ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গা জেলায় চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত থাকবে প্রায় ৫২ হাজার ৯৫১টি পশু

কোরবানিতে ১ হাজার ৬১ কোটি টাকার পশু বিক্রির আশা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ০৩:৩২:২৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০২৪
  • / ৬২ বার পড়া হয়েছে

পবিত্র ঈদুল আজহার আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। তাই কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জমে উঠেছে দেশের সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গার পশুহাটগুলো। শেষ মুহূর্তে পশু কেনা-বেচায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কোরবানিদাতা ও ব্যবসায়ীরা। শুধু পশুহাট নয়, খামার থেকে গরু সংগ্রহ করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃহৎ হাটগুলোতে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এ বছর চুয়াডাঙ্গা জেলায় ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮৫৬টি চাহিদার বিপরীতে পশু রয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ৮০৭টি। যা থেকে প্রায় ১ হাজার ৬১ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে জানিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। তবে খাবার, ওষুধ ও পরিচর্যা খরচের বিপরীতে কাক্সিক্ষত দাম না পাওয়ায় হতাশ খামারীরা। আর ভিন্ন কথা বলছেন সাধারণ ক্রেতারা। তাদের দাবি, অন্যবারের তুলনায় এবার কোরবানির পশুর দাম বেশি হাকা হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, এ বছর কোরবানির জন্য জেলায় ২ লাখ ১১ হাজার ৮০৭টি পশু প্রস্তুত রয়েছে। তবে চাহিদার সংখ্যা ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮৫৬টি পশু। যা থেকে প্রায় ৫২ হাজার ৯৫১টি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। এর মধ্যে গরু রয়েছে ৫৪ হাজার ৮১৯টি, মহিষ ১৬০টি, ছাগল ১ লাখ ৫২ হাজার ৮৯৬টি ও ভেড়া ৩ হাজার ৯২৫টি।

চুয়াডাঙ্গার চার উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পশু প্রস্তুত রয়েছে আলমডাঙ্গায় ৭৯ হাজার ৭০৫টি। এ উপজেলায় কোরবানির জন্য পশুর চাহিদা রয়েছে ৫৯ হাজার ৭৭৯টি। যা থেকে ১৯ হাজার ৯২৬টি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। এছাড়া চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ৪১ হাজার ৬২৭টি পশুর বিপরীতে চাহিদা রয়েছে ৩১ হাজার ২২০টি। অবিক্রিত থাকবে প্রায় ১০ হাজার ৪০৭টি পশু। দামুড়হুদা উপজেলায় ৪২ হাজার ৭৮টি পশুর বিপরীতে চাহিদা রয়েছে ৩১ হাজার ৫৫৯টি। যা থেকে উদ্বৃত্ত থাকবে ১০ হাজার ৫১৯টি পশু। এবং জীবননগর উপজেলায় ৪৮ হাজার ৩৯৭টি পশুর বিপরীতে চাহিদা রয়েছে ৩৬ হাজার ২৯৮টি। অবিক্রিত থাকবে প্রায় ১২ হাজার ৯৯টি পশু।

চুয়াডাঙ্গা জেলার মোট ১১টি পশুহাটের মধ্যে সবচেয়ে বড় হাট বসে ডুগডুগি ও শিয়ালমারিতে। প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার এই দুই হাটে কয়েক হাজার পশু কেনাবেচা হয়। এসব হাটে দেশীয় প্রজাতির বহু সংখ্যাক গরু, মহিষ, ভেড়া ও ছাগল ওঠে। কিন্তু এবার কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে হাটগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেলেও বিক্রি সেভাবে হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন গরুর খামারী ও ব্যবসায়ীরা।

গতকাল সোমবার সরেজমিনে দামুড়হুদার ডুগডুগি পশুহাটে দেখা যায়, গত বছরের তুলনায় এবার সব ধরণের পশুর দাম বেশি হওয়ায় হাটে পর্যাপ্ত সংখ্যাক পশু থাকলেও বিক্রি তুলনামূলকভাবে বেশ কম। দাম বেশি হওয়ায় মধ্যবিত্তরা এবার ঝুঁকছেন ছোট বা মাঝারি সাইজের পশু ক্রয়ের দিকে। যে কারণে এবারের কোরবানিতে বড় সাইজের গরুর চাহিদা একটু কম। তবে মাঝারি সাইজের গরু ও ছাগলের চাহিদা তুলনামূলক বেশি। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি আর্থিক সংকটের কারণে সাধ্যের মধ্যে না থাকায় সাধারণ ক্রেতারা এবার ছোট গরু ও ছাগল কিনতে বেশি আগ্রহী।

স্থানীয় খামারীরা বলছেন, এ বছর পর্যাপ্ত সংখ্যক দেশি জাতের গরু পালন করেছেন তারা। গরুর খাবার হিসেবে কাঁচা ঘাস, খৈল, চিটা গুড়, বিচালী, ভুষি, খুদ এবং ধানের কুড়াসহ প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। তবে পশুখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরু পালনে খরচ অনেক বেড়েছে। তাই কোরবানির পশুর দাম এবার বেশি হবে।

নরসিংদী জেলা থেকে ডুগডুগি পশুহাটে গরু কিনতে আসা আব্দুল্লাহ নামের এক ক্রেতা বলেন, ৩ ঘণ্টা ধরে ঘুরছি, কিন্তু দর-দাম ঠিক না হওয়ায় পশু কিনতে পারছি না। এবারে গরু-ছাগলের দাম অনেক বেশি। তারপরও কিনতে তো হবেই। সাধ্য মতো মিললে তিনি একসাথে ৫টি গরু ক্রয় করবেন। মাদারীপুর থেকে আসা গরু ব্যবসায়ী নুরু সর্দার বলেন, পশু ক্রয়ের জন্য তিনি একটি ট্রাক ভাড়া করে এনেছেন। এখান থেকে পশু কিনে তিনি নিজ এলাকার হাটে নিয়ে গিয়ে বেঁচবেন। মাত্র ৩টি গরু কিনতে পেরেছেন। দাম তুলনামূলক একটু বেশি হওয়ায় তাকে বেগ পেতে হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. শামীমুজ্জামান শামীম জানান, চুয়াডাঙ্গার চার উপজেলায় মোট ১০ হাজার ৯১৭ জন খামারী এবার পশু লালন-পালন করেছেন। এর বাইরে ব্যক্তি পর্যায়েও অনেকে পশু পুষেছেন। এ বছর চুয়াডাঙ্গায় যে পরিমাণ গরু ও মহিষ আছে, তার বাজার মূল্য ৮২৫ কোটি টাকা এবং ছাগল ও ভেড়ার বাজার মূল্য ২৩৬ কোটি টাকা। সবমিলিয়ে চলতি মৌসুমে প্রায় ১ হাজার ৬১ কোটি টাকার লেনদেন হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘খামারীরা যাতে লাভবান হতে পারে, সে জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সীমান্তবর্তী জেলা হিসেবে যাতে পাশর্^বর্তী দেশ থেকে অবৈধভাবে কোনো পশু আসতে না পারে, সে জন্য আমরা প্রতিনিয়ত প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ রাখছি। এছাড়া জেলার চারটি বড় পশুহাটে আমাদের পক্ষ থেকে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম থাকবে। এখান থেকে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই যেকোনো পরামর্শ নিতে পারবে।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চুয়াডাঙ্গা জেলায় চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত থাকবে প্রায় ৫২ হাজার ৯৫১টি পশু

কোরবানিতে ১ হাজার ৬১ কোটি টাকার পশু বিক্রির আশা

আপলোড টাইম : ০৩:৩২:২৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০২৪

পবিত্র ঈদুল আজহার আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। তাই কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জমে উঠেছে দেশের সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গার পশুহাটগুলো। শেষ মুহূর্তে পশু কেনা-বেচায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কোরবানিদাতা ও ব্যবসায়ীরা। শুধু পশুহাট নয়, খামার থেকে গরু সংগ্রহ করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃহৎ হাটগুলোতে নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এ বছর চুয়াডাঙ্গা জেলায় ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮৫৬টি চাহিদার বিপরীতে পশু রয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ৮০৭টি। যা থেকে প্রায় ১ হাজার ৬১ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে জানিয়েছে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। তবে খাবার, ওষুধ ও পরিচর্যা খরচের বিপরীতে কাক্সিক্ষত দাম না পাওয়ায় হতাশ খামারীরা। আর ভিন্ন কথা বলছেন সাধারণ ক্রেতারা। তাদের দাবি, অন্যবারের তুলনায় এবার কোরবানির পশুর দাম বেশি হাকা হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, এ বছর কোরবানির জন্য জেলায় ২ লাখ ১১ হাজার ৮০৭টি পশু প্রস্তুত রয়েছে। তবে চাহিদার সংখ্যা ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮৫৬টি পশু। যা থেকে প্রায় ৫২ হাজার ৯৫১টি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। এর মধ্যে গরু রয়েছে ৫৪ হাজার ৮১৯টি, মহিষ ১৬০টি, ছাগল ১ লাখ ৫২ হাজার ৮৯৬টি ও ভেড়া ৩ হাজার ৯২৫টি।

চুয়াডাঙ্গার চার উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পশু প্রস্তুত রয়েছে আলমডাঙ্গায় ৭৯ হাজার ৭০৫টি। এ উপজেলায় কোরবানির জন্য পশুর চাহিদা রয়েছে ৫৯ হাজার ৭৭৯টি। যা থেকে ১৯ হাজার ৯২৬টি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। এছাড়া চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ৪১ হাজার ৬২৭টি পশুর বিপরীতে চাহিদা রয়েছে ৩১ হাজার ২২০টি। অবিক্রিত থাকবে প্রায় ১০ হাজার ৪০৭টি পশু। দামুড়হুদা উপজেলায় ৪২ হাজার ৭৮টি পশুর বিপরীতে চাহিদা রয়েছে ৩১ হাজার ৫৫৯টি। যা থেকে উদ্বৃত্ত থাকবে ১০ হাজার ৫১৯টি পশু। এবং জীবননগর উপজেলায় ৪৮ হাজার ৩৯৭টি পশুর বিপরীতে চাহিদা রয়েছে ৩৬ হাজার ২৯৮টি। অবিক্রিত থাকবে প্রায় ১২ হাজার ৯৯টি পশু।

চুয়াডাঙ্গা জেলার মোট ১১টি পশুহাটের মধ্যে সবচেয়ে বড় হাট বসে ডুগডুগি ও শিয়ালমারিতে। প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার এই দুই হাটে কয়েক হাজার পশু কেনাবেচা হয়। এসব হাটে দেশীয় প্রজাতির বহু সংখ্যাক গরু, মহিষ, ভেড়া ও ছাগল ওঠে। কিন্তু এবার কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে হাটগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেলেও বিক্রি সেভাবে হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন গরুর খামারী ও ব্যবসায়ীরা।

গতকাল সোমবার সরেজমিনে দামুড়হুদার ডুগডুগি পশুহাটে দেখা যায়, গত বছরের তুলনায় এবার সব ধরণের পশুর দাম বেশি হওয়ায় হাটে পর্যাপ্ত সংখ্যাক পশু থাকলেও বিক্রি তুলনামূলকভাবে বেশ কম। দাম বেশি হওয়ায় মধ্যবিত্তরা এবার ঝুঁকছেন ছোট বা মাঝারি সাইজের পশু ক্রয়ের দিকে। যে কারণে এবারের কোরবানিতে বড় সাইজের গরুর চাহিদা একটু কম। তবে মাঝারি সাইজের গরু ও ছাগলের চাহিদা তুলনামূলক বেশি। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি আর্থিক সংকটের কারণে সাধ্যের মধ্যে না থাকায় সাধারণ ক্রেতারা এবার ছোট গরু ও ছাগল কিনতে বেশি আগ্রহী।

স্থানীয় খামারীরা বলছেন, এ বছর পর্যাপ্ত সংখ্যক দেশি জাতের গরু পালন করেছেন তারা। গরুর খাবার হিসেবে কাঁচা ঘাস, খৈল, চিটা গুড়, বিচালী, ভুষি, খুদ এবং ধানের কুড়াসহ প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। তবে পশুখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরু পালনে খরচ অনেক বেড়েছে। তাই কোরবানির পশুর দাম এবার বেশি হবে।

নরসিংদী জেলা থেকে ডুগডুগি পশুহাটে গরু কিনতে আসা আব্দুল্লাহ নামের এক ক্রেতা বলেন, ৩ ঘণ্টা ধরে ঘুরছি, কিন্তু দর-দাম ঠিক না হওয়ায় পশু কিনতে পারছি না। এবারে গরু-ছাগলের দাম অনেক বেশি। তারপরও কিনতে তো হবেই। সাধ্য মতো মিললে তিনি একসাথে ৫টি গরু ক্রয় করবেন। মাদারীপুর থেকে আসা গরু ব্যবসায়ী নুরু সর্দার বলেন, পশু ক্রয়ের জন্য তিনি একটি ট্রাক ভাড়া করে এনেছেন। এখান থেকে পশু কিনে তিনি নিজ এলাকার হাটে নিয়ে গিয়ে বেঁচবেন। মাত্র ৩টি গরু কিনতে পেরেছেন। দাম তুলনামূলক একটু বেশি হওয়ায় তাকে বেগ পেতে হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. শামীমুজ্জামান শামীম জানান, চুয়াডাঙ্গার চার উপজেলায় মোট ১০ হাজার ৯১৭ জন খামারী এবার পশু লালন-পালন করেছেন। এর বাইরে ব্যক্তি পর্যায়েও অনেকে পশু পুষেছেন। এ বছর চুয়াডাঙ্গায় যে পরিমাণ গরু ও মহিষ আছে, তার বাজার মূল্য ৮২৫ কোটি টাকা এবং ছাগল ও ভেড়ার বাজার মূল্য ২৩৬ কোটি টাকা। সবমিলিয়ে চলতি মৌসুমে প্রায় ১ হাজার ৬১ কোটি টাকার লেনদেন হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘খামারীরা যাতে লাভবান হতে পারে, সে জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সীমান্তবর্তী জেলা হিসেবে যাতে পাশর্^বর্তী দেশ থেকে অবৈধভাবে কোনো পশু আসতে না পারে, সে জন্য আমরা প্রতিনিয়ত প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ রাখছি। এছাড়া জেলার চারটি বড় পশুহাটে আমাদের পক্ষ থেকে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম থাকবে। এখান থেকে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই যেকোনো পরামর্শ নিতে পারবে।’