ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝিনাইদহের চার উপজেলায় সাব রেজিস্ট্রার নেই, জনভোগান্তি চরমে

প্রতি মাসে সরকার হারাচ্ছে ২ কোটি টাকার রাজস্ব

ঝিনাইদহ অফিস:
  • আপলোড টাইম : ০৮:২৫:০০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ ২০২৪
  • / ৬০ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহের ৬ উপজেলায় সাব রেজিস্টার আছে মাত্র দুইজন। এই দুইজন সাব রেজিস্ট্রার সামলাচ্ছেন গোটা জেলা। ফলে একদিকে যেমন সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে দাতা গ্রহিতারা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। আগে যেখানে প্রতিমাসে ৫ হাজার দলিল হতো, এখন হচ্ছে দুই হাজার। সাব রেজিস্ট্রার না থাকায় জনভোগান্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।

শৈলকুপা উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসের আওতায় ২৮৯টি গ্রামে প্রায় ৪ লাখ মানুষ বসবাস করেন। এই উপজেলার সাব রেজিস্ট্রার বদলি হওয়ার কারণে বিভিন্ন গ্রামের মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার দূর থেকে এসেও ফিরে যেতে হচ্ছে মানুষকে। প্রায় চার মাস সাব রেজিস্ট্রার না থাকার কারণে জমি রেজিস্ট্রি হচ্ছে না ঠিক মতো। একই অবস্থায় জেলার কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর উপজেলার। ওই তিন উপজেলাতেও সাব রেজিস্ট্রার না থাকার কারণে সেখানেও ঠিক মতো জমি রেজিস্ট্রি হচ্ছে না। দুজন সাব রেজিস্ট্রারকে পালাক্রমে ৬ উপজেলার দায়িত্ব দেওয়া হলেও তারা যাচ্ছেন না ঠিক মতো। গেলেও কোনো মাসে একবার, আবার কোনো মাসে একবারও যাচ্ছেন না। ফলে চরম দুর্ভোগে সেবাপ্রত্যাশীরাা। রেজিস্ট্রি না হওয়ায় শত শত জমি ক্রেতা-বিক্রেতা ও জরুরি কাজে দলিল উত্তোলনকারীরা চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। পাশাপাশি সরকার প্রতি মাসে দুই কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

এদিকে রমজান মাসে সকাল ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সরকারি অফিস চলার কথা থাকলেও নিয়ম মানছেন না হরিণাকুণ্ডুর সাব রেজিস্ট্রার মেহেদী আল ইসলাম। নিজের ইচ্ছেমত তিনি অফিসে যান, চলেন নিজের খেয়াল খুশিমত। জেলায় সাব রেজিস্ট্রার সংকটের মুহূর্তে হরিণাকুণ্ডুর সাব রেজিস্ট্রার মেহেদী আল ইসলামকে মহেশপুর উপজেলার অতিরিক্তি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেই হিসেবে গত মঙ্গলবার মহেশপুর উপজেলায় জমি রেজিস্ট্রির দায়িত্ব পান তিনি। সেবা প্রত্যাশীদের অভিযোগ, সকাল ৯টার সময় অফিস চালু হওয়ার কথা থাকলেও তিনি মহেশপুরে গেছেন বেলা ১১টায়। অফিসে পৌঁছে মাত্র দুই ঘণ্টা অফিস করে আবার তিনি বাড়ি চলে আসেন। অথচ ঘটনার দিন অফিসের সামনে অন্তত দেড়শ দলিল ক্রেতা-বিক্রেতা অপেক্ষা করছিলেন। তাদের রেজিস্ট্রির কাজ সমাধান না করেই তিনি বাড়ির পথ ধরেন।

মহেশপুর উপজেলার বাউলী গ্রামে হাসান আলী বলেন, তিনি তিন সপ্তাহ ধরে অপেক্ষা করছেন জমি রেজিস্ট্রির জন্য। গত মঙ্গলবার তার জমি রেজিস্ট্রির দিন ছিল। অফিসে এসে দেখের সাব রেজিস্ট্রার আসেননি। আবার পরে শুনলেন তিনি এসে কিছুক্ষণ পরে চলে গেছেন। ষাটোর্ধ বৃদ্ধা কহিনুর খাতুন বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে ঘুরছেন তিনি। রোজা থেকে সকাল থেকে অপেক্ষা করেন। ঘটনার দিন সাব রেজিস্ট্রার দলিল রেজিস্ট্রি না করেই কর্মস্থল ত্যাগ করলেন। মহেশপুরের বেশির ভাগ দলিল লেখক বলেন, সাব রেজিস্ট্রার মেহেদী আল ইসলামের আচার ব্যবহার খুব খারাপ। তিনি ইচ্ছা মতো অফিস করেন। যখন ইচ্ছে আসেন। যখন ইচ্ছে চলে যান।
অভিযোগের ব্যাপারে মেহেদী আল ইসলাম বলেন, ‘ওই দিন আমি ৮০টা দলিল করে এসেছি। দাতা গ্রহিতারা আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে। এ কারণে নিরাপত্তার কারণে আমি চলে এসেছি।’ তিনি বলেন, ‘আমি যদি রাত ১২টা পর্যন্ত ওই অফিস করি তারপরও দলিল শেষ হবে না।’ নতুন কর্মকর্তা পদায়নের ব্যাপারে জেলা রেজিস্ট্রার সাব্বির আহম্মেদ বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। হয়ত দ্রুত সমাধান হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

ঝিনাইদহের চার উপজেলায় সাব রেজিস্ট্রার নেই, জনভোগান্তি চরমে

প্রতি মাসে সরকার হারাচ্ছে ২ কোটি টাকার রাজস্ব

আপলোড টাইম : ০৮:২৫:০০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ ২০২৪

ঝিনাইদহের ৬ উপজেলায় সাব রেজিস্টার আছে মাত্র দুইজন। এই দুইজন সাব রেজিস্ট্রার সামলাচ্ছেন গোটা জেলা। ফলে একদিকে যেমন সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে দাতা গ্রহিতারা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। আগে যেখানে প্রতিমাসে ৫ হাজার দলিল হতো, এখন হচ্ছে দুই হাজার। সাব রেজিস্ট্রার না থাকায় জনভোগান্তি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।

শৈলকুপা উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসের আওতায় ২৮৯টি গ্রামে প্রায় ৪ লাখ মানুষ বসবাস করেন। এই উপজেলার সাব রেজিস্ট্রার বদলি হওয়ার কারণে বিভিন্ন গ্রামের মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। ২০ থেকে ২৫ কিলোমিটার দূর থেকে এসেও ফিরে যেতে হচ্ছে মানুষকে। প্রায় চার মাস সাব রেজিস্ট্রার না থাকার কারণে জমি রেজিস্ট্রি হচ্ছে না ঠিক মতো। একই অবস্থায় জেলার কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর উপজেলার। ওই তিন উপজেলাতেও সাব রেজিস্ট্রার না থাকার কারণে সেখানেও ঠিক মতো জমি রেজিস্ট্রি হচ্ছে না। দুজন সাব রেজিস্ট্রারকে পালাক্রমে ৬ উপজেলার দায়িত্ব দেওয়া হলেও তারা যাচ্ছেন না ঠিক মতো। গেলেও কোনো মাসে একবার, আবার কোনো মাসে একবারও যাচ্ছেন না। ফলে চরম দুর্ভোগে সেবাপ্রত্যাশীরাা। রেজিস্ট্রি না হওয়ায় শত শত জমি ক্রেতা-বিক্রেতা ও জরুরি কাজে দলিল উত্তোলনকারীরা চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। পাশাপাশি সরকার প্রতি মাসে দুই কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

এদিকে রমজান মাসে সকাল ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সরকারি অফিস চলার কথা থাকলেও নিয়ম মানছেন না হরিণাকুণ্ডুর সাব রেজিস্ট্রার মেহেদী আল ইসলাম। নিজের ইচ্ছেমত তিনি অফিসে যান, চলেন নিজের খেয়াল খুশিমত। জেলায় সাব রেজিস্ট্রার সংকটের মুহূর্তে হরিণাকুণ্ডুর সাব রেজিস্ট্রার মেহেদী আল ইসলামকে মহেশপুর উপজেলার অতিরিক্তি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেই হিসেবে গত মঙ্গলবার মহেশপুর উপজেলায় জমি রেজিস্ট্রির দায়িত্ব পান তিনি। সেবা প্রত্যাশীদের অভিযোগ, সকাল ৯টার সময় অফিস চালু হওয়ার কথা থাকলেও তিনি মহেশপুরে গেছেন বেলা ১১টায়। অফিসে পৌঁছে মাত্র দুই ঘণ্টা অফিস করে আবার তিনি বাড়ি চলে আসেন। অথচ ঘটনার দিন অফিসের সামনে অন্তত দেড়শ দলিল ক্রেতা-বিক্রেতা অপেক্ষা করছিলেন। তাদের রেজিস্ট্রির কাজ সমাধান না করেই তিনি বাড়ির পথ ধরেন।

মহেশপুর উপজেলার বাউলী গ্রামে হাসান আলী বলেন, তিনি তিন সপ্তাহ ধরে অপেক্ষা করছেন জমি রেজিস্ট্রির জন্য। গত মঙ্গলবার তার জমি রেজিস্ট্রির দিন ছিল। অফিসে এসে দেখের সাব রেজিস্ট্রার আসেননি। আবার পরে শুনলেন তিনি এসে কিছুক্ষণ পরে চলে গেছেন। ষাটোর্ধ বৃদ্ধা কহিনুর খাতুন বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে ঘুরছেন তিনি। রোজা থেকে সকাল থেকে অপেক্ষা করেন। ঘটনার দিন সাব রেজিস্ট্রার দলিল রেজিস্ট্রি না করেই কর্মস্থল ত্যাগ করলেন। মহেশপুরের বেশির ভাগ দলিল লেখক বলেন, সাব রেজিস্ট্রার মেহেদী আল ইসলামের আচার ব্যবহার খুব খারাপ। তিনি ইচ্ছা মতো অফিস করেন। যখন ইচ্ছে আসেন। যখন ইচ্ছে চলে যান।
অভিযোগের ব্যাপারে মেহেদী আল ইসলাম বলেন, ‘ওই দিন আমি ৮০টা দলিল করে এসেছি। দাতা গ্রহিতারা আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে। এ কারণে নিরাপত্তার কারণে আমি চলে এসেছি।’ তিনি বলেন, ‘আমি যদি রাত ১২টা পর্যন্ত ওই অফিস করি তারপরও দলিল শেষ হবে না।’ নতুন কর্মকর্তা পদায়নের ব্যাপারে জেলা রেজিস্ট্রার সাব্বির আহম্মেদ বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। হয়ত দ্রুত সমাধান হবে।