ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গায় প্রথম ডিজিটাল জনশুমারি ও গৃহগণনার রিপোর্ট প্রকাশ, জনসংখ্যা ১২ লাখ ৩৪ হাজার ৫৪ জন

জেলার ৩৬.৬৭ শতাংশ মানুষ বেকার, স্বাক্ষরতার হার ৭১.২ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ০৯:১৪:১৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪
  • / ৮৯ বার পড়া হয়েছে

কমেছে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার, বেড়েছে জনসংখ্যার ঘনত্ব
সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা আলমডাঙ্গা উপজেলায়, কম জীবননগরে
জেলায় ১০০ জন নারীর বিপরীতে পুরুষের সংখ্যা ৯৭.০১ জন
৬৩.৫ শতাংশ মানুষ নিজস্ব মোবাইল ব্যবহার করেন
ইন্টারনেট ব্যবহার করেন জেলার ২৮.৫৩ শতাংশ মানুষ

চুয়াডাঙ্গায় প্রথম ডিজিটাল জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২ এর জেলা রিপোর্ট প্রকাশনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা একটায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিসংখ্যান অফিস। চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাজমুল হামিদ রেজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা। অনুষ্ঠানের শুরুতেই জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২ এর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জেলা পরিসংখ্যান অফিসের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক শরিফুল ইসলাম।

সদর উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা বেলাল হোসেনের পরিচালনায় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিয়াজুল ইসলাম (পুলিশ সুপার পদোন্নতিপ্রাপ্ত), চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি রাজিব হাসান কচি, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তবিবুর রহমান, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিটের সভাপতি সরদার আলামিন, চুয়াডাঙ্গা প্রেসকøাবের সাধারণ সম্পাদক বিপুল আশরাফ, আজকের পত্রিকা ও ডেইলি মর্নিং গ্লোরির জেলা প্রতিনিধি ও দৈনিক সময়ের সমীকরণ পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক মেহেরাব্বিন সানভী, আলমডাঙ্গা উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান মাসুম বিল্লাহসহ জেলা-উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, এতোদিন অনুমান নির্ভর তথ্য পেতাম। সরকারিভাবে এই সফলতা দেখে ভালো লেগেছে। আমরা সকলে মিলে কাজ করব। এই বিশ্লেষণ দেখে স্পষ্ট যে, সামাজিক কর্মসূচিতে আরও বেশি দায়বদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এই অফিসিয়াল ডাটার সাথে গবেষণা করে কাজ করার সুযোগ আছে। তিনি আরও বলেন, এই কাজে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। গণমাধ্যমের জন্য তথ্যের ভান্ডার উন্মুক্ত হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলায় ২০২২ সালে জনশুমারি ও গৃহগণনার রির্পোটে যা বলা হয়েছে:
চুয়াডাঙ্গা জেলায় মোট জনসংখ্যা ১২ লাখ ৩৪ হাজার ৫৪ জন। এর মধ্যে গ্রামে বা পল্লীতে বাস করে ৯ লাখ ৩৩ হাজার ২৬৩ জন। শহরে বাস করে ৩ লাখ ৭৯১। জেলায় মোট পুরুষ ৪৯.২৪ শতাংশ, নারী ৫০.৭৬ শতাংশ। চুয়াডাঙ্গা জেলায় কমেছে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার। ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ০.৭৯ (শূন্য দশমিক) শতাংশ। তবে ২০০১ সালে ২.৩২ ও ২০১১ সালে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ১.১২ শতাংশ। তবে বেড়েছ জনসংখ্যার ঘনত্ব। ২০২২ সালে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১ হাজার ৫১ জনের তথ্য উঠে এসেছে। যা ১৯৯১ সালে ছিল ৬৯৭ জন, ২০০১ সালে ৮৫৫ জন ও ২০১১ সালে প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ছিল ৯৬২ জন।

উপজেলা ভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলায় জনসংখ্যা সবথেকে বেশি। এ উপজেলায় ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী ৩ লাখ ৬৮ হাজার ১৬০ জন বাস করেন। জনসংখ্যার দিক দিয়ে দ্বিতীয় চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা। এ উপজেলার জনসংখ্যা ৩ লাখ ৫০ হাজার ৫০৪ জন। দামুড়হুদা উপজেলায় ৩ লাখ ১৭ হাজার ৫৫২ জন ও জীবননগর উপজেলায় জনসংখ্যা সবথেকে কম। এ উপজেলায় জনসংখ্যা ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৭৫ জন।

ধর্মভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৯৭.৬১ শতাংশ মানুষই মুসলমান। জেলায় হিন্দু বা সনাতন মাত্র ২.২৫ শতাংশ এবং খ্রিস্টান ০.১৩ (শূন্য দশমিক এক তিন) শতাংশ। জেলা পরিসংখ্যান অফিসের ২০২২ সালে জনশুমারি ও গৃহগণনার রির্পোট অনুযায়ী জেলায় অন্য কোনো ধর্মের মানুষ বাস করে না। অনুপাত ভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, লিঙ্গানুপাত: লিঙ্গানুপাত বলতে নির্দিষ্ট জনসংখ্যার মধ্যে নারীর বিপরীতে পুরুষের অনুপাত অর্থাৎ প্রতি ১০০ জন নারীর বিপরীতে পুরুষের সংখ্যা বোঝানো হয়। জেলায় ১০০ জন নারীর বিপরীতে পুরুষের সংখ্যা ৯৭.০১ জন। শিশু নারী অনুপাত: শিশু-নারী অনুপাত বলতে সন্তান ধারণে সক্ষম অর্থাৎ ১৫-৪৯ বছর বয়সী নারীর বিপরীতে ০-৪ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যার অনুপাত বোঝানো হয়। এটি সাধারণত প্রতি এক হাজার জন নারীর বিপরীতে প্রকাশ করা হয়ে থাকে। চুয়াডাঙ্গা জেলায় এক হাজার জন নারীর বিপরীতে ০-৪ বছর বয়সী শিশুর অনুপাত ২৮৩.৩৭ জন। নির্ভরশীলতা অনুপাত: নির্ভরশীলতা অনুপাত বলতে ১৫-৬৪ বছর বয়সী জনসংখ্যার বিপরীতে ০-১৪ বছর এবং ৬৫ ও তদুর্ধ্ব বয়সী জনসংখ্যার সমষ্টির অনুপাত শতকরা হারে প্রকাশ করাকে বোঝায়। চুয়াডাঙ্গা জেলায় শতকরা ৪৬.৮১ জন নির্ভরশীল।

বৈবাহিক অবস্থার হিসেবে চুয়াডাঙ্গা জেলায় ১৭.২৬ শতাংশ নারী এবং ২৯.৪৮ শতাংশ পুরুষ অবিবাহিত। ৭১.৭৩ শতাংশ নারী ও ৬৮.৯৫ শতাংশ পুরুষ বিবাহিত। ৯.৭০ শতাংশ নারী বিধবা এবং ১ শতাংশ পুরুষ বিপত্নীক। তালাকপ্রাপ্ত নারী ০.৮৬ (শূন্য দশমিক আট ছয়) শতাংশ ও পুরুষ ০.৩৬ (শূন্য দশমিক তিন ছয়) শতাংশ। দাম্পত্য বিচ্ছিন্ন ০.৪৫ (শূন্য দশমিক চার পাঁচ) শতাংশ নারী ও ০.২১ (শূন্য দশমিক দুই এক) শতাংশ পুরুষ।

চুয়াডাঙ্গা জেলার স্বাক্ষরতার হার নিয়ে বিভ্রান্তি আছে মানুষের মধ্যে। তবে এবার সঠিক হার জানা গেছে। ২০২২ সালের জনশুমারির তথ্য অনুযায়ী চুয়াডাঙ্গা জেলায় সাক্ষরতার হার (৭ বছর ও তদুর্ধ্ব) ৭১.২ শতাংশ। নারী ও পুরুষের জনসংখ্যা বিবেচনায় সাক্ষরতার হারে ৭০.৩৮ শতাংশ নারী ও ৭২.০৫ শতাংশ পুরুষ। চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৯২.৩১ শতাংশ সাধারণ শিক্ষায়, ০.৭৬ (শূন্য দশমিক সাত ছয়) কারিগরি শিক্ষায়, ৩.৬২ শতাংশ ধর্মীয় শিক্ষায় এবং ৩.৩১ শতাংশ অনান্য শিক্ষায় শিক্ষিত। কাজের ক্ষেত্রে জেলায় ৬১.৫১ শতাংশ কৃষি, ৫.৬৯ শতাংশ শিল্প ও ৩২.৮০ সেবা ক্ষেত্র কাজে যুক্ত।

এবারের জনসংখ্যায় (population not in Education, Employment or training (NEET) এর হার গণনা করা হয়েছে। NEET বলতে দেশের ১৫-২৪ বছর বয়সী মোট জনসংখ্যার মধ্যে যারা শুমারিকালে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ছিল না, কর্মে নিয়োজিত ছিল না কিংবা বৃত্তিমূলক কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেনি, তাদেরকে বোঝানো হয়েছে। এটিকে বেকারও বলা চলে। এ জেলায় ৩৬.৬৭ শতাংশ মানুষ NEET হিসেবে বিবেচিত। এর মধ্যে নারী ৬০.৫২ শতাংশ ও পুরুষ ১০.২৮ শতাংশ।
জেলায় ৬৩.৫ শতাংশ মানুষ নিজস্ব মোবাইল ব্যবহার করেন। এর মধ্যে নারী ৪৪.৯২ শতাংশ এবং পুরুষ ৮৩.২৫ শতাংশ। এছাড়াও জেলায় ২৮.৫৩ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। এর মধ্যে নারী ১৮.৪৪ শতাংশ এবং পুরুষ ৩৯.২৫ শতাংশ। জেলায় ২২.২৫ শতাংশ মানুষ ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অ্যাকাউন্টধারী। এর মধ্যে ১৬.১২ শতাংশ নারী এবং ২৮.৭৬ শতাংশ পুরুষ। এছাড়াও জেলায় ৩৫.৯৭ শতাংশ মানুষ মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টধারী। এর মধ্যে ২২.২৬ শতাংশ নারী এবং ৫০.৫৫ শতাংশ পুরুষ।

শুমারিকালীন সময়ে চুয়াডাঙ্গা জেলার ২২ হাজার ৫৩১ জন বিদেশী অবস্থানরত ছিলেন। এর মধ্যে আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৯ হাজার ৪২ জন, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ৫ হাজার ৯১০ জন, দামুড়হুদা উপজেলায় ৪ হাজার ৯২৬ জন ও জীবননগর উপজেলায় ২ হাজার ৬৫৩ জন প্রবাসী আছেন।

জেলায় মোট খানার সংখ্যা ৩ লাখ ২৬ হাজার ৭১৪টি। এর মধ্যে পল্লী বা গ্রামে ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৫৪টি ও শহরে ৭৮ হাজার ৫৬০টি খানা আছে। জেলায় ৩৫.৬৭ শতাংশ মানুষের পাকা বাসগৃহ, ১৩.২৩ শতাংশ আধাপাকা, ৫০.৮০ শতাংশ কাঁচা ও ০.৩০ (শূন্য দশমিক তিন শূন্য) শতাংশ ঝুপড়ি বাসগৃহ। জেলার মানুষের খাবার পানির প্রধান উৎস টিউবওয়েল (গভীর/অগভীর)। ৯৬.৮৭ শতাংশ মানুষ টিউবওয়েল থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করেন। কূপ/কুয়া থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করেন না কেউ। ট্যাপ/পাইপ (সাপ্লাই) পানি পান করেন ২.৬৪ শতাংশ মানুষ। পুকুর/নদী/খাল/লেক থেকে ০.০১ (শূন্য দশমিক শূন্য এক) শতাংশ মানুষ, বোতলজাত পানি/পানির জার ০.১৬ (শূন্য দশমিক ১৬ শতাংশ) ও অনান্য মাধ্যম থেকে সংগ্রহ করেন ০.০৪ (শূন্য দশমিক শূন্য চার) শতাংশ মানুষ। টয়লেট সুবিধার পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ফ্লাশ করে/পানি ঢেলে নিরাপদ নিষ্কাশন ব্যবস্থা আছে ৫৫.৭৮ শতাংশ। জেলায় ৯৯.৪৩ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পান। তবে ০.৫৭ (শূন্য দশমিক পাঁচ সাত) শতাংশ মানুষ এখনো বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চুয়াডাঙ্গায় প্রথম ডিজিটাল জনশুমারি ও গৃহগণনার রিপোর্ট প্রকাশ, জনসংখ্যা ১২ লাখ ৩৪ হাজার ৫৪ জন

জেলার ৩৬.৬৭ শতাংশ মানুষ বেকার, স্বাক্ষরতার হার ৭১.২ শতাংশ

আপলোড টাইম : ০৯:১৪:১৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪

কমেছে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার, বেড়েছে জনসংখ্যার ঘনত্ব
সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যা আলমডাঙ্গা উপজেলায়, কম জীবননগরে
জেলায় ১০০ জন নারীর বিপরীতে পুরুষের সংখ্যা ৯৭.০১ জন
৬৩.৫ শতাংশ মানুষ নিজস্ব মোবাইল ব্যবহার করেন
ইন্টারনেট ব্যবহার করেন জেলার ২৮.৫৩ শতাংশ মানুষ

চুয়াডাঙ্গায় প্রথম ডিজিটাল জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২ এর জেলা রিপোর্ট প্রকাশনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা একটায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিসংখ্যান অফিস। চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাজমুল হামিদ রেজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা। অনুষ্ঠানের শুরুতেই জনশুমারি ও গৃহগণনা-২০২২ এর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জেলা পরিসংখ্যান অফিসের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক শরিফুল ইসলাম।

সদর উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা বেলাল হোসেনের পরিচালনায় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিয়াজুল ইসলাম (পুলিশ সুপার পদোন্নতিপ্রাপ্ত), চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি রাজিব হাসান কচি, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তবিবুর রহমান, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিটের সভাপতি সরদার আলামিন, চুয়াডাঙ্গা প্রেসকøাবের সাধারণ সম্পাদক বিপুল আশরাফ, আজকের পত্রিকা ও ডেইলি মর্নিং গ্লোরির জেলা প্রতিনিধি ও দৈনিক সময়ের সমীকরণ পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক মেহেরাব্বিন সানভী, আলমডাঙ্গা উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান মাসুম বিল্লাহসহ জেলা-উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, এতোদিন অনুমান নির্ভর তথ্য পেতাম। সরকারিভাবে এই সফলতা দেখে ভালো লেগেছে। আমরা সকলে মিলে কাজ করব। এই বিশ্লেষণ দেখে স্পষ্ট যে, সামাজিক কর্মসূচিতে আরও বেশি দায়বদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এই অফিসিয়াল ডাটার সাথে গবেষণা করে কাজ করার সুযোগ আছে। তিনি আরও বলেন, এই কাজে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। গণমাধ্যমের জন্য তথ্যের ভান্ডার উন্মুক্ত হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলায় ২০২২ সালে জনশুমারি ও গৃহগণনার রির্পোটে যা বলা হয়েছে:
চুয়াডাঙ্গা জেলায় মোট জনসংখ্যা ১২ লাখ ৩৪ হাজার ৫৪ জন। এর মধ্যে গ্রামে বা পল্লীতে বাস করে ৯ লাখ ৩৩ হাজার ২৬৩ জন। শহরে বাস করে ৩ লাখ ৭৯১। জেলায় মোট পুরুষ ৪৯.২৪ শতাংশ, নারী ৫০.৭৬ শতাংশ। চুয়াডাঙ্গা জেলায় কমেছে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার। ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ০.৭৯ (শূন্য দশমিক) শতাংশ। তবে ২০০১ সালে ২.৩২ ও ২০১১ সালে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ১.১২ শতাংশ। তবে বেড়েছ জনসংখ্যার ঘনত্ব। ২০২২ সালে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১ হাজার ৫১ জনের তথ্য উঠে এসেছে। যা ১৯৯১ সালে ছিল ৬৯৭ জন, ২০০১ সালে ৮৫৫ জন ও ২০১১ সালে প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ছিল ৯৬২ জন।

উপজেলা ভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলায় জনসংখ্যা সবথেকে বেশি। এ উপজেলায় ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী ৩ লাখ ৬৮ হাজার ১৬০ জন বাস করেন। জনসংখ্যার দিক দিয়ে দ্বিতীয় চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা। এ উপজেলার জনসংখ্যা ৩ লাখ ৫০ হাজার ৫০৪ জন। দামুড়হুদা উপজেলায় ৩ লাখ ১৭ হাজার ৫৫২ জন ও জীবননগর উপজেলায় জনসংখ্যা সবথেকে কম। এ উপজেলায় জনসংখ্যা ১ লাখ ৯৭ হাজার ৭৭৫ জন।

ধর্মভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৯৭.৬১ শতাংশ মানুষই মুসলমান। জেলায় হিন্দু বা সনাতন মাত্র ২.২৫ শতাংশ এবং খ্রিস্টান ০.১৩ (শূন্য দশমিক এক তিন) শতাংশ। জেলা পরিসংখ্যান অফিসের ২০২২ সালে জনশুমারি ও গৃহগণনার রির্পোট অনুযায়ী জেলায় অন্য কোনো ধর্মের মানুষ বাস করে না। অনুপাত ভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, লিঙ্গানুপাত: লিঙ্গানুপাত বলতে নির্দিষ্ট জনসংখ্যার মধ্যে নারীর বিপরীতে পুরুষের অনুপাত অর্থাৎ প্রতি ১০০ জন নারীর বিপরীতে পুরুষের সংখ্যা বোঝানো হয়। জেলায় ১০০ জন নারীর বিপরীতে পুরুষের সংখ্যা ৯৭.০১ জন। শিশু নারী অনুপাত: শিশু-নারী অনুপাত বলতে সন্তান ধারণে সক্ষম অর্থাৎ ১৫-৪৯ বছর বয়সী নারীর বিপরীতে ০-৪ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যার অনুপাত বোঝানো হয়। এটি সাধারণত প্রতি এক হাজার জন নারীর বিপরীতে প্রকাশ করা হয়ে থাকে। চুয়াডাঙ্গা জেলায় এক হাজার জন নারীর বিপরীতে ০-৪ বছর বয়সী শিশুর অনুপাত ২৮৩.৩৭ জন। নির্ভরশীলতা অনুপাত: নির্ভরশীলতা অনুপাত বলতে ১৫-৬৪ বছর বয়সী জনসংখ্যার বিপরীতে ০-১৪ বছর এবং ৬৫ ও তদুর্ধ্ব বয়সী জনসংখ্যার সমষ্টির অনুপাত শতকরা হারে প্রকাশ করাকে বোঝায়। চুয়াডাঙ্গা জেলায় শতকরা ৪৬.৮১ জন নির্ভরশীল।

বৈবাহিক অবস্থার হিসেবে চুয়াডাঙ্গা জেলায় ১৭.২৬ শতাংশ নারী এবং ২৯.৪৮ শতাংশ পুরুষ অবিবাহিত। ৭১.৭৩ শতাংশ নারী ও ৬৮.৯৫ শতাংশ পুরুষ বিবাহিত। ৯.৭০ শতাংশ নারী বিধবা এবং ১ শতাংশ পুরুষ বিপত্নীক। তালাকপ্রাপ্ত নারী ০.৮৬ (শূন্য দশমিক আট ছয়) শতাংশ ও পুরুষ ০.৩৬ (শূন্য দশমিক তিন ছয়) শতাংশ। দাম্পত্য বিচ্ছিন্ন ০.৪৫ (শূন্য দশমিক চার পাঁচ) শতাংশ নারী ও ০.২১ (শূন্য দশমিক দুই এক) শতাংশ পুরুষ।

চুয়াডাঙ্গা জেলার স্বাক্ষরতার হার নিয়ে বিভ্রান্তি আছে মানুষের মধ্যে। তবে এবার সঠিক হার জানা গেছে। ২০২২ সালের জনশুমারির তথ্য অনুযায়ী চুয়াডাঙ্গা জেলায় সাক্ষরতার হার (৭ বছর ও তদুর্ধ্ব) ৭১.২ শতাংশ। নারী ও পুরুষের জনসংখ্যা বিবেচনায় সাক্ষরতার হারে ৭০.৩৮ শতাংশ নারী ও ৭২.০৫ শতাংশ পুরুষ। চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৯২.৩১ শতাংশ সাধারণ শিক্ষায়, ০.৭৬ (শূন্য দশমিক সাত ছয়) কারিগরি শিক্ষায়, ৩.৬২ শতাংশ ধর্মীয় শিক্ষায় এবং ৩.৩১ শতাংশ অনান্য শিক্ষায় শিক্ষিত। কাজের ক্ষেত্রে জেলায় ৬১.৫১ শতাংশ কৃষি, ৫.৬৯ শতাংশ শিল্প ও ৩২.৮০ সেবা ক্ষেত্র কাজে যুক্ত।

এবারের জনসংখ্যায় (population not in Education, Employment or training (NEET) এর হার গণনা করা হয়েছে। NEET বলতে দেশের ১৫-২৪ বছর বয়সী মোট জনসংখ্যার মধ্যে যারা শুমারিকালে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ছিল না, কর্মে নিয়োজিত ছিল না কিংবা বৃত্তিমূলক কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেনি, তাদেরকে বোঝানো হয়েছে। এটিকে বেকারও বলা চলে। এ জেলায় ৩৬.৬৭ শতাংশ মানুষ NEET হিসেবে বিবেচিত। এর মধ্যে নারী ৬০.৫২ শতাংশ ও পুরুষ ১০.২৮ শতাংশ।
জেলায় ৬৩.৫ শতাংশ মানুষ নিজস্ব মোবাইল ব্যবহার করেন। এর মধ্যে নারী ৪৪.৯২ শতাংশ এবং পুরুষ ৮৩.২৫ শতাংশ। এছাড়াও জেলায় ২৮.৫৩ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। এর মধ্যে নারী ১৮.৪৪ শতাংশ এবং পুরুষ ৩৯.২৫ শতাংশ। জেলায় ২২.২৫ শতাংশ মানুষ ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অ্যাকাউন্টধারী। এর মধ্যে ১৬.১২ শতাংশ নারী এবং ২৮.৭৬ শতাংশ পুরুষ। এছাড়াও জেলায় ৩৫.৯৭ শতাংশ মানুষ মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টধারী। এর মধ্যে ২২.২৬ শতাংশ নারী এবং ৫০.৫৫ শতাংশ পুরুষ।

শুমারিকালীন সময়ে চুয়াডাঙ্গা জেলার ২২ হাজার ৫৩১ জন বিদেশী অবস্থানরত ছিলেন। এর মধ্যে আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৯ হাজার ৪২ জন, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ৫ হাজার ৯১০ জন, দামুড়হুদা উপজেলায় ৪ হাজার ৯২৬ জন ও জীবননগর উপজেলায় ২ হাজার ৬৫৩ জন প্রবাসী আছেন।

জেলায় মোট খানার সংখ্যা ৩ লাখ ২৬ হাজার ৭১৪টি। এর মধ্যে পল্লী বা গ্রামে ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৫৪টি ও শহরে ৭৮ হাজার ৫৬০টি খানা আছে। জেলায় ৩৫.৬৭ শতাংশ মানুষের পাকা বাসগৃহ, ১৩.২৩ শতাংশ আধাপাকা, ৫০.৮০ শতাংশ কাঁচা ও ০.৩০ (শূন্য দশমিক তিন শূন্য) শতাংশ ঝুপড়ি বাসগৃহ। জেলার মানুষের খাবার পানির প্রধান উৎস টিউবওয়েল (গভীর/অগভীর)। ৯৬.৮৭ শতাংশ মানুষ টিউবওয়েল থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করেন। কূপ/কুয়া থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করেন না কেউ। ট্যাপ/পাইপ (সাপ্লাই) পানি পান করেন ২.৬৪ শতাংশ মানুষ। পুকুর/নদী/খাল/লেক থেকে ০.০১ (শূন্য দশমিক শূন্য এক) শতাংশ মানুষ, বোতলজাত পানি/পানির জার ০.১৬ (শূন্য দশমিক ১৬ শতাংশ) ও অনান্য মাধ্যম থেকে সংগ্রহ করেন ০.০৪ (শূন্য দশমিক শূন্য চার) শতাংশ মানুষ। টয়লেট সুবিধার পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ফ্লাশ করে/পানি ঢেলে নিরাপদ নিষ্কাশন ব্যবস্থা আছে ৫৫.৭৮ শতাংশ। জেলায় ৯৯.৪৩ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পান। তবে ০.৫৭ (শূন্য দশমিক পাঁচ সাত) শতাংশ মানুষ এখনো বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত।