাত্র ৫ কাঠা জমির ওপর রাস্তা নির্মাণের। ইতোমধ্যে গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বাঁকা ইউপি চেয়ারম্যানের নিকট লিখিত আবেদন করেছেন।

তবে এর মধ্যে ১৫ বিঘা সরকারি খাস জমি দখলকারী তেঁতুলিয়া গ্রামের মৃত তোফাজ্জেল বিশ্বাসের ছেলে শহিদুল বিশ্বাস মাছ চাষের নামে বাঁশের বেড়া দিয়ে সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন। গ্রামবাসী প্রতিবাদ করায় তেঁতুলিয়া গ্রামের মহর আলী, আব্দুল হামিদ, আতিয়ার, সালাম মোল্লা, আতিয়ার মাস্টারসহ ১২ জনের নামে বিলের মাছ ধরে নিচ্ছে বলে কোর্টে মামলা করেছেন।

এছাড়া শহিদুল বিশ্বাসসহ তার পরিবারের লোকজন এলাকাবাসীকে বিলে না নামার জন্য নানা প্রকার হুমকি দিচ্ছেন। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুব্ধ প্রায় ২০০ কৃষক-কৃষাণী চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, যাতে করে তেঁতুলিয়া গ্রামের শহিদুল বিশ্বাসের নিকট থাকা ১৫ বিঘা সরকারি খাস জমি দখল মুক্ত করেন এবং এখান দিয়ে যাতে একটা রাস্তা হয় সেই ব্যবস্থা করেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রভাবশালী শহিদুল বিশ্বাসের দখলে থাকা ১৫ বিঘা সরকারি খাস জমিতে তিনি রাস্তার সাথেই গড়ে তুলেছেন একাধিক মাছের পুকুর ও মুরগীর ঘর। যার ফলে তার আশপাশে যে সমস্ত কৃষিজমি আছে, সেখানে রাস্তা না থাকায় এ এলাকার কৃষকদের প্রতিবছর ফসল উৎপাদন নিয়ে মহাবিপাকে পড়তে হয়। একের পর এক খাল দখলে কালভার্ট ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাসহ আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকলেও প্রবহমান খালের অস্তিত্ব প্রায় বিলীন।

ভোগান্তির শিকার কৃষক গোলাম মোস্তফা জানান, ‘প্রভাবশালী শহিদুল বিশ্বাস সরকারি জমি দখল করে মাছের ঘের করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েও কোনো লাভ হয় না। বরং ভোগান্তিতে পড়তে হয় আমাদের। সরকারি জমি দখল করে তিনি মাছচাষ করছে, আর আমরা একটু রাস্তার জন্য আবেদন করেছি, সে জন্য আবার আমাদের বিরুদ্ধে কোর্টে মিথ্যা মামলা করে হয়রানি করছে।’

স্থানীয় বাসিন্দা মখলেচ মাস্টার ও হামিদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমাদের ইউনিয়নের প্রভাবশালী শহিদুল বিশ্বাসের নেতৃত্বে কতিপয় লোক সরকারি ১৫ বিঘা জমি দখল করে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করেছে। জমির পাড় দিয়ে গেলেই তারা মামলা দিচ্ছে। শহিদুল বিশ্বাস নিজে পুকুর থেকে মাছ ধরে বিক্রি করছে আর আমাদের নামে মাছ চুরির মামলা করে পুলিশ দিয়ে বাড়িতে হুমকি-ধমকিসহ পুলিশ বাড়িতে যেয়ে গালিগালাজ করছে। একটু রাস্তার জমির জন্য ৩ শ বিঘা জমির চাষ বন্ধ রয়েছে। কৃষিজমি সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে না পারায় চাষিরা বিপাকে পড়েছেন।

কৃষক মাহাতাব মন্ডল বলেন, ‘গত একযুগ ধরে সরকারি জমি দখল করে রেখেছে। আমরা প্রশাসনের কাছে সরকারি খাস জমি অবমুক্ত করার দাবি জানাই।’ এ বিষয়ে শহিদ বিশ্বাসের ছেলের কাছে জমি সংক্রান্ত বিষয় জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। তবে তিনি বলেন, জমির বিষয়ে কোর্টে মামলা করা হয়েছে। কোর্ট যে রায় দিবে সেটা আমরা মেনে নিব।

বাঁকা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের প্রধান বলেন, ‘আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বিষয়টি জানিয়েছি। আশা করি, খুব দ্রুত এর একটা সমাধান হবে। এখানে একটা রাস্তা হলে এলাকার প্রায় ৩ শতাধিক জমির চাষ হবে।’

হাসাদহ ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, তেঁতুলিয়া গ্রামে যে জমি নিয়ে সমস্যা হচ্ছে, ওই জমির প্রকৃতি মালিক ইদ্রিস হাবিলদার। তিনি ২৩/৭/১৯৭৭ সালে একটি মামলা করে সরকারের নিকট থেকে প্রায় ৫ বিঘা খাস জমি বন্দোবস্ত গ্রহণ করেন। এরপর ওই জমি তেঁতুলিয়া গ্রামের শহিদ বিশ্বাসের নিকট বিক্রি করেন। সেই থেকে শহিদ বিশ্বাস ওই জমি দখল করে আসছে। তবে তেঁতুলিয়া গ্রামে বেশ কয়েকটি দাগে খাস জমি আছে। এ বিষয়টি আমরা সরেজমিনে তদন্ত করেছি। এখান দিয়ে একটা রাস্তার জন্য এলাকার মানুষ একটা লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। এটা আমরা আবার তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হাসিনা মমতাজ বলেন, অবৈধভাবে সরকারি জমি কেউ দখল করলে তদন্ত পূর্বক তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তেঁতুলিয়া গ্রামে জমি নিয়ে যে বিষয়টি উঠেছে, সে ব্যাপারে সরেজমিনে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

জীবননগরের তেঁতুলিয়ায় সরকারি জমি দখল করে বেড়া দিয়ে মাছ চাষ

রাস্তা বন্ধ করে দেয়ায় দুই শতাধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত

আপলোড টাইম : ১০:০১:৪৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ জুলাই ২০২৪

জীবননগর উপজেলার বাঁকা ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া গ্রামবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি তেঁতুলিয়া দুবলের মাঠে ৩০০ বিঘা জমির উৎপাদিত ফসল আনার জন্য পূর্বপাড়ায় সরকারি ১৫ বিঘা খাস জমির মধ্যে মাত্র ৫ কাঠা জমির ওপর রাস্তা নির্মাণের। ইতোমধ্যে গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও বাঁকা ইউপি চেয়ারম্যানের নিকট লিখিত আবেদন করেছেন।

তবে এর মধ্যে ১৫ বিঘা সরকারি খাস জমি দখলকারী তেঁতুলিয়া গ্রামের মৃত তোফাজ্জেল বিশ্বাসের ছেলে শহিদুল বিশ্বাস মাছ চাষের নামে বাঁশের বেড়া দিয়ে সমস্ত রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন। গ্রামবাসী প্রতিবাদ করায় তেঁতুলিয়া গ্রামের মহর আলী, আব্দুল হামিদ, আতিয়ার, সালাম মোল্লা, আতিয়ার মাস্টারসহ ১২ জনের নামে বিলের মাছ ধরে নিচ্ছে বলে কোর্টে মামলা করেছেন।

এছাড়া শহিদুল বিশ্বাসসহ তার পরিবারের লোকজন এলাকাবাসীকে বিলে না নামার জন্য নানা প্রকার হুমকি দিচ্ছেন। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুব্ধ প্রায় ২০০ কৃষক-কৃষাণী চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন, যাতে করে তেঁতুলিয়া গ্রামের শহিদুল বিশ্বাসের নিকট থাকা ১৫ বিঘা সরকারি খাস জমি দখল মুক্ত করেন এবং এখান দিয়ে যাতে একটা রাস্তা হয় সেই ব্যবস্থা করেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রভাবশালী শহিদুল বিশ্বাসের দখলে থাকা ১৫ বিঘা সরকারি খাস জমিতে তিনি রাস্তার সাথেই গড়ে তুলেছেন একাধিক মাছের পুকুর ও মুরগীর ঘর। যার ফলে তার আশপাশে যে সমস্ত কৃষিজমি আছে, সেখানে রাস্তা না থাকায় এ এলাকার কৃষকদের প্রতিবছর ফসল উৎপাদন নিয়ে মহাবিপাকে পড়তে হয়। একের পর এক খাল দখলে কালভার্ট ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাসহ আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকলেও প্রবহমান খালের অস্তিত্ব প্রায় বিলীন।

ভোগান্তির শিকার কৃষক গোলাম মোস্তফা জানান, ‘প্রভাবশালী শহিদুল বিশ্বাস সরকারি জমি দখল করে মাছের ঘের করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েও কোনো লাভ হয় না। বরং ভোগান্তিতে পড়তে হয় আমাদের। সরকারি জমি দখল করে তিনি মাছচাষ করছে, আর আমরা একটু রাস্তার জন্য আবেদন করেছি, সে জন্য আবার আমাদের বিরুদ্ধে কোর্টে মিথ্যা মামলা করে হয়রানি করছে।’

স্থানীয় বাসিন্দা মখলেচ মাস্টার ও হামিদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমাদের ইউনিয়নের প্রভাবশালী শহিদুল বিশ্বাসের নেতৃত্বে কতিপয় লোক সরকারি ১৫ বিঘা জমি দখল করে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করেছে। জমির পাড় দিয়ে গেলেই তারা মামলা দিচ্ছে। শহিদুল বিশ্বাস নিজে পুকুর থেকে মাছ ধরে বিক্রি করছে আর আমাদের নামে মাছ চুরির মামলা করে পুলিশ দিয়ে বাড়িতে হুমকি-ধমকিসহ পুলিশ বাড়িতে যেয়ে গালিগালাজ করছে। একটু রাস্তার জমির জন্য ৩ শ বিঘা জমির চাষ বন্ধ রয়েছে। কৃষিজমি সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে না পারায় চাষিরা বিপাকে পড়েছেন।

কৃষক মাহাতাব মন্ডল বলেন, ‘গত একযুগ ধরে সরকারি জমি দখল করে রেখেছে। আমরা প্রশাসনের কাছে সরকারি খাস জমি অবমুক্ত করার দাবি জানাই।’ এ বিষয়ে শহিদ বিশ্বাসের ছেলের কাছে জমি সংক্রান্ত বিষয় জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। তবে তিনি বলেন, জমির বিষয়ে কোর্টে মামলা করা হয়েছে। কোর্ট যে রায় দিবে সেটা আমরা মেনে নিব।

বাঁকা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের প্রধান বলেন, ‘আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বিষয়টি জানিয়েছি। আশা করি, খুব দ্রুত এর একটা সমাধান হবে। এখানে একটা রাস্তা হলে এলাকার প্রায় ৩ শতাধিক জমির চাষ হবে।’

হাসাদহ ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, তেঁতুলিয়া গ্রামে যে জমি নিয়ে সমস্যা হচ্ছে, ওই জমির প্রকৃতি মালিক ইদ্রিস হাবিলদার। তিনি ২৩/৭/১৯৭৭ সালে একটি মামলা করে সরকারের নিকট থেকে প্রায় ৫ বিঘা খাস জমি বন্দোবস্ত গ্রহণ করেন। এরপর ওই জমি তেঁতুলিয়া গ্রামের শহিদ বিশ্বাসের নিকট বিক্রি করেন। সেই থেকে শহিদ বিশ্বাস ওই জমি দখল করে আসছে। তবে তেঁতুলিয়া গ্রামে বেশ কয়েকটি দাগে খাস জমি আছে। এ বিষয়টি আমরা সরেজমিনে তদন্ত করেছি। এখান দিয়ে একটা রাস্তার জন্য এলাকার মানুষ একটা লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। এটা আমরা আবার তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) হাসিনা মমতাজ বলেন, অবৈধভাবে সরকারি জমি কেউ দখল করলে তদন্ত পূর্বক তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তেঁতুলিয়া গ্রামে জমি নিয়ে যে বিষয়টি উঠেছে, সে ব্যাপারে সরেজমিনে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।