ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিও এনজিতে চাকরি করতে দিতে হয় ব্লাঙ্ক চেক, চাকরি ছাড়লেই নির্যাতন-মামলা

পথে বসেছেন বহু মানুষ, আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় ক্ষোভ

ঝিনাইদহ অফিস:
  • আপলোড টাইম : ১১:৩২:১৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ মার্চ ২০২৪
  • / ১০৬ বার পড়া হয়েছে

ঝিনাইদহের সিও এনজিওর বিরুদ্ধে ব্লাঙ্ক চেক নিয়ে চাকরি ও ঋণ প্রদানের বিষয় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমকর্মীরা। গত রোববার বিকেলে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সভায় অংশগ্রহণ করা গণমাধ্যমকর্মীরা। সভার সভাপতি জেলা প্রশাসক এস এম রফিকুল ইসলাম ভুক্তভোগী কারো অভিযোগ থাকলে প্রমাণসহ জমা দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।
সভায় ঝিনাইদহের বেসরকারি সংস্থা সিওসহ বিভিন্ন এনজিওর অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বক্তব্য দেন সাবেক পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিণ্টু ও ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সভাপতি এম রায়হান পিণ্টু লাল দত্ত। তাঁরা অভিযোগ করেন, এনজিওগুলো তাদের খ্যাতির আড়ালে ভয়ঙ্কর কর্মী নির্যাতন ও অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছে। বিশেষ করে সিও এনজিও চাকরির সময় জমা রাখা ব্লাঙ্ক চেক নিয়ে পরবর্তীতে ইচ্ছামতো টাকার অঙ্ক বসিয়ে করছেন চেক জালিয়াতি মামলা। ঝিনাইদহসহ আশপাশ জেলার বিভিন্ন আদালতে সিও এনজিওর দায়েরকৃত এমন সহস্রাধিক মামলা বিচারাধীন আছে। এসব মামলায় বেশির ভাগই আসামি নারী ঋণ গ্রহীতা ও পুরুষ চাকরিজীবী।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ শহরের চাকলাপাড়ায় কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে সুউচ্চ বহুতল ভবন হাকিয়ে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছেন এক সময় হাটে হাটে কাঁচা তরকারি বিক্রেতা সামছুল আলম। অভিযোগ উঠেছে, সিও সামছুলের ব্যবসা মূলত সুদ নিয়ে। ঋণ দিয়ে উচ্চ হারে তিনি সুদ আদায় করেন। সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারলে ঋণ দেওয়ার সময় জমা রাখা ব্লাঙ্ক চেক ও ৩০০ টাকার ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের বুনিয়াদে আদালতে মামলা করেন। এভাবে তিনি হাজারো ঋণ গ্রহীতাকে পথে বসিয়েছেন বলে কথিত আছে।
সিওর দায়ের করা মামলার আসামিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা সবাই এক সময় সিওতে চাকরি করতেন। চাকরিতে যোগদানের সময়, ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা জামানত, ব্লাঙ্ক চেক জমা ও ননজুডিশিয়াল ট্যাম্পে চুক্তি করতে হয়। চাকরি ছাড়ার সময় গ্রাচুয়িটি ও অন্যান্য ফান্ডের টাকা চাইতে গেলে কপালে জোটে আর্থিক অনিয়মের মামলা।
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার উমাপুর (নতুনপাড়া) গ্রামের জামাত আলীর ছেলে বিপ্লব হোসেন, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের মাধবপুর গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে সেলিম রেজা, হরিণাকুণ্ডু উপজেলার পারফলসি গ্রামের মৃত আক্কাস আলীর ছেলে মতিয়ার রহমান, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নাথকুন্ডু গ্রামের বাহাদুর শেখের মেয়ে চামেলী আক্তার সীমা, কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে মামুনসহ অসংখ্য কর্মী জামানতের টাকা, জমা রাখা ব্যাংক চেক ফেরত চেয়ে মামলায় জড়িয়ে ফতুর হয়ে গেছেন।
মেহেরপুর সদর উপজেলার আমদহ গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে আমিরুল ইসলাম জানান, তিনি বাদী হয়ে মেহেরপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালতে সিওর মালিক সামছুলের বিরুদ্ধে চিটিং মামলা করেন। বর্তমানে মেহেরপুর সদর সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালতের মামলায় (সিআর ১৩২/২২) সিওর নির্বাহী পরিচালক সামছুল আলমের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। কিন্তু পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে না।
এদিকে, সিওর পক্ষ থেকে আমিরুল ইসলামের নামে ঝিনাইদহে আদালতে চাকরির সময় জমা নেওয়া চেক, ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্প দিয়ে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেছে। সেই মামলায় ঝিনাইদহের আদালত বিবাদী আমিরুল ইসলামের পক্ষে রায় দিলে সিও সামছুল উচ্চ আদালতে আপিল করেন। উচ্চ আদালতে আমিরুল ইসলামের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে পছন্দ মতো উকিল নিয়োগ করে সামছুল আলম ধরা খেয়েছেন।
আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সিওতে ব্র্যাঞ্চ ম্যানেজার পদে চাকরি করতাম। চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে আমার জামানত, ব্লাঙ্ক চেক, ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ও সার্টিফিকেট ফেরত চাইলে উল্টো আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ দিয়ে আমার বিরুদ্ধে মামলা করেন। সেই মামলায় আমি নির্দোষ বলে প্রমাণিত হয়েছি।’
গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী থানার সুইগ্রামের মতিয়ার রহমানের ছেলে এবিএম মাহবুবুর রশিদ জানান, তিনি সিওতে ব্র্যাঞ্চ ম্যানেজার পদে চাকরি করতেন। ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট রাত তিনটার দিকে সিও হেড অফিস থেকে বাড়িতে কল দিয়ে বলা হয় মাহবুবুর রশিদ ব্যাপক আর্থিক অনিয়ম করেছেন। পরিবারকে বলা হয় অনিয়মের টাকা দিয়ে তাকে নিয়ে যেতে। মাহবুবুর রশিদের ছেলে মারুফ হাসান বলেন, ওই দিন বিকেল পাঁচটার দিকে আমার পিতাকে সিওর হেড অফিসে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয় এবং পরে আমার পিতার নামে ২৯ লাখ টাকার মামলা করেন সিও সামছুল।
জানা গেছে, প্রতিমাসে কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে সিও এনজিও। নতুন কর্মী যোগ দিলে তার বেতন দেওয়া লাগে কম এবং যোগদানের আগে নতুন কর্মীকে কয়েক দফায় প্রশিক্ষণ নিতে হয়। সেই প্রশিক্ষণ নিতেও সিওর ফান্ডে জমা দিতে হয় টাকা। সব মিলিয়ে নতুন নিয়োগ মানেই আরেকটি রমরমা ব্যবসা।
অভিযোগ উঠেছে সিওর নির্বাহী পরিচালক বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক রেখে চলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে কোনো লাভ হয় না। এ বিষয়ে গতকাল সোমবার বিকেলে সিও এনজিওর নির্বাহী পরিচালক সামছুল আলমের বক্তব্য জানতে তিনি ঢাকার মিটিংয়ে আছেন জানিয়ে ফোন কেটে দেন। ঝিনাইদহ শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা আফাজ উদ্দীন জানান, কোনো এনজিও ব্লাঙ্ক চেক নিয়ে ঋণ বা চাকরি প্রদানের এখতিয়ার রাখে না। এটা সম্পূর্ণ অবৈধ। কেউ যদি এটা করে, তবে তার বিরুদ্ধে সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিয়ম বা আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক এস এম রফিকুল ইসলাম বলেন, আইনশৃঙ্খলা সভায় সিওসহ বিভিন্ন এনজিওর অসংগতি নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখছে জেলা প্রশাসন। সরাসরি সিও এনজিওকে নিয়ে তথ্যসহ কোনো অভিযোগ পেলে সেটি তদন্ত করা হবে এবং প্রমাণ মিললে বিধি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

সিও এনজিতে চাকরি করতে দিতে হয় ব্লাঙ্ক চেক, চাকরি ছাড়লেই নির্যাতন-মামলা

পথে বসেছেন বহু মানুষ, আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় ক্ষোভ

আপলোড টাইম : ১১:৩২:১৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ মার্চ ২০২৪

ঝিনাইদহের সিও এনজিওর বিরুদ্ধে ব্লাঙ্ক চেক নিয়ে চাকরি ও ঋণ প্রদানের বিষয় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমকর্মীরা। গত রোববার বিকেলে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সভায় অংশগ্রহণ করা গণমাধ্যমকর্মীরা। সভার সভাপতি জেলা প্রশাসক এস এম রফিকুল ইসলাম ভুক্তভোগী কারো অভিযোগ থাকলে প্রমাণসহ জমা দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।
সভায় ঝিনাইদহের বেসরকারি সংস্থা সিওসহ বিভিন্ন এনজিওর অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বক্তব্য দেন সাবেক পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিণ্টু ও ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সভাপতি এম রায়হান পিণ্টু লাল দত্ত। তাঁরা অভিযোগ করেন, এনজিওগুলো তাদের খ্যাতির আড়ালে ভয়ঙ্কর কর্মী নির্যাতন ও অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছে। বিশেষ করে সিও এনজিও চাকরির সময় জমা রাখা ব্লাঙ্ক চেক নিয়ে পরবর্তীতে ইচ্ছামতো টাকার অঙ্ক বসিয়ে করছেন চেক জালিয়াতি মামলা। ঝিনাইদহসহ আশপাশ জেলার বিভিন্ন আদালতে সিও এনজিওর দায়েরকৃত এমন সহস্রাধিক মামলা বিচারাধীন আছে। এসব মামলায় বেশির ভাগই আসামি নারী ঋণ গ্রহীতা ও পুরুষ চাকরিজীবী।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ শহরের চাকলাপাড়ায় কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে সুউচ্চ বহুতল ভবন হাকিয়ে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছেন এক সময় হাটে হাটে কাঁচা তরকারি বিক্রেতা সামছুল আলম। অভিযোগ উঠেছে, সিও সামছুলের ব্যবসা মূলত সুদ নিয়ে। ঋণ দিয়ে উচ্চ হারে তিনি সুদ আদায় করেন। সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারলে ঋণ দেওয়ার সময় জমা রাখা ব্লাঙ্ক চেক ও ৩০০ টাকার ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পের বুনিয়াদে আদালতে মামলা করেন। এভাবে তিনি হাজারো ঋণ গ্রহীতাকে পথে বসিয়েছেন বলে কথিত আছে।
সিওর দায়ের করা মামলার আসামিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা সবাই এক সময় সিওতে চাকরি করতেন। চাকরিতে যোগদানের সময়, ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা জামানত, ব্লাঙ্ক চেক জমা ও ননজুডিশিয়াল ট্যাম্পে চুক্তি করতে হয়। চাকরি ছাড়ার সময় গ্রাচুয়িটি ও অন্যান্য ফান্ডের টাকা চাইতে গেলে কপালে জোটে আর্থিক অনিয়মের মামলা।
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার উমাপুর (নতুনপাড়া) গ্রামের জামাত আলীর ছেলে বিপ্লব হোসেন, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের মাধবপুর গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে সেলিম রেজা, হরিণাকুণ্ডু উপজেলার পারফলসি গ্রামের মৃত আক্কাস আলীর ছেলে মতিয়ার রহমান, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নাথকুন্ডু গ্রামের বাহাদুর শেখের মেয়ে চামেলী আক্তার সীমা, কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে মামুনসহ অসংখ্য কর্মী জামানতের টাকা, জমা রাখা ব্যাংক চেক ফেরত চেয়ে মামলায় জড়িয়ে ফতুর হয়ে গেছেন।
মেহেরপুর সদর উপজেলার আমদহ গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে আমিরুল ইসলাম জানান, তিনি বাদী হয়ে মেহেরপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালতে সিওর মালিক সামছুলের বিরুদ্ধে চিটিং মামলা করেন। বর্তমানে মেহেরপুর সদর সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালতের মামলায় (সিআর ১৩২/২২) সিওর নির্বাহী পরিচালক সামছুল আলমের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। কিন্তু পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে না।
এদিকে, সিওর পক্ষ থেকে আমিরুল ইসলামের নামে ঝিনাইদহে আদালতে চাকরির সময় জমা নেওয়া চেক, ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্প দিয়ে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেছে। সেই মামলায় ঝিনাইদহের আদালত বিবাদী আমিরুল ইসলামের পক্ষে রায় দিলে সিও সামছুল উচ্চ আদালতে আপিল করেন। উচ্চ আদালতে আমিরুল ইসলামের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে পছন্দ মতো উকিল নিয়োগ করে সামছুল আলম ধরা খেয়েছেন।
আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সিওতে ব্র্যাঞ্চ ম্যানেজার পদে চাকরি করতাম। চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে আমার জামানত, ব্লাঙ্ক চেক, ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ও সার্টিফিকেট ফেরত চাইলে উল্টো আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ দিয়ে আমার বিরুদ্ধে মামলা করেন। সেই মামলায় আমি নির্দোষ বলে প্রমাণিত হয়েছি।’
গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী থানার সুইগ্রামের মতিয়ার রহমানের ছেলে এবিএম মাহবুবুর রশিদ জানান, তিনি সিওতে ব্র্যাঞ্চ ম্যানেজার পদে চাকরি করতেন। ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট রাত তিনটার দিকে সিও হেড অফিস থেকে বাড়িতে কল দিয়ে বলা হয় মাহবুবুর রশিদ ব্যাপক আর্থিক অনিয়ম করেছেন। পরিবারকে বলা হয় অনিয়মের টাকা দিয়ে তাকে নিয়ে যেতে। মাহবুবুর রশিদের ছেলে মারুফ হাসান বলেন, ওই দিন বিকেল পাঁচটার দিকে আমার পিতাকে সিওর হেড অফিসে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয় এবং পরে আমার পিতার নামে ২৯ লাখ টাকার মামলা করেন সিও সামছুল।
জানা গেছে, প্রতিমাসে কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে সিও এনজিও। নতুন কর্মী যোগ দিলে তার বেতন দেওয়া লাগে কম এবং যোগদানের আগে নতুন কর্মীকে কয়েক দফায় প্রশিক্ষণ নিতে হয়। সেই প্রশিক্ষণ নিতেও সিওর ফান্ডে জমা দিতে হয় টাকা। সব মিলিয়ে নতুন নিয়োগ মানেই আরেকটি রমরমা ব্যবসা।
অভিযোগ উঠেছে সিওর নির্বাহী পরিচালক বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক রেখে চলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে কোনো লাভ হয় না। এ বিষয়ে গতকাল সোমবার বিকেলে সিও এনজিওর নির্বাহী পরিচালক সামছুল আলমের বক্তব্য জানতে তিনি ঢাকার মিটিংয়ে আছেন জানিয়ে ফোন কেটে দেন। ঝিনাইদহ শহর সমাজসেবা কর্মকর্তা আফাজ উদ্দীন জানান, কোনো এনজিও ব্লাঙ্ক চেক নিয়ে ঋণ বা চাকরি প্রদানের এখতিয়ার রাখে না। এটা সম্পূর্ণ অবৈধ। কেউ যদি এটা করে, তবে তার বিরুদ্ধে সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিয়ম বা আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক এস এম রফিকুল ইসলাম বলেন, আইনশৃঙ্খলা সভায় সিওসহ বিভিন্ন এনজিওর অসংগতি নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখছে জেলা প্রশাসন। সরাসরি সিও এনজিওকে নিয়ে তথ্যসহ কোনো অভিযোগ পেলে সেটি তদন্ত করা হবে এবং প্রমাণ মিললে বিধি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।