ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দামুড়হুদায় সুদের টাকা শোধ করতে চাপ দেওয়ায় মোটরসাইকেল মেকানিকের বিষপান

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:২৫:৪৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই ২০২৩
  • / ২৬ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদক:
দামুড়হুদা মডেল থানার অধীনস্থ চারুলিয়া ক্যাম্পে কর্মরত এএসআই মনজুর রহমান উপজেলার দশমীপাড়ার রুবেল হোসেনকে (৩৩) সুদের টাকা শোধ করতে চাপ দেওয়ায় বিষপান করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বর্তমানে তিনি চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার অবস্থা সংকটাপন্ন। রুবেল দামুড়হুদা উপজেলার দশমী পাড়ার এলাহী বক্সের ছেলে। দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ডে রুবেল মোটরসাইকেল সার্ভিসিং সেন্টার নামে তার একটি গ্যারেজ আছে।

রুবেলের পরিবারের অভিযোগ, এএসআই মনজুর রহমানের কাছ থেকে নেওয়া টাকা শোধ করতে না পারায় গতকাল গ্যারেজে তালা লাগিয়ে দেন ওই এএসআই। এতে মানসিক চাপে রুবেল গতকাল বেলা ৩টার দিকে রুবেল বিষপান করে। বিষয়টি জানতে পেরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে রুবেলের অবস্থার অবনতি হলে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল রেফার্ড করেন চিকিৎসক। পরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক হাসানুর রহমান তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে নতুন বিল্ডিংয়ের ৬ তলায় ভর্তি রাখেন।

এ বিষয়ে রুবেলের ছোট বোন শিরিনা বলেন, ‘আমার ভাই মঞ্জুর দারোগার কাছ থেকে এক লাখ টাকা নিয়েছিল। এখন সেই টাকা মনজুর দারোগা ফেরত চাচ্ছে। আমার ভাই বিদেশ যাবে বলে টাকা খরচ করে ফেলেছে। দারোগাকে দেওয়ার মতো টাকা তার কাছে আপাতত নেই।
শিরিনা আরও বলেন, ‘আমার ভাই দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হঠাৎ আমাকে ফোন করে খোঁজখবর নেয়। পরে আমার কাছে এক লাখ টাকা ধার চায়। ভাই আমাকে জানান, মঞ্জুর দারোগা (এএসআই মনজুর রহমান) আমার গ্যারেজে তালা মেরে দিয়েছে। আমি টাকা দিতে পারিনি। তারপর আমার ভাই বলল, আমি বাড়িতে আসছি। দোকান থেকে ফেরার পথে মানসিক চাপে আমার ভাই বিষপান করেছে।’

এ বিষয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার অধীনস্থ চারুলিয়া ক্যাম্পে কর্মরত এএসআই মনজুর রহমান বলেন, ‘বছর খানেক আগে আমার কাছ থেকে রুবেল এক লক্ষ টাকা নেয়। গত তিন-চার মাস ধরে টাকা দেওয়ার কথা বলে আমাকে ঘুরাচ্ছে। আজ (গতকাল বুধবার) টাকা দেওয়ার কথা ছিল। আমি আজ গিয়েছিলাম টাকা নিতে। আমি ওর গ্যারেজে দুপুরে যেয়ে রুবেলকে বললাম, আজকে টাকা দেওয়ার কথা ছিল টাকা ম্যানেজ হয়েছে? সে বলল আমি টাকা ম্যানেজ করতে পারিনি। আমি তাকে বললাম, আমাকে তো অনেকদিন ধরেই ঘুরাচ্ছো কবে দিবা বলো? সে বলল চলতি মাসের ১৩ তারিখে দেব। তার সাথে আমার আর কোনো কথা হয়নি। আমি চলে এসেছিলাম।’

এএসআই মনজুর দাবি করে বলেন, ‘আমি রুবেলকে কোনো প্রকার চাপ প্রয়োগ করিনি। শুধু আমার টাকা নয়, বিভিন্ন জায়গার ঋণের চাপ তার মাথার ওপর আছে। রুবেল এনজিও, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীর কাছ থেকে বিভিন্নভাবে টাকা নিয়েছে। তার খালাতো ভাই দামুড়হুদা বদনপুরের আক্তার অ্যাডভোকেট সাহেবের কাছ থেকে ভুয়া দলিল দিয়ে তিন লক্ষ টাকা নেয়। তার টাকাও পরিশোধ করতে পারছে না। এজন্য আক্তার অ্যাডভোকেট ১০-১২ দিন আগে তাকে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছে। আবার এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে দেড় মাস আগে রুবেলের বাড়ির জমির বায়না দিয়ে ৩-৪ লক্ষ টাকা নিয়েছে। তাকে এখন জমি দিচ্ছে না। এর মাঝেই তিনি কুয়েতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, সম্ভবত আগামী ১৩ তারিখে তার ফ্লাইট।’

দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমি অবগত না।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

দামুড়হুদায় সুদের টাকা শোধ করতে চাপ দেওয়ায় মোটরসাইকেল মেকানিকের বিষপান

আপলোড টাইম : ০৮:২৫:৪৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই ২০২৩

সমীকরণ প্রতিবেদক:
দামুড়হুদা মডেল থানার অধীনস্থ চারুলিয়া ক্যাম্পে কর্মরত এএসআই মনজুর রহমান উপজেলার দশমীপাড়ার রুবেল হোসেনকে (৩৩) সুদের টাকা শোধ করতে চাপ দেওয়ায় বিষপান করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বর্তমানে তিনি চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার অবস্থা সংকটাপন্ন। রুবেল দামুড়হুদা উপজেলার দশমী পাড়ার এলাহী বক্সের ছেলে। দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ডে রুবেল মোটরসাইকেল সার্ভিসিং সেন্টার নামে তার একটি গ্যারেজ আছে।

রুবেলের পরিবারের অভিযোগ, এএসআই মনজুর রহমানের কাছ থেকে নেওয়া টাকা শোধ করতে না পারায় গতকাল গ্যারেজে তালা লাগিয়ে দেন ওই এএসআই। এতে মানসিক চাপে রুবেল গতকাল বেলা ৩টার দিকে রুবেল বিষপান করে। বিষয়টি জানতে পেরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে রুবেলের অবস্থার অবনতি হলে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল রেফার্ড করেন চিকিৎসক। পরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক হাসানুর রহমান তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে নতুন বিল্ডিংয়ের ৬ তলায় ভর্তি রাখেন।

এ বিষয়ে রুবেলের ছোট বোন শিরিনা বলেন, ‘আমার ভাই মঞ্জুর দারোগার কাছ থেকে এক লাখ টাকা নিয়েছিল। এখন সেই টাকা মনজুর দারোগা ফেরত চাচ্ছে। আমার ভাই বিদেশ যাবে বলে টাকা খরচ করে ফেলেছে। দারোগাকে দেওয়ার মতো টাকা তার কাছে আপাতত নেই।
শিরিনা আরও বলেন, ‘আমার ভাই দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হঠাৎ আমাকে ফোন করে খোঁজখবর নেয়। পরে আমার কাছে এক লাখ টাকা ধার চায়। ভাই আমাকে জানান, মঞ্জুর দারোগা (এএসআই মনজুর রহমান) আমার গ্যারেজে তালা মেরে দিয়েছে। আমি টাকা দিতে পারিনি। তারপর আমার ভাই বলল, আমি বাড়িতে আসছি। দোকান থেকে ফেরার পথে মানসিক চাপে আমার ভাই বিষপান করেছে।’

এ বিষয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার অধীনস্থ চারুলিয়া ক্যাম্পে কর্মরত এএসআই মনজুর রহমান বলেন, ‘বছর খানেক আগে আমার কাছ থেকে রুবেল এক লক্ষ টাকা নেয়। গত তিন-চার মাস ধরে টাকা দেওয়ার কথা বলে আমাকে ঘুরাচ্ছে। আজ (গতকাল বুধবার) টাকা দেওয়ার কথা ছিল। আমি আজ গিয়েছিলাম টাকা নিতে। আমি ওর গ্যারেজে দুপুরে যেয়ে রুবেলকে বললাম, আজকে টাকা দেওয়ার কথা ছিল টাকা ম্যানেজ হয়েছে? সে বলল আমি টাকা ম্যানেজ করতে পারিনি। আমি তাকে বললাম, আমাকে তো অনেকদিন ধরেই ঘুরাচ্ছো কবে দিবা বলো? সে বলল চলতি মাসের ১৩ তারিখে দেব। তার সাথে আমার আর কোনো কথা হয়নি। আমি চলে এসেছিলাম।’

এএসআই মনজুর দাবি করে বলেন, ‘আমি রুবেলকে কোনো প্রকার চাপ প্রয়োগ করিনি। শুধু আমার টাকা নয়, বিভিন্ন জায়গার ঋণের চাপ তার মাথার ওপর আছে। রুবেল এনজিও, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীর কাছ থেকে বিভিন্নভাবে টাকা নিয়েছে। তার খালাতো ভাই দামুড়হুদা বদনপুরের আক্তার অ্যাডভোকেট সাহেবের কাছ থেকে ভুয়া দলিল দিয়ে তিন লক্ষ টাকা নেয়। তার টাকাও পরিশোধ করতে পারছে না। এজন্য আক্তার অ্যাডভোকেট ১০-১২ দিন আগে তাকে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছে। আবার এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে দেড় মাস আগে রুবেলের বাড়ির জমির বায়না দিয়ে ৩-৪ লক্ষ টাকা নিয়েছে। তাকে এখন জমি দিচ্ছে না। এর মাঝেই তিনি কুয়েতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, সম্ভবত আগামী ১৩ তারিখে তার ফ্লাইট।’

দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমি অবগত না।’