ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গার সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে নতুন ট্রাক্টর ক্রয়ে অনিয়মের অভিযোগ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৯:১৬:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই ২০২৩
  • / ৩৫ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গার সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে (টিএসসি) ফার্ম মেশিনারি বিভাগের জন্য ট্রাক্টর ক্রয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সর্বনিম্ন দরদাতার কাছ থেকে নির্ধারিত মডেলের নতুন ট্রাক্টরের পরিবর্তে দ্বিতীয় দরদাতার কাছ থেকে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা বেশি দিয়ে ভিন্ন মডেলের পুরোনো ট্রাক্টর (নতুন রঙ করা) কিনেছে কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আব্দুল মজিদ পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়ার মেসার্স খালেক এন্টারপ্রাইজকে কাজ পাইয়ে দিতে এই অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। যোগসাজশ করে ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৯ শ টাকা অতিরিক্ত দিয়ে দ্বিতীয় দরদাতাকে কার্যাদেশ দেওয়ায় জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয় ট্রাক্টর কেনা বাবদ বিলটি আটকে দিয়েছে। এমতাবস্থায় বিলটি পাস করাতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ে তদবির শুরু করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টিএসসির একাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ঠিকাদারের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে এমন অনিয়ম করেছেন। এতে প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। চুয়াডাঙ্গার শহরতলী দৌলাতদিয়াড়ে অবস্থিত সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দরপত্র কমিটির সভাপতি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আব্দুল মজিদ এবং সদস্যসচিব প্রতিষ্ঠানটির ফার্ম মেশিনারি বিভাগের ইন্সট্রাক্টর হালিম মাহমুদ ভুঁইয়া। প্রতিষ্ঠানটির ফার্ম মেশিনারি বিভাগের জন্য কর্তৃপক্ষ নতুন একটি ট্রাক্টর কিনতে উদ্যোগ গ্রহণ করে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩ মে স্থানীয় দৈনিক মাথাভাঙ্গায় দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। চুয়াডাঙ্গা, দর্শনা ও কুষ্টিয়ার চারটি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশগ্রহণ করে। শর্তানুসারে এসব প্রতিষ্ঠান দরপত্রের সঙ্গে ১৫ মে ১২ হাজার টাকা করে নিরাপত্তা জামানত হিসেবে পে-অর্ডার জমা দেয়। ১৭ মে দরপত্র খোলা হয়। তাতে দেখা যায়, চুয়াডাঙ্গার মেসার্স আলিফ ট্রেডিং করপোরেশন ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা, কুষ্টিয়ার মেসার্স খালেক এন্টারপ্রাইজ ১১ লাখ ৯৯ হাজার ৯ শ, দর্শনার মেসার্স ঢাকা মেটাল অ্যান্ড মেশিনারিজ ১২ লাখ ও চুয়াডাঙ্গার মেসার্স জেড এম কনস্ট্রাকশন ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা দর দেন।

কিন্তু কর্তৃপক্ষ সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ না দিয়ে ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৯০০ টাকা বেশি দর দেওয়া কুষ্টিয়ার মেসার্স খালেক এন্টারপ্রাইজের নামে কার্যাদেশ দেন। কার্যাদেশ পাওয়ার পর চূড়ান্ত দরদাতা ঘষে মেজে রঙ করা পুরাতন ভিন্ন মডেলের ট্রাক্টর সরবরাহ করলে বিষয়টি নিয়ে টিএসসির শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ভেতর কানাঘুষা চলতে থাকে। বিষয়টি তারা অধ্যক্ষের কাছ থেকে জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর না পাওয়ায় একপর্যায়ে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে।

গোঁজামিলে ভরা দরপত্র :
ট্রাক্টর কিনতে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রকাশিত দরপত্রে ট্রাক্টরের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, (ঝড়হধষরশধ উষ ৭৩০ ষষ ঐউগ, ঋঁষষ ঝঢ়বপরভরপধঃরড়হং : ৫৫ ঐচ, ঈধঃবমড়ৎু ৪৭.৩ ঐচ, ঊহমরহব ঈধঢ়ধপরঃু ৪০০০পপ,ঊহমরহব জধঃবফ জগচ ২০০০ জচগ, ঈুষরহফবৎ ৪ ঊহমরহব ঐচ চঞঙ ঐচ ২৫.৫ ঐচ/ঊয়ঁরাধষবহঃ)। সোনালিকা ট্রাক্টরের চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলের ডিলার দর্শনার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, দরপত্রের বর্ণনার সঙ্গে বাস্তবে সোনালিকা ট্রাক্টরের কোনো মিল নেই। তিনি দাবি করেন, সোনালিকা উষ ৭৩০ ষষ মডেলের অশ্বশক্তি ৫৫ উল্লেখ করা হলেও বাস্তবে এই মডেলের ট্রাক্টরের অশ্বশক্তি ৩০। তাছাড়া, এই মডেলের ট্রাক্টর ৪ সিলিন্ডার নয়, ৩ সিলিন্ডারের হয়ে থাকে। ক্যাপাসিটিসহ অন্যান্য বেশির ভাগ তথ্যই ভুল উল্লেখ করা হয়েছে।

আরও যত অভিযোগ:
চুয়াডাঙ্গা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ (টিএসসি) সোনালিকা ব্র্যান্ডের যে ট্রাক্টর ক্রয়ের জন্য দরপত্র দেয়, তার বাংলাদেশে আমদানিকারক এসিআই মটরস। যশোরে এসিআই মটরসের ডিলার আব্দুল বারী বলেন, ওই মডেলের ট্রাক্টর প্রায় ৪-৫ বছর ধরে আমদানি বন্ধ রয়েছে। ৫০-৬০ অশ্বশক্তির ট্রাক্টরের চাহিদা বেশি। এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ৩০ অশ্বশক্তির ট্রাক্টর কেনে না। তবে বাংলাদেশে ট্রাক্টর বিক্রেতা একাধিক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে ৩০ অশ্বশক্তির সোনালিকা ট্রাক্টর ৮ লাখ ৪৯ হাজার থেকে ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা উল্লেখ করা হয়েছে।

ট্রাক্টর সরবরাহের দরপত্রে অংশগ্রহণকারী মেসার্স আলিফ ট্রেডিং করপোরেশনও ৭৩০ মডেলের সোনালিকা ট্রাক্টর সরবরাহের জন্য ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা দর দিয়েছেন। বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য হওয়ার পরও তাদের কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি। দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা কুষ্টিয়ার মেসার্স খালেক এন্টারপ্রাইজ ১১ লাখ ৯৯ হাজার ৯ শ টাকা দর দেওয়ার পরও তাদের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। এতে সরকার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৯০০ টাকা। বেশি দাম দিয়ে কিনেছেন পুরোনো রঙ করা ট্রাক্টর।

সর্বনিম্ন দর দিয়েও কাজ থেকে বঞ্চিত মেসার্স আলিফ ট্রেডিং করপোরেশনের স্বত্ত্বাধিকারী সাহিদুল আলম ওরফে লালু অভিযোগ করেন, চুয়াডাঙ্গা টিএসসির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আব্দুল মজিদ এর আগে কুষ্টিয়ার হোসেনাবাদ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকাকালীন কুষ্টিয়ার মেসার্স খালেক এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে যোগসাজশ করে দরপত্রের মাধ্যমে পণ্য কেনেন। চুয়াডাঙ্গাতে যোগদানের পরও খালেক এন্টারপ্রাইজকে সুবিধা দিচ্ছেন। সাহিদুল আরও বলেন, ‘সরকার নতুন ট্রাক্টর কেনার জন্য প্রতিষ্ঠানকে টাকা দিলেও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শুধু পছন্দের ঠিকাদারের স্বার্থে পুরোনো রঙ করা ভিন্ন মডেলের ট্রাক্টর কিনেছেন।’

দরপত্র কমিটির বক্তব্য:
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে দরপত্র কমিটির সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আব্দুল মজিদ প্রথমে উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘আমাকে ফোন করেছেন কেন, খোঁজ নিয়ে দেখেন কী কিনেছি।’ এরপর হোয়াটসঅ্যাপে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। পুরোনো ট্রাক্টর কেনার বিষয়ে জানতে চাইলে সরাসরি প্রশ্নটি এড়িয়ে যান। এরপর তিনি বলেন, ‘এই মডেলের বর্তমান এসিআই শো-রুম মূল্য ১৬ লাখ টাকা। আমরা ক্রয় করেছি ট্যাক্স-ভ্যাটসহ ১২ লাখ টাকায়। সর্বনিম্ন দরদাতার ট্রাক্টরটি ৩০ অশ্বশক্তি এবং যেটি কেনা হয়েছে, সেটি ৬০ অশ্বশক্তি।’
এদিকে, গতকাল বুধবার রাতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল মজিদের সঙ্গে সময়ের সমীকরণ অফিস থেকে মুঠোফোনে পৃথক নম্বর দিয়ে পুনরায় যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। যিনি অভিযোগ দিয়েছে, যা বলেছে লিখে দেন। বিধি অনুযায়ী কাজ হয়েছে বললেও তিনি বিধি সম্পর্কে কিছু জানেন না বলে ফোন কেটে দেন। পরে আর তিনি মুঠোফোন রিসিভ করেননি।
দরপত্র কমিটির সদস্যসচিব প্রতিষ্ঠানের ফার্ম মেশিনারি বিভাগের ইন্সট্রাক্টর হালিম মাহমুদ ভুঁইয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চুয়াডাঙ্গার সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে নতুন ট্রাক্টর ক্রয়ে অনিয়মের অভিযোগ

আপলোড টাইম : ০৯:১৬:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক:
চুয়াডাঙ্গার সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে (টিএসসি) ফার্ম মেশিনারি বিভাগের জন্য ট্রাক্টর ক্রয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সর্বনিম্ন দরদাতার কাছ থেকে নির্ধারিত মডেলের নতুন ট্রাক্টরের পরিবর্তে দ্বিতীয় দরদাতার কাছ থেকে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা বেশি দিয়ে ভিন্ন মডেলের পুরোনো ট্রাক্টর (নতুন রঙ করা) কিনেছে কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আব্দুল মজিদ পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কুষ্টিয়ার মেসার্স খালেক এন্টারপ্রাইজকে কাজ পাইয়ে দিতে এই অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। যোগসাজশ করে ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৯ শ টাকা অতিরিক্ত দিয়ে দ্বিতীয় দরদাতাকে কার্যাদেশ দেওয়ায় জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয় ট্রাক্টর কেনা বাবদ বিলটি আটকে দিয়েছে। এমতাবস্থায় বিলটি পাস করাতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ে তদবির শুরু করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টিএসসির একাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ঠিকাদারের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে এমন অনিয়ম করেছেন। এতে প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। চুয়াডাঙ্গার শহরতলী দৌলাতদিয়াড়ে অবস্থিত সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দরপত্র কমিটির সভাপতি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আব্দুল মজিদ এবং সদস্যসচিব প্রতিষ্ঠানটির ফার্ম মেশিনারি বিভাগের ইন্সট্রাক্টর হালিম মাহমুদ ভুঁইয়া। প্রতিষ্ঠানটির ফার্ম মেশিনারি বিভাগের জন্য কর্তৃপক্ষ নতুন একটি ট্রাক্টর কিনতে উদ্যোগ গ্রহণ করে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩ মে স্থানীয় দৈনিক মাথাভাঙ্গায় দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। চুয়াডাঙ্গা, দর্শনা ও কুষ্টিয়ার চারটি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশগ্রহণ করে। শর্তানুসারে এসব প্রতিষ্ঠান দরপত্রের সঙ্গে ১৫ মে ১২ হাজার টাকা করে নিরাপত্তা জামানত হিসেবে পে-অর্ডার জমা দেয়। ১৭ মে দরপত্র খোলা হয়। তাতে দেখা যায়, চুয়াডাঙ্গার মেসার্স আলিফ ট্রেডিং করপোরেশন ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা, কুষ্টিয়ার মেসার্স খালেক এন্টারপ্রাইজ ১১ লাখ ৯৯ হাজার ৯ শ, দর্শনার মেসার্স ঢাকা মেটাল অ্যান্ড মেশিনারিজ ১২ লাখ ও চুয়াডাঙ্গার মেসার্স জেড এম কনস্ট্রাকশন ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা দর দেন।

কিন্তু কর্তৃপক্ষ সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ না দিয়ে ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৯০০ টাকা বেশি দর দেওয়া কুষ্টিয়ার মেসার্স খালেক এন্টারপ্রাইজের নামে কার্যাদেশ দেন। কার্যাদেশ পাওয়ার পর চূড়ান্ত দরদাতা ঘষে মেজে রঙ করা পুরাতন ভিন্ন মডেলের ট্রাক্টর সরবরাহ করলে বিষয়টি নিয়ে টিএসসির শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ভেতর কানাঘুষা চলতে থাকে। বিষয়টি তারা অধ্যক্ষের কাছ থেকে জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর না পাওয়ায় একপর্যায়ে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে।

গোঁজামিলে ভরা দরপত্র :
ট্রাক্টর কিনতে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রকাশিত দরপত্রে ট্রাক্টরের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, (ঝড়হধষরশধ উষ ৭৩০ ষষ ঐউগ, ঋঁষষ ঝঢ়বপরভরপধঃরড়হং : ৫৫ ঐচ, ঈধঃবমড়ৎু ৪৭.৩ ঐচ, ঊহমরহব ঈধঢ়ধপরঃু ৪০০০পপ,ঊহমরহব জধঃবফ জগচ ২০০০ জচগ, ঈুষরহফবৎ ৪ ঊহমরহব ঐচ চঞঙ ঐচ ২৫.৫ ঐচ/ঊয়ঁরাধষবহঃ)। সোনালিকা ট্রাক্টরের চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলের ডিলার দর্শনার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, দরপত্রের বর্ণনার সঙ্গে বাস্তবে সোনালিকা ট্রাক্টরের কোনো মিল নেই। তিনি দাবি করেন, সোনালিকা উষ ৭৩০ ষষ মডেলের অশ্বশক্তি ৫৫ উল্লেখ করা হলেও বাস্তবে এই মডেলের ট্রাক্টরের অশ্বশক্তি ৩০। তাছাড়া, এই মডেলের ট্রাক্টর ৪ সিলিন্ডার নয়, ৩ সিলিন্ডারের হয়ে থাকে। ক্যাপাসিটিসহ অন্যান্য বেশির ভাগ তথ্যই ভুল উল্লেখ করা হয়েছে।

আরও যত অভিযোগ:
চুয়াডাঙ্গা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ (টিএসসি) সোনালিকা ব্র্যান্ডের যে ট্রাক্টর ক্রয়ের জন্য দরপত্র দেয়, তার বাংলাদেশে আমদানিকারক এসিআই মটরস। যশোরে এসিআই মটরসের ডিলার আব্দুল বারী বলেন, ওই মডেলের ট্রাক্টর প্রায় ৪-৫ বছর ধরে আমদানি বন্ধ রয়েছে। ৫০-৬০ অশ্বশক্তির ট্রাক্টরের চাহিদা বেশি। এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ৩০ অশ্বশক্তির ট্রাক্টর কেনে না। তবে বাংলাদেশে ট্রাক্টর বিক্রেতা একাধিক প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে ৩০ অশ্বশক্তির সোনালিকা ট্রাক্টর ৮ লাখ ৪৯ হাজার থেকে ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা উল্লেখ করা হয়েছে।

ট্রাক্টর সরবরাহের দরপত্রে অংশগ্রহণকারী মেসার্স আলিফ ট্রেডিং করপোরেশনও ৭৩০ মডেলের সোনালিকা ট্রাক্টর সরবরাহের জন্য ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা দর দিয়েছেন। বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য হওয়ার পরও তাদের কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি। দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা কুষ্টিয়ার মেসার্স খালেক এন্টারপ্রাইজ ১১ লাখ ৯৯ হাজার ৯ শ টাকা দর দেওয়ার পরও তাদের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। এতে সরকার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৯০০ টাকা। বেশি দাম দিয়ে কিনেছেন পুরোনো রঙ করা ট্রাক্টর।

সর্বনিম্ন দর দিয়েও কাজ থেকে বঞ্চিত মেসার্স আলিফ ট্রেডিং করপোরেশনের স্বত্ত্বাধিকারী সাহিদুল আলম ওরফে লালু অভিযোগ করেন, চুয়াডাঙ্গা টিএসসির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আব্দুল মজিদ এর আগে কুষ্টিয়ার হোসেনাবাদ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকাকালীন কুষ্টিয়ার মেসার্স খালেক এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে যোগসাজশ করে দরপত্রের মাধ্যমে পণ্য কেনেন। চুয়াডাঙ্গাতে যোগদানের পরও খালেক এন্টারপ্রাইজকে সুবিধা দিচ্ছেন। সাহিদুল আরও বলেন, ‘সরকার নতুন ট্রাক্টর কেনার জন্য প্রতিষ্ঠানকে টাকা দিলেও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শুধু পছন্দের ঠিকাদারের স্বার্থে পুরোনো রঙ করা ভিন্ন মডেলের ট্রাক্টর কিনেছেন।’

দরপত্র কমিটির বক্তব্য:
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে দরপত্র কমিটির সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আব্দুল মজিদ প্রথমে উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘আমাকে ফোন করেছেন কেন, খোঁজ নিয়ে দেখেন কী কিনেছি।’ এরপর হোয়াটসঅ্যাপে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। পুরোনো ট্রাক্টর কেনার বিষয়ে জানতে চাইলে সরাসরি প্রশ্নটি এড়িয়ে যান। এরপর তিনি বলেন, ‘এই মডেলের বর্তমান এসিআই শো-রুম মূল্য ১৬ লাখ টাকা। আমরা ক্রয় করেছি ট্যাক্স-ভ্যাটসহ ১২ লাখ টাকায়। সর্বনিম্ন দরদাতার ট্রাক্টরটি ৩০ অশ্বশক্তি এবং যেটি কেনা হয়েছে, সেটি ৬০ অশ্বশক্তি।’
এদিকে, গতকাল বুধবার রাতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল মজিদের সঙ্গে সময়ের সমীকরণ অফিস থেকে মুঠোফোনে পৃথক নম্বর দিয়ে পুনরায় যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। যিনি অভিযোগ দিয়েছে, যা বলেছে লিখে দেন। বিধি অনুযায়ী কাজ হয়েছে বললেও তিনি বিধি সম্পর্কে কিছু জানেন না বলে ফোন কেটে দেন। পরে আর তিনি মুঠোফোন রিসিভ করেননি।
দরপত্র কমিটির সদস্যসচিব প্রতিষ্ঠানের ফার্ম মেশিনারি বিভাগের ইন্সট্রাক্টর হালিম মাহমুদ ভুঁইয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।