ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৪৫ দিবসে চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার মেট্রিক টন

কেরুজ চিনিকলের ২০২৩-২৪ মাড়াই মৌসুমের স্লো-ফায়ারিং উদ্বোধন আজ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:১২:২০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৩
  • / ৩৬ বার পড়া হয়েছে

দর্শনা অফিস:
কেরুজ চিনিকলে ২০২৩-২৪ মৌসুমে আখ মাড়াই উপলক্ষে বয়লিং হাউজে স্লো-ফায়ারিং দেওয়া হবে আজ শুক্রবার বেলা ৩টায়। এ উপলক্ষে আজ দুপুরে মিল হাউজের বয়লার বিভাগে এক আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হবে।

দোয়া শেষে বয়লারে মাড়াই মৌসুমের অগ্নিসংযোগের মধ্যদিয়ে স্লো-ফায়ারিং উদ্বোধন করবেন দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন। ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত চুয়াডাঙ্গা জেলার ঐতিহ্যবাহী দর্শনায় অবস্থিত এশিয়া মহাদেশের মধ্যে দ্বিতীয় ও দেশের একমাত্র ভারী চিনিশিল্প প্রতিষ্ঠান দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোং (বাং) লি.। এ চিনিকল আজ নানা সমস্যায় জর্জরিত। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া মিলটির যেন সারা ঘায়ে পরিণত। প্রতিবছর এ মিল থেকে সরকার কোটি কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করলেও যন্ত্রাংশ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ছিল উদাসীন। কেরুজ চিনিকলটি আধুনিকায়ন করণে মিলের শ্রমিক-কর্মচারী ও এলাকাবাসীর কাক্সিক্ষত দাবি বারবার হয়েছে উপেক্ষিত।
চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর মিলটিকে আধুনিকায়নের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রালয় থেকে সাড়ে ৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দের ব্যবস্থা করেন। পরবর্তীতে আধুনিকায়ন কাজের জন্য ডিস্টিলারিসহ বিভিন্ন উন্নয়নে মোট ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তারই আপ্রাণ প্রচেষ্টায় মিলটি আধুনিকতার ছোঁয়া পেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কচ্ছপ গতিতে কাজ চলায় দীর্ঘ ১০ বছর অতিবাহিত হলেও পুরোপুরি আধুনিকায়নে রূপ নিতে পারেনি।

এদিকে বয়সের ভারে নুয়ে পড়া মিলটি প্রতি বছরেই পুরোনো যন্ত্রাংশ জোড়াতালি ও ঝালাই-মেরামত করে আখমাড়াই কার্যক্রম শুরু করতে হয়। যার ফলে শুরু থেকেই নানা রকম সমস্যার মোকাবিলার মধ্যদিয়ে টেনেহেঁচড়ে মাড়াই মৌসুম শেষ করতে হয় চিনিকলটির। ফলে লোকসান গুনতে হয় কোটি কোটি টাকা। বর্তমানে আধুনিকায়নে বয়লিং, কেইন কেরিয়ার ও মিলহাউজের কাজ চলছে। এরমধ্যে কিছু কাজ সম্পন্ন হলেও বেশির ভাগ কাজ অসম্পন্ন থাকায় মিলটি সম্পন্ন আধুনিকায়নে আরও এক-দুই বছর সময় লেগে যেতে পারে বলে একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

এ মৌসুমে লোকসান কাটিয়ে মুনাফা অর্জনের জন্য মিল কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেছে নানামুখী পদক্ষেপ। আখ চাষিদের সুবিধা নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি, শ্রমিক-কর্মচারীদের দিকেই খেয়াল রাখা হচ্ছে। তবে বর্তমান প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন তিনি প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগদানের পর থেকে পূর্বের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দর্শনা কেরুজ চিনিশিল্পকে লাভজনক স্থানে নিতে ও চিনিকলকে বাঁচিয়ে রাখতে আখ চাষ বৃদ্ধির লক্ষে কেরুজ মিল জোন এলাকায় ছুটছেন চাষিদের দ্বারে দ্বারে। তেমনি প্রতিদিন কোনো না কোনো এলাকার চাষিদের সঙ্গে উঠান বৈঠকসহ সৌজন্য মূলক আলোচনায় বসছেন। তার এমন উদ্যোগ এলাকার চাষিরা আখ চাষ করার কথা ব্যক্ত করেছেন। সেই সাথে ২০২৩-২৪ মাড়াই মরসুমে প্রতিষ্ঠানটিকে কোনো ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটির মধ্যে পড়তে না হয় সেদিক লক্ষ রাখছেন। সেই সাথে মাড়াই মৌসুম সফল করতে ওয়াটারট্রাইল সম্পন্নসহ মিল হাউজ ও কেইন কেরিয়ার ট্রাইল দেওয়া হয়েছে।

এরমধ্যে ছোট খাটো ত্রুটির সন্ধান মিললে তা সারিয়ে নেওয়া হবে। এ বছর চিনিকলের নিজস্ব ১ হাজার ৫৫০ একর জমিতে ২৪ হাজার মেট্রিক টন আখ উৎপাদন করেছিল। আর কৃষকের ৬ হাজার ৯৮২ একর জমিতে ৯৪ হাজার মেট্রিক টন আখ হবে। কিন্তু এবার মাত্র ৪৫ দিবসে আখ মাড়াই কার্যক্রম শেষ হয়ে যাবে। চলতি মাড়াই মৌসুমে কেরু চিনিকল ১ লাখ ৫৪ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৯ হাজার ৬২৫ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল।

এ বিষয়ে কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, ২০২৩-২৪ মাড়াই মৌসুমে বড় ধরনের কোনো যান্ত্রিক সমস্যার সম্মুখীন হতে না হয় সেজন্য সকল যন্ত্রাংশ ট্রাইল দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি কোনো সমস্য আছে কিনা সেটিও দেখা হচ্ছে। তবে মিলটি মাড়াই মরসুম সুন্দর ও সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে সকল ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আশা রাখি সকল প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে মাড়াই মরসুম সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। সেই সাথে সকলের প্রচেষ্টায় লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা সম্ভব হবে। তবে চিনি উৎপাদনের একমাত্র কাঁচামাল হচ্ছে আখ। তিনি চাষিদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশের ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান, জেলার ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান কেরুজ চিনিকলকে রক্ষা করতে বেশি বেশি করে আখ চাষের কোনো বিকল্প নেই।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

৪৫ দিবসে চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার মেট্রিক টন

কেরুজ চিনিকলের ২০২৩-২৪ মাড়াই মৌসুমের স্লো-ফায়ারিং উদ্বোধন আজ

আপলোড টাইম : ১১:১২:২০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৩

দর্শনা অফিস:
কেরুজ চিনিকলে ২০২৩-২৪ মৌসুমে আখ মাড়াই উপলক্ষে বয়লিং হাউজে স্লো-ফায়ারিং দেওয়া হবে আজ শুক্রবার বেলা ৩টায়। এ উপলক্ষে আজ দুপুরে মিল হাউজের বয়লার বিভাগে এক আলোচনা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হবে।

দোয়া শেষে বয়লারে মাড়াই মৌসুমের অগ্নিসংযোগের মধ্যদিয়ে স্লো-ফায়ারিং উদ্বোধন করবেন দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন। ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত চুয়াডাঙ্গা জেলার ঐতিহ্যবাহী দর্শনায় অবস্থিত এশিয়া মহাদেশের মধ্যে দ্বিতীয় ও দেশের একমাত্র ভারী চিনিশিল্প প্রতিষ্ঠান দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোং (বাং) লি.। এ চিনিকল আজ নানা সমস্যায় জর্জরিত। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া মিলটির যেন সারা ঘায়ে পরিণত। প্রতিবছর এ মিল থেকে সরকার কোটি কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করলেও যন্ত্রাংশ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ছিল উদাসীন। কেরুজ চিনিকলটি আধুনিকায়ন করণে মিলের শ্রমিক-কর্মচারী ও এলাকাবাসীর কাক্সিক্ষত দাবি বারবার হয়েছে উপেক্ষিত।
চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর মিলটিকে আধুনিকায়নের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রালয় থেকে সাড়ে ৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দের ব্যবস্থা করেন। পরবর্তীতে আধুনিকায়ন কাজের জন্য ডিস্টিলারিসহ বিভিন্ন উন্নয়নে মোট ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তারই আপ্রাণ প্রচেষ্টায় মিলটি আধুনিকতার ছোঁয়া পেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কচ্ছপ গতিতে কাজ চলায় দীর্ঘ ১০ বছর অতিবাহিত হলেও পুরোপুরি আধুনিকায়নে রূপ নিতে পারেনি।

এদিকে বয়সের ভারে নুয়ে পড়া মিলটি প্রতি বছরেই পুরোনো যন্ত্রাংশ জোড়াতালি ও ঝালাই-মেরামত করে আখমাড়াই কার্যক্রম শুরু করতে হয়। যার ফলে শুরু থেকেই নানা রকম সমস্যার মোকাবিলার মধ্যদিয়ে টেনেহেঁচড়ে মাড়াই মৌসুম শেষ করতে হয় চিনিকলটির। ফলে লোকসান গুনতে হয় কোটি কোটি টাকা। বর্তমানে আধুনিকায়নে বয়লিং, কেইন কেরিয়ার ও মিলহাউজের কাজ চলছে। এরমধ্যে কিছু কাজ সম্পন্ন হলেও বেশির ভাগ কাজ অসম্পন্ন থাকায় মিলটি সম্পন্ন আধুনিকায়নে আরও এক-দুই বছর সময় লেগে যেতে পারে বলে একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

এ মৌসুমে লোকসান কাটিয়ে মুনাফা অর্জনের জন্য মিল কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করেছে নানামুখী পদক্ষেপ। আখ চাষিদের সুবিধা নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি, শ্রমিক-কর্মচারীদের দিকেই খেয়াল রাখা হচ্ছে। তবে বর্তমান প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন তিনি প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগদানের পর থেকে পূর্বের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দর্শনা কেরুজ চিনিশিল্পকে লাভজনক স্থানে নিতে ও চিনিকলকে বাঁচিয়ে রাখতে আখ চাষ বৃদ্ধির লক্ষে কেরুজ মিল জোন এলাকায় ছুটছেন চাষিদের দ্বারে দ্বারে। তেমনি প্রতিদিন কোনো না কোনো এলাকার চাষিদের সঙ্গে উঠান বৈঠকসহ সৌজন্য মূলক আলোচনায় বসছেন। তার এমন উদ্যোগ এলাকার চাষিরা আখ চাষ করার কথা ব্যক্ত করেছেন। সেই সাথে ২০২৩-২৪ মাড়াই মরসুমে প্রতিষ্ঠানটিকে কোনো ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটির মধ্যে পড়তে না হয় সেদিক লক্ষ রাখছেন। সেই সাথে মাড়াই মৌসুম সফল করতে ওয়াটারট্রাইল সম্পন্নসহ মিল হাউজ ও কেইন কেরিয়ার ট্রাইল দেওয়া হয়েছে।

এরমধ্যে ছোট খাটো ত্রুটির সন্ধান মিললে তা সারিয়ে নেওয়া হবে। এ বছর চিনিকলের নিজস্ব ১ হাজার ৫৫০ একর জমিতে ২৪ হাজার মেট্রিক টন আখ উৎপাদন করেছিল। আর কৃষকের ৬ হাজার ৯৮২ একর জমিতে ৯৪ হাজার মেট্রিক টন আখ হবে। কিন্তু এবার মাত্র ৪৫ দিবসে আখ মাড়াই কার্যক্রম শেষ হয়ে যাবে। চলতি মাড়াই মৌসুমে কেরু চিনিকল ১ লাখ ৫৪ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে ৯ হাজার ৬২৫ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল।

এ বিষয়ে কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, ২০২৩-২৪ মাড়াই মৌসুমে বড় ধরনের কোনো যান্ত্রিক সমস্যার সম্মুখীন হতে না হয় সেজন্য সকল যন্ত্রাংশ ট্রাইল দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি কোনো সমস্য আছে কিনা সেটিও দেখা হচ্ছে। তবে মিলটি মাড়াই মরসুম সুন্দর ও সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করতে সকল ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আশা রাখি সকল প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে মাড়াই মরসুম সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। সেই সাথে সকলের প্রচেষ্টায় লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা সম্ভব হবে। তবে চিনি উৎপাদনের একমাত্র কাঁচামাল হচ্ছে আখ। তিনি চাষিদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশের ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান, জেলার ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান কেরুজ চিনিকলকে রক্ষা করতে বেশি বেশি করে আখ চাষের কোনো বিকল্প নেই।