ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝিনাইদহে দেশি প্রযুক্তিতে তৈরি হচ্ছে ঘাস কাটা মেশিন

৩০০ বেকার যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:১১:২৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ৭০ বার পড়া হয়েছে

আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ:

দেশি প্রযুক্তিতে চায়নার আদলে ঝিনাইদহে শতাধিক ঘাসকাটা মেশিন কবরখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানা থেকে প্রতি মাসে তিন কোটি টাকার মেশিন বিক্রি হচ্ছে। দক্ষ শ্রমিক দিয়ে কারখানাগুলোতে তৈরি হচ্ছে বাহারী সব ঘাস কাটা মেশিন। আর এসব ফ্যাক্টরিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে প্রায় ৩০০ বেকার যুবকের। কারখানা মালিকদের ভাষ্যমতে, গ্রামাঞ্চলে ক্রমেই বাড়ছে ঘাস ও খড় কাটা মেশিনের চাহিদা বাড়ছে। ঘরে ঘরে মানুষ গরু ও ছাগল পালন করছেন। আর এমন চাহিদা থেকে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর বাজারে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক কারখানা। এসব কারখানা থেকে প্রতিদিন ১০০টির বেশি মেশিন তৈরি হচ্ছে। প্রতি মাসে এসব কারখানা থেকে ৩ কোটি টাকার বেশি মেশিন বেচা-কেনা হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার মেইন বাসস্ট্যান্ডে সারি সারি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে তৈরি হচ্ছে আধুনিক সব ঘাসকাটা মেশিন। আগে এসব ওয়ার্কশপে শ্যালো-মেশিনের যন্ত্রাংশ, ধান ও ভুট্টা ঝাড়া মেশিন তৈরি হতো। এখন সে জায়গা দখল করে নিয়েছে গবাদিপশুর ঘাস আর খড় কাটা মেশিন।

চুয়াডাঙ্গা জেলার তিতুদহ ইউনিয়নের গবরগাড়া গ্রাম থেকে রাসেল হোসেন কোটচাঁদপুরে এসেছেন ঘাস কাটার মেশিন কিনতে। তিনি জানান, প্রচলিত পদ্ধতিতে খড় ও ঘাস টুকরো করে কাটা সময় সাপেক্ষ। এতে করে খরচ বাড়ে, সময়ও বেশি লাগে, তাই মেশিন কিনতে এসেছেন। কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার ইউনিয়নের কাষ্টভাঙ্গা গ্রামের আব্দুল হাই এই বাজারে তার পুরাতন ঘাস কাটা মেশিন বিক্রি করে আবার নতুন মেশিন কিনেছেন। তিনি জানান, তার ১০/১২ টি গরু আছে, আগে বটি-ছুরি দিয়ে হাতে ঘাস কাটতেন, আর এখন মেশিনে কাটেন। তিনি অনেকের ঘাস কেটে দিয়ে বাড়তি ইনকামও করছেন। একটা মেশিনে ঘণ্টায় ১শ থেকে ৩শ কেজি ঘাস বা খড় কাটা যায়।

কোটচাঁদপুরের আক্তার ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের মালিক আক্তারুল আলম জানান, এখানে কাজ শিখে অনেকেই নতুন নতুন কারখানা তৈরি করছেন, তিন শতাধিক শ্রমিক এখানে কাজ করছেন। তারা ভালো বেতনও পাচ্ছেন। তিনি জানান, ৭/৮ বছর ধরে এখানে ঘাস কাটার মেশিন তৈরি হচ্ছে। ট্রান্সপোর্ট আর কুরিয়ারে সারা বাংলাদেশে এই মেশিন সরবরাহ করা হচ্ছে। ওয়ার্কশপে কাজ করা মোহাম্মদ তাজু জানান, আগে ধান ঝাড়া মেশিন, ভুট্টার হলার, ট্রলি এগুলো বেশি তৈরি হতো। তবে চাহিদা বাড়ায় এখন ঘাস কাটা মেশিন বেশি তৈরি হচ্ছে।

মেকানিক মিল্টন জানান, ঘাস কাটা মেশিনের কাঁচামাল ঢাকা, যশোর, কুষ্টিয়া থেকে আনা হয়। জাহাজের ভাঙ্গা যন্ত্রাংশ নানা কাঁচামাল লাগে। আবার কোটচাঁদপুরেও কিছু কাঁচামাল তৈরি হয়। এসব দিয়েই ঘাস কাটা মেশিন তৈরি হচ্ছে।

এছাড়া কোটচাঁদপুরে মামা-ভাগ্নে ওয়ার্কশপ, কায়েম ওয়ার্কশপ, ইভা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ সহ ছোট-বড় প্রায় ৫০টি ওয়ার্কশপ রয়েছে। এছাড়া জেলার হাটগোপালপুরেও এমন কারখানা গড়ে উঠেছে। কোটচাঁদপুর মেইন বাসস্ট্যান্ডে লোহা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম জানান, মাসে ৩ কোটি টাকা আর বছরে ৩৬ কোটি টাকার ঘাস কাটা মেশিন বিক্রি হচ্ছে। বিদ্যুৎ চালিত একটি ঘাস কাটা মেশিনের দাম ১০ হাজার টাকা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

ঝিনাইদহে দেশি প্রযুক্তিতে তৈরি হচ্ছে ঘাস কাটা মেশিন

৩০০ বেকার যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি

আপলোড টাইম : ০৯:১১:২৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ:

দেশি প্রযুক্তিতে চায়নার আদলে ঝিনাইদহে শতাধিক ঘাসকাটা মেশিন কবরখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানা থেকে প্রতি মাসে তিন কোটি টাকার মেশিন বিক্রি হচ্ছে। দক্ষ শ্রমিক দিয়ে কারখানাগুলোতে তৈরি হচ্ছে বাহারী সব ঘাস কাটা মেশিন। আর এসব ফ্যাক্টরিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে প্রায় ৩০০ বেকার যুবকের। কারখানা মালিকদের ভাষ্যমতে, গ্রামাঞ্চলে ক্রমেই বাড়ছে ঘাস ও খড় কাটা মেশিনের চাহিদা বাড়ছে। ঘরে ঘরে মানুষ গরু ও ছাগল পালন করছেন। আর এমন চাহিদা থেকে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর বাজারে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক কারখানা। এসব কারখানা থেকে প্রতিদিন ১০০টির বেশি মেশিন তৈরি হচ্ছে। প্রতি মাসে এসব কারখানা থেকে ৩ কোটি টাকার বেশি মেশিন বেচা-কেনা হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার মেইন বাসস্ট্যান্ডে সারি সারি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে তৈরি হচ্ছে আধুনিক সব ঘাসকাটা মেশিন। আগে এসব ওয়ার্কশপে শ্যালো-মেশিনের যন্ত্রাংশ, ধান ও ভুট্টা ঝাড়া মেশিন তৈরি হতো। এখন সে জায়গা দখল করে নিয়েছে গবাদিপশুর ঘাস আর খড় কাটা মেশিন।

চুয়াডাঙ্গা জেলার তিতুদহ ইউনিয়নের গবরগাড়া গ্রাম থেকে রাসেল হোসেন কোটচাঁদপুরে এসেছেন ঘাস কাটার মেশিন কিনতে। তিনি জানান, প্রচলিত পদ্ধতিতে খড় ও ঘাস টুকরো করে কাটা সময় সাপেক্ষ। এতে করে খরচ বাড়ে, সময়ও বেশি লাগে, তাই মেশিন কিনতে এসেছেন। কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার ইউনিয়নের কাষ্টভাঙ্গা গ্রামের আব্দুল হাই এই বাজারে তার পুরাতন ঘাস কাটা মেশিন বিক্রি করে আবার নতুন মেশিন কিনেছেন। তিনি জানান, তার ১০/১২ টি গরু আছে, আগে বটি-ছুরি দিয়ে হাতে ঘাস কাটতেন, আর এখন মেশিনে কাটেন। তিনি অনেকের ঘাস কেটে দিয়ে বাড়তি ইনকামও করছেন। একটা মেশিনে ঘণ্টায় ১শ থেকে ৩শ কেজি ঘাস বা খড় কাটা যায়।

কোটচাঁদপুরের আক্তার ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের মালিক আক্তারুল আলম জানান, এখানে কাজ শিখে অনেকেই নতুন নতুন কারখানা তৈরি করছেন, তিন শতাধিক শ্রমিক এখানে কাজ করছেন। তারা ভালো বেতনও পাচ্ছেন। তিনি জানান, ৭/৮ বছর ধরে এখানে ঘাস কাটার মেশিন তৈরি হচ্ছে। ট্রান্সপোর্ট আর কুরিয়ারে সারা বাংলাদেশে এই মেশিন সরবরাহ করা হচ্ছে। ওয়ার্কশপে কাজ করা মোহাম্মদ তাজু জানান, আগে ধান ঝাড়া মেশিন, ভুট্টার হলার, ট্রলি এগুলো বেশি তৈরি হতো। তবে চাহিদা বাড়ায় এখন ঘাস কাটা মেশিন বেশি তৈরি হচ্ছে।

মেকানিক মিল্টন জানান, ঘাস কাটা মেশিনের কাঁচামাল ঢাকা, যশোর, কুষ্টিয়া থেকে আনা হয়। জাহাজের ভাঙ্গা যন্ত্রাংশ নানা কাঁচামাল লাগে। আবার কোটচাঁদপুরেও কিছু কাঁচামাল তৈরি হয়। এসব দিয়েই ঘাস কাটা মেশিন তৈরি হচ্ছে।

এছাড়া কোটচাঁদপুরে মামা-ভাগ্নে ওয়ার্কশপ, কায়েম ওয়ার্কশপ, ইভা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ সহ ছোট-বড় প্রায় ৫০টি ওয়ার্কশপ রয়েছে। এছাড়া জেলার হাটগোপালপুরেও এমন কারখানা গড়ে উঠেছে। কোটচাঁদপুর মেইন বাসস্ট্যান্ডে লোহা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম জানান, মাসে ৩ কোটি টাকা আর বছরে ৩৬ কোটি টাকার ঘাস কাটা মেশিন বিক্রি হচ্ছে। বিদ্যুৎ চালিত একটি ঘাস কাটা মেশিনের দাম ১০ হাজার টাকা।