ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নফরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে নাটকীয়তা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১২:১১:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ৩৪ বার পড়া হয়েছে

এক সপ্তাহ ধরে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা

সরোজগঞ্জ অফিস:
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার পদ্মবিলা ইউনিয়নের নফরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে চরম নাটকীয়তা শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান গ্রুপ ও আওয়ামী লীগের অপর গ্রুপের মধ্যে বিরোধের কারণে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদ নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে স্কুলের শিক্ষার্থীরা। এক সপ্তাহ ধরে তারা বিদ্যালয়ে আসছে না।
গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক উপস্থিত রয়েছেন। তবে মাত্র তিনজন শিক্ষার্থী স্কুলে এসেছে। এক সপ্তাহ ধরে বিদ্যালয়ে শেণিকক্ষে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীরা। এই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নিয়ে নফরকান্দি ও হোগলডাঙ্গা গ্রামের আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। অভিযোগ রয়েছে, আগের কমিটির বিলুপ্তির হওয়ার পরেই পদ্মবিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলম হোসেনের দলীয় লোকজনের মাধ্যমেই নতুন কমিটি তৈরি করে পছন্দের ব্যক্তিকে সভাপতি করছেন। এদিকে আওয়ামী লীগের অপর পক্ষ নতুন এই কমিটি মানছে না।
চেয়ারম্যান আলম হোসেনের লোকজন দাবি করছেন, একপক্ষ আমাদের কমিটি মানছে না। দুই গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে আসতে চাচ্ছে। তবে কিছু লোকজন তাদের স্কুলে যেতে বাধা দিচ্ছে। যার কারণে স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীরা আসতে পারছে না।
বিদ্যালয়ের দাতা সদস্যরা বলছে, নফরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অপসরণের জন্য দুই গ্রামের লোকজন গণস্বাক্ষর করে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও জেলা প্রশাসক বরাবর জমা দিয়েছেন।
এদিকে, গতকাল প্রধান শিক্ষকের অফিসে ম্যানেজিং কমিটির বিষয়ে মীমাংসার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলম হোসেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও চুয়াডাঙ্গা সদরের সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মহিউদ্দিনসহ অভিভাবকেরা আলোচনা করেছেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শাহীন ফারহান বলেন, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে একটু ঝামেলা চলছে। যার কারণে হোগলডাঙ্গা ও নফরকান্দি গ্রামের লোকজন তাদের ছেলে-মেয়েদের বিদ্যালয়ে আসতে দিচ্ছে না। এই বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ১১৫ জন। এরমধ্যে মঙ্গলবার চার-পাঁচ জন উপস্থিত ছিল।
পদ্মাবিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলম বলেন, মূলত হোগলডাঙ্গা ও নফরকান্দি গ্রামের রাজনৈতিক কোন্দলের কারণে কমিটি নিয়ে ঝামেলা চলছে। ইতোমধ্যে দুই গ্রামের সদস্যদের নিয়ে আহসান হাবিবকে সভাপতি বানিয়ে আমাদের এমপি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দারকে জানিয়ে ১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হয়েছিল। তবে এক পক্ষ এই কমিটি মানতে চাননি। যার কারণে ঝামেলা চলছে। তবে আমি মীমাংসা করার চেষ্টা করেছিলাম। দুই গ্রামের লোকজনদের নিয়েই এই কমিটি করা হচ্ছে।
এদিকে, বিরোধী পক্ষের লোকজন বলছেন, নির্বাচনীয় মাধ্যমেই এই স্কুলের সভাপতি নির্বাচিত করতে হবে। বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য মইনুদ্দিন বলেন, এই ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে অনেক ঝামেলা চলছে। তবে আমি এই ঝামেলার ভেতরে যেতে চাচ্ছি না। চেয়ারম্যানের লোকজনকে নিয়েই এই কমিটি করা হয়েছে। চেয়ারম্যান এই সমস্যা সৃষ্টি করছেন এবং তিনি মীমাংসা করছেন। চেয়ারম্যানই এই কমিটি নিয়ে খেলছে। আমি এর ভেতরে থাকতে চাচ্ছি না। তবে মঙ্গলবার চেয়ারম্যানের লোকজন আমাকে বিদ্যালয়ে আসতে বলেন অফিসে মিটিং আছে এজন্য আমি এসেছি এর বেশি কিছু না।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মহিউদ্দিন বলেন, আমরা বিদ্যালয়ে এসে জানতে পেরেছি, বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা আসে না। আজ (মঙ্গলবার) বিদ্যালয়ে এসে সাতজন ছাত্র-ছাত্রী আমরা পেয়েছি। আমরা ম্যানেজিং কমিটির বিষয়ে কোনো আলোচনা করতে আসিনি। বিদ্যালয়ে পরিদর্শনে এসেছি। এই বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাই বড় ধরনের সমস্যায় জড়িত আছে কিনা সে বিষয়ে আমরা জানতে এসেছি। কমিটির বিষয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করবো না। ম্যানেজিং কমিটির লোকজনসহ স্থানীয় চেয়ারম্যান বিষয়টি দেখবেন এর বেশি কিছু না।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. তবিবুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়টিতে সমস্যা আছে। জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগও দিয়েছে কিছু মানুষ। আমাকে অভিযোগের অনুলিপি দিয়েছে। তবুও আমি তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এসময় তিনি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিত না হওয়ার ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা আসছে না, এটা আমি জানি না।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

নফরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে নাটকীয়তা

আপলোড টাইম : ১২:১১:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

এক সপ্তাহ ধরে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা

সরোজগঞ্জ অফিস:
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার পদ্মবিলা ইউনিয়নের নফরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে চরম নাটকীয়তা শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান গ্রুপ ও আওয়ামী লীগের অপর গ্রুপের মধ্যে বিরোধের কারণে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পদ নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে স্কুলের শিক্ষার্থীরা। এক সপ্তাহ ধরে তারা বিদ্যালয়ে আসছে না।
গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক উপস্থিত রয়েছেন। তবে মাত্র তিনজন শিক্ষার্থী স্কুলে এসেছে। এক সপ্তাহ ধরে বিদ্যালয়ে শেণিকক্ষে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীরা। এই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নিয়ে নফরকান্দি ও হোগলডাঙ্গা গ্রামের আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। অভিযোগ রয়েছে, আগের কমিটির বিলুপ্তির হওয়ার পরেই পদ্মবিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলম হোসেনের দলীয় লোকজনের মাধ্যমেই নতুন কমিটি তৈরি করে পছন্দের ব্যক্তিকে সভাপতি করছেন। এদিকে আওয়ামী লীগের অপর পক্ষ নতুন এই কমিটি মানছে না।
চেয়ারম্যান আলম হোসেনের লোকজন দাবি করছেন, একপক্ষ আমাদের কমিটি মানছে না। দুই গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে আসতে চাচ্ছে। তবে কিছু লোকজন তাদের স্কুলে যেতে বাধা দিচ্ছে। যার কারণে স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীরা আসতে পারছে না।
বিদ্যালয়ের দাতা সদস্যরা বলছে, নফরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অপসরণের জন্য দুই গ্রামের লোকজন গণস্বাক্ষর করে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও জেলা প্রশাসক বরাবর জমা দিয়েছেন।
এদিকে, গতকাল প্রধান শিক্ষকের অফিসে ম্যানেজিং কমিটির বিষয়ে মীমাংসার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলম হোসেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও চুয়াডাঙ্গা সদরের সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মহিউদ্দিনসহ অভিভাবকেরা আলোচনা করেছেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শাহীন ফারহান বলেন, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে একটু ঝামেলা চলছে। যার কারণে হোগলডাঙ্গা ও নফরকান্দি গ্রামের লোকজন তাদের ছেলে-মেয়েদের বিদ্যালয়ে আসতে দিচ্ছে না। এই বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ১১৫ জন। এরমধ্যে মঙ্গলবার চার-পাঁচ জন উপস্থিত ছিল।
পদ্মাবিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলম বলেন, মূলত হোগলডাঙ্গা ও নফরকান্দি গ্রামের রাজনৈতিক কোন্দলের কারণে কমিটি নিয়ে ঝামেলা চলছে। ইতোমধ্যে দুই গ্রামের সদস্যদের নিয়ে আহসান হাবিবকে সভাপতি বানিয়ে আমাদের এমপি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দারকে জানিয়ে ১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হয়েছিল। তবে এক পক্ষ এই কমিটি মানতে চাননি। যার কারণে ঝামেলা চলছে। তবে আমি মীমাংসা করার চেষ্টা করেছিলাম। দুই গ্রামের লোকজনদের নিয়েই এই কমিটি করা হচ্ছে।
এদিকে, বিরোধী পক্ষের লোকজন বলছেন, নির্বাচনীয় মাধ্যমেই এই স্কুলের সভাপতি নির্বাচিত করতে হবে। বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য মইনুদ্দিন বলেন, এই ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে অনেক ঝামেলা চলছে। তবে আমি এই ঝামেলার ভেতরে যেতে চাচ্ছি না। চেয়ারম্যানের লোকজনকে নিয়েই এই কমিটি করা হয়েছে। চেয়ারম্যান এই সমস্যা সৃষ্টি করছেন এবং তিনি মীমাংসা করছেন। চেয়ারম্যানই এই কমিটি নিয়ে খেলছে। আমি এর ভেতরে থাকতে চাচ্ছি না। তবে মঙ্গলবার চেয়ারম্যানের লোকজন আমাকে বিদ্যালয়ে আসতে বলেন অফিসে মিটিং আছে এজন্য আমি এসেছি এর বেশি কিছু না।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মহিউদ্দিন বলেন, আমরা বিদ্যালয়ে এসে জানতে পেরেছি, বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা আসে না। আজ (মঙ্গলবার) বিদ্যালয়ে এসে সাতজন ছাত্র-ছাত্রী আমরা পেয়েছি। আমরা ম্যানেজিং কমিটির বিষয়ে কোনো আলোচনা করতে আসিনি। বিদ্যালয়ে পরিদর্শনে এসেছি। এই বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাই বড় ধরনের সমস্যায় জড়িত আছে কিনা সে বিষয়ে আমরা জানতে এসেছি। কমিটির বিষয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করবো না। ম্যানেজিং কমিটির লোকজনসহ স্থানীয় চেয়ারম্যান বিষয়টি দেখবেন এর বেশি কিছু না।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. তবিবুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়টিতে সমস্যা আছে। জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগও দিয়েছে কিছু মানুষ। আমাকে অভিযোগের অনুলিপি দিয়েছে। তবুও আমি তদন্ত কমিটি করে দিয়েছি। তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এসময় তিনি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিত না হওয়ার ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা আসছে না, এটা আমি জানি না।