ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হরিণাকুণ্ডুতে ১২টি গরুর মৃত্যুর পর টনক নড়ল প্রশাসনের

অবৈধ সীসা কারখানায় জরিমানাসহ সিলগালা

ঝিনাইদহ অফিস:
  • আপলোড টাইম : ০৯:০৪:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ ২০২৪
  • / ৭২ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার চারাতলা নামক স্থানে অবৈধ সীসা কারখানার বিষক্রিয়ায় গতকাল বুধবার আরও তিনটি গরুর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া একই মালিকের আরও ৫টি গরু অসুস্থ হওয়ার পর তড়িঘড়ি করে কসাইদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় ১২টি গরু মারা গেছে।

এদিকে ঝিনাইদহ পরিবেশ অধিদপ্তর খবর পেয়ে গতকাল বুধবার বিকেলে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে অবৈধ সীসা কারখানা সিলগালাসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন হরিণাকুণ্ডুু উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিরুপমা রায়। অভিযানের সময় ঝিনাইদহ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মুন্তাছির রহমান উপস্থিত ছিলেন।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, প্রায় তিন বছর ধরে চারাতলা বাজারের পাশে পায়রাডাঙ্গা গ্রামের ডালিম মন্ডল তার জমি ভাড়া দিয়ে এই অবৈধ কারখানা পরিচালনা করতে সহায়তা করে আসছিলেন। গাইবান্ধা জেলার মশিয়ার রহমান জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বিতাড়িত হয়ে চারাতলা বাজারের নির্জন স্থানে অবৈধ সীসা কারখানায় পুরানো ব্যাটারি থেকে সীসা সংগ্রহের কাজ করে আসছিলেন। এই কারখানা থেকে তীব্র ঝাঁঝালো এসিডের গন্ধে এলাকার পরিবেশে বিপণ্ন হতো। পশু-পাখি এসিডের কারণে মারা যেত।

এদিকে শিতলী গ্রামের আলো জোয়ারদার অভিযোগ করেন, বুধবার ওই কারখানার পাশে তার ৮টি গরু ঘাস খাচ্ছিল। বিষক্রিয়ায় তার গরুর পাল অসুস্থ হয়ে পড়ে। বাড়ি আনার পর তিনটি গরু মারা যায়। অন্য পাঁচটি গরু তড়িঘড়ি করে স্থানীয় ইবাদত কসাইয়ের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। পায়রাডাঙ্গা গ্রামের মকলেছুর রহমান জানান, এর আগে ভালকী গ্রামের খেলাফৎ ও পায়রাডাঙ্গা গ্রামের কলিম উদ্দীনসহ একাধিক কৃষকের ১০ থেকে ১২টি গরু মারা গেছে। এসব গরুর দাম প্রায় ১৫ লাখ টাকা হবে। এই অবৈধ সীসা কারখানা উচ্ছেদের জন্য এলাকাবাসী বহুবার হরিণাকুণ্ডু উপজেলা প্রশাসন ও ঝিনাইদহ পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানালেও তারা অদৃশ্য কারণে বন্ধ করেনি এটি। অবশেষে গতকাল বুধবার ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে কারখানাটি সিলগালা করা হয়।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, গাইবান্ধা জেলার মশিয়ার রহমান এর আগে সদর উপজেলার আসাননগর, বংকিরা, বৈডাঙ্গা ও হরিশংকরপুর গ্রামে এই কারখানা স্থাপনের চেষ্টা করে গ্রামবাসীর প্রবল বাঁধার মুখে বিতাড়িত হন। কারখানা পরিচালক গাইবান্ধা জেলার মশিয়ার রহমান জানান, তিনি ঘাটে ঘাটে টাকা দিয়ে এই কারখখানা চালিয়ে আসছিলেন। তার টাকা সবার পকেটে আছে। তিনি দাবি করেন, ৪০ জায়গায় তিনি মাসিক টাকা দিয়ে এই ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন।

বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মুন্তাছির রহমান বলেন, ‘আমার লোকবল নেই। একটা অভিযান পরিচালনা করতে প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ। কিন্তু অফিসের কোনো বরাদ্দ নেই।’ তিনি আরও বলেন, বুধবার ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে অবৈধ সীসা কারখানা সিলগালাসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

হরিণাকুণ্ডুতে ১২টি গরুর মৃত্যুর পর টনক নড়ল প্রশাসনের

অবৈধ সীসা কারখানায় জরিমানাসহ সিলগালা

আপলোড টাইম : ০৯:০৪:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ ২০২৪

ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার চারাতলা নামক স্থানে অবৈধ সীসা কারখানার বিষক্রিয়ায় গতকাল বুধবার আরও তিনটি গরুর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া একই মালিকের আরও ৫টি গরু অসুস্থ হওয়ার পর তড়িঘড়ি করে কসাইদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় ১২টি গরু মারা গেছে।

এদিকে ঝিনাইদহ পরিবেশ অধিদপ্তর খবর পেয়ে গতকাল বুধবার বিকেলে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে অবৈধ সীসা কারখানা সিলগালাসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন হরিণাকুণ্ডুু উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিরুপমা রায়। অভিযানের সময় ঝিনাইদহ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মুন্তাছির রহমান উপস্থিত ছিলেন।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, প্রায় তিন বছর ধরে চারাতলা বাজারের পাশে পায়রাডাঙ্গা গ্রামের ডালিম মন্ডল তার জমি ভাড়া দিয়ে এই অবৈধ কারখানা পরিচালনা করতে সহায়তা করে আসছিলেন। গাইবান্ধা জেলার মশিয়ার রহমান জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বিতাড়িত হয়ে চারাতলা বাজারের নির্জন স্থানে অবৈধ সীসা কারখানায় পুরানো ব্যাটারি থেকে সীসা সংগ্রহের কাজ করে আসছিলেন। এই কারখানা থেকে তীব্র ঝাঁঝালো এসিডের গন্ধে এলাকার পরিবেশে বিপণ্ন হতো। পশু-পাখি এসিডের কারণে মারা যেত।

এদিকে শিতলী গ্রামের আলো জোয়ারদার অভিযোগ করেন, বুধবার ওই কারখানার পাশে তার ৮টি গরু ঘাস খাচ্ছিল। বিষক্রিয়ায় তার গরুর পাল অসুস্থ হয়ে পড়ে। বাড়ি আনার পর তিনটি গরু মারা যায়। অন্য পাঁচটি গরু তড়িঘড়ি করে স্থানীয় ইবাদত কসাইয়ের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। পায়রাডাঙ্গা গ্রামের মকলেছুর রহমান জানান, এর আগে ভালকী গ্রামের খেলাফৎ ও পায়রাডাঙ্গা গ্রামের কলিম উদ্দীনসহ একাধিক কৃষকের ১০ থেকে ১২টি গরু মারা গেছে। এসব গরুর দাম প্রায় ১৫ লাখ টাকা হবে। এই অবৈধ সীসা কারখানা উচ্ছেদের জন্য এলাকাবাসী বহুবার হরিণাকুণ্ডু উপজেলা প্রশাসন ও ঝিনাইদহ পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানালেও তারা অদৃশ্য কারণে বন্ধ করেনি এটি। অবশেষে গতকাল বুধবার ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে কারখানাটি সিলগালা করা হয়।

তথ্য নিয়ে জানা গেছে, গাইবান্ধা জেলার মশিয়ার রহমান এর আগে সদর উপজেলার আসাননগর, বংকিরা, বৈডাঙ্গা ও হরিশংকরপুর গ্রামে এই কারখানা স্থাপনের চেষ্টা করে গ্রামবাসীর প্রবল বাঁধার মুখে বিতাড়িত হন। কারখানা পরিচালক গাইবান্ধা জেলার মশিয়ার রহমান জানান, তিনি ঘাটে ঘাটে টাকা দিয়ে এই কারখখানা চালিয়ে আসছিলেন। তার টাকা সবার পকেটে আছে। তিনি দাবি করেন, ৪০ জায়গায় তিনি মাসিক টাকা দিয়ে এই ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন।

বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মুন্তাছির রহমান বলেন, ‘আমার লোকবল নেই। একটা অভিযান পরিচালনা করতে প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ। কিন্তু অফিসের কোনো বরাদ্দ নেই।’ তিনি আরও বলেন, বুধবার ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে অবৈধ সীসা কারখানা সিলগালাসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।